সোয়া তিন বছরেরও বেশী সময় পার হয়ে গেলেও আজও সন্ধান মেলেনি সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ব্যক্তিগত সহকারী ওমর ফারুকের ড্রাইভার আলী আজমের।
সে বেঁচে আছে না মরে গেছে জানেন না পরিবারের কেউ। দুই সন্তান নিয়ে আজমের স্ত্রী স্বপ্না আক্তার কোন মতে বেঁচে করছেন। আজমের বাবার অর্থাৎ স্বপ্নার শ্বশুরের পেনশনের সামান্য টাকা দিয়ে চলছে সংসার।
এদিকে আজমের সন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ তার পরিবারের উপর নানাভাবে অত্যাচার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজমের বড় ভাই মো. শাহ আলী ’র সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ওই ঘটনার পর থেকেই আমার ভাই নিখোঁজ রয়েছে। তাঁর বাসায় আসার খবর ভিত্তিহীন। সে কোথায় আছে, কেমন আছে, বেঁচে আছে না মরে গেছে এর কোন সন্ধান আজ পর্যন্ত আমার কাছে নেই।
তিনি জানান, আমাদের ৮০ বছরের বৃদ্ধ বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। আমার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি চালক ছিলেন। তিনি আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে পেনশনে গেছেন। পেনশনের ওই সামান্য টাকা দিয়ে আলী আজমের পরিবারকে লালন পালন করছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আমাদের স্থানীয় পত্রিকা ‘চাঁদপুরের বার্তা’তে আলী আজমকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে দক্ষিণ মতলব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০/১২ জন পুলিশ আমাদের ঘরে গিয়ে আলী আজমকে খুঁজতে থাকে। এ সময়ে তাদের হাতে হকি স্টিক ছিল।’
‘এ ঘটনায় আমার বৃদ্ধ বাবা-মা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।‘
তিনি অভিযোগ করেন, ‘আজম নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন আমি আইনগত সহায়তা চাইতে দক্ষিণ মতলব থানায় গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমার কোন অভিযোগ আমলে না নিয়ে পাঠিয়ে দেন।’
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার সামসুন নাহার বলেন, আমি শুনেছি আলী আজম নাকি বাসায় গিয়েছেন। এই ঘটনার পরে পুলিশ তার ব্যাপারে খোঁজ খবর করছে।
আলী আজম নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় স্থানীয় থানায় কোন জিডি কিংবা মামলা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ওই সময়ে আমি ইতালী ছিলাম। তাই এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
আলী আজমের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের নওগাঁ গ্রামে। এ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান শওকত আলী দেওয়ান জানান, নিয়মিত আজমের খোঁজ খবর রাখলেও এখনও তাকে পাওয়া যায়নি। আজমের বাবা দুদ মিয়া ও মা মাজেদা বেগমও ছেলের অবস্থান জানেন না।
আজমের চাচা বিল্লালের বরাত দিয়ে স্থানীয় এক প্রতিবেশী জানান, টাকার বস্তাসহ ওমর ফারুক, ইউনুস আলী মৃধা ও কমান্ড্যান্ট এনামুলকে ধরিয়ে দেয়ার আগে স্ত্রী, একমাত্র কন্যা রিয়া আক্তার ও ছেলে আবদুর রহমানকে নিয়ে শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল দুই বস্তা টাকাসহ পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করেন সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িচালক আলী আজম।
চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার পর থেকে তিনি নিখোঁজ। এর ৬ মাস পর একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়ে ফের আলোচনায় আসেন আলী আজম। ওই সাক্ষাৎকারের পর আর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি তার। তিনি কোথায় আছেন বা তার ভাগ্যে কী ঘটেছে জানেন না স্বজনরা।
গাড়িতে উদ্ধার হওয়া ওই টাকা ছিল বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে জনবল নিয়োগে ঘুষের টাকা।
অর্থ কেলেংকারির ঘটনা তদন্ত করেন দুদকের সহকারী পরিচালক রাশেদুর রেজা। তিনি বলেন, ২০১২ সালের ২১ অক্টোবরসহ তিন দফা দুদক থেকে আলী আজমের বক্তব্য নেয়ার জন্য নোটিশ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সাক্ষ্য দিতে হাজির হননি। তার সাক্ষ্য ছাড়াই মামলার চার্জশিট হয়েছে। মামলার বিচার চলছে।