ঢাকা ০৩:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে কৌশলে মাত্র ১১ মাসে ১৩১ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন আদনান স্বামী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৫:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০১৭
  • ২৫২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  এক সময় তার ওজন পৌঁছে গিয়েছিল ২০৬ কেজিতে। কিন্তু তারপর এক ধাক্কায় তিনি আমূল পরিবর্তিত করে ফেলেন নিজেকে। অল্প সময়ের মধ্যে ঝরিয়ে ফেলেন ১৩১ কেজি। কিন্তু কীভাবে এই মির‌্যাকল সম্ভব করলেন আদনান?

আদনান স্বামী গায়ক হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়। তার ‘থোড়ি সি তো লিফ্ট করা দে’-র মতো গান এক সময় তোলপা়ড় ফেলেছিল ভারতীয় সংগীত জগতে। কিন্তু আরো একটি কারণে এক কালে তিনি আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন। সেই কারণ ছিল তার স্থূলতা। এক সময় তার ওজন পৌঁছে গিয়েছিল ২০৬ কেজিতে। কিন্তু তারপর এক ধাক্কায় তিনি আমূল পরিবর্তিত করে ফেলেন নিজেকে। অল্প সময়ের মধ্যে ঝরিয়ে ফেলেন ১৩১ কেজি। কিন্তু কীভাবে এই মির‌্যাকল সম্ভব করলেন আদনান? এখানে ফাঁস হল সেই রহস্য।

আদনানের সেই মোটা চেহারা অনেকের চোখে ‘মিষ্টি’ ঠেকলেও আদনান ওই চেহারায় মোটেই সুস্থ ছিলেন না। সংগীত জীবনে তিনি তখন যতই সাফল্য পান না কেন, ব্যক্তিগত জীবনে তখন তার নানা ঝড়ঝাপটা চলছে। এক দিকে স্ত্রীর সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে স্থূলতার কারণে তার শারীরিক অবস্থাও তখন ভাল নয়। অতিরিক্ত চর্বির জন্য সেই সময়ে আদনান রাত্রে ঘুমোতে পারেন না। শুলেই শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে তার। হুইলচেয়ার বা ওয়াকারের সাহায্য ছাড়া এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারেন না। হাঁটুর সমস্যাতেও তিনি তখন জর্জরিত। অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, ডাক্তাররা তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এভাবে চলতে থাকলে আর বড়জোর মাস ছয়েক বাঁচবেন আদনান। তখনই সচেতন হন গায়ক। আদনানের বাবাও তাকে উদ্বুদ্ধ করেন ওজন কমানোর জন্য।

এক বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে আদনান উড়ে যান আমেরিকার হুস্টন-এ। ডাক্তাররা আদনানের সমস্যা বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারেন, আদনান খাওয়াদাওয়া করেন ইমোশনাল কারণে। যখনই কোনো কারণে অবসাদ, হতাশা বা শোকে আক্রান্ত হন তিনি, তখনই খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে খুশি করার চেষ্টা করেন আদনান। আর স্ত্রীয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে আদনানের জীবনে হতাশারও অভাব ছিল না। ফলে চেহারায় পরিবর্তন আনার জন্য শরীরে নয়, মনের বদল আনার প্রয়োজন ছিল আদনানের।

ডাক্তাররা পরামর্শ দেন, আদনান যেন হাই প্রোটিন ডায়েট মেনটেন করেন। সাদা রুটি, ভাত, তেল কিংবা চিনির মতো খাবার খাওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যায় আদনানের। কিন্তু তার মানে একেবারে বিস্বাদ খাবার-দাবারের উপর তাকে নির্ভর করতে হত, তা নয়। বাড়িতে তৈরি খাবার খেতে কোনো বাধা ছিল না আদনানের। নুন ছাড়া পপকর্ন, ডায়েট ফাজ স্টিক, আইসক্রিমের বদলে আইসললির মতো খাবার খেতে আদনানের কোনো বারণ ছিল না। ডাক্তররা অল্প আদটু হাঁটা চলারও পরামর্শ দেন আদনানকে।

