ঢাকা ০৬:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংসদে মুহিতকে একহাত নিলেন মতিয়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৩:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০১৭
  • ২৬৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ লাখ টাকার ওপর ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি এবং সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর প্রস্তাব দেয়ায় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কঠোর সমালোচনা করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। এই দুই উদ্যোগে যে কয় টাকা আসবে তা সরকারের জন্য ‘পিনাট’ (বাদাম) এর মত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এই কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর প্রস্তাব নিয়ে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল আরও ঝাঁঝাল। তিনি বলেন, ‘সমাজের অনেক শ্রেণির লোককে ভর্তুকি দিই। যা তাদের প্রাপ্য না। অথচ যাদের প্রাপ্ত, তাদের বঞ্চিত করতে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা যদি ঋণ খেলাপিদের বোঝা নিতে পারি, তাদের তোয়াজও করতে পারি, তাহলে কেন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের সামান্য বোঝা আমরা নেব না?’

মতিয়া বলেন, ‘এদের একটাই প্রবলেম, এদের কোনো প্রেসার গ্রুপ নাই, যদি থাকতো, তাদের কনসেশন আদায় করে নিতে পারত্। সেইখানেই এদের পক্ষ হয়ে আমি কথা বলব।’

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এক লাখ। টাকার ঊর্ধ্ব থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবের ওপর আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এর থেকে সরকার কত টাকা পাবে? হিসাবে দেখা যায়, ৮০-৮৫ লক্ষ লোক এই ট্যাক্স দেয় আর ৭০-৭৫ লাখ লোকই এক লাখ এক টাকা থেকে ১০ লাখ টাকার আমানতকারী। এরাই দেবে ২০০ কোটি টাকার ওপর। এই টাকার জন্য কি আমরা এই বিপুলসংখ্যক লোক, যাদের আয় আমরা কমিয়ে দেব?’।

‘ওনি (অর্থমন্ত্রী) জনগণের ওপর এই বোঝা চাপিয়ে তিনি কি যক্ষের ধন পাহারা দেবেন? এই প্রশ্নটা আমি রাখতে চাই। আমার মতে এই প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা উচিত’-বলেন মতিয়া চৌধুরী।

‘এই প্রস্তাবটা তুলে নিলে সরকারের ক্ষতি হবে মাত্র ৩৫৫ কোটি টাকা। এটা তো মাননীয় অর্থমন্ত্রীর জন্য একটা পিনাট আমি মনে করি। সেখানে তিনি কেন হাত দিচ্ছেন, আমি বুঝতে পারি না’-বলেন মতিয়া চৌধুরী।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে ব্যাংক আমানতের সুদ নিম্ন পর্যায়ে, মূল্যস্ফীতির নিচে ব্যাংকের সুদ। শুধু তাই নয়, প্রাপ্ত সুদের ওপরে ১০-১৫ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর কেটে নেয়া হয়। রয়েছে সার্ভিস চার্জ। এর ওপর চালু আছে আবগারি শুল্ক। সেই আবগারি শুল্ক যদি বৃদ্ধি করা হয়, তা মরার ওপর খাড়ার ঘা হবে।’

এক লাখ টাকার ওপরের ব্যাংক হিসাবধারীরা যথেষ্ট সম্পদশালী-অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যেরও কঠোর সমালোচনা করেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কী করে আমরা এদেরকে বিত্তবান বলবো। দুই টাকার পর পাঁচ টাকার কারেন্সি সরকার যেখানে উঠিয়ে নিচ্ছে তখন এই লাখ টাকা তো মহারানি ভিক্টোরিয়ার আমলের টাকা নয়। এই টাকা থাকলে ঘিয়ের বাতি জ্বালাত, তাদের সাথে আমাদের তুলনা করে লাভ নাই।’

সঞ্চয়পত্রেরসুদের হার না কমানোর দাবি

গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ক্রমাগত কমে এখন পাঁচ শতাংশ দাঁড়ালেও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এর দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। তবে অর্থমন্ত্রী এটাকে কমিয়ে ব্যাংক ঋণের ‍সুদের চেয়ে দুই শতাংশ বেশির মধ্যে রাখতে চান।

মুহিতের এই অবস্থানেরও বিরোধিতা করেন মতিয়া। বলেন, ‘এই সুদ বাবদ খরচ ১০ শতাংশ যদি বেশি হয়, তাহলে দাঁড়াবে এক হাজার কোটি টাকা। আর এই টাকার সুবিধা কারা পাচ্ছে? লক্ষ লক্ষ লোক। এদের মধ্যে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, সিনিয়র সিটিজেন, নারী, বিধবা নারী, মুক্তিযোদ্ধা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এদের কোনো নিরাপত্তা প্রকল্প নাই। এরা ট্রাকসেলে দাঁড়াতে পারে না, হাত পাততে পারে না।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কাগজে দেখলাম আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর ফতোয়া দিচ্ছে। এরা কারা? এরা সেই প্রতিষ্ঠান যারা পদ্মা সেতুতে বাধা দিয়েছে। এরা সারে এবং কৃষি উৎপাদনে ভর্তুকি দিতে বাধা দিয়েছে। আর এদের উপেক্ষা করে আমরা নিজ খরচে পদ্মা সেতু করছি এবং আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছি। এই প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় একটা ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান। নিখাদ দেশপ্রেম এবং সচেতনতা শেখ হাসিনার আছে। এটা আইএমএফকে বুঝতে হবে’-বলেন কৃষিমন্ত্রী।

‘যে সমস্ত দেশ এদের পরামর্শ অন্ধের মত অনুসরণ করেছে তারাই বিপদে পড়েছে’-অর্থমন্ত্রীকে সতর্কও করে দিয়ে মতিয়া বলেন, ‘এদের (আইএমএফ) হিতোপদেশ আমি প্রত্যাখ্যান করি।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত বিপুলসংখ্যক সিনিয়র সিটিজেনের অবস্থা আগের মত নাই। যৌথ পরিবার ভেঙে গেছে। এদের সিনিয়র ডায়াবেটিস, এরা সিনিয়র কার্ডিয়াক পেশেন্ট। হাসপাতালে দুই-তিন ঘণ্টা গিয়ে কাটালে ৩০-৪০ হাজার টাকা বিল দিয়ে আসতে হয়। এদের ওপর আপনি হাত দেবেন না, এমন লাখ লাখ মানুষের গার্জিয়ান হিসেবে সরকারকেই দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে আমরা মরণের দাঁড়প্রান্তে ঠেলে দিতে পারি না’।

বাজেট প্রস্তাবে কৃষিকাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টরের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারেরও দাবি জানান কৃষিমন্ত্রী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সংসদে মুহিতকে একহাত নিলেন মতিয়া

আপডেট টাইম : ১০:৫৩:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ লাখ টাকার ওপর ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি এবং সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর প্রস্তাব দেয়ায় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কঠোর সমালোচনা করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। এই দুই উদ্যোগে যে কয় টাকা আসবে তা সরকারের জন্য ‘পিনাট’ (বাদাম) এর মত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এই কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর প্রস্তাব নিয়ে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল আরও ঝাঁঝাল। তিনি বলেন, ‘সমাজের অনেক শ্রেণির লোককে ভর্তুকি দিই। যা তাদের প্রাপ্য না। অথচ যাদের প্রাপ্ত, তাদের বঞ্চিত করতে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা যদি ঋণ খেলাপিদের বোঝা নিতে পারি, তাদের তোয়াজও করতে পারি, তাহলে কেন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের সামান্য বোঝা আমরা নেব না?’

মতিয়া বলেন, ‘এদের একটাই প্রবলেম, এদের কোনো প্রেসার গ্রুপ নাই, যদি থাকতো, তাদের কনসেশন আদায় করে নিতে পারত্। সেইখানেই এদের পক্ষ হয়ে আমি কথা বলব।’

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী এক লাখ। টাকার ঊর্ধ্ব থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবের ওপর আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এর থেকে সরকার কত টাকা পাবে? হিসাবে দেখা যায়, ৮০-৮৫ লক্ষ লোক এই ট্যাক্স দেয় আর ৭০-৭৫ লাখ লোকই এক লাখ এক টাকা থেকে ১০ লাখ টাকার আমানতকারী। এরাই দেবে ২০০ কোটি টাকার ওপর। এই টাকার জন্য কি আমরা এই বিপুলসংখ্যক লোক, যাদের আয় আমরা কমিয়ে দেব?’।

‘ওনি (অর্থমন্ত্রী) জনগণের ওপর এই বোঝা চাপিয়ে তিনি কি যক্ষের ধন পাহারা দেবেন? এই প্রশ্নটা আমি রাখতে চাই। আমার মতে এই প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করা উচিত’-বলেন মতিয়া চৌধুরী।

‘এই প্রস্তাবটা তুলে নিলে সরকারের ক্ষতি হবে মাত্র ৩৫৫ কোটি টাকা। এটা তো মাননীয় অর্থমন্ত্রীর জন্য একটা পিনাট আমি মনে করি। সেখানে তিনি কেন হাত দিচ্ছেন, আমি বুঝতে পারি না’-বলেন মতিয়া চৌধুরী।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে ব্যাংক আমানতের সুদ নিম্ন পর্যায়ে, মূল্যস্ফীতির নিচে ব্যাংকের সুদ। শুধু তাই নয়, প্রাপ্ত সুদের ওপরে ১০-১৫ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর কেটে নেয়া হয়। রয়েছে সার্ভিস চার্জ। এর ওপর চালু আছে আবগারি শুল্ক। সেই আবগারি শুল্ক যদি বৃদ্ধি করা হয়, তা মরার ওপর খাড়ার ঘা হবে।’

এক লাখ টাকার ওপরের ব্যাংক হিসাবধারীরা যথেষ্ট সম্পদশালী-অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যেরও কঠোর সমালোচনা করেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কী করে আমরা এদেরকে বিত্তবান বলবো। দুই টাকার পর পাঁচ টাকার কারেন্সি সরকার যেখানে উঠিয়ে নিচ্ছে তখন এই লাখ টাকা তো মহারানি ভিক্টোরিয়ার আমলের টাকা নয়। এই টাকা থাকলে ঘিয়ের বাতি জ্বালাত, তাদের সাথে আমাদের তুলনা করে লাভ নাই।’

সঞ্চয়পত্রেরসুদের হার না কমানোর দাবি

গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ক্রমাগত কমে এখন পাঁচ শতাংশ দাঁড়ালেও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এর দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। তবে অর্থমন্ত্রী এটাকে কমিয়ে ব্যাংক ঋণের ‍সুদের চেয়ে দুই শতাংশ বেশির মধ্যে রাখতে চান।

মুহিতের এই অবস্থানেরও বিরোধিতা করেন মতিয়া। বলেন, ‘এই সুদ বাবদ খরচ ১০ শতাংশ যদি বেশি হয়, তাহলে দাঁড়াবে এক হাজার কোটি টাকা। আর এই টাকার সুবিধা কারা পাচ্ছে? লক্ষ লক্ষ লোক। এদের মধ্যে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, সিনিয়র সিটিজেন, নারী, বিধবা নারী, মুক্তিযোদ্ধা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এদের কোনো নিরাপত্তা প্রকল্প নাই। এরা ট্রাকসেলে দাঁড়াতে পারে না, হাত পাততে পারে না।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কাগজে দেখলাম আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানোর ফতোয়া দিচ্ছে। এরা কারা? এরা সেই প্রতিষ্ঠান যারা পদ্মা সেতুতে বাধা দিয়েছে। এরা সারে এবং কৃষি উৎপাদনে ভর্তুকি দিতে বাধা দিয়েছে। আর এদের উপেক্ষা করে আমরা নিজ খরচে পদ্মা সেতু করছি এবং আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছি। এই প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় একটা ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান। নিখাদ দেশপ্রেম এবং সচেতনতা শেখ হাসিনার আছে। এটা আইএমএফকে বুঝতে হবে’-বলেন কৃষিমন্ত্রী।

‘যে সমস্ত দেশ এদের পরামর্শ অন্ধের মত অনুসরণ করেছে তারাই বিপদে পড়েছে’-অর্থমন্ত্রীকে সতর্কও করে দিয়ে মতিয়া বলেন, ‘এদের (আইএমএফ) হিতোপদেশ আমি প্রত্যাখ্যান করি।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত বিপুলসংখ্যক সিনিয়র সিটিজেনের অবস্থা আগের মত নাই। যৌথ পরিবার ভেঙে গেছে। এদের সিনিয়র ডায়াবেটিস, এরা সিনিয়র কার্ডিয়াক পেশেন্ট। হাসপাতালে দুই-তিন ঘণ্টা গিয়ে কাটালে ৩০-৪০ হাজার টাকা বিল দিয়ে আসতে হয়। এদের ওপর আপনি হাত দেবেন না, এমন লাখ লাখ মানুষের গার্জিয়ান হিসেবে সরকারকেই দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে আমরা মরণের দাঁড়প্রান্তে ঠেলে দিতে পারি না’।

বাজেট প্রস্তাবে কৃষিকাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টরের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারেরও দাবি জানান কৃষিমন্ত্রী।