ঢাকা ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাকপাতার গ্রামে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৫:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০১৭
  • ৫১৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  এক সময় ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল ভাকুর্তা। যোগাযোগ ঘটিয়েছে একটি বেইলি ব্রীজ। একদিন চলতি পথে ভুলে সেই ঝুলন্ত ব্রীজের ওপর দিয়ে ভাকুর্তা ইউনিয়নে ঢুকে পড়েছিলাম। তারপর তো খালি মুগ্ধতা আর মুগ্ধতা।

ভাকুর্তা থেকে হেমায়েতপুর পর্যন্ত পুরো এলাকায় মুগ্ধতার ছড়াছড়ি। এখানে বলতে বাধ্য হবেন শ্যামলা বরণ বাংলা মায়ের রূপ দেখে যা আয়রে আয়!

পুরো এলাকাটাই সবুজ আর লাল রংয়ে শিল্পীর পটে আঁকা ছবি। এখানের মোগরাকান্দি, ভাকুর্তা, দক্ষিণ ভাকুর্তা, হিন্দুভাকুর্তা, মুসরিখোলা হয়ে দক্ষিণ শ্যামপুর পর্যন্ত পুরো এলাকাতে সব ধরনের শাক চাষ হয়।

গ্রামের লোকজন দীর্ঘদিন শাক চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। মৌসুম ভেদে পাটশাক, লালশাক, ডাটাশাক, মূলাশাক, পুঁইশাক, লাউশাক, সরিষা আর আলুশাক অন্যতম।

শাক চাষের পাশাপাশি এখানকার চাষিরা বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি সবজি, যেমন- লাউ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপিসহ থাইপাতা, কারিপাতা আর ব্রকলির চাষও করেন।

প্রথমবার গিয়েছিলাম কোনো এক শরতে। তখন মেঠপথকে পিচপথে রূপান্তারের কাজ সবে শুরু হয়েছে। গ্রামকে শহর বানানোর চেষ্টা। তখন থেকে অনেকবারই আসা হয়েছে এখানে।

মজার ব্যাপার হল ভাকুর্তায় ঢোকার সময় তুরাগনদ জলে টলমল। আর গ্রামের ভেতরে দেখা যায় পথের বাম পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বুড়িগঙ্গা নদী।

আমরা ভাকুর্তা ইউনিয়নে দশ মিনিট চলার পর হেমায়েতপুর চলে আসি। তারপর ঋষিপাড়া হয়ে দক্ষিণ শ্যামপুর। এখানে পথের সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। তবে মেঠোপথ কম, চমৎকার পিচঢালা পথ। বাস বা বড় গাড়ি খুব একটা আসে না। তাই হেঁটে হেঁটে বহুদূর চলে যাওয়া যায়।

মোগরকান্দা থেকে শুরু করে শ্যামপুর এলাকার রাস্তার দুধারের পুরো এলাকা জুড়েই সবজি ও শাকের চাষ। সেজন্য পুরো ভাকুর্তা ইউনিয়নকে বলা যায় শাকের গ্রাম।

চাইরা ব্রিজ।

চাইরা ব্রিজ।

এখানকার পথে পথে শাকের মহাজনদের দেখা যায় ট্রাকে ট্রাকে শাক বোঝাইয়ে ব্যস্ত। যা রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও ঠাটারীবাজার হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে।

বুড়িগঙ্গা।

বুড়িগঙ্গা।

মুগ্ধতা চোখে নিয়ে একটি ছোট্টমতো বাজার পেরিয়ে পৌঁছে যাই চাইরা ব্রিজ’য়ে। ব্রিজের নামেই গ্রামের নাম। নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে বুড়িগঙ্গা নদী। একজন বয়স্ক লোক দেখে তাকে প্রশ্ন করি চাচা এখানে বুড়িগঙ্গা এল কীভাবে?

চাচা রেগে-মেগে বললন, “তুমি নদী কই পাইলা, এইডা তো গর্ত।”

তিনি এরপর যা বললেন তার অর্থ হল- চাইরা ব্রিজ বা বুড়িগঙ্গা নদী অনেক আগে এখানে ছিল না। পুরোটাই আসলে চাইরা গ্রাম। এখনও এখানকার মানুষ গ্রাম জেগে ওঠার অপেক্ষায়। অনেকেই নদীর দিকে তাকিয়ে নিজের জায়গা খোঁজেন। লোকজন ব্রিজের নিচের নদীর এলাকাকে বলেন কুম বা গর্ত।

১৯৬২ সালের আগে বুড়িগঙ্গা চাইরা থেকে বহুদূরে ছিল। তখন বুড়িগঙ্গা খরস্রোতা। নদীর ঢেউয়ের তোড়ে চাইরা গ্রামে প্রায় সময় ভাঙন লেগে থাকত।