এই উপায়ে মাস খানেকের মধ্যে ৪-৫ কেজি ওজন কমে যায় আদনানের। কিন্তু তখনো নিজের চেহারায় বাহ্যত কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছিলেন না আদন‌ান। আরো কয়েকটা দিন কেটে যাওয়ার পরে তিনি খেয়াল করেন, রাত্রে তিনি নির্বিঘ্নে ঘুমোতে পারছেন। শোওয়া অবস্থা থেকে উঠতে কারো সাহায্য দরকার হচ্ছে না তার। মাস কয়েকের মধ্যে ৪০ কেজি ওজন কমে যায় আদনানের। তখন তিনি ট্রেডমিলে দৌড়নো ও হালকা এক্সারসাইজ করা শুরু করেন। আরো দ্রুত গতিতে ঝরতে থাকে তার মেদ।

কঠোরভাবে নিজের ডায়েট মেনটেন করা শুরু করেন আদনান। নিজের বাড়িতে সেই কাজটা করা কঠিন ছিল না, কিন্তু সমস্যা দেখা দিত তখন, যখন কোনো পার্টিতে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে হত তাকে। তখন পার্টিতে যেতে হলে এক অদ্ভুত কৌশল নিতেন আদনান। হাতে নানা খাবারে ভর্তি প্লেট ধরে রাখতেন তিনি। লোকে ভাবত, তিনি বোধহয় কবজি ডুবিয়ে খাচ্ছেন। আদপে আদনান মুখে দিতেন না কিছুই।

এই কঠোর পরিশ্রমের ফল ফলে দ্রুতই। মাত্র ১১ মাসে ১৩১ কেজি ওজন ঝরিয়ে ফেলতে সক্ষম হন আদনান। এখন আদনান একেবারে সুস্থ। রীতিমতো ঈর্ষণীয় স্বাস্থ্যের অধিকারী তিনি। অসুস্থতাকে পাশ কাটিয়ে তিনি এখন ফিরে এসেছেন সুস্থতার দিকে। শুধু গানের ক্ষেত্রে নয়, আদনান স্বামী তাই বহু সুস্থতাকামী মানুষের কাছেও আজ অনুপ্রেরণা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যে কৌশলে মাত্র ১১ মাসে ১৩১ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন আদনান স্বামী

আপডেট টাইম : ১১:৫৫:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  এক সময় তার ওজন পৌঁছে গিয়েছিল ২০৬ কেজিতে। কিন্তু তারপর এক ধাক্কায় তিনি আমূল পরিবর্তিত করে ফেলেন নিজেকে। অল্প সময়ের মধ্যে ঝরিয়ে ফেলেন ১৩১ কেজি। কিন্তু কীভাবে এই মির‌্যাকল সম্ভব করলেন আদনান?

আদনান স্বামী গায়ক হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়। তার ‘থোড়ি সি তো লিফ্ট করা দে’-র মতো গান এক সময় তোলপা়ড় ফেলেছিল ভারতীয় সংগীত জগতে। কিন্তু আরো একটি কারণে এক কালে তিনি আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন। সেই কারণ ছিল তার স্থূলতা। এক সময় তার ওজন পৌঁছে গিয়েছিল ২০৬ কেজিতে। কিন্তু তারপর এক ধাক্কায় তিনি আমূল পরিবর্তিত করে ফেলেন নিজেকে। অল্প সময়ের মধ্যে ঝরিয়ে ফেলেন ১৩১ কেজি। কিন্তু কীভাবে এই মির‌্যাকল সম্ভব করলেন আদনান? এখানে ফাঁস হল সেই রহস্য।

আদনানের সেই মোটা চেহারা অনেকের চোখে ‘মিষ্টি’ ঠেকলেও আদনান ওই চেহারায় মোটেই সুস্থ ছিলেন না। সংগীত জীবনে তিনি তখন যতই সাফল্য পান না কেন, ব্যক্তিগত জীবনে তখন তার নানা ঝড়ঝাপটা চলছে। এক দিকে স্ত্রীর সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে স্থূলতার কারণে তার শারীরিক অবস্থাও তখন ভাল নয়। অতিরিক্ত চর্বির জন্য সেই সময়ে আদনান রাত্রে ঘুমোতে পারেন না। শুলেই শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে তার। হুইলচেয়ার বা ওয়াকারের সাহায্য ছাড়া এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারেন না। হাঁটুর সমস্যাতেও তিনি তখন জর্জরিত। অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, ডাক্তাররা তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এভাবে চলতে থাকলে আর বড়জোর মাস ছয়েক বাঁচবেন আদনান। তখনই সচেতন হন গায়ক। আদনানের বাবাও তাকে উদ্বুদ্ধ করেন ওজন কমানোর জন্য।

