ঢাকা ০৮:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীদের রোদে পুড়িয়ে সংবর্ধিত চিফ হুইপ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:১৮:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ২০১৫
  • ৫০৩ বার

প্রচণ্ড রোদ মাথায় করে রাস্তার দুই পাশে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। হাতে তাদের ফুলের পাপড়ি। মাঝখান দিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাবেন সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। এ সময় তাদের ফুল ছিটাতে হবে। এ কারণে ছয়টি বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নবগঠিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে আ স ম ফিরোজকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

সুমি নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, সকাল ১০টায় স্কুলে আসার পর শিক্ষকরা তাদের নিয়ে আসেন। এরপর বিকেল ৪টা পর্যন্ত অভুক্ত থাকে তারা। জানা যায়, অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক তিন থেকে চার কিলোমিটার হাঁটিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠানে থাকার নির্দেশনা দেয়।

জানা গেছে, তেঁতুলিয়া নদীতে জেগে ওঠা চর রায়সাহেব, ব্যারেট, নিমদি, ওয়াডেল, কচুয়া, মিয়াজান নিয়ে ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের গেজেট হয়। ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনকে ইউনিয়নের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। ইউনিয়নের বাসিন্দারা তাদের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য চিফ হুইপ ফিরোজকে সংবর্ধনার আয়োজন করে। ওই সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে আ স ম ফিরোজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ইউনিয়নের দক্ষিণ চর ওয়াডেল, চর ওয়াডেল, মিয়াজান, ব্যারেট ও চর রায়সাহেব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক নিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। দুপুর ২টা ৫০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টার বেশি সময় রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ওই মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

বিকেল ৩টায় সংবর্ধনা সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সভাস্থলে আ স ম ফিরোজ আসেন বিকেল সাড়ে ৪টায়। মঞ্চে ওঠেন ৪টা ৪৯ মিনিটে। ওই সময় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা তাঁকে ফুল ছিটিয়ে স্বাগত জানায়। অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাঁটিয়ে নিয়ে আসা হয় ওখানে। আর বাধ্যতামূলক ছাত্রছাত্রীদের থাকার নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি আমির আলী হাওলাদারের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম ফারুক, ফয়সাল আহম্মেদ, মনির হোসেন মোল্লা, আলকাস মোল্লা, মো. সেকান্দার প্রমুখ। এ সময় সংবর্ধিত চিফ হুইপ ফিরোজ নবগঠিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নবাসীর সমস্যা সমাধানে তাঁর চেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।

শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা সম্পর্কে আ স ম ফিরোজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রব বলেন, ‘স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা সে কারণে শিক্ষার্থীদের রাখা হয়েছে। তিনি যেন দেখে খুশি হন। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছে, কারণ তিনি এ চরবাসীর উন্নয়ন করছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘ইউনিয়ন সভাপতি আমির আলী হাওলাদারের নির্দেশ ছিল শিক্ষার্থীদের হাজির করার। আমরা চাকরি করি, বোঝেনই তো ভাই। এ কারণে গতকাল (মঙ্গলবার) ক্লাসও হয়নি।’

এ ব্যাপারে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আমির আলী হাওলাদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনো স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আসতে বলি নাই। সংবর্ধনায় কোনো ছাত্রছাত্রী ছিল না।’

এ ব্যাপারে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তা ধরেননি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শিক্ষার্থীদের রোদে পুড়িয়ে সংবর্ধিত চিফ হুইপ

আপডেট টাইম : ০৪:১৮:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ২০১৫

প্রচণ্ড রোদ মাথায় করে রাস্তার দুই পাশে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। হাতে তাদের ফুলের পাপড়ি। মাঝখান দিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যাবেন সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। এ সময় তাদের ফুল ছিটাতে হবে। এ কারণে ছয়টি বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নবগঠিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে আ স ম ফিরোজকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

সুমি নামের এক শিক্ষার্থী জানায়, সকাল ১০টায় স্কুলে আসার পর শিক্ষকরা তাদের নিয়ে আসেন। এরপর বিকেল ৪টা পর্যন্ত অভুক্ত থাকে তারা। জানা যায়, অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক তিন থেকে চার কিলোমিটার হাঁটিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠানে থাকার নির্দেশনা দেয়।

জানা গেছে, তেঁতুলিয়া নদীতে জেগে ওঠা চর রায়সাহেব, ব্যারেট, নিমদি, ওয়াডেল, কচুয়া, মিয়াজান নিয়ে ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের গেজেট হয়। ওই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনকে ইউনিয়নের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। ইউনিয়নের বাসিন্দারা তাদের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য চিফ হুইপ ফিরোজকে সংবর্ধনার আয়োজন করে। ওই সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে আ স ম ফিরোজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ইউনিয়নের দক্ষিণ চর ওয়াডেল, চর ওয়াডেল, মিয়াজান, ব্যারেট ও চর রায়সাহেব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক নিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। দুপুর ২টা ৫০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টার বেশি সময় রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ওই মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

বিকেল ৩টায় সংবর্ধনা সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সভাস্থলে আ স ম ফিরোজ আসেন বিকেল সাড়ে ৪টায়। মঞ্চে ওঠেন ৪টা ৪৯ মিনিটে। ওই সময় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা তাঁকে ফুল ছিটিয়ে স্বাগত জানায়। অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাঁটিয়ে নিয়ে আসা হয় ওখানে। আর বাধ্যতামূলক ছাত্রছাত্রীদের থাকার নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি আমির আলী হাওলাদারের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম ফারুক, ফয়সাল আহম্মেদ, মনির হোসেন মোল্লা, আলকাস মোল্লা, মো. সেকান্দার প্রমুখ। এ সময় সংবর্ধিত চিফ হুইপ ফিরোজ নবগঠিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নবাসীর সমস্যা সমাধানে তাঁর চেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।

শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা সম্পর্কে আ স ম ফিরোজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রব বলেন, ‘স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা সে কারণে শিক্ষার্থীদের রাখা হয়েছে। তিনি যেন দেখে খুশি হন। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছে, কারণ তিনি এ চরবাসীর উন্নয়ন করছেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘ইউনিয়ন সভাপতি আমির আলী হাওলাদারের নির্দেশ ছিল শিক্ষার্থীদের হাজির করার। আমরা চাকরি করি, বোঝেনই তো ভাই। এ কারণে গতকাল (মঙ্গলবার) ক্লাসও হয়নি।’

এ ব্যাপারে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আমির আলী হাওলাদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনো স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আসতে বলি নাই। সংবর্ধনায় কোনো ছাত্রছাত্রী ছিল না।’

এ ব্যাপারে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তা ধরেননি।