একদিন সব কিছু ভেঙেচুড়ে চাইরা গ্রাম বুড়িগঙ্গা গ্রাস করে। তারপর দীর্ঘদিন এর দুপাশ বিচ্ছিন্ন ছিল। পারাপারের জন্য ব্যবহার হত নৌকা। ২০০৫-২০০৬ সালে চাইরা ব্রিজ নির্মিত হয়।

এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। চাইরা ব্রিজ এলাকার মূল সংযোগ স্থল। এখানকার মানুষের আশা ভরসার জায়গা। আর সাধারণ মানুষের জন্য অপার সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চাইরা গ্রাম বা চাইরা ব্রিজ ও এখানকার মনোরম প্রকৃতি।

ছুটির দিনের বিকালটা এখানে বেড়ানোর জন্য খুব চমৎকার বলা যায়। ইচ্ছে করলে নৌকাতেও বেড়ানো যাবে।

তাই চলে যেতেই পারেন এক বিকেলে ভাকুর্তা হয়ে চাইরা তারপর দক্ষিণ শ্যামপুর শাকের গ্রামে। নিশ্চিত এখানে এলে ভালোলাগার দোল খাবে প্রাণে!

প্রয়োজনীয় তথ্য

শাকের গ্রাম ঢাকার খুব কাছে সাভারের ভার্কুতায়। ভাকুর্তা গহনার গ্রাম হিসেবেও বিখ্যাত। শাক,  গহনা ও অসাধারণ প্রকৃতি মিলে ভাকুর্তা এক কথায় অনন্য।

এখানে গ্রাম্য বাজারে গ্রামেরই খাবার পাবেন। তবে মিষ্টির দোকানে মিষ্টি সাধারণ না। খেয়ে আসবেন সঙ্গে ঘরের জন্য নিয়ে।

ভাকুর্তা একবেলার ভ্রমণ। যে কোনো দুপুরে গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসতে পারবেন। মানে ভাকুর্তা দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার গল্প।

নিজস্ব বাহনে দল বেঁধে যাওয়াই ভালো। বাইক হলে আমার মতো একাই চলে যান। অথবা গাবতলির আমীন বাজার থেকে প্রতি মিনিটে ভাকুর্তার উদ্দেশ্যে ভাড়ার টয়োটা গাড়ি ছেড়ে যায়। যে কোনো একটাতে চড়ে বসে ভাকুর্তা বাজারে চলে যেতে পারবেন।

এরপর পায়ে হেঁটে বা ভ্যান ও রিকশাতে পুরো এলাকা চষে ফিরুন, ভালোলাগা ষোলআনা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

শাকপাতার গ্রামে

আপডেট টাইম : ১০:২৫:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  এক সময় ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল ভাকুর্তা। যোগাযোগ ঘটিয়েছে একটি বেইলি ব্রীজ। একদিন চলতি পথে ভুলে সেই ঝুলন্ত ব্রীজের ওপর দিয়ে ভাকুর্তা ইউনিয়নে ঢুকে পড়েছিলাম। তারপর তো খালি মুগ্ধতা আর মুগ্ধতা।

ভাকুর্তা থেকে হেমায়েতপুর পর্যন্ত পুরো এলাকায় মুগ্ধতার ছড়াছড়ি। এখানে বলতে বাধ্য হবেন শ্যামলা বরণ বাংলা মায়ের রূপ দেখে যা আয়রে আয়!

পুরো এলাকাটাই সবুজ আর লাল রংয়ে শিল্পীর পটে আঁকা ছবি। এখানের মোগরাকান্দি, ভাকুর্তা, দক্ষিণ ভাকুর্তা, হিন্দুভাকুর্তা, মুসরিখোলা হয়ে দক্ষিণ শ্যামপুর পর্যন্ত পুরো এলাকাতে সব ধরনের শাক চাষ হয়।

গ্রামের লোকজন দীর্ঘদিন শাক চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। মৌসুম ভেদে পাটশাক, লালশাক, ডাটাশাক, মূলাশাক, পুঁইশাক, লাউশাক, সরিষা আর আলুশাক অন্যতম।

শাক চাষের পাশাপাশি এখানকার চাষিরা বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি সবজি, যেমন- লাউ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপিসহ থাইপাতা, কারিপাতা আর ব্রকলির চাষও করেন।

প্রথমবার গিয়েছিলাম কোনো এক শরতে। তখন মেঠপথকে পিচপথে রূপান্তারের কাজ সবে শুরু হয়েছে। গ্রামকে শহর বানানোর চেষ্টা। তখন থেকে অনেকবারই আসা হয়েছে এখানে।

মজার ব্যাপার হল ভাকুর্তায় ঢোকার সময় তুরাগনদ জলে টলমল। আর গ্রামের ভেতরে দেখা যায় পথের বাম পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বুড়িগঙ্গা নদী।

