অবেশেষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর গবেষণা এবং তাহার স্মৃতি অম্লান রাখিবার লক্ষ্য নিয়া শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতীর আদলে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হইল রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করিয়া আসিলেন। ইহা নিয়া এখন দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৮টি। বাঙালি সংস্কৃতির শক্তি ও সম্ভাবনা জনমনে সঞ্চার করিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় অবদান রাখিবে বলিয়া আশা করা যায়। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল রবীন্দ্রচর্চা হইবে না। প্রতিষ্ঠানটি শান্তিনিকেতনের আদলে শিল্প-সাহিত্য বিষয়ে একটি বিশেষায়িত শিক্ষাঙ্গন হইলেও, রবীন্দ্র গবেষণা ও চর্চার পাশাপাশি ইহাতে সাহিত্য, সংগীত, নাট্যকলা, নৃত্য ও চারুকলা, সামাজিক বিজ্ঞান, কৃষি, সমবায়, জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা দেওয়া হইবে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই। মূল ক্যাম্পাস থাকিতেছে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর। ফলত, সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের মানুষের উচ্চশিক্ষার দাবি পূরণ হইল। তবে, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ও নওগাঁর পতিসরেও প্রতিষ্ঠিত হইবে দুইটি শাখা ক্যাম্পাস। ইতোমধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ আইন, ২০১৫-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনও দিয়াছে মন্ত্রিসভা।
আমরা আশা করিব, দলীয় ও আঞ্চলিক ক্ষমতাবলয়ের সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে থাকিয়া নূতন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি নূতন প্রাণের আবেগ নিয়াই যাত্রা করিবে এবং আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির জগতে অমৃত ফলাইবে। আশঙ্কার কথা তো সকলেই জানি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলিতেই নিয়মিত বিরতিতে ক্ষমতা ও স্বার্থের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়া ছাত্রসংগঠন, শিক্ষক আর স্থানীয় প্রভাবশালীরা রেষারেষি, হানাহানি ও খুনাখুনিতে লিপ্ত হইয়া পড়ে এবং উচ্চশিক্ষার পরিবেশ তছনছ করিয়া দেয়। আমরা আশা করিব, নূতন বিশ্ববিদ্যালয় করিয়া সরকার যেমন উচ্চশিক্ষাকে আমাদের নিকটবর্তী করিতেছেন, তেমনই বিদ্যমান অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলিতে শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্বমান অর্জনের উপযুক্ত পরিবেশ ও সুবিধাদি নিশ্চিত করিবেন, যেমন রবীন্দ্রনাথ করিতে চাহিয়াছিলেন তাহার প্রিয় শান্তিনিকেতনে।