ঢাকা ০৭:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধারাবাহিকভাবে কমছে মাছ রপ্তানি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৫০:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭
  • ৩৪২ বার
হাওর বার্তা ডেস্কঃ  ২০১৬-১৭ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে এক দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও তা দুই দশমিক ৬৯ শতাংশ কম। অর্থবছরের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি আয় কমছে এ খাতে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬৩ কোটি ডলারের মাছ রপ্তানি হয়। পরের দুই অর্থবছরে তা যথাক্রমে ৫৬ কোটি ডলার ও ৫৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলারে নেমে আসে।
বাংলাদেশ থেকে যত জীবিত ও হিমায়িত মাছ রপ্তানি হয় তার ৮৫ শতাংশ চিংড়ি। আর চিংড়ি রপ্তানি কমে যাওয়ায় এ খাতের রপ্তানি আয়ে মন্দাভাব দেখা যাচ্ছে। হিমায়িত মাছ রপ্তানিকারকরা বলছেন, চিংড়ির উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণেই হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি কমে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে চিংড়ির উৎপাদন কমছে। অন্যদিকে গত কয়েক বছর ধরে ইলিশ মাছ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় সামগ্রিকভাবে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি কমছে বলে তাদের অভিমত। তারা বলছেন, উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চিংড়ি চাষযোগ্য এলাকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন করা দরকার। এ ছাড়া বাড়তি ফলনের জন্য বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে ভেন্নামী জাতের চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। সেটা না করতে পারলে প্রতিযোগী দেশগুলো অনেক এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) তথ্যে দেখা গেছে, দেশে প্রায় পৌনে তিন লাখ হেক্টর জমিতে চিংড়ির চাষাবাদ হয়। যেখানে বছরে ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদিত হয়। চিংড়ি ও মাছ প্রক্রিয়াকরণের জন্য সারা দেশে ৭০টি কারখানা আছে। বাংলাদেশ থেকে হিমায়িত ও জীবিত মাছ ৬০টি দেশে রপ্তানি হয়। এসব দেশে বছরে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন চিংড়ি রপ্তানি হয়।
বিএফএফইএ সাবেক সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, এ খাতে রপ্তানি বাড়ার কোন কারণ নেই। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে যেয়ে তিনি বলেন, রপ্তানি করতে হলে আগে উৎপাদন করতে হবে। আর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি কোন পদক্ষেপ নেই। ফলে উৎপাদনও বাড়ছে না, কমে যাচ্ছে রপ্তানি আয়। সরকারের পক্ষ থেকে মৎস্য অধিদপ্তরের কেউ এদিকে মনোযোগ দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী যত চিংড়ি রপ্তানি হয় তার ৮০ শতাংশ ভেন্নামী প্রজাতির চিংড়ি। চিংড়ি উৎপাদন বাড়াতে এ প্রজাতের চিংড়ি রপ্তানির বিকল্প নেই। কারণ, এটা সস্তা প্রজাতির চিংড়ি। তিনি বলেন, ভারত আমাদের চেয়ে অনেক বেশি চিংড়ি উৎপাদন করে। আর ভেন্নামী প্রজাতির চিংড়ি অল্প দামে রপ্তানি করতে পারে। ফলে তাদের থেকে চিংড়ি কেনে বিদেশিরা। এ প্রজাতির চিংড়ি বিষয়ে তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এ প্রজাতির চিংড়ি চাষের অনুমতি চাওয়া হলেও সরকার দিচ্ছে না। পরিবেশের ক্ষতি হবে এমন অজুহাত দেওয়া হচ্ছে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের হিমায়িত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এ সময়ে শুধু চিংড়ি রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৪৪ কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। যা মোট হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ। অবশ্য এক্ষেত্রে আগের অর্থবছরের চেয়ে আয় কমেছে। গত বছরে চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এছাড়া জীবিত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৮০ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। যা গত বছরের চেয়ে এক দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা সাড়ে ১৯ শতাংশ কম। চিংড়ি বাড়ে অন্যান্য হিমায়িত মাছ রপ্তানি হয়েছে চার কোটি ৪০ লাখ ৪০ হাজার ডলারের। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ছয় দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আট দশমিক ২৫ শতাংশ কম।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ধারাবাহিকভাবে কমছে মাছ রপ্তানি