আমরা ভাকুর্তা ইউনিয়নে দশ মিনিট চলার পর হেমায়েতপুর চলে আসি। তারপর ঋষিপাড়া হয়ে দক্ষিণ শ্যামপুর। এখানে পথের সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। তবে মেঠোপথ কম, চমৎকার পিচঢালা পথ। বাস বা বড় গাড়ি খুব একটা আসে না। তাই হেঁটে হেঁটে বহুদূর চলে যাওয়া যায়।

মোগরকান্দা থেকে শুরু করে শ্যামপুর এলাকার রাস্তার দুধারের পুরো এলাকা জুড়েই সবজি ও শাকের চাষ। সেজন্য পুরো ভাকুর্তা ইউনিয়নকে বলা যায় শাকের গ্রাম।

চাইরা ব্রিজ।

চাইরা ব্রিজ।

এখানকার পথে পথে শাকের মহাজনদের দেখা যায় ট্রাকে ট্রাকে শাক বোঝাইয়ে ব্যস্ত। যা রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও ঠাটারীবাজার হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে।

বুড়িগঙ্গা।

বুড়িগঙ্গা।

মুগ্ধতা চোখে নিয়ে একটি ছোট্টমতো বাজার পেরিয়ে পৌঁছে যাই চাইরা ব্রিজ’য়ে। ব্রিজের নামেই গ্রামের নাম। নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে বুড়িগঙ্গা নদী। একজন বয়স্ক লোক দেখে তাকে প্রশ্ন করি চাচা এখানে বুড়িগঙ্গা এল কীভাবে?

চাচা রেগে-মেগে বললন, “তুমি নদী কই পাইলা, এইডা তো গর্ত।”

তিনি এরপর যা বললেন তার অর্থ হল- চাইরা ব্রিজ বা বুড়িগঙ্গা নদী অনেক আগে এখানে ছিল না। পুরোটাই আসলে চাইরা গ্রাম। এখনও এখানকার মানুষ গ্রাম জেগে ওঠার অপেক্ষায়। অনেকেই নদীর দিকে তাকিয়ে নিজের জায়গা খোঁজেন। লোকজন ব্রিজের নিচের নদীর এলাকাকে বলেন কুম বা গর্ত।

১৯৬২ সালের আগে বুড়িগঙ্গা চাইরা থেকে বহুদূরে ছিল। তখন বুড়িগঙ্গা খরস্রোতা। নদীর ঢেউয়ের তোড়ে চাইরা গ্রামে প্রায় সময় ভাঙন লেগে থাকত।

একদিন সব কিছু ভেঙেচুড়ে চাইরা গ্রাম বুড়িগঙ্গা গ্রাস করে। তারপর দীর্ঘদিন এর দুপাশ বিচ্ছিন্ন ছিল। পারাপারের জন্য ব্যবহার হত নৌকা। ২০০৫-২০০৬ সালে চাইরা ব্রিজ নির্মিত হয়।

এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। চাইরা ব্রিজ এলাকার মূল সংযোগ স্থল। এখানকার মানুষের আশা ভরসার জায়গা। আর সাধারণ মানুষের জন্য অপার সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চাইরা গ্রাম বা চাইরা ব্রিজ ও এখানকার মনোরম প্রকৃতি।

ছুটির দিনের বিকালটা এখানে বেড়ানোর জন্য খুব চমৎকার বলা যায়। ইচ্ছে করলে নৌকাতেও বেড়ানো যাবে।

তাই চলে যেতেই পারেন এক বিকেলে ভাকুর্তা হয়ে চাইরা তারপর দক্ষিণ শ্যামপুর শাকের গ্রামে। নিশ্চিত এখানে এলে ভালোলাগার দোল খাবে প্রাণে!

প্রয়োজনীয় তথ্য

শাকের গ্রাম ঢাকার খুব কাছে সাভারের ভার্কুতায়। ভাকুর্তা গহনার গ্রাম হিসেবেও বিখ্যাত। শাক,  গহনা ও অসাধারণ প্রকৃতি মিলে ভাকুর্তা এক কথায় অনন্য।

এখানে গ্রাম্য বাজারে গ্রামেরই খাবার পাবেন। তবে মিষ্টির দোকানে মিষ্টি সাধারণ না। খেয়ে আসবেন সঙ্গে ঘরের জন্য নিয়ে।

ভাকুর্তা একবেলার ভ্রমণ। যে কোনো দুপুরে গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসতে পারবেন। মানে ভাকুর্তা দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার গল্প।

নিজস্ব বাহনে দল বেঁধে যাওয়াই ভালো। বাইক হলে আমার মতো একাই চলে যান। অথবা গাবতলির আমীন বাজার থেকে প্রতি মিনিটে ভাকুর্তার উদ্দেশ্যে ভাড়ার টয়োটা গাড়ি ছেড়ে যায়। যে কোনো একটাতে চড়ে বসে ভাকুর্তা বাজারে চলে যেতে পারবেন।

এরপর পায়ে হেঁটে বা ভ্যান ও রিকশাতে পুরো এলাকা চষে ফিরুন, ভালোলাগা ষোলআনা।