দুর্ভোগের ভিতটা তৈরি হয়েই ছিল। শুক্রবার রাত থেকে বৃষ্টির দাপট বাড়তেই বানভাসি হয়ে পড়ল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সরকারি হিসেব বলছে, দক্ষিণবঙ্গের ১২ জেলার ১৮১ ব্লকে এখন বন্যা পরিস্থিতি। ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ১৮ লক্ষ মানুষ। ১ লক্ষ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে। ২ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে জলে ডুবে, দেওয়াল ধসে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনটি শিশু-সহ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। জলে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ দু’জন।
হাওয়া অফিস বলছে, বাংলাদেশে থাকা গভীর নিম্নচাপটি এ দিন সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়েছে। তার জেরে আজ, রবিবারও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সোমবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতির সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ।
এ দিন বিকেল থেকেই রাজ্যের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন তিনি যান হাওড়া ও হুগলিতে। কাল, সোমবার তাঁর উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় যাওয়ার কথা। বৃহস্পতিবার এই হাবরাতেই ত্রাণ দিতে গিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। শাসক দলের মদতেই হাবরায় তাঁকে হেনস্থা করা হয় বলে রূপার অভিযোগ। আবার ঠিক পরের দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, শুধু রাজ্য সরকারই ত্রাণ বিলি করবে। এই দুই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের মত, সেই আক্রমণ মোকাবিলায় মাঠে নেমে মুখ্যমন্ত্রী খুব ভেবেচিন্তেই হাবরা সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠদের কেউ কেউ বলছেন, মমতা কেন লন্ডন সফর ছেঁটে তড়িঘড়ি ফিরে এলেন, শনিবার বিকেলের জেলা সফরই তার প্রমাণ দিচ্ছে।
এ দিন রাস্তার একাধিক জায়গায় দাঁড়িয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার স্থানীয় বিডিও-কে দেখতে না পেয়ে মেজাজও হারিয়েছেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এত ভারী বর্ষা দীর্ঘদিন হয়নি। সঙ্গে ভরা কোটাল। ঝাড়খণ্ডেও ডিভিসি থেকে জল ছাড়ছে। জল না ছেড়ে হয়তো উপায় নেই। তবু ওদের বলেছি একটু বুঝে বুঝে ছাড়তে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কারও হাতে থাকে না।’’
হাওয়া অফিসও বলছে, এক লপ্তে এত বৃষ্টি অনেক দিন হয়নি। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত কলকাতায় ১৪৩.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গত দশ বছরের নিরিখে এক দিনের মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বাধিক। এমন প্রবল বৃষ্টির জেরে নদিয়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ বিভিন্ন জেলায় একের পর এক ব্লক জলে ডুবে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকাও জলমগ্ন। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্য জুড়ে ‘বন্যার মতো’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় মন্ত্রীরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর হিসেব অবশ্য বলছে, ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা সাড়ে ছ’লক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে পানীয় জল, ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনকে বলা হয়েছে সাহায্য করতে।