জামালপুর এবং শেরপুরের মাঝামাঝিতে ব্রহ্মপুত্র নদী । নদীর পার ঘেসে ছোট্ট একটি গ্রাম চর পক্ষীমারি। প্রায় নব্বই বছর আগে গ্রামটি কলেরা আক্রান্ত হলো হঠাৎ করেই। তখনো কলেরার কারণটা অজানা, কোন ওষুধও আবিষ্কার হয়নি । সবাই শুধু বলছে কথা বোলো না, কিছু খেয়ো না, মুখ খোলা মানা। মনে মনে শুধু দোয়া পড়।
তখন সুখী একটি পরিবার কলেরায় আক্রান্ত হল। পরিবারের মা, যুবক ছেলে মেয়েসহ আরো অনেকে কলেরায় অকাল মৃত্যুকে বরণ করে নিলো। রয়ে গেলো কেবল বাবা আর মৃত যুবক ছেলের সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ প্রায় যুবতী বৌ। ওই বাড়ির বৌ মাত্র তিন মাস আগে যমজ সন্তানের মা হয়েছে। স্বামী, শাশুড়ী, ননদ সবাইকে হারিয়ে অসহায় সেই বৌ অনেক কাঁদল, বিলাপ করলো, দুদিন না খেয়ে থাকলো। কিন্তু স্বামীর মৃত্যু শোক এবং নিজের অসুখ ছাপিয়ে কিশোরী মেয়েটি ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করতে লাগলো। ছোট্ট শিশু দুটিই মায়ের দুধের উপর নির্ভরশীল। সদ্য বিধবা বৌটি ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে পান্তা ভাত খেতে লাগলো। বর্তমান সময়ে যে রাইস স্যালাইন তার সমস্ত উপাদান পান্তাভাতে আছে। তাই অবশেষে ওই পান্তাই তাঁকে এবং তাঁর শিশুদেরকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেলো। যার ফলশ্রুতিতে আমার এই পৃথিবীতে আসা।
নিজের জীবনের সংগ্রাম থেকে বুঝি ৯০ বছর আগে কিশোরী একটি মেয়েকে দুটো দুধের বাচ্চা নিয়ে কতখানি সংগ্রাম করতে হয়েছিলো। দগ্ধ হতে হয়েছিলো, যুদ্ধ করে করে জয়ী হতে হয়েছিলো। আমি আমার দাদীর কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁর নিরন্তর সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আজকের আমি। হ্যাঁ ওই দিনের কিশোরী মেয়েটিই আমার দাদী। যে বয়সে আমার মেয়েটি পুতুল নিয়ে খেলা করে, আয়নায় দাঁড়িয়ে অচেনা নিজেকে আবিষ্কারের চেষ্টা করে, সেই একই বয়সে আমার দাদীকে নামতে হয়েছে কঠিন জীবন যুদ্ধে, তাও আবার জলজ্যান্ত দুটো শিশুকে সঙ্গে নিয়ে।
অনেক বছর পড় আবিষ্কার হল ডাইরিয়া হলে খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। এখন ডাইরিয়া কোন রোগই নয়। অথচ আমার দাদীকে সারাটা জীবন একা একা কাটাতে হয়েছে। দাদী প্রায় একশত বছর বেঁচে ছিলেন। কতগুলো সময়,কত উদাস দুপুর, মন খারাপ করা সন্ধ্যা, কত বিনিদ্র রজনী, কত বসন্ত তাঁকে একা কাটাতে হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই প্রকৃতির সাথে লড়াই করে করে আমাদের টিকে থাকতে হয়েছে। কখনো দানব-দেবতার সাথে, কখনো ঝড়-বৃষ্টির সাথে, কখনো রোগ-শোকের সাথে।
আমার দাদা চিকিৎসাহীনতায় মারা গেছেন ডাইরিয়া আক্রান্ত হয়ে, আর আমার স্বামী ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে । আমি পুরো পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেছি কোথাও ক্যান্সারের ওষুধ পাওয়া যায় কিনা। না, পাওয়া যায়নি। পানি পড়া, লোহা পড়া, ঝাড়-ফুঁক, দোয়া-তাবিজ, কোন কিছু বাদ দেইনি। কিন্তু অমোঘ নিয়তি তাঁকে ছেড়ে দেয়নি। তখন আমি প্রতিদিন এলোভেরা খেতাম গ্যাসটিকের সমস্যা, এই জন্য। কিন্তু তিক্ত স্বাদের জন্য কখনো তাঁকে বলিনি খেতে। ওর মৃত্যুর পর জেনেছি এলোভেরা ব্রেইন টিউমারের মহা ঔষধ। জানার পর অলক্ষ্যেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠেছে। মনে হয়েছে হয়তো ওকে বাঁচানো যেতো! আজ দেখলাম আতাফল ম্যালিগন্যান্ট হলে কেমো থেরাপীর থেকে বেশি এবং ভালো কাজ করে। সত্যিই কতখানি কার্যকর জানি না। কিন্তু নিশ্চিত জানি, একদিন যক্ষ্মা, টাইফয়েড, কলেরা, গুটি বসন্তর মতো ক্যান্সারের চিকিৎসাও বের হবে। হয়তো নাগালের মধ্যেই কোন ফলমূল, গাছ কিংবা শিকড় বাকড়ের মধ্যেই পাওয়া যেতে পারে জীবনক্ষয়ী ক্যান্সারের ওষুধ।
যারা চলে গেছে শত চেষ্টাতেও তাঁরা আর ফিরে আসবে না কোনোদিন। কিন্তু যারা বেঁচে আছে তাঁদের জীবন রক্ষায় অতি দ্রুত ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কার হোক, আর কোন মানুষ চিকিৎসাহীনতায় অকালে ঝড়ে না যাক, আর কোন পরিবার প্রিয় জনকে হারিয়ে সর্বসান্ত না হোক এই কামনাই করি ।
তখন সুখী একটি পরিবার কলেরায় আক্রান্ত হল। পরিবারের মা, যুবক ছেলে মেয়েসহ আরো অনেকে কলেরায় অকাল মৃত্যুকে বরণ করে নিলো। রয়ে গেলো কেবল বাবা আর মৃত যুবক ছেলের সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ প্রায় যুবতী বৌ। ওই বাড়ির বৌ মাত্র তিন মাস আগে যমজ সন্তানের মা হয়েছে। স্বামী, শাশুড়ী, ননদ সবাইকে হারিয়ে অসহায় সেই বৌ অনেক কাঁদল, বিলাপ করলো, দুদিন না খেয়ে থাকলো। কিন্তু স্বামীর মৃত্যু শোক এবং নিজের অসুখ ছাপিয়ে কিশোরী মেয়েটি ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করতে লাগলো। ছোট্ট শিশু দুটিই মায়ের দুধের উপর নির্ভরশীল। সদ্য বিধবা বৌটি ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে পান্তা ভাত খেতে লাগলো। বর্তমান সময়ে যে রাইস স্যালাইন তার সমস্ত উপাদান পান্তাভাতে আছে। তাই অবশেষে ওই পান্তাই তাঁকে এবং তাঁর শিশুদেরকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেলো। যার ফলশ্রুতিতে আমার এই পৃথিবীতে আসা।
নিজের জীবনের সংগ্রাম থেকে বুঝি ৯০ বছর আগে কিশোরী একটি মেয়েকে দুটো দুধের বাচ্চা নিয়ে কতখানি সংগ্রাম করতে হয়েছিলো। দগ্ধ হতে হয়েছিলো, যুদ্ধ করে করে জয়ী হতে হয়েছিলো। আমি আমার দাদীর কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁর নিরন্তর সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আজকের আমি। হ্যাঁ ওই দিনের কিশোরী মেয়েটিই আমার দাদী। যে বয়সে আমার মেয়েটি পুতুল নিয়ে খেলা করে, আয়নায় দাঁড়িয়ে অচেনা নিজেকে আবিষ্কারের চেষ্টা করে, সেই একই বয়সে আমার দাদীকে নামতে হয়েছে কঠিন জীবন যুদ্ধে, তাও আবার জলজ্যান্ত দুটো শিশুকে সঙ্গে নিয়ে।
অনেক বছর পড় আবিষ্কার হল ডাইরিয়া হলে খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। এখন ডাইরিয়া কোন রোগই নয়। অথচ আমার দাদীকে সারাটা জীবন একা একা কাটাতে হয়েছে। দাদী প্রায় একশত বছর বেঁচে ছিলেন। কতগুলো সময়,কত উদাস দুপুর, মন খারাপ করা সন্ধ্যা, কত বিনিদ্র রজনী, কত বসন্ত তাঁকে একা কাটাতে হয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই প্রকৃতির সাথে লড়াই করে করে আমাদের টিকে থাকতে হয়েছে। কখনো দানব-দেবতার সাথে, কখনো ঝড়-বৃষ্টির সাথে, কখনো রোগ-শোকের সাথে।
আমার দাদা চিকিৎসাহীনতায় মারা গেছেন ডাইরিয়া আক্রান্ত হয়ে, আর আমার স্বামী ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে । আমি পুরো পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেছি কোথাও ক্যান্সারের ওষুধ পাওয়া যায় কিনা। না, পাওয়া যায়নি। পানি পড়া, লোহা পড়া, ঝাড়-ফুঁক, দোয়া-তাবিজ, কোন কিছু বাদ দেইনি। কিন্তু অমোঘ নিয়তি তাঁকে ছেড়ে দেয়নি। তখন আমি প্রতিদিন এলোভেরা খেতাম গ্যাসটিকের সমস্যা, এই জন্য। কিন্তু তিক্ত স্বাদের জন্য কখনো তাঁকে বলিনি খেতে। ওর মৃত্যুর পর জেনেছি এলোভেরা ব্রেইন টিউমারের মহা ঔষধ। জানার পর অলক্ষ্যেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠেছে। মনে হয়েছে হয়তো ওকে বাঁচানো যেতো! আজ দেখলাম আতাফল ম্যালিগন্যান্ট হলে কেমো থেরাপীর থেকে বেশি এবং ভালো কাজ করে। সত্যিই কতখানি কার্যকর জানি না। কিন্তু নিশ্চিত জানি, একদিন যক্ষ্মা, টাইফয়েড, কলেরা, গুটি বসন্তর মতো ক্যান্সারের চিকিৎসাও বের হবে। হয়তো নাগালের মধ্যেই কোন ফলমূল, গাছ কিংবা শিকড় বাকড়ের মধ্যেই পাওয়া যেতে পারে জীবনক্ষয়ী ক্যান্সারের ওষুধ।
যারা চলে গেছে শত চেষ্টাতেও তাঁরা আর ফিরে আসবে না কোনোদিন। কিন্তু যারা বেঁচে আছে তাঁদের জীবন রক্ষায় অতি দ্রুত ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কার হোক, আর কোন মানুষ চিকিৎসাহীনতায় অকালে ঝড়ে না যাক, আর কোন পরিবার প্রিয় জনকে হারিয়ে সর্বসান্ত না হোক এই কামনাই করি ।