ঢাকা ০১:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভুট্টায় কৃষকের মুখে হাসি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:২৭:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০১৭
  • ৩৯৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভুট্টা চাষ করে সোনালি স্বপ্ন দেখছেন রাজশাহীর চাষি। চলতি বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার অধিকাংশ উপজেলায় প্রতি শতাংশ জমিতে ১ মণের অধিক ফলন হয়েছে। একইসঙ্গে মৌসুমের শুরুতে নতুন সংগৃহীত ভুট্টা বাজারে ভালো মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় হাটবাজারে প্রতি মণ নতুন ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ৬২০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়। এতে সোনালি স্বপ্ন দেখছেন চাষি। ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জমি থেকে সংগ্রহ করা ভুট্টা ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষি পরিবার। ঢাকা ও সিলেট থেকে ব্যবসায়ীরা এসে স্থানীয় বাজারে এসব ভুট্টা কিনছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রবি ও খরিপ মৌসুমে বিভিন্ন উপজেলায় ১৫ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রবি মৌসুমে ৫ হাজার ৯৭৫ হেক্টর এবং খরিপ মৌসুমে ৯ হাজার ৬৪০ হেক্টরে চাষ করা হয়। চলতি বছর অনুকূল আবহাওয়া থাকায় রবি মৌসুমের ভুট্টার উৎপাদন ভালো হয়েছে। এখন ভুট্টা ছড়ানোর কাজে ব্যস্ততা বেড়েছে চাষি পরিবারে। পাশাপাশি ভুট্টা বাজারজাতকরণের জন্য চলছে শুকানোর কাজ।

বাগমারা উপজেলার ভটখালী গ্রামে ভুট্টা ছড়ানো ও শুকাতে ব্যস্ত রয়েছেন আবদুল ওহাব ও আনসার আলী। সঙ্গে আছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, এ বছর ভুট্টার আবাদ ভালো হয়েছে। তবে কালবৈশাখী ঝড়ে কোনো কোনো ক্ষেতে আবাদের ক্ষতি হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে ভুট্টা আবাদে এবার সেচ ও খরচ কম লেগেছে। বাড়তি ফসল হিসেবে তারা ভুট্টা চাষ করে থাকেন। পরিচর্যারও তেমন প্রয়োজন পড়ে না। শুকনো মৌসুমে জমিতে তিন থেকে চারটি সেচ ও পরিমিত সার প্রয়োগ করলেই ভালো ফলন হয়।

পবা উপজেলার পিল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক নবাব আলী ও শহীদ আলী জানান, তারা এ বছর ৩ বিঘায় ভুট্টা চাষ করেন। প্রতি শতাংশে ১ মণের অধিক ফলন হয়েছে। নতুন সংগৃহীত ভুট্টা বাজারে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে ভুট্টা চাষে লাভই হচ্ছে। কারণ ভুট্টা চাষে খুব বেশি খরচ হয় না। কিছুদিন পর ভুট্টার দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তারা। ভুট্টা চাষে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) সূত্রে জানা গেছে, ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১ শতাংশ আমিষজাতীয় উপাদান রয়েছে। আমিষে অ্যামাইনো এসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমাণে আছে। এছাড়া হলুদ রঙের ভুট্টাদানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন ‘এ’ থাকে। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নতমানের গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। শুধু পশু ও মুরগির খামার এবং মাছের চাহিদা মেটানোর জন্যই বছরে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টন ভুট্টাদানা প্রয়োজন। বাংলাদেশে ভুট্টার জমি দ্রুত বাড়ছে। বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। তবে লক্ষ রাখতে হবে যেন জমিতে পানি জমে না থাকে।

দেশে বর্ণালী, শুভ্রা, খই ভুট্টা, মোহর, বারি ভুট্টা-৫, বারি ভুট্টা-৬ ও বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১ নামের সাতটি জাতের ভুট্টার চাষ হয়। ভুট্টার মোচা চক?চক? খড়ের রঙ ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যাবে। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে। বীজ হিসেবে মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা সংগ্রহ করতে হবে।

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মনজুরে মাওলা বলেন, এবার ভুট্টার ফলন ও দাম দুই-ই ভালো। আবাদ ভালো হলে প্রতি শতাংশে ১ মণের অধিক ফলন হয়।

তিনি বলেন, ভুট্টার আবাদ বাড়ানোর জন্য ঝড়, খরা ও লবণাক্তসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের পথে রয়েছে। এরই মধ্যে ঝড়সহিষ্ণু জাত বারি ভুট্টা-১২ ও বারি ভুট্টা-১৩ উদ্ভাবিত হয়েছে। এছাড়া মানুষের খাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার বাড়াতে সাদা ভুট্টার জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। ফুল আসার আগে একটি মাত্র সেচ দিয়ে ভুট্টার আবাদ করা সম্ভব- এমন জাতও উদ্ভাবন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভুট্টার উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। তুলনামূলক সেচ কম প্রয়োজন হওয়ায় কৃষক এখন ভুট্টার আবাদ করছেন। উন্নত বীজ ও দামের নিশ্চয়তা দিতে পারলে ভুট্টা চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভুট্টায় কৃষকের মুখে হাসি

