ঢাকা ০৯:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বর্ষার অসুখ-বিসুখ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৩:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুন ২০১৭
  • ৩৫৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এখন বর্ষাকাল। বর্ষার আগমন আমাদের জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলে থাকে। বর্ষার কারণে রোগজীবাণু খুব সহজেই ছড়ানোর সুযোগ পায় বলে এ সময়ে বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে পানিবাহিত রোগ, যেমন-টাইফয়েড, জন্ডিস (হেপাটাইটিস-এ, ই), ডিসেন্ট্রি, কৃমি সংক্রমণ ইত্যাদির সঙ্গে দেখা দেয় ত্বকের ফাঙ্গাসজনিত ইনফেকশন। তাছাড়া বর্ষা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে বাড়িয়ে দেয় স্বাস্থ্যঝুঁকিও। সুতরাং বর্ষার স্বাস্থ্যঝুঁকি ও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার লক্ষ্যে ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কতা ও সমস্যা সম্পর্কে সম্যক সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। বৃষ্টির পানি খুব সহজেই ময়লা-আবর্জনাকে এক স্থান থেকে বয়ে অন্যত্র নিয়ে যায়, সেই সঙ্গে গোটা পরিবেশকেও আবর্জনার জীবাণুতে দূষিত করে তোলে। দূষণের এই কবল থেকে কখনও কখনও পান করা কিংবা ঘরের কাজে ব্যবহার করার পানিও রক্ষা পায় না। আবার বৃষ্টির নোংরা জল মাড়িয়ে অনেকেই জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে পথঘাটও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। যার ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। আর সড়ক দুর্ঘটনায় অঙ্গহানির ঝুঁকি তো কিছুটা থাকছেই। কাজেই বর্ষার সময় ঘরে-বাইরেও সতর্ক পথ চলতে হবে। ঘরের বাইরে এ সময়ে ঘরের বাইরে রাস্তার ধারের তৈরি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। পারলে রেস্টুরেন্টের খাবারও বাদ দিতে হবে। কারণ বর্ষার দিনে এসব স্থানের খাবার ও পানি দূষিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কোনো কারণে বাইরে যদি খেতেই হয়, তাহলে শুধু রান্না করা খাবার বেছে নিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে প্লেট-গ্লাস ভালো করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধোয়া হয়েছে কি না। একই সঙ্গে বাইরের পানি পান করা যাবে না। রাস্তার ধারে তৈরি শরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে কাপ ভালো করে ধোয়া হয়ে থাকলে চা-কফি ইত্যাদি পান করা যাবে। ঘরের মধ্যে বাথরুম সেরে আসার পর সাবান দিয়ে ভালো করে পর্যাপ্ত পানি ব্যবহারে হাত ধুয়ে নিতে হবে। খাবার তৈরির সময় এবং খাবার গ্রহণের আগে হাত সাবান দিয়ে একইভাবে ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন। ঘরের বাসি খাবার এ সময়ে এড়িয়ে চলাই ভালো। খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে, যাতে করে খাবারে মাছি কিংবা অন্য কোনো কীট-পতঙ্গ বসতে না পারে। পানি বিশুদ্ধকরণে ফিল্টার কিংবা বড়ি ব্যবহার করে পানিকে হেপাটাইটিস-এ থেকে মুক্ত করা যায় না। তাই পানি বিশুদ্ধকরণে পানিকে টগবগ করে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নেওয়াই উত্তম। যেকোনো ফল কিংবা সবজি খাওয়ার আগে ভালো করে পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। সতর্ক পথচলা বর্ষার দিনে রাস্তাঘাট বৃৃষ্টিতে ভিজে ভিজে পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। তাই বৃষ্টির দিনে পথ চলার সময় পা ফেলতে হবে সাবধানে। এ সময়ে পথ চলতে গিয়ে খেয়াল করতে হবে রাস্তার ওপর ঝড়-বৃষ্টির কারণে বৈদ্যুতিক তার কিংবা টেলিফোনের তার ছিঁড়ে পড়ে আছে কি না। বৈদ্যুতিক তার থেকে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে আর টেলিফোনের তারে হোঁচট খেয়ে আঘাত পাওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। পথের মাঝে কোথাও পানি জমে থাকলে সেই পানির ওপর দিয়ে পথচলা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ জমে থাকা এই পানির নিচে ম্যানহোল কিংবা বড় গর্ত থাকতে পারে। বৃষ্টির সময় রেইনকোট ও ছাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। যাদের পায়ের ত্বকে ফাঙ্গাসজনিত ইনফেকশন, যেমন-পায়ের আঙুলের ফাঁকে চুলকানির উদ্রেককারী সাদাটে ঘা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে গামবুট না পরাই ভালো। তবে পায়ে অবশ্যই স্যান্ডেল পরতে হবে। পায়ের ত্বকে কোনো রোগ না থাকলে, বর্ষার সময় রেইনকোট ও ছাতার সঙ্গে গামবুটও পরা যেতে পারে। গামবুট বর্ষার সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে পা দুটিকে রক্ষার চেষ্টা করবে। কখনও খালি পায়ে এ সময়ে রাস্তায় নামা ঠিক হবে না। এতে করে পথের মাঝে পড়ে থাকা লোহা, কাচ, টিন ইত্যাদি ধারালো অথচ নোংরা উপকরণ থেকে কেটে গিয়ে মারাত্মক ইনফেকশন হতে পারে। বর্ষার রাতে পথ চলতে অবশ্যই সঙ্গে টর্চ রাখতে হবে। বাইসাইকেল, বাইক ও কার সাবধানে চালাতে হবে বর্ষার সময় বাইসাইকেল এবং বাইক রাস্তায় নামানোর আগে ব্রেক, টায়ার, হেডলাইট, সিগন্যাল লাইট, হর্ন/বেল, চেইন ইত্যাদি চেক করে নিতে হবে। রাস্তায় নামানোর আগে একইভাবে গাড়ির সব জিনিস কাজ করছে কি না দেখে নিতে হবে। আরও চেক করে নিতে হবে স্টিয়ারিং, টায়ার প্রেসার, সাসপেনশন ইত্যাদি। টায়ারের গ্রিপার পর্যাপ্ত অবস্থায় আছে কি না সেটাও দেখতে হবে। তা না হলে গাড়ি স্লিপ করতে পারে। বৃষ্টির জন্য গাড়ির ক্ষেত্রে দরকারি আরেকটি বিষয় হচ্ছে ওয়াইপার। ওয়াইপার ঠিক না থাকলে বৃষ্টিতে গাড়ি রাস্তায় নামানোই উচিত নয়। বৃষ্টির সময় সাইকেল, বাইক, কার ধীরে চালানো উচিত। রাস্তায় জমে থাকা পানির ওপর দিয়ে কখনও আপনার বাহনটি চালানো উচিত নয়। কারণ রাস্তায় জমে থাকা পানির স্থানটি একটি গর্ত হতে পারে। আর গর্তে পড়ে যাওয়া মানে দুর্ঘটনা। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে গাড়ি চালানোর সময় হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখা যেতে পারেন। বৃষ্টিভেজা আর্দ্র পরিবেশ ফাঙ্গাস বেড়ে ওঠার জন্য খুবই উপযুক্ত। ত্বকে ফাঙ্গাসের সংক্রমণ রোধকল্পে তাই ব্যবস্থা নিতে হবে। আর্দ্র আবহাওয়া ও অপরিচ্ছন্নতা জীবনযাপনের কারণে ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমণের ঘটনা অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে প্রায় ১০ গুণ বেশি। আর এই ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঘটনা বর্ষার সময় বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে রামপুরা স্কিন কেয়ারের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. সাইফুল কবীর বলেন, ফাঙ্গাস আর্দ্র অথচ উষ্ণ এমন পরিবেশে সহজেই বেড়ে ওঠে। কাজেই এই ঋতুতে শরীর ঘেমে গেলে বগল, অন্তর্বাসের ভেতরে, পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঙ্গাস দেখা দেয়। ফাঙ্গাস শরীরের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিতে পারে। অঞ্চল ভেদে এদের নামও ভিন্ন, যেমন-অ্যাথলেটস ফুট, জোকস ইচ, ন্যাপির্যাশ, শরীরের বিভিন্ন স্থানে রিং ওয়ার্ম ইত্যাদি। এসব রোগের একটা সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে-শরীরে চুলকানির উদ্রেক। এই চুলকানির প্রবণতা বেশ তীব্র হয়ে থাকে, যখন না চুলকালে আর ভালো লাগে না। বর্ষার ফাঙ্গাস ইনফেকশন সাধারণত শুরু হয় পায়ের আঙুল থেকে। ছোট্ট সামান্য ফুসকুড়ি দিয়ে শুরু হয় উত্পত্তি, তারপর লাল হয়ে সেটা ছড়াতে থাকে। মাঝে মাঝে পায়ের তালুতেও এ ধরনের ইনফেকশন দেখা দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে পায়ের তালুর চামড়া ধূসর হয়ে যেতে থাকে এবং এক সময় তা মরা চামড়ায় পরিণত হয়। এভাবে ত্বকের আচরণ ভেঙে যাওয়ায় সেখানে জীবাণু সংক্রমণ ঘটতে পারে। এছাড়া নখেও ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটে। তখন নখের গোড়া মোটা হয়ে ফুলে যায়, কখনও কখনও নখও মোটা হয়ে যায়। একবার পায়ে যদি ফাঙ্গাস ধরা পড়ে তবে বিনা চিকিত্সায় পড়ে