ঢাকা ০১:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিষ্টিকুমড়ায় মিষ্টি হাসি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৪৩:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০১৭
  • ২৯৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এক সময় গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভর্তি মাছ নিয়ে পুরোদস্তুর সুখী কৃষক ছিলেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পাঁচভাগের টেক এলাকার মফিজুল ইসলাম। রাজউকের উদ্যোগে নির্মাণাধীন আধুনিক বড় শহর পূর্বাচল তার সে সুখ কেড়ে নেয়। এ শহর নির্মাণের ফলে প্রতারণাসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মফিজুল। তার সুখের ঘরে নেমে আসে আঁধার। আবার পূর্বাচলের পতিত জমিই ফিরিয়ে এনেছে তার মুখের হারানো হাসি। এসব জমিতে চাষাবাদের মাধ্যমে নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মফিজুল। বীজ পুঁতে দিলেই ফলছে সোনা। সম্প্রতি মিষ্টিকুমড়া চাষে বাজিমাত করেছেন মফিজুল।
রাজধানীর পূর্ব প্রবেশদ্বার রূপগঞ্জে হতে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম আধুনিক শহর। এ  শহরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে স্থানীয় কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। গরুর দুধ বিক্রি করে চলত যাদের সংসার, তাদের অনেকেই এখন প্রাডো হাঁকিয়ে চলছেন। এর কারণ জমির ন্যায্য দাম পাওয়ার পরও অধিগ্রহণের কারণে অধিবাসী হিসেবে পেয়েছেন কোটি টাকার প্লট। কিন্তু মফিজুলের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। পূর্বাচলের জন্য জমি অধিগ্রহণ করার সময় পাঁচভাগের টেক এলাকার (বর্তমান ৫নং সেক্টর) আবেদ আলীর ছেলে মফিজুলের ভিটেবাড়িও অধিগ্রহণ করে। কিন্তু স্থানীয় এক দালালের প্রতারণার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত টাকা, অধিগ্রহণের টাকা কিংবা প্লট কোনোটায় ভাগ্য ফেরেনি মফিজুলের। রাতারাতি সব হয়ে গেছে দালালের নামে। কাগজপত্র জটিলতার কারণে পূর্বাচলের আরও ২৪ শতাংশ চাষের জমি চলে যায় সরকারের ঘরে। তার বাড়ি উচ্ছেদকালে ছোট ৫ ছেলেমেয়ে আর বৌ নিয়ে হঠাৎ করেই পথে এসে দাঁড়ায় সুখী কৃষক

। এখানেই শেষ নয় প্রবঞ্চনার। গবাদি পশু, সঞ্চিত অলঙ্কার আর টাকা-পয়সা, বসতঘর আর ঘরের সব আসবাবপত্র বিক্রি করে পূর্বাচলের পাশে মধুখালী গ্রামে মাথা গোঁজার জন্য ৫ শতাংশ জমি কিনেন মফিজুল। কিন্তু বিধিবাম, কাগজে ঘাপলা তৈরি করে সে জমিও দখল করে নেয় ভূমিদস্যুরা।
সব কিছু হারিয়ে পূর্বাচলের জমিতেই একটি ছোট মাটির ঘর তৈরি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। আর জীবিকা নির্বাহের জন্য বেছে নেন পূর্বাচলের পতিত জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ। সৃষ্টিকর্তা যেন এ মাটিতেই লিখে রেখেছেন মফিজুলের ভাগ্য পরিবর্তনের ইতিহাস। তিনি যে ফসলই চাষ করেন সেখানেই সোনা ফলতে থাকে। ৩ থেকে ৪ বছরের ব্যবধানে তার স্ত্রী, ৪ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে বেশ ভালো থাকার গল্প শোনালেন মফিজুল। ফসল বিক্রি করে মেজো ছেলে সাদ্দাম হোসেনকে পাঠিয়েছেন বিদেশে। বড় ছেলেকে পুঁজি দিয়েছেন ব্যবসা করতে। এক ছেলে এবার এসএসসি পাস করেছে, অন্য ছেলে স্কুলে পড়ছে। একমাত্র মেয়েকে বড় আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ  পরিশ্রমে ফলানো ফসলের টাকায় পূর্বাচলের পাশে শিমুলিয়া গ্রামে বাড়ি করার জন্য আবারও জমি কিনেছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেয়া যায়, পূর্বাচলের ৫নং সেক্টরের গোবিন্দপুর এলাকায় নিজের করা মিষ্টিকুমড়া গাছের পরিচর্যা করছেন মফিজুল ইসলাম। এ বছর প্রায় দুই বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়ার চাষ করেছেন। প্রত্যাশার ১০ গুণ ফলন হয়েছে। এছাড়া আরেকটি জমিতে করেছেন শসার চাষ, করেছেন চিনাল (বাঙ্গির) চাষ। প্রতিদিন সকালে সেসব জমি থেকে সবজি তুলে নিজেই আবার উপশহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া তিনশ’ ফিট সড়কসহ আশপাশের বাজারে বিক্রি করেন। অনেক সময় আবার পাইকারও এসে কিনে নিয়ে যায় তার সবজি। পাওয়া আর প্রাপ্তিতে ভুলে গেছেন হারিয়ে যাওয়া উপশহরে সেই প্লটের অতৃপ্ততা। তারই মতো সে এলাকার গফুর, আমির হোসেন, কালাম মিয়া, রফিজউদ্দিনসহ যারা দালালের খপ্পরে পরে পূর্বাচলে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন, তারা মফিজুলের ভাগ্য পরিবর্তন দেখে পতিত জমিতে আবারও সবজি চাষ শুরু করছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মিষ্টিকুমড়ায় মিষ্টি হাসি

আপডেট টাইম : ০২:৪৩:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এক সময় গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভর্তি মাছ নিয়ে পুরোদস্তুর সুখী কৃষক ছিলেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পাঁচভাগের টেক এলাকার মফিজুল ইসলাম। রাজউকের উদ্যোগে নির্মাণাধীন আধুনিক বড় শহর পূর্বাচল তার সে সুখ কেড়ে নেয়। এ শহর নির্মাণের ফলে প্রতারণাসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মফিজুল। তার সুখের ঘরে নেমে আসে আঁধার। আবার পূর্বাচলের পতিত জমিই ফিরিয়ে এনেছে তার মুখের হারানো হাসি। এসব জমিতে চাষাবাদের মাধ্যমে নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মফিজুল। বীজ পুঁতে দিলেই ফলছে সোনা। সম্প্রতি মিষ্টিকুমড়া চাষে বাজিমাত করেছেন মফিজুল।
রাজধানীর পূর্ব প্রবেশদ্বার রূপগঞ্জে হতে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম আধুনিক শহর। এ  শহরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে স্থানীয় কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। গরুর দুধ বিক্রি করে চলত যাদের সংসার, তাদের অনেকেই এখন প্রাডো হাঁকিয়ে চলছেন। এর কারণ জমির ন্যায্য দাম পাওয়ার পরও অধিগ্রহণের কারণে অধিবাসী হিসেবে পেয়েছেন কোটি টাকার প্লট। কিন্তু মফিজুলের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। পূর্বাচলের জন্য জমি অধিগ্রহণ করার সময় পাঁচভাগের টেক এলাকার (বর্তমান ৫নং সেক্টর) আবেদ আলীর ছেলে মফিজুলের ভিটেবাড়িও অধিগ্রহণ করে। কিন্তু স্থানীয় এক দালালের প্রতারণার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত টাকা, অধিগ্রহণের টাকা কিংবা প্লট কোনোটায় ভাগ্য ফেরেনি মফিজুলের। রাতারাতি সব হয়ে গেছে দালালের নামে। কাগজপত্র জটিলতার কারণে পূর্বাচলের আরও ২৪ শতাংশ চাষের জমি চলে যায় সরকারের ঘরে। তার বাড়ি উচ্ছেদকালে ছোট ৫ ছেলেমেয়ে আর বৌ নিয়ে হঠাৎ করেই পথে এসে দাঁড়ায় সুখী কৃষক

। এখানেই শেষ নয় প্রবঞ্চনার। গবাদি পশু, সঞ্চিত অলঙ্কার আর টাকা-পয়সা, বসতঘর আর ঘরের সব আসবাবপত্র বিক্রি করে পূর্বাচলের পাশে মধুখালী গ্রামে মাথা গোঁজার জন্য ৫ শতাংশ জমি কিনেন মফিজুল। কিন্তু বিধিবাম, কাগজে ঘাপলা তৈরি করে সে জমিও দখল করে নেয় ভূমিদস্যুরা।
সব কিছু হারিয়ে পূর্বাচলের জমিতেই একটি ছোট মাটির ঘর তৈরি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। আর জীবিকা নির্বাহের জন্য বেছে নেন পূর্বাচলের পতিত জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ। সৃষ্টিকর্তা যেন এ মাটিতেই লিখে রেখেছেন মফিজুলের ভাগ্য পরিবর্তনের ইতিহাস। তিনি যে ফসলই চাষ করেন সেখানেই সোনা ফলতে থাকে। ৩ থেকে ৪ বছরের ব্যবধানে তার স্ত্রী, ৪ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে বেশ ভালো থাকার গল্প শোনালেন মফিজুল। ফসল বিক্রি করে মেজো ছেলে সাদ্দাম হোসেনকে পাঠিয়েছেন বিদেশে। বড় ছেলেকে পুঁজি দিয়েছেন ব্যবসা করতে। এক ছেলে এবার এসএসসি পাস করেছে, অন্য ছেলে স্কুলে পড়ছে। একমাত্র মেয়েকে বড় আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ  পরিশ্রমে ফলানো ফসলের টাকায় পূর্বাচলের পাশে শিমুলিয়া গ্রামে বাড়ি করার জন্য আবারও জমি কিনেছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেয়া যায়, পূর্বাচলের ৫নং সেক্টরের গোবিন্দপুর এলাকায় নিজের করা মিষ্টিকুমড়া গাছের পরিচর্যা করছেন মফিজুল ইসলাম। এ বছর প্রায় দুই বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়ার চাষ করেছেন। প্রত্যাশার ১০ গুণ ফলন হয়েছে। এছাড়া আরেকটি জমিতে করেছেন শসার চাষ, করেছেন চিনাল (বাঙ্গির) চাষ। প্রতিদিন সকালে সেসব জমি থেকে সবজি তুলে নিজেই আবার উপশহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া তিনশ’ ফিট সড়কসহ আশপাশের বাজারে বিক্রি করেন। অনেক সময় আবার পাইকারও এসে কিনে নিয়ে যায় তার সবজি। পাওয়া আর প্রাপ্তিতে ভুলে গেছেন হারিয়ে যাওয়া উপশহরে সেই প্লটের অতৃপ্ততা। তারই মতো সে এলাকার গফুর, আমির হোসেন, কালাম মিয়া, রফিজউদ্দিনসহ যারা দালালের খপ্পরে পরে পূর্বাচলে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন, তারা মফিজুলের ভাগ্য পরিবর্তন দেখে পতিত জমিতে আবারও সবজি চাষ শুরু করছেন।