ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার এক জনসভায় উপস্থিত ছিলেন তরুণ অপু উকিল। সেখানে শেখ হাসিনার ভাষণ শুনেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতি করার।
এভাবেই নিজের রাজনীতিতে আসার গল্প শোনাচ্ছিলেন যুব মহিলা লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল। জানালেন, পরিবারের সদস্যরা আগে থেকেই ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তরুণ বয়সে লেখালেখি করতেন তিনি। বিশেষ করে ইত্তেফাক ও বাংলার বাণী পত্রিকার সাহিত্য পাতায় লেখা পাঠাতেন। লিখতেন কবিতা। যার প্রধান উপজীব্য ছিল রাজনীতি।
লেখালেখির সূত্র ধরেই একসময় পরিচয় হয় বাংলার বাণীতে কর্মরত আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি অপুকে রাজনীতি করতে উৎসাহ দিতেন। বলতেন, ‘শুধু লেখালিখি করলেই হবে না, রাজনীতিও করতে হবে।’
এরপর যখন উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন বদরুন্নেসা কলেজে, তখন থেকেই শুরু হয় অপুর মাঠের রাজনীতি।
একপর্যায়ে ছাত্রলীগের একটি ইউনিটের সভাপতি হন অপু। সে সময় একদিন ওবায়দুল কাদের তাঁকে ডেকে প্রেম করতে নিষেধ করেন।
স্মৃতিচারণা করে অপু উকিল বলেন, ‘একদিন বাংলার বাণীতে কাদের ভাই আমাকে বললেন, তুমি প্রেম কোরো না। তোমার বিয়ে আমি ঠিক করে রেখেছি। আমি মনে করেছিলাম, তিনি মজা করেছেন। আমিও বলেছি আগে পড়াশোনা শেষ করি। তারপর আপনি বিয়ে দিয়ে দিয়েন।’
পরে অপু জানতে পারেন এই একই কথা ওবায়দুল কাদের বলেছেন আরো একজনকে। আর তিনি হলেন তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
অপু বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের তখন ছাত্রলীগের দেখাশোনা করতেন। তিনি যেহেতু বাংলার বাণীতে বসতেন, আমরা বিভিন্ন পরামর্শ নিতে সেখানে যেতাম। অসীম কুমার উকিলও যেত। আর বিভিন্ন মিছিল, মিটিংয়ে নিয়মিত দেখা হতো। তবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে নেতাকর্মীরা যেভাবে কথা বলতে পারছেন, তখন সেই পরিবেশ ছিল না। তিনি আমাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির নির্দেশ দিতেন, আমরা তা পালন করতাম।’
‘এরপর একদিন কাদের ভাই আমাকে বললেন, দেখো হিন্দু মেয়েরা রাজনীতিতে কম আসে। আর এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের বড় পদে কোনো হিন্দু ছেলে যায়নি। আমি চাই তোমরা যেন রাজনীতি থেকে হারিয়ে না যাও। তাই তোমাদের বিয়ে দিতে চাই আমি। তবে আগে তোমরা কথা বলো। দুজনকে ভালো লাগলেই তোমরা আগাতে পারো। তাঁকেও (অসীম কুমার উকিল) তিনি একই কথা বলেছেন,’ যোগ করেন অপু।
এভাবেই নিজের বিয়ের প্রস্তাবের বিষয়টি জানালেন যুব মহিলা লীগের এই নেতা। বলেন, ‘এরই মধ্যে কাদের ভাই জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও বিষয়টা জানান। এরপর বিএনপির আমলে বেগম বদরুন্নেসা কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে অংশ নিই আমি। সে সময় ছাত্রদলের নেতারা ভোট কারচুপি করার জন্য অনেক গোলমাল করেছিল। আমরা ভেতরে আটকা পড়লাম। সে সময় অসীম কুমার উকিলকে আওয়ামী লীগ সভাপতি (শেখ হাসিনা) নির্দেশ বললেন, ওখানে কী সমস্যা হচ্ছে দেখো। এটা প্রধানমন্ত্রীর একটা পরোক্ষ সমর্থন ছিল। এরপর আমাদের মধ্যে কথা শুরু হয়।’
আগে থেকে পরিচয় থাকলেও প্রথাগত প্রেম করেননি বলে জানান অপু। নিজেদের নিয়ে স্বপ্ন বোনার চেয়ে রাজনীতি নিয়েই দুজনের মধ্যে বেশি কথা হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘তবে প্রেম বলতে যেটা বোঝায় যেমন আলাদাভাবে নীরবে কথা বলা, সেটা আমরা করি নাই। আর মোবাইল তো ছিল না। মধুর ক্যান্টিন, পার্টি অফিসে গেলেই আমাদের কথা হতো। তবে সেখানে রাজনৈতিক কথা ছিল বেশি।’
এরপর বিয়ে করেন অপু ও অসীম কুমার উকিল। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এই দম্পতি এখন দুই সন্তানের জনক-জননী। সন্তান-সংসার সামলে দাপটের সঙ্গে চষে বেড়াচ্ছেন রাজনীতির মাঠ।