থাকলে সেটা নখেও ছড়িয়ে যায়। এক পা থেকে অন্য পায়ে, পা থেকে হাতে। এক হাত থেকে অন্য হাতে এভাবে সারা শরীরে সেটা ছড়িয়ে যেতে পারে। আক্রান্ত স্থানে চুলকানির উদ্রেককারী ছোট্ট দানার মতো দেখা যায়। ঘা চুলকানোর পর সেখান থেকে কষ ঝরে। এছাড়া গোলাকার আংটির মতো আকৃতির এক ধরনের ফাঙ্গাস রয়েছে। এগুলো শরীরের যেকোনো স্থানের ত্বকে গোল রিংয়ের মতো আকার নিয়ে আবির্ভূত হয়। আক্রান্ত স্থানটি খুব চুলকায় ও পরে সেখান থেকে কষ ঝরে। এ ধরনের ফাঙ্গাস কুঁচকিতে (জোক ইচ) খুব বেশি দেখা যায়। যারা সিনথেটিক ও টাইট অন্তর্বাস পরেন, বর্ষার সময় তাদের ক্ষেত্রে কুঁচকিতে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বেশি হয়। উল্লেখ্য, সাধারণের কাছে এই ফাঙ্গাল ইনফেকশন ‘দাদ’ বলে পরিচিত। ফাঙ্গাস এড়াতে হলে শরীর শুষ্ক রাখতে হবে। কখনও ভেজা ভাব কিংবা ড্যাম্প কাপড় পরা যাবে না। কাপড় পুরোপুরি শুকনো হতে হবে, প্রয়োজনে ইস্ত্রি করে নেওয়া ভালো। কুঁচকির ত্বক যাতে ভেজা না থাকে, সেখানে যেন আর্দ্রতা আটকে না যায় সেজন্য সিনথেটিকের অন্তর্বাস এড়িয়ে সুতির অন্তর্বাস ব্যবহার করতে হবে। মেয়েদের ব্রা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। তা না হলে ব্রেস্টের নিচের দিকে ফাঙ্গাস সংক্রমণ হতে পারে। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঘটনা বেশি ঘটে কারণ রক্তে বাড়তি সুগারের উপস্থিতি ফাঙ্গাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি করে। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়াপার আঁকড়ে থাকা ত্বকের স্থানটিতে ফাঙ্গাস বেড়ে উঠতে পারে। সিনথেটিক ডায়াপারের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঝুঁকি আরও বেশি। এছাড়া ত্বকের ভাঁজে ভাঁজে শরীরের যেকেনো স্থানে ফাঙ্গাস সংক্রমণ ঘটতে পারে। ফাঙ্গাসের চিকিত্সা পদ্ধতি সংক্রমণের ব্যাপ্তি ও ধরনের ওপর নির্ভর করে ফাঙ্গাসের চিকিত্সা পদ্ধতিও ভিন্ন হয়। তবে সঠিক চিকিত্সায় যেকোনো ফাঙ্গাসই সারিয়ে তোলা সম্ভব। প্রথমত পরিচ্ছন্নতা ও শুষ্কতা অবলম্বন করে ফাঙ্গাস সংক্রমণ ঘটে গেলে সে ক্ষেত্রে ত্বকের উপরিভাগে অ্যান্টি ফাঙ্গাল মলম ব্যবহার করে, ট্যাবলেট/ক্যাপসুল/সাসপেনশন অবস্থার অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধ সেবন করে, ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে সেরা ওঠা গেলেও ফাঙ্গাল বেড়ে ওঠার জন্য অনুকূল পরিবেশ থেকে মুক্ত হতে না পারলে ফাঙ্গাসের যন্ত্রণা থেকেও মুক্ত হওয়া সম্ভব হয় না। তবে বর্তমানে ফাঙ্গাসের অনেক কার্যকর ওষুধ বাজারে এসেছে, এগুলো সেবনে শারীরিক প্রতিক্রিয়া খুবই কম, প্রতিদিন খেতেও হয় না। অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধ সেবনের আগে লিভারের কোনো ত্রুটি আছে কি না তা পরখ করে নিতে হবে। তাই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে গেলে তখন ৩-৪ মাসের মধ্যে জন্ডিস হওয়ার ইতিহাস থাকলে তা ডাক্তারকে জানাতে হবে। অনেকেই ফাঙ্গাসকে খুব সহজ ব্যাপার মনে করে ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতার কথায় ওষুধ খেয়ে থাকেন। এটা ঠিক নয়, এতে বিপদ হতে পারে। তাছাড়া ফাঙ্গাস নিরাময়ে ওষুধ প্রয়োগের আগে ফাঙ্গাসের ধরন সম্পর্কেও নিশ্চিত হতে হবে। তাছাড়া ফাঙ্গাস সংক্রমিত ত্বক চুলকানোর ফলে ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে ঘায়ের সৃষ্টি হয়। সে ক্ষেত্রে আরও কিছু ওষুধ দিতে হয়। কাজেই ফাঙ্গাসের চিকিত্সা জটিলও হতে পারে। সুতরাং চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম। বিশেষজ্ঞ না পেলে একজন এমবিবিএস চিকিত্সকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। ফাঙ্গাসকে দূরে রাখুন ক্ষেত্রবিশেষ ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফাঙ্গাস সংক্রমণ প্রায় ১০০ ভাগ নিরাময় করা সম্ভব। তবে সেটা আবারও হতে পারে। কারণ ত্বকে ফাঙ্গাস বেড়ে ওঠার পরিবেশ সৃষ্টি হলে সেখানে ফাঙ্গাস বেড়ে উঠতে চেষ্টা করবে। তাই ফাঙ্গাস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সেগুলো হচ্ছে প্রতিদিন পা, আঙুলের ফাঁক, নখের গোড়া ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। ধোয়ার পর শুষ্ক তোয়ালে দিয়ে ভেজা স্থান মুছে শুষ্ক করে ফেলতে হবে। বিশেষ করে আঙুলের ফাঁক, ঊরুসন্ধির ভাঁজ, বগল, ঘাড়, মাথার চুল ইত্যাদি পুরোপুরি শুকনো না করলে সেখানে ফাঙ্গাস বেড়ে উঠতে পারে। আঙুলের ফাঁকে, বগলে অ্যান্টি ফাঙ্গাল পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে পাউডার পাতলা করে লাগাতে হবে। বৃষ্টির দিনে গামবুট, বন্ধ প্লাস্টিকের জুতো ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো, যদি পায়ে বা আঙুলের ফাঁকে কোনো ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমণ থাকে। এই সময়ে খোলা স্যান্ডেল বা স্যান্ডেল সু ব্যবহার করাই ভালো। আর এ অবস্থায় জুতা যদি পরতেই হয়, তবে চামড়ার জুতা ও সুতি মোজা পরা যেতে পারে। পায়ে ফাঙ্গাস সংক্রমণ থাকা অবস্থায় যত কম সময় ধরে জুতা পরা যায় ততই মঙ্গল। পা খোলা ও শুষ্ক রাখাটাই তখন উত্তম। সেই সঙ্গে খেতে হবে কিংবা ব্যবহার করতে হবে চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো প্রয়োজনীয় ওষুধটি। দরকার হলে অফিসে পৃথক স্যান্ডেল সু রাখা যেতে পারে। অফিসে গিয়ে জুতা-মোজা খুলে রেখে স্যান্ডেল সু পরা যেতে পারে। প্লাস্টিকের স্যান্ডেল পায়ে বৃষ্টির পথ মাড়িয়ে ঘরে ফেরার পর পা ও স্যান্ডেল উভয়ই ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। বৃষ্টির দিনে নখ কেটে ছোট করতে হবে। তা না হলে নখের গোড়া বরাবর ভিজে ফাঙ্গাস সংক্রমণ হতে পারে। শরীরের কোথাও ফাঙ্গাস সংক্রমণ ঘটলে তা পারতপক্ষে না চুলকানোই ভালো। এতে ত্বকে অন্য আরেকটি ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। ত্বকের ফাঙ্গাস সংক্রমিত স্থানটি প্রাথমিক পর্যায়ের হলে সেখানে অ্যান্টি ফাঙ্গাল মলম লাগিয়ে রাখতে পারেন। বর্ষার সময় খালি পায়ে বাইরে বের হওয়া একদমই উচিত নয়। সেই সঙ্গে বর্ষার পানি মাড়ানোও উচিত নয়। এতে ত্বকে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়বে। বর্ষায় নখে নেইলপলিশ না মাখাই ভালো এবং সেই সঙ্গে কৃত্রিম নখ ব্যবহারেও বিরত থাকা উচিত। নইলে নখের গোড়ায় বাড়তি আর্দ্রতা জমে সেখানে ফাঙ্গাস বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেবে। হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কারের পর সঙ্গে সঙ্গে হাত মুছে ফেলতে হবে। পারলে ভেতরে তুলো বা সুতি কাপড়ের আবরণ দেওয়া গ্লাভস পরে হাঁড়ি-পাতিল ধোয়ার কাজ করা যেতে পারে। মাথার চুল শ্যাম্পো করে শুষ্ক রাখতে হবে। এতে করে চুলের গোড়ায় ফাঙ্গাস বাসা বাঁধার সুযোগ পাবে না। তোয়ালে, ব্রাশ, চিরুনি পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখতে হবে। অন্যের ব্যক্তিগত এসব জিনিসপত্র ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে অন্যের কাছ থেকে ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। টাইট অন্তর্বাস, ব্রা ব্যবহার করা উচিত নয়। কোমরে টাইট করে পেটিকোটও পরা উচিত নয়। এ সময় এসব পোশাক হতে হবে সুতি। বেশি টাইট করে পেটিকোট পরলে কোমরে ফাঙ্গাস বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। স্যাঁতসেঁতে পোশাক ব্যবহার করা উচিত নয়। কাপড়-চোপড় ধুয়ে শুকনো করে পরতে হবে। বর্ষার সময় পোষা পশুপাখি না হাতড়ানোই ভালো। এক্ষেত্রে একই সমস্যা হতে পারে। ফাঙ্গাস একজন থেকে অন্যজনে ছড়াতে পারে। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। বর্ষার অন্যান্য রোগ মূলত পানিবাহিত। তাই বর্ষায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতনভাবে জীবনযাপন ও সতর্ক পদক্ষেপ বর্ষার স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারে। মনে রাখতে হবে, বর্ষার সময় রোগের ঝুঁকির চেয়ে বর্ষাজনিত দুর্ঘটনার কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কাজেই বর্ষার পথচলা হতে হবে সাবধানী ও সতর্ক, জীবনযাপনে হতে হবে স্বাস্থ্য সচেতন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্ষার অসুখ-বিসুখ

আপডেট টাইম : ১২:৪৩:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ জুন ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এখন বর্ষাকাল। বর্ষার আগমন আমাদের জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলে থাকে। বর্ষার কারণে রোগজীবাণু খুব সহজেই ছড়ানোর সুযোগ পায় বলে এ সময়ে বেশ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। বিশেষ করে পানিবাহিত রোগ, যেমন-টাইফয়েড, জন্ডিস (হেপাটাইটিস-এ, ই), ডিসেন্ট্রি, কৃমি সংক্রমণ ইত্যাদির সঙ্গে দেখা দেয় ত্বকের ফাঙ্গাসজনিত ইনফেকশন। তাছাড়া বর্ষা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে বাড়িয়ে দেয় স্বাস্থ্যঝুঁকিও। সুতরাং বর্ষার স্বাস্থ্যঝুঁকি ও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার লক্ষ্যে ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কতা ও সমস্যা সম্পর্কে সম্যক সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। বৃষ্টির পানি খুব সহজেই ময়লা-আবর্জনাকে এক স্থান থেকে বয়ে অন্যত্র নিয়ে যায়, সেই সঙ্গে গোটা পরিবেশকেও আবর্জনার জীবাণুতে দূষিত করে তোলে। দূষণের এই কবল থেকে কখনও কখনও পান করা কিংবা ঘরের কাজে ব্যবহার করার পানিও রক্ষা পায় না। আবার বৃষ্টির নোংরা জল মাড়িয়ে অনেকেই জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে পথঘাটও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। যার ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। আর সড়ক দুর্ঘটনায় অঙ্গহানির ঝুঁকি তো কিছুটা থাকছেই। কাজেই বর্ষার সময় ঘরে-বাইরেও সতর্ক পথ চলতে হবে। ঘরের বাইরে এ সময়ে ঘরের বাইরে রাস্তার ধারের তৈরি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। পারলে রেস্টুরেন্টের খাবারও বাদ দিতে হবে। কারণ বর্ষার দিনে এসব স্থানের খাবার ও পানি দূষিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কোনো কারণে বাইরে যদি খেতেই হয়, তাহলে শুধু রান্না করা খাবার বেছে নিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে প্লেট-গ্লাস ভালো করে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধোয়া হয়েছে কি না। একই সঙ্গে বাইরের পানি পান করা যাবে না। রাস্তার ধারে তৈরি শরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে কাপ ভালো করে ধোয়া হয়ে থাকলে চা-কফি ইত্যাদি পান করা যাবে। ঘরের মধ্যে বাথরুম সেরে আসার পর সাবান দিয়ে ভালো করে পর্যাপ্ত পানি ব্যবহারে হাত ধুয়ে নিতে হবে। খাবার তৈরির সময় এবং খাবার গ্রহণের আগে হাত সাবান দিয়ে একইভাবে ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন। ঘরের বাসি খাবার এ সময়ে এড়িয়ে চলাই ভালো। খাবার সব সময় ঢেকে রাখতে হবে, যাতে করে খাবারে মাছি কিংবা অন্য কোনো কীট-পতঙ্গ বসতে না পারে। পানি বিশুদ্ধকরণে ফিল্টার কিংবা বড়ি ব্যবহার করে পানিকে হেপাটাইটিস-এ থেকে মুক্ত করা যায় না। তাই পানি বিশুদ্ধকরণে পানিকে টগবগ করে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নেওয়াই উত্তম। যেকোনো ফল কিংবা সবজি খাওয়ার আগে ভালো করে পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। সতর্ক পথচলা বর্ষার দিনে রাস্তাঘাট বৃৃষ্টিতে ভিজে ভিজে পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। তাই বৃষ্টির দিনে পথ চলার সময় পা ফেলতে হবে সাবধানে। এ সময়ে পথ চলতে গিয়ে খেয়াল করতে হবে রাস্তার ওপর ঝড়-বৃষ্টির কারণে বৈদ্যুতিক তার কিংবা টেলিফোনের তার ছিঁড়ে পড়ে আছে কি না। বৈদ্যুতিক তার থেকে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে আর টেলিফোনের তারে হোঁচট খেয়ে আঘাত পাওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। পথের মাঝে কোথাও পানি জমে থাকলে সেই পানির ওপর দিয়ে পথচলা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ জমে থাকা এই পানির নিচে ম্যানহোল কিংবা বড় গর্ত থাকতে পারে। বৃষ্টির সময় রেইনকোট ও ছাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। যাদের পায়ের ত্বকে ফাঙ্গাসজনিত ইনফেকশন, যেমন-পায়ের আঙুলের ফাঁকে চুলকানির উদ্রেককারী সাদাটে ঘা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে গামবুট না পরাই ভালো। তবে পায়ে অবশ্যই স্যান্ডেল পরতে হবে। পায়ের ত্বকে কোনো রোগ না থাকলে, বর্ষার সময় রেইনকোট ও ছাতার সঙ্গে গামবুটও পরা যেতে পারে। গামবুট বর্ষার সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে পা দুটিকে রক্ষার চেষ্টা করবে। কখনও খালি পায়ে এ সময়ে রাস্তায় নামা ঠিক হবে না। এতে করে পথের মাঝে পড়ে থাকা লোহা, কাচ, টিন ইত্যাদি ধারালো অথচ নোংরা উপকরণ থেকে কেটে গিয়ে মারাত্মক ইনফেকশন হতে পারে। বর্ষার রাতে পথ চলতে অবশ্যই সঙ্গে টর্চ রাখতে হবে। বাইসাইকেল, বাইক ও কার সাবধানে চালাতে হবে বর্ষার সময় বাইসাইকেল এবং বাইক রাস্তায় নামানোর আগে ব্রেক, টায়ার, হেডলাইট, সিগন্যাল লাইট, হর্ন/বেল, চেইন ইত্যাদি চেক করে নিতে হবে। রাস্তায় নামানোর আগে একইভাবে গাড়ির সব জিনিস কাজ করছে কি না দেখে নিতে হবে। আরও চেক করে নিতে হবে স্টিয়ারিং, টায়ার প্রেসার, সাসপেনশন ইত্যাদি। টায়ারের গ্রিপার পর্যাপ্ত অবস্থায় আছে কি না সেটাও দেখতে হবে। তা না হলে গাড়ি স্লিপ করতে পারে। বৃষ্টির জন্য গাড়ির ক্ষেত্রে দরকারি আরেকটি বিষয় হচ্ছে ওয়াইপার। ওয়াইপার ঠিক না থাকলে বৃষ্টিতে গাড়ি রাস্তায় নামানোই উচিত নয়। বৃষ্টির সময় সাইকেল, বাইক, কার ধীরে চালানো উচিত। রাস্তায় জমে থাকা পানির ওপর দিয়ে কখনও আপনার বাহনটি চালানো উচিত নয়। কারণ রাস্তায় জমে থাকা পানির স্থানটি একটি গর্ত হতে পারে। আর গর্তে পড়ে যাওয়া মানে দুর্ঘটনা। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে গাড়ি চালানোর সময় হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখা যেতে পারেন। বৃষ্টিভেজা আর্দ্র পরিবেশ ফাঙ্গাস বেড়ে ওঠার জন্য খুবই উপযুক্ত। ত্বকে ফাঙ্গাসের সংক্রমণ রোধকল্পে তাই ব্যবস্থা নিতে হবে। আর্দ্র আবহাওয়া ও অপরিচ্ছন্নতা জীবনযাপনের কারণে ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমণের ঘটনা অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে প্রায় ১০ গুণ বেশি। আর এই ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঘটনা বর্ষার সময় বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে রামপুরা স্কিন কেয়ারের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. সাইফুল কবীর বলেন, ফাঙ্গাস আর্দ্র অথচ উষ্ণ এমন পরিবেশে সহজেই বেড়ে ওঠে। কাজেই এই ঋতুতে শরীর ঘেমে গেলে বগল, অন্তর্বাসের ভেতরে, পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঙ্গাস দেখা দেয়। ফাঙ্গাস শরীরের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিতে পারে। অঞ্চল ভেদে এদের নামও ভিন্ন, যেমন-অ্যাথলেটস ফুট, জোকস ইচ, ন্যাপির্যাশ, শরীরের বিভিন্ন স্থানে রিং ওয়ার্ম ইত্যাদি। এসব রোগের একটা সাধারণ উপসর্গ হচ্ছে-শরীরে চুলকানির উদ্রেক। এই চুলকানির প্রবণতা বেশ তীব্র হয়ে থাকে, যখন না চুলকালে আর ভালো লাগে না। বর্ষার ফাঙ্গাস ইনফেকশন সাধারণত শুরু হয় পায়ের আঙুল থেকে। ছোট্ট সামান্য ফুসকুড়ি দিয়ে শুরু হয় উত্পত্তি, তারপর লাল হয়ে সেটা ছড়াতে থাকে। মাঝে মাঝে পায়ের তালুতেও এ ধরনের ইনফেকশন দেখা দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে পায়ের তালুর চামড়া ধূসর হয়ে যেতে থাকে এবং এক সময় তা মরা চামড়ায় পরিণত হয়। এভাবে ত্বকের আচরণ ভেঙে যাওয়ায় সেখানে জীবাণু সংক্রমণ ঘটতে পারে। এছাড়া নখেও ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটে। তখন নখের গোড়া মোটা হয়ে ফুলে যায়, কখনও কখনও নখও মোটা হয়ে যায়। একবার পায়ে যদি ফাঙ্গাস ধরা পড়ে তবে বিনা চিকিত্সায় পড়ে থাকলে সেটা নখেও ছড়িয়ে যায়। এক পা থেকে অন্য পায়ে, পা থেকে হাতে। এক হাত থেকে অন্য হাতে এভাবে সারা শরীরে সেটা ছড়িয়ে যেতে পারে। আক্রান্ত স্থানে চুলকানির উদ্রেককারী ছোট্ট দানার মতো দেখা যায়। ঘা চুলকানোর পর সেখান থেকে কষ ঝরে। এছাড়া গোলাকার আংটির মতো আকৃতির এক ধরনের ফাঙ্গাস রয়েছে। এগুলো শরীরের যেকোনো স্থানের ত্বকে গোল রিংয়ের মতো আকার নিয়ে আবির্ভূত হয়। আক্রান্ত স্থানটি খুব চুলকায় ও পরে সেখান থেকে কষ ঝরে। এ ধরনের ফাঙ্গাস কুঁচকিতে (জোক ইচ) খুব বেশি দেখা যায়। যারা সিনথেটিক ও টাইট অন্তর্বাস পরেন, বর্ষার সময় তাদের ক্ষেত্রে কুঁচকিতে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বেশি হয়। উল্লেখ্য, সাধারণের কাছে এই ফাঙ্গাল ইনফেকশন ‘দাদ’ বলে পরিচিত। ফাঙ্গাস এড়াতে হলে শরীর শুষ্ক রাখতে হবে। কখনও ভেজা ভাব কিংবা ড্যাম্প কাপড় পরা যাবে না। কাপড় পুরোপুরি শুকনো হতে হবে, প্রয়োজনে ইস্ত্রি করে নেওয়া ভালো। কুঁচকির ত্বক যাতে ভেজা না থাকে, সেখানে যেন আর্দ্রতা আটকে না যায় সেজন্য সিনথেটিকের অন্তর্বাস এড়িয়ে সুতির অন্তর্বাস ব্যবহার করতে হবে। মেয়েদের ব্রা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। তা না হলে ব্রেস্টের নিচের দিকে ফাঙ্গাস সংক্রমণ হতে পারে। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঘটনা বেশি ঘটে কারণ রক্তে বাড়তি সুগারের উপস্থিতি ফাঙ্গাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি করে। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়াপার আঁকড়ে থাকা ত্বকের স্থানটিতে ফাঙ্গাস বেড়ে উঠতে পারে। সিনথেটিক ডায়াপারের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঝুঁকি আরও বেশি। এছাড়া ত্বকের ভাঁজে ভাঁজে শরীরের যেকেনো স্থানে ফাঙ্গাস সংক্রমণ ঘটতে পারে। ফাঙ্গাসের চিকিত্সা পদ্ধতি সংক্রমণের ব্যাপ্তি ও ধরনের ওপর নির্ভর করে ফাঙ্গাসের চিকিত্সা পদ্ধতিও ভিন্ন হয়। তবে সঠিক চিকিত্সায় যেকোনো ফাঙ্গাসই সারিয়ে তোলা সম্ভব। প্রথমত পরিচ্ছন্নতা ও শুষ্কতা অবলম্বন করে ফাঙ্গাস সংক্রমণ ঘটে গেলে সে ক্ষেত্রে ত্বকের উপরিভাগে অ্যান্টি ফাঙ্গাল মলম ব্যবহার করে, ট্যাবলেট/ক্যাপসুল/সাসপেনশন অবস্থার অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধ সেবন করে, ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে সেরা ওঠা গেলেও ফাঙ্গাল বেড়ে ওঠার জন্য অনুকূল পরিবেশ থেকে মুক্ত হতে না পারলে ফাঙ্গাসের যন্ত্রণা থেকেও মুক্ত হওয়া সম্ভব হয় না। তবে বর্তমানে ফাঙ্গাসের অনেক কার্যকর ওষুধ বাজারে এসেছে, এগুলো সেবনে শারীরিক প্রতিক্রিয়া খুবই কম, প্রতিদিন খেতেও হয় না। অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধ সেবনের আগে লিভারের কোনো ত্রুটি আছে কি না তা পরখ করে নিতে হবে। তাই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে গেলে তখন ৩-৪ মাসের মধ্যে জন্ডিস হওয়ার ইতিহাস থাকলে তা ডাক্তারকে জানাতে হবে। অনেকেই ফাঙ্গাসকে খুব সহজ ব্যাপার মনে করে ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতার কথায় ওষুধ খেয়ে থাকেন। এটা ঠিক নয়, এতে বিপদ হতে পারে। তাছাড়া ফাঙ্গাস নিরাময়ে ওষুধ প্রয়োগের আগে ফাঙ্গাসের ধরন সম্পর্কেও নিশ্চিত হতে হবে। তাছাড়া ফাঙ্গাস সংক্রমিত ত্বক চুলকানোর ফলে ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে ঘায়ের সৃষ্টি হয়। সে ক্ষেত্রে আরও কিছু ওষুধ দিতে হয়। কাজেই ফাঙ্গাসের চিকিত্সা জটিলও হতে পারে। সুতরাং চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম। বিশেষজ্ঞ না পেলে একজন এমবিবিএস চিকিত্সকের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। ফাঙ্গাসকে দূরে রাখুন ক্ষেত্রবিশেষ ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফাঙ্গাস সংক্রমণ প্রায় ১০০ ভাগ নিরাময় করা সম্ভব। তবে সেটা আবারও হতে পারে। কারণ ত্বকে ফাঙ্গাস বেড়ে ওঠার পরিবেশ সৃষ্টি হলে সেখানে ফাঙ্গাস বেড়ে উঠতে চেষ্টা করবে। তাই ফাঙ্গাস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সেগুলো হচ্ছে প্রতিদিন পা, আঙুলের ফাঁক, নখের গোড়া ভালো করে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। ধোয়ার পর শুষ্ক তোয়ালে দিয়ে ভেজা স্থান মুছে শুষ্ক করে ফেলতে হবে। বিশেষ করে আঙুলের ফাঁক, ঊরুসন্ধির ভাঁজ, বগল, ঘাড়, মাথার চুল ইত্যাদি পুরোপুরি শুকনো না করলে সেখানে ফাঙ্গাস বেড়ে উঠতে পারে। আঙুলের ফাঁকে, বগলে অ্যান্টি ফাঙ্গাল পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে পাউডার পাতলা করে লাগাতে হবে। বৃষ্টির দিনে গামবুট, বন্ধ প্লাস্টিকের জুতো ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো, যদি পায়ে বা আঙুলের ফাঁকে কোনো ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমণ থাকে। এই সময়ে খোলা স্যান্ডেল বা স্যান্ডেল সু ব্যবহার করাই ভালো। আর এ অবস্থায় জুতা যদি পরতেই হয়, তবে চামড়ার জুতা ও সুতি মোজা পরা যেতে পারে। পায়ে ফাঙ্গাস সংক্রমণ থাকা অবস্থায় যত কম সময় ধরে জুতা পরা যায় ততই মঙ্গল। পা খোলা ও শুষ্ক রাখাটাই তখন উত্তম। সেই সঙ্গে খেতে হবে কিংবা ব্যবহার করতে হবে চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো প্রয়োজনীয় ওষুধটি। দরকার হলে অফিসে পৃথক স্যান্ডেল সু রাখা যেতে পারে। অফিসে গিয়ে জুতা-মোজা খুলে রেখে স্যান্ডেল সু পরা যেতে পারে। প্লাস্টিকের স্যান্ডেল পায়ে বৃষ্টির পথ মাড়িয়ে ঘরে ফেরার পর পা ও স্যান্ডেল উভয়ই ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। বৃষ্টির দিনে নখ কেটে ছোট করতে হবে। তা না হলে নখের গোড়া বরাবর ভিজে ফাঙ্গাস সংক্রমণ হতে পারে। শরীরের কোথাও ফাঙ্গাস সংক্রমণ ঘটলে তা পারতপক্ষে না চুলকানোই ভালো। এতে ত্বকে অন্য আরেকটি ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। ত্বকের ফাঙ্গাস সংক্রমিত স্থানটি প্রাথমিক পর্যায়ের হলে সেখানে অ্যান্টি ফাঙ্গাল মলম লাগিয়ে রাখতে পারেন। বর্ষার সময় খালি পায়ে বাইরে বের হওয়া একদমই উচিত নয়। সেই সঙ্গে বর্ষার পানি মাড়ানোও উচিত নয়। এতে ত্বকে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়বে। বর্ষায় নখে নেইলপলিশ না মাখাই ভালো এবং সেই সঙ্গে কৃত্রিম নখ ব্যবহারেও বিরত থাকা উচিত। নইলে নখের গোড়ায় বাড়তি আর্দ্রতা জমে সেখানে ফাঙ্গাস বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দেবে। হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কারের পর সঙ্গে সঙ্গে হাত মুছে ফেলতে হবে। পারলে ভেতরে তুলো বা সুতি কাপড়ের আবরণ দেওয়া গ্লাভস পরে হাঁড়ি-পাতিল ধোয়ার কাজ করা যেতে পারে। মাথার চুল শ্যাম্পো করে শুষ্ক রাখতে হবে। এতে করে চুলের গোড়ায় ফাঙ্গাস বাসা বাঁধার সুযোগ পাবে না। তোয়ালে, ব্রাশ, চিরুনি পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখতে হবে। অন্যের ব্যক্তিগত এসব জিনিসপত্র ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে অন্যের কাছ থেকে ফাঙ্গাস সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে। টাইট অন্তর্বাস, ব্রা ব্যবহার করা উচিত নয়। কোমরে টাইট করে পেটিকোটও পরা উচিত নয়। এ সময় এসব পোশাক হতে হবে সুতি। বেশি টাইট করে পেটিকোট পরলে কোমরে ফাঙ্গাস বেড়ে ওঠার সুযোগ পাবে। স্যাঁতসেঁতে পোশাক ব্যবহার করা উচিত নয়। কাপড়-চোপড় ধুয়ে শুকনো করে পরতে হবে। বর্ষার সময় পোষা পশুপাখি না হাতড়ানোই ভালো। এক্ষেত্রে একই সমস্যা হতে পারে। ফাঙ্গাস একজন থেকে অন্যজনে ছড়াতে পারে। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। বর্ষার অন্যান্য রোগ মূলত পানিবাহিত। তাই বর্ষায় বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতনভাবে জীবনযাপন ও সতর্ক পদক্ষেপ বর্ষার স্বাস্থ্য ও দুর্ঘটনা ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারে। মনে রাখতে হবে, বর্ষার সময় রোগের ঝুঁকির চেয়ে বর্ষাজনিত দুর্ঘটনার কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। কাজেই বর্ষার পথচলা হতে হবে সাবধানী ও সতর্ক, জীবনযাপনে হতে হবে স্বাস্থ্য সচেতন।