ঢাকা ০৭:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোনালী আঁশের সুদিন ফিরছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৭:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অগাস্ট ২০১৫
  • ৩৫৮ বার

ফরিদপুরে সোনালী আঁশের সুদিন আবার ফিরে আসছে। এ জেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। চাষ হয়েছে ৭৭ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। ওই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৯ লাখ বেল পাট উৎপাদনের কথা বলে কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে। তবে পাটের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দাম নিয়েও শঙ্কিত রয়েছেন চাষীরা।

সরেজমিনে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সর্বত্রই চলছে পাট বাছাই। অর্থাৎ পাট জাগ দিয়ে তা থেকে আঁশ ছাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। আলাদা করা হচ্ছে পাটখড়ি। চাষি পরিবারের প্রায় সবাই এ নিয়ে মহাব্যস্ত। ছেলে-মেয়ে বয়োবৃদ্ধ নির্বিশেষে পাটের আঁশ তুলছেন। আষাঢ় মাসের বৃষ্টির ফাঁকে ফাঁকে পাট শুকাচ্ছেন অনেকেই। শুকানো হচ্ছে পাটের খড়িও। জেলার অধিকাংশ এলাকাজুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে পাটের সুবাস।

উজানদিয়া গ্রামের চাষি হাবিব, জব্বার, নাছেরসহ অনেকেই জানান, পাটের মৌসুমে এখানকার রাস্তাঘাটে চলাচলও মুশকিল হয়ে যায়। পাট এবং পাটখড়িতে পাকা রাস্তাগুলোতে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ৯৫৬ হেক্টর জমিতে। কিন্তু সেখানে চাষাবাদ হয়েছে ৭৭ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। ওই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৯ লাখ বেল পাট উৎপাদনের কথা।

জেলার পাট চাষিরা জানান, চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ বেশি হলেও এর উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত হচ্ছে না। তারা জানান, মৌসুমের শুরুতেই ভাল আবহাওয়া ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পাট বেড়ে উঠার জন্য ভাল আবহাওয়া ছিল না। অন্যদিকে ভাল মানের বীজ না পাওয়ায় উৎপাদনেও এর প্রভাব পড়েছে।

জানা যায়, চলতি সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন হাটে মান ভেদে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। সরকার বাজার থেকে মণপ্রতি ৩০ থেকে ৬০ টাকা বেশি দরে পাট কিনছে।

কামারখালি হাটে রবিন নামে একজন ফড়িয়া জানান, পাটের প্রকারভেদে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত মণপ্রতি পাট কেনা হচ্ছে। তবে এখনও পাট বাজারে ভালভাবে উঠেনি। আরও ১৫/২০ দিন লাগবে পাট বাজারে উঠতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরিদপুর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট এর একজন পাট গবেষক বলেন, পাট নিয়ে তাদের দীর্ঘমেয়াদী কোনও পরিকল্পনা নেই। ভারতে যেখানে একের পর এক নতুন পাটকল হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের সরকারি পাটকলগুলো সেভাবে চলছে না।

তিনি বলেন, সোনালী আঁশ আবার স্বরূপে ফিরে আসতে পারে। কারণ কৃত্রিম তন্তু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হচ্ছে। তাই বিশ্বব্যাপী পাট এবং পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এক্ষেত্রে আশা যোগাচ্ছে পাটের জ্বিন আবিষ্কার করা। এই আবিষ্কারের ফলে পাট তার হারানো গৌরবকেও ফিরে পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফরিদপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক সুজন মজুমদার জানান, জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পাটের আবাদ হয়েছে, তবে পাটের মূল্য ঠিকমতো পেলে চাষিরা লাভবান হবে। এতে পাট চাষে তারা বেশি আগ্রহী হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সোনালী আঁশের সুদিন ফিরছে

আপডেট টাইম : ১১:১৭:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অগাস্ট ২০১৫

ফরিদপুরে সোনালী আঁশের সুদিন আবার ফিরে আসছে। এ জেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। চাষ হয়েছে ৭৭ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। ওই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৯ লাখ বেল পাট উৎপাদনের কথা বলে কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে। তবে পাটের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় দাম নিয়েও শঙ্কিত রয়েছেন চাষীরা।

সরেজমিনে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সর্বত্রই চলছে পাট বাছাই। অর্থাৎ পাট জাগ দিয়ে তা থেকে আঁশ ছাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। আলাদা করা হচ্ছে পাটখড়ি। চাষি পরিবারের প্রায় সবাই এ নিয়ে মহাব্যস্ত। ছেলে-মেয়ে বয়োবৃদ্ধ নির্বিশেষে পাটের আঁশ তুলছেন। আষাঢ় মাসের বৃষ্টির ফাঁকে ফাঁকে পাট শুকাচ্ছেন অনেকেই। শুকানো হচ্ছে পাটের খড়িও। জেলার অধিকাংশ এলাকাজুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে পাটের সুবাস।

উজানদিয়া গ্রামের চাষি হাবিব, জব্বার, নাছেরসহ অনেকেই জানান, পাটের মৌসুমে এখানকার রাস্তাঘাটে চলাচলও মুশকিল হয়ে যায়। পাট এবং পাটখড়িতে পাকা রাস্তাগুলোতে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ৯৫৬ হেক্টর জমিতে। কিন্তু সেখানে চাষাবাদ হয়েছে ৭৭ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। ওই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ৯ লাখ বেল পাট উৎপাদনের কথা।

জেলার পাট চাষিরা জানান, চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ বেশি হলেও এর উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত হচ্ছে না। তারা জানান, মৌসুমের শুরুতেই ভাল আবহাওয়া ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পাট বেড়ে উঠার জন্য ভাল আবহাওয়া ছিল না। অন্যদিকে ভাল মানের বীজ না পাওয়ায় উৎপাদনেও এর প্রভাব পড়েছে।

জানা যায়, চলতি সপ্তাহে জেলার বিভিন্ন হাটে মান ভেদে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। সরকার বাজার থেকে মণপ্রতি ৩০ থেকে ৬০ টাকা বেশি দরে পাট কিনছে।

কামারখালি হাটে রবিন নামে একজন ফড়িয়া জানান, পাটের প্রকারভেদে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত মণপ্রতি পাট কেনা হচ্ছে। তবে এখনও পাট বাজারে ভালভাবে উঠেনি। আরও ১৫/২০ দিন লাগবে পাট বাজারে উঠতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরিদপুর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট এর একজন পাট গবেষক বলেন, পাট নিয়ে তাদের দীর্ঘমেয়াদী কোনও পরিকল্পনা নেই। ভারতে যেখানে একের পর এক নতুন পাটকল হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের সরকারি পাটকলগুলো সেভাবে চলছে না।

তিনি বলেন, সোনালী আঁশ আবার স্বরূপে ফিরে আসতে পারে। কারণ কৃত্রিম তন্তু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হচ্ছে। তাই বিশ্বব্যাপী পাট এবং পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। এক্ষেত্রে আশা যোগাচ্ছে পাটের জ্বিন আবিষ্কার করা। এই আবিষ্কারের ফলে পাট তার হারানো গৌরবকেও ফিরে পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফরিদপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক সুজন মজুমদার জানান, জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পাটের আবাদ হয়েছে, তবে পাটের মূল্য ঠিকমতো পেলে চাষিরা লাভবান হবে। এতে পাট চাষে তারা বেশি আগ্রহী হবে।