ঢাকা ০২:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৫২:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ২০১৫
  • ৪৮১ বার

অবেশেষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর গবেষণা এবং তাহার স্মৃতি অম্লান রাখিবার লক্ষ্য নিয়া শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর আদলে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হইল রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করিয়া আসিলেন। ইহা নিয়া এখন দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৮টি। বাঙালি সংস্কৃতির শক্তি ও সম্ভাবনা জনমনে সঞ্চার করিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় অবদান রাখিবে বলিয়া আশা করা যায়। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল রবীন্দ্রচর্চা হইবে না। প্রতিষ্ঠানটি শান্তিনিকেতনের আদলে শিল্প-সাহিত্য বিষয়ে একটি বিশেষায়িত শিক্ষাঙ্গন হইলেও, রবীন্দ্র গবেষণা ও চর্চার পাশাপাশি ইহাতে সাহিত্য, সংগীত, নাট্যকলা, নৃত্য ও চারুকলা, সামাজিক বিজ্ঞান, কৃষি, সমবায়, জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা দেওয়া হইবে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই। মূল ক্যাম্পাস থাকিতেছে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর। ফলত, সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের মানুষের উচ্চশিক্ষার দাবি পূরণ হইল। তবে, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ও নওগাঁর পতিসরেও প্রতিষ্ঠিত হইবে দুইটি শাখা ক্যাম্পাস। ইতোমধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ আইন, ২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনও দিয়াছে মন্ত্রিসভা।

বাংলাদেশে এতোদিনেও রবীন্দ্রনাথের নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছিল না- ইহা একটি আশ্চর্য বিষয় বটে। বাংলাদেশে তাহাদের বিস্তর জমিদারি ছিল বলিয়া নহে, আশ্চর্য লাগে এই কারণে যে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, সংগীত, শিল্প, কিংবা দর্শন তথা বাঙালি সংস্কৃতির এমন কোনো ক্ষেত্র নাই যাহাতে তিনি নূতন যুগের সূচনা করেন নাই। দেশোপযোগী অথচ বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা নিয়াও তিনি ভাবিয়াছেন- আর সেই ভাবনার আলোতেই গড়িতে চাহিয়াছেন শান্তিনিকেতন। যে কেহ শান্তিনিকেতনে পা রাখিলেই অনুভব করিতে পারিবেন কতো বিশাল হূদয় নিয়া তিনি উচ্চশিক্ষার মহা আয়োজন সম্পন্ন করিয়াছিলেন। তাহারই বাণী ও সুর অবলম্বন করিয়া পাকিস্তানি শোষণমুক্তির জন্য আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বেগবান হইয়াছিল, তাহারই গান গাহিয়া মুক্তিযোদ্ধারা শত্রু মোকাবিলায় শক্তি পাইয়াছিলেন। তাঁহার রচিত অপূর্ব গান তাই সঙ্গত কারণেই আমাদের জাতীয় সংগীতও হইয়াছে। অথচ, বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য অর্জিত একমাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনোরূপ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাই। বিষয়টি আশ্চর্য লাগে বৈকি! আরও আশ্চর্য লাগে যে, কিছু সংকীর্ণমনা সিরাজগঞ্জে রবীন্দনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করিয়াছে, ধর্মান্ধরা লিফলেটও বিতরণ করিয়াছে- হিন্দুধর্মাবলম্বী রবীন্দ্রনাথের নামে নহে, অন্য যে কোনো নামে তাহারা  বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ চাহিয়াছে। রবীন্দ্রনাথের মতো সকল সংস্কারজয়ী বিশ্বমানবকে ধর্মের মাপে খাটো করিবার কূপমণ্ডুকতাটুকু তাহারা এখন পর্যন্ত ছাড়িতে পারেন নাই।

আমরা আশা করিব, দলীয় ও আঞ্চলিক ক্ষমতাবলয়ের সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকিয়া নূতন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি নূতন প্রাণের আবেগ নিয়াই যাত্রা করিবে এবং আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগতে অমৃত ফলাইবে। আশঙ্কার কথা তো সকলেই জানি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলিতেই নিয়মিত বিরতিতে ক্ষমতা ও স্বার্থের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়া ছাত্রসংগঠন, শিক্ষক আর স্থানীয় প্রভাবশালীরা রেষারেষি, হানাহানি ও খুনাখুনিতে লিপ্ত হইয়া পড়ে এবং উচ্চশিক্ষার পরিবেশ তছনছ করিয়া দেয়। আমরা আশা করিব, নূতন বিশ্ববিদ্যালয় করিয়া সরকার যেমন উচ্চশিক্ষাকে আমাদের নিকটবর্তী করিতেছেন, তেমনই বিদ্যমান অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলিতে শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্বমান অর্জনের উপযুক্ত পরিবেশ ও সুবিধাদি নিশ্চিত করিবেন, যেমন রবীন্দ্রনাথ করিতে চাহিয়াছিলেন তাহার প্রিয় শান্তিনিকেতনে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট টাইম : ০৩:৫২:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ২০১৫

অবেশেষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর গবেষণা এবং তাহার স্মৃতি অম্লান রাখিবার লক্ষ্য নিয়া শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর আদলে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হইল রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করিয়া আসিলেন। ইহা নিয়া এখন দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৮টি। বাঙালি সংস্কৃতির শক্তি ও সম্ভাবনা জনমনে সঞ্চার করিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় অবদান রাখিবে বলিয়া আশা করা যায়। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল রবীন্দ্রচর্চা হইবে না। প্রতিষ্ঠানটি শান্তিনিকেতনের আদলে শিল্প-সাহিত্য বিষয়ে একটি বিশেষায়িত শিক্ষাঙ্গন হইলেও, রবীন্দ্র গবেষণা ও চর্চার পাশাপাশি ইহাতে সাহিত্য, সংগীত, নাট্যকলা, নৃত্য ও চারুকলা, সামাজিক বিজ্ঞান, কৃষি, সমবায়, জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা দেওয়া হইবে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই। মূল ক্যাম্পাস থাকিতেছে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর। ফলত, সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের মানুষের উচ্চশিক্ষার দাবি পূরণ হইল। তবে, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ও নওগাঁর পতিসরেও প্রতিষ্ঠিত হইবে দুইটি শাখা ক্যাম্পাস। ইতোমধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ আইন, ২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনও দিয়াছে মন্ত্রিসভা।

বাংলাদেশে এতোদিনেও রবীন্দ্রনাথের নামে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছিল না- ইহা একটি আশ্চর্য বিষয় বটে। বাংলাদেশে তাহাদের বিস্তর জমিদারি ছিল বলিয়া নহে, আশ্চর্য লাগে এই কারণে যে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, সংগীত, শিল্প, কিংবা দর্শন তথা বাঙালি সংস্কৃতির এমন কোনো ক্ষেত্র নাই যাহাতে তিনি নূতন যুগের সূচনা করেন নাই। দেশোপযোগী অথচ বিশ্বমানের উচ্চশিক্ষা নিয়াও তিনি ভাবিয়াছেন- আর সেই ভাবনার আলোতেই গড়িতে চাহিয়াছেন শান্তিনিকেতন। যে কেহ শান্তিনিকেতনে পা রাখিলেই অনুভব করিতে পারিবেন কতো বিশাল হূদয় নিয়া তিনি উচ্চশিক্ষার মহা আয়োজন সম্পন্ন করিয়াছিলেন। তাহারই বাণী ও সুর অবলম্বন করিয়া পাকিস্তানি শোষণমুক্তির জন্য আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বেগবান হইয়াছিল, তাহারই গান গাহিয়া মুক্তিযোদ্ধারা শত্রু মোকাবিলায় শক্তি পাইয়াছিলেন। তাঁহার রচিত অপূর্ব গান তাই সঙ্গত কারণেই আমাদের জাতীয় সংগীতও হইয়াছে। অথচ, বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য অর্জিত একমাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনোরূপ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাই। বিষয়টি আশ্চর্য লাগে বৈকি! আরও আশ্চর্য লাগে যে, কিছু সংকীর্ণমনা সিরাজগঞ্জে রবীন্দনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা করিয়াছে, ধর্মান্ধরা লিফলেটও বিতরণ করিয়াছে- হিন্দুধর্মাবলম্বী রবীন্দ্রনাথের নামে নহে, অন্য যে কোনো নামে তাহারা  বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ চাহিয়াছে। রবীন্দ্রনাথের মতো সকল সংস্কারজয়ী বিশ্বমানবকে ধর্মের মাপে খাটো করিবার কূপমণ্ডুকতাটুকু তাহারা এখন পর্যন্ত ছাড়িতে পারেন নাই।

আমরা আশা করিব, দলীয় ও আঞ্চলিক ক্ষমতাবলয়ের সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকিয়া নূতন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি নূতন প্রাণের আবেগ নিয়াই যাত্রা করিবে এবং আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগতে অমৃত ফলাইবে। আশঙ্কার কথা তো সকলেই জানি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলিতেই নিয়মিত বিরতিতে ক্ষমতা ও স্বার্থের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়া ছাত্রসংগঠন, শিক্ষক আর স্থানীয় প্রভাবশালীরা রেষারেষি, হানাহানি ও খুনাখুনিতে লিপ্ত হইয়া পড়ে এবং উচ্চশিক্ষার পরিবেশ তছনছ করিয়া দেয়। আমরা আশা করিব, নূতন বিশ্ববিদ্যালয় করিয়া সরকার যেমন উচ্চশিক্ষাকে আমাদের নিকটবর্তী করিতেছেন, তেমনই বিদ্যমান অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলিতে শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্বমান অর্জনের উপযুক্ত পরিবেশ ও সুবিধাদি নিশ্চিত করিবেন, যেমন রবীন্দ্রনাথ করিতে চাহিয়াছিলেন তাহার প্রিয় শান্তিনিকেতনে।