আপডেট টাইম : ০৭:২৭:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভুট্টা চাষ করে সোনালি স্বপ্ন দেখছেন রাজশাহীর চাষি। চলতি বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার অধিকাংশ উপজেলায় প্রতি শতাংশ জমিতে ১ মণের অধিক ফলন হয়েছে। একইসঙ্গে মৌসুমের শুরুতে নতুন সংগৃহীত ভুট্টা বাজারে ভালো মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় হাটবাজারে প্রতি মণ নতুন ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ৬২০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়। এতে সোনালি স্বপ্ন দেখছেন চাষি। ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জমি থেকে সংগ্রহ করা ভুট্টা ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষি পরিবার। ঢাকা ও সিলেট থেকে ব্যবসায়ীরা এসে স্থানীয় বাজারে এসব ভুট্টা কিনছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রবি ও খরিপ মৌসুমে বিভিন্ন উপজেলায় ১৫ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রবি মৌসুমে ৫ হাজার ৯৭৫ হেক্টর এবং খরিপ মৌসুমে ৯ হাজার ৬৪০ হেক্টরে চাষ করা হয়। চলতি বছর অনুকূল আবহাওয়া থাকায় রবি মৌসুমের ভুট্টার উৎপাদন ভালো হয়েছে। এখন ভুট্টা ছড়ানোর কাজে ব্যস্ততা বেড়েছে চাষি পরিবারে। পাশাপাশি ভুট্টা বাজারজাতকরণের জন্য চলছে শুকানোর কাজ।

বাগমারা উপজেলার ভটখালী গ্রামে ভুট্টা ছড়ানো ও শুকাতে ব্যস্ত রয়েছেন আবদুল ওহাব ও আনসার আলী। সঙ্গে আছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, এ বছর ভুট্টার আবাদ ভালো হয়েছে। তবে কালবৈশাখী ঝড়ে কোনো কোনো ক্ষেতে আবাদের ক্ষতি হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে ভুট্টা আবাদে এবার সেচ ও খরচ কম লেগেছে। বাড়তি ফসল হিসেবে তারা ভুট্টা চাষ করে থাকেন। পরিচর্যারও তেমন প্রয়োজন পড়ে না। শুকনো মৌসুমে জমিতে তিন থেকে চারটি সেচ ও পরিমিত সার প্রয়োগ করলেই ভালো ফলন হয়।

পবা উপজেলার পিল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক নবাব আলী ও শহীদ আলী জানান, তারা এ বছর ৩ বিঘায় ভুট্টা চাষ করেন। প্রতি শতাংশে ১ মণের অধিক ফলন হয়েছে। নতুন সংগৃহীত ভুট্টা বাজারে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে ভুট্টা চাষে লাভই হচ্ছে। কারণ ভুট্টা চাষে খুব বেশি খরচ হয় না। কিছুদিন পর ভুট্টার দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তারা। ভুট্টা চাষে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।

কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) সূত্রে জানা গেছে, ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান বেশি। এতে প্রায় ১১ শতাংশ আমিষজাতীয় উপাদান রয়েছে। আমিষে অ্যামাইনো এসিড, ট্রিপটোফ্যান ও লাইসিন অধিক পরিমাণে আছে। এছাড়া হলুদ রঙের ভুট্টাদানায় প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ মিলিগ্রাম ক্যারোটিন বা ভিটামিন ‘এ’ থাকে। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য এবং ভুট্টার গাছ ও সবুজ পাতা উন্নতমানের গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। শুধু পশু ও মুরগির খামার এবং মাছের চাহিদা মেটানোর জন্যই বছরে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার টন ভুট্টাদানা প্রয়োজন। বাংলাদেশে ভুট্টার জমি দ্রুত বাড়ছে। বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী। তবে লক্ষ রাখতে হবে যেন জমিতে পানি জমে না থাকে।

দেশে বর্ণালী, শুভ্রা, খই ভুট্টা, মোহর, বারি ভুট্টা-৫, বারি ভুট্টা-৬ ও বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১ নামের সাতটি জাতের ভুট্টার চাষ হয়। ভুট্টার মোচা চক?চক? খড়ের রঙ ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যাবে। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে। বীজ হিসেবে মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা সংগ্রহ করতে হবে।

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মনজুরে মাওলা বলেন, এবার ভুট্টার ফলন ও দাম দুই-ই ভালো। আবাদ ভালো হলে প্রতি শতাংশে ১ মণের অধিক ফলন হয়।

তিনি বলেন, ভুট্টার আবাদ বাড়ানোর জন্য ঝড়, খরা ও লবণাক্তসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনের পথে রয়েছে। এরই মধ্যে ঝড়সহিষ্ণু জাত বারি ভুট্টা-১২ ও বারি ভুট্টা-১৩ উদ্ভাবিত হয়েছে। এছাড়া মানুষের খাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার বাড়াতে সাদা ভুট্টার জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। ফুল আসার আগে একটি মাত্র সেচ দিয়ে ভুট্টার আবাদ করা সম্ভব- এমন জাতও উদ্ভাবন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভুট্টার উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। তুলনামূলক সেচ কম প্রয়োজন হওয়ায় কৃষক এখন ভুট্টার আবাদ করছেন। উন্নত বীজ ও দামের নিশ্চয়তা দিতে পারলে ভুট্টা চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।