আপডেট টাইম : ০৭:৫০:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭
হাওর বার্তা ডেস্কঃ  ২০১৬-১৭ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। যা গত অর্থবছরের চেয়ে এক দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও তা দুই দশমিক ৬৯ শতাংশ কম। অর্থবছরের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি আয় কমছে এ খাতে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬৩ কোটি ডলারের মাছ রপ্তানি হয়। পরের দুই অর্থবছরে তা যথাক্রমে ৫৬ কোটি ডলার ও ৫৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলারে নেমে আসে।
বাংলাদেশ থেকে যত জীবিত ও হিমায়িত মাছ রপ্তানি হয় তার ৮৫ শতাংশ চিংড়ি। আর চিংড়ি রপ্তানি কমে যাওয়ায় এ খাতের রপ্তানি আয়ে মন্দাভাব দেখা যাচ্ছে। হিমায়িত মাছ রপ্তানিকারকরা বলছেন, চিংড়ির উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণেই হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি কমে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে চিংড়ির উৎপাদন কমছে। অন্যদিকে গত কয়েক বছর ধরে ইলিশ মাছ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় সামগ্রিকভাবে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি কমছে বলে তাদের অভিমত। তারা বলছেন, উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চিংড়ি চাষযোগ্য এলাকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন করা দরকার। এ ছাড়া বাড়তি ফলনের জন্য বিশেষ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে ভেন্নামী জাতের চিংড়ি চাষের অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। সেটা না করতে পারলে প্রতিযোগী দেশগুলো অনেক এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) তথ্যে দেখা গেছে, দেশে প্রায় পৌনে তিন লাখ হেক্টর জমিতে চিংড়ির চাষাবাদ হয়। যেখানে বছরে ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি উৎপাদিত হয়। চিংড়ি ও মাছ প্রক্রিয়াকরণের জন্য সারা দেশে ৭০টি কারখানা আছে। বাংলাদেশ থেকে হিমায়িত ও জীবিত মাছ ৬০টি দেশে রপ্তানি হয়। এসব দেশে বছরে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন চিংড়ি রপ্তানি হয়।
বিএফএফইএ সাবেক সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, এ খাতে রপ্তানি বাড়ার কোন কারণ নেই। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে যেয়ে তিনি বলেন, রপ্তানি করতে হলে আগে উৎপাদন করতে হবে। আর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি কোন পদক্ষেপ নেই। ফলে উৎপাদনও বাড়ছে না, কমে যাচ্ছে রপ্তানি আয়। সরকারের পক্ষ থেকে মৎস্য অধিদপ্তরের কেউ এদিকে মনোযোগ দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী যত চিংড়ি রপ্তানি হয় তার ৮০ শতাংশ ভেন্নামী প্রজাতির চিংড়ি। চিংড়ি উৎপাদন বাড়াতে এ প্রজাতের চিংড়ি রপ্তানির বিকল্প নেই। কারণ, এটা সস্তা প্রজাতির চিংড়ি। তিনি বলেন, ভারত আমাদের চেয়ে অনেক বেশি চিংড়ি উৎপাদন করে। আর ভেন্নামী প্রজাতির চিংড়ি অল্প দামে রপ্তানি করতে পারে। ফলে তাদের থেকে চিংড়ি কেনে বিদেশিরা। এ প্রজাতির চিংড়ি বিষয়ে তিনি বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এ প্রজাতির চিংড়ি চাষের অনুমতি চাওয়া হলেও সরকার দিচ্ছে না। পরিবেশের ক্ষতি হবে এমন অজুহাত দেওয়া হচ্ছে।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের হিমায়িত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৫২ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এ সময়ে শুধু চিংড়ি রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৪৪ কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। যা মোট হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ। অবশ্য এক্ষেত্রে আগের অর্থবছরের চেয়ে আয় কমেছে। গত বছরে চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এছাড়া জীবিত মাছ রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৮০ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। যা গত বছরের চেয়ে এক দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা সাড়ে ১৯ শতাংশ কম। চিংড়ি বাড়ে অন্যান্য হিমায়িত মাছ রপ্তানি হয়েছে চার কোটি ৪০ লাখ ৪০ হাজার ডলারের। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ছয় দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আট দশমিক ২৫ শতাংশ কম।