এক বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে আদনান উড়ে যান আমেরিকার হুস্টন-এ। ডাক্তাররা আদনানের সমস্যা বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারেন, আদনান খাওয়াদাওয়া করেন ইমোশনাল কারণে। যখনই কোনো কারণে অবসাদ, হতাশা বা শোকে আক্রান্ত হন তিনি, তখনই খাওয়াদাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে খুশি করার চেষ্টা করেন আদনান। আর স্ত্রীয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পরে আদনানের জীবনে হতাশারও অভাব ছিল না। ফলে চেহারায় পরিবর্তন আনার জন্য শরীরে নয়, মনের বদল আনার প্রয়োজন ছিল আদনানের।

ডাক্তাররা পরামর্শ দেন, আদনান যেন হাই প্রোটিন ডায়েট মেনটেন করেন। সাদা রুটি, ভাত, তেল কিংবা চিনির মতো খাবার খাওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যায় আদনানের। কিন্তু তার মানে একেবারে বিস্বাদ খাবার-দাবারের উপর তাকে নির্ভর করতে হত, তা নয়। বাড়িতে তৈরি খাবার খেতে কোনো বাধা ছিল না আদনানের। নুন ছাড়া পপকর্ন, ডায়েট ফাজ স্টিক, আইসক্রিমের বদলে আইসললির মতো খাবার খেতে আদনানের কোনো বারণ ছিল না। ডাক্তররা অল্প আদটু হাঁটা চলারও পরামর্শ দেন আদনানকে।

এই উপায়ে মাস খানেকের মধ্যে ৪-৫ কেজি ওজন কমে যায় আদনানের। কিন্তু তখনো নিজের চেহারায় বাহ্যত কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছিলেন না আদন‌ান। আরো কয়েকটা দিন কেটে যাওয়ার পরে তিনি খেয়াল করেন, রাত্রে তিনি নির্বিঘ্নে ঘুমোতে পারছেন। শোওয়া অবস্থা থেকে উঠতে কারো সাহায্য দরকার হচ্ছে না তার। মাস কয়েকের মধ্যে ৪০ কেজি ওজন কমে যায় আদনানের। তখন তিনি ট্রেডমিলে দৌড়নো ও হালকা এক্সারসাইজ করা শুরু করেন। আরো দ্রুত গতিতে ঝরতে থাকে তার মেদ।

কঠোরভাবে নিজের ডায়েট মেনটেন করা শুরু করেন আদনান। নিজের বাড়িতে সেই কাজটা করা কঠিন ছিল না, কিন্তু সমস্যা দেখা দিত তখন, যখন কোনো পার্টিতে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে হত তাকে। তখন পার্টিতে যেতে হলে এক অদ্ভুত কৌশল নিতেন আদনান। হাতে নানা খাবারে ভর্তি প্লেট ধরে রাখতেন তিনি। লোকে ভাবত, তিনি বোধহয় কবজি ডুবিয়ে খাচ্ছেন। আদপে আদনান মুখে দিতেন না কিছুই।

এই কঠোর পরিশ্রমের ফল ফলে দ্রুতই। মাত্র ১১ মাসে ১৩১ কেজি ওজন ঝরিয়ে ফেলতে সক্ষম হন আদনান। এখন আদনান একেবারে সুস্থ। রীতিমতো ঈর্ষণীয় স্বাস্থ্যের অধিকারী তিনি। অসুস্থতাকে পাশ কাটিয়ে তিনি এখন ফিরে এসেছেন সুস্থতার দিকে। শুধু গানের ক্ষেত্রে নয়, আদনান স্বামী তাই বহু সুস্থতাকামী মানুষের কাছেও আজ অনুপ্রেরণা।