শোকাবহ আগস্ট আওয়ামী লীগের ৪০ দিনের কর্মসূচি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল যে মাসে, শোকাবহ সেই আগস্টের প্রথম দিন আজ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ইতিহাসের এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। দিনটি তাই জাতির জন্য শোকের, কান্নার। শুধু তাই নয়, মাসটিই শোকের। কবির কথায়- ‘আগস্ট শোকের মাস, পাপমগ্ন, নির্মম-নিষ্ঠুর,/তাকে পাপ থেকে মুক্ত করো কান্নায়, কান্নায়।’
এ বছর শোকের এই মাসটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। শোকাবহ ওই ঘটনার ৪০ বছর উপলক্ষে ৪০ দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে দলটি। আজ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর উদ্যোগে প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচি পালন করা হবে। গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শোকাবহ আগস্টের প্রথম প্রহরে গতকাল রাত ১২টা ১ মিনিটে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে আলোর মিছিলের মধ্য দিয়ে ৪০ দিনের কর্মসূচি পালন শুরু হয়েছে। আজ দুপুর ১২টায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হবে দোয়া ও মোনাজাত। বিকেল ৪টায় ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্তদান কর্মসূচি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে কৃষক লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
৪০ দিনের কর্মসূচির মধ্যে আরো আছে ৩ আগস্ট তাঁতী লীগের আলোচনা সভা, ৪ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যোগদান। ৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে সকাল ৮টায় ধানমণ্ডিতে আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণ ও সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল।
৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শহীদ ফজিলাতুননেসা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় বনানী কবরস্থানে শহীদদের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল; জোহরের নামাজের পর বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিলাদ মাহফিল এবং আসরের নামাজের পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ফজিলাতুননেসা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে ৮ আগস্ট যুবলীগ এবং ৯ আগস্ট ছাত্রলীগ আলোচনা সভা করবে।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের দিনে সূর্যোদয়ের সময় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সবস্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন হবে। সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল; সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল; জোহরের নামাজের পর দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, সুবিধা মতো সময়ে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা; দুপুরে অসচ্ছল দুস্থ মানুষদের মাঝে খাদ্য বিতরণ, আসরের নামাজের পর মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
১৬ আগস্ট বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আয়োজনে আলোচনা সভা হবে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বার্ষিকী উপলক্ষে ওই দিন বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং আলোচনা সভা হবে। যুবলীগ ও যুব মহিলা লীগও আলাদা আলোচনা সভা করবে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১২ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে দেশের বরেণ্য চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে হবে ‘রঙতুলিতে শোকগাথা’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া ৩ আগস্ট ও ৪ সেