ঢাকা ০২:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিশোরগঞ্জে রাজনৈতিক দলেই তারকা প্রার্থীদের ছড়াছড়ি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০১:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুলাই ২০১৭
  • ৩৮৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। এ জেলায় মোট ছয়টি (১৬২, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫, ১৬৬ ও ১৬৭) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থীরা।

তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতারাও মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কেউ কেউ হাওর এলাকায় দুর্গতদের সাহায্যে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এর আগে রোজায় ছিল ইফতার পার্টির ধুম।

এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশীরা পোস্টার ও ব্যানার টানিয়ে নিজের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। জেলার ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের অর্ধশতাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। প্রধান দুই দলেই রয়েছে হেভিওয়েট প্রার্থী। সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থীর তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। বাম দলগুলোর মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদের কয়েকজন প্রার্থীর পদচারণ লক্ষ্য করা গেছে।

কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) : এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি এ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার অবদানেই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আগামীতেও তিনি দলের একক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে রাষ্ট্রপতির মেজ ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিনের নামও শোনা যাচ্ছে।

এ আসনে বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হিলালী এর আগে তিনবার মনোনয়ন পেলেও জয়লাভ করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি ছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ (ভিপি সোহেল)। তিনি এ সরকারের নয় বছরে প্রায় পাঁচ বছরই জেলে ছিলেন।

এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহ রাব্বানী, জেলা বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্ন, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাইল মিয়া, পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু তাহের, হোসেনপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম মবিনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আশরাফউদ্দিন রেণু। কমিউনিস্ট পার্টি থেকে এ আসনে জেলা সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক ও বাসদ থেকে জেলা সমন্বয়ক শফীকুল ইসলাম কাজ করে যাচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) : এ আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের মো. সোহরাব উদ্দিন। তবে দলীয় কোন্দলে তিনি অনেকটা কোণঠাসা। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদ।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপরতা চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল, সাবেক কটিয়াদী উপজেলা চেয়ারম্যান লায়ন আলী আকবর, আওয়ামী লীগ নেতা ড. জায়েদ মো. হাবিবুল্লাহ, মঈনুজ্জামান অপু ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম। রাষ্ট্রপতির মেজ

ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন এ আসনেও নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি মেজর আখতারুজ্জামান (অব.)। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এলাকায় সক্রিয়। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী গণসংযোগ করছেন জেলা সহসভাপতি ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা রুহুল আমিন আকিল। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যেও তিনি বেশ জনপ্রিয়।

এ ছাড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশফাক আহমেদ জুন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাঁকন, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া, সাবেক মেয়র জালাল উদ্দিন, সাবেক ছাত্রনেতা সেলিমুজ্জামান, অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম জানু ও মোশাহিদুল ইসলাম তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ আসনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক ও বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ সাদরুলউলা মাজু এবং কমিউনিস্ট পার্টি থেকে জেলা সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বাসদ থেকে আশরাফউদ্দিন মেনুর নাম শোনা যাচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) : মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে এ আসনে বিগত দুটি নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। জোটগতভাবে নির্বাচন হলে তিনিই জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী। এর আগে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ড. মিজানুল হক।

বর্তমানে তিনি ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন এ কে এম আসাদুল হক,বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও তেজগাঁও মহিলা কলেজে পিন্সিপাল। ঢাকা বিভাগীয় সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতি শেখ কবীর আহমেদ, ব্যবসায়ী, করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ড. আনিসুর রহমান।

বিএনপি থেকে এ আসনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুকই দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার স্ত্রী রানা ফারুকও দলের মনোনয়ন পেতে পারেন। এ ছাড়া এ আসনে জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, উপজেলা চেয়ারম্যান তাইফুল ইসলাম (ভিপি সুমন) ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি জালাল মোহাম্মদ গাউস মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে সাবেক জেলা সভাপতি ডা. এনামুল হক ইদ্রিস কাজ করে যাচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) : এ আসনের বর্তমান এমপি রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক। তিনি এ আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এলাকার যোগাযোগব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। দলীয় কর্মসূচিতেও সক্রিয়। এ ছাড়া এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট  কামরুল আহসান শাহজাহানের নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে

বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া,ড্যাব নেতা ফেরদৌস আহমদ চৌধুরী লাকী, কিশোরগঞ্জ বারের সহসভাপতি ফজলুর রহমান শিকদার ও মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী অষ্টগ্রাম উপজেলা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী আফতাব। বাসদ থেকে তপু ভূঁইয়ার নাম শোনা যাচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) : আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বর্তমান এমপি আফজাল হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকনও জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি ফারুক আহমেদ শক্ত প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলাউল হক,  ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক রানা।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সহসভাপতি, বাজিতপুর উপজেলা সভাপতি ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল অনেকটাই নিশ্চিত। ঢাকা ও লন্ডন থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে তিনি নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবারের আগাম বন্যায় বানভাসিদের বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে জনপ্রতি ৫০ কেজি করে আটা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন তিনি। সাধারণ মানুষের মধ্যে তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

বিএনপির সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীরা হলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি সালেহুজ্জামানু খান রুনু, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নিকলী উপজেলা সভাপতি বদরুল মমিন মিঠু, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ নাসির, মাহমুদুর রহমান উজ্জ্বল ও তোফাজ্জল হোসেন বাদল। এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মুসলিম লীগ সভাপতি সাবেক গভর্নর মোনায়েম খানের ছেলে কামরুজ্জামান খান খসরু অনেকটাই নিশ্চিত ২০- দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে। এখানে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য মাহবুবুল হক। বাসদ থেকে এ আসনে সাজেদুল ইসলাম সেলিমের নাম শোনা যাচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) : আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনের বর্তমান এমপি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এলাকার উন্নয়নেও তার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। আগামীতেও তিনিই প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি ছাড়াও প্রার্থী হিসেবে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মুছা মিয়া সিআইপির নাম শোনা যাচ্ছে।

বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শরিফুল আলম। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় কর্মসূচিসহ বিভিন্নভাবে এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া ভৈরব উপজেলা চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ভৈরব উপজেলা সভাপতি আবদুস সালাম। বাসদ থেকে এ আসনে জুনায়েদুল ইসলামের নাম শোনা যাচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কিশোরগঞ্জে রাজনৈতিক দলেই তারকা প্রার্থীদের ছড়াছড়ি

আপডেট টাইম : ১২:০১:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। এ জেলায় মোট ছয়টি (১৬২, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫, ১৬৬ ও ১৬৭) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থীরা।

তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতারাও মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। কেউ কেউ হাওর এলাকায় দুর্গতদের সাহায্যে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এর আগে রোজায় ছিল ইফতার পার্টির ধুম।

এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশীরা পোস্টার ও ব্যানার টানিয়ে নিজের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। জেলার ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের অর্ধশতাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। প্রধান দুই দলেই রয়েছে হেভিওয়েট প্রার্থী। সাংগঠনিকভাবে বিপর্যস্ত জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থীর তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। বাম দলগুলোর মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদের কয়েকজন প্রার্থীর পদচারণ লক্ষ্য করা গেছে।

কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) : এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি এ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার অবদানেই এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আগামীতেও তিনি দলের একক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে রাষ্ট্রপতির মেজ ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিনের নামও শোনা যাচ্ছে।

এ আসনে বিএনপি থেকে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হিলালী এর আগে তিনবার মনোনয়ন পেলেও জয়লাভ করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি ছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ (ভিপি সোহেল)। তিনি এ সরকারের নয় বছরে প্রায় পাঁচ বছরই জেলে ছিলেন।

এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহ রাব্বানী, জেলা বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্ন, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসরাইল মিয়া, পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু তাহের, হোসেনপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম মবিনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আশরাফউদ্দিন রেণু। কমিউনিস্ট পার্টি থেকে এ আসনে জেলা সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক ও বাসদ থেকে জেলা সমন্বয়ক শফীকুল ইসলাম কাজ করে যাচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) : এ আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের মো. সোহরাব উদ্দিন। তবে দলীয় কোন্দলে তিনি অনেকটা কোণঠাসা। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদ।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তৎপরতা চালাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল, সাবেক কটিয়াদী উপজেলা চেয়ারম্যান লায়ন আলী আকবর, আওয়ামী লীগ নেতা ড. জায়েদ মো. হাবিবুল্লাহ, মঈনুজ্জামান অপু ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম। রাষ্ট্রপতির মেজ

ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন এ আসনেও নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি মেজর আখতারুজ্জামান (অব.)। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এলাকায় সক্রিয়। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী গণসংযোগ করছেন জেলা সহসভাপতি ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা রুহুল আমিন আকিল। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যেও তিনি বেশ জনপ্রিয়।

এ ছাড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশফাক আহমেদ জুন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুজ্জামান কাঁকন, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ইদ্রিস আলী ভূঁইয়া, সাবেক মেয়র জালাল উদ্দিন, সাবেক ছাত্রনেতা সেলিমুজ্জামান, অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম জানু ও মোশাহিদুল ইসলাম তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ আসনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক ও বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি সৈয়দ সাদরুলউলা মাজু এবং কমিউনিস্ট পার্টি থেকে জেলা সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বাসদ থেকে আশরাফউদ্দিন মেনুর নাম শোনা যাচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) : মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে এ আসনে বিগত দুটি নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। জোটগতভাবে নির্বাচন হলে তিনিই জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী। এর আগে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ড. মিজানুল হক।

বর্তমানে তিনি ছাড়াও বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন এ কে এম আসাদুল হক,বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও তেজগাঁও মহিলা কলেজে পিন্সিপাল। ঢাকা বিভাগীয় সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতি শেখ কবীর আহমেদ, ব্যবসায়ী, করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ড. আনিসুর রহমান।

বিএনপি থেকে এ আসনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুকই দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে কোনো কারণে তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার স্ত্রী রানা ফারুকও দলের মনোনয়ন পেতে পারেন। এ ছাড়া এ আসনে জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, উপজেলা চেয়ারম্যান তাইফুল ইসলাম (ভিপি সুমন) ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি জালাল মোহাম্মদ গাউস মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে সাবেক জেলা সভাপতি ডা. এনামুল হক ইদ্রিস কাজ করে যাচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) : এ আসনের বর্তমান এমপি রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক। তিনি এ আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এলাকার যোগাযোগব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। দলীয় কর্মসূচিতেও সক্রিয়। এ ছাড়া এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট  কামরুল আহসান শাহজাহানের নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে

বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া,ড্যাব নেতা ফেরদৌস আহমদ চৌধুরী লাকী, কিশোরগঞ্জ বারের সহসভাপতি ফজলুর রহমান শিকদার ও মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী অষ্টগ্রাম উপজেলা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী আফতাব। বাসদ থেকে তপু ভূঁইয়ার নাম শোনা যাচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) : আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বর্তমান এমপি আফজাল হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকনও জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি ফারুক আহমেদ শক্ত প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলাউল হক,  ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক রানা।

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সহসভাপতি, বাজিতপুর উপজেলা সভাপতি ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল অনেকটাই নিশ্চিত। ঢাকা ও লন্ডন থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে তিনি নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবারের আগাম বন্যায় বানভাসিদের বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে জনপ্রতি ৫০ কেজি করে আটা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন তিনি। সাধারণ মানুষের মধ্যে তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

বিএনপির সম্ভাব্য অন্য প্রার্থীরা হলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি সালেহুজ্জামানু খান রুনু, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নিকলী উপজেলা সভাপতি বদরুল মমিন মিঠু, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ নাসির, মাহমুদুর রহমান উজ্জ্বল ও তোফাজ্জল হোসেন বাদল। এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে মুসলিম লীগ সভাপতি সাবেক গভর্নর মোনায়েম খানের ছেলে কামরুজ্জামান খান খসরু অনেকটাই নিশ্চিত ২০- দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে। এখানে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য মাহবুবুল হক। বাসদ থেকে এ আসনে সাজেদুল ইসলাম সেলিমের নাম শোনা যাচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) : আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনের বর্তমান এমপি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এলাকার উন্নয়নেও তার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। আগামীতেও তিনিই প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি ছাড়াও প্রার্থী হিসেবে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মুছা মিয়া সিআইপির নাম শোনা যাচ্ছে।

বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী জেলা সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শরিফুল আলম। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দলীয় কর্মসূচিসহ বিভিন্নভাবে এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন। এ ছাড়া ভৈরব উপজেলা চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ভৈরব উপজেলা সভাপতি আবদুস সালাম। বাসদ থেকে এ আসনে জুনায়েদুল ইসলামের নাম শোনা যাচ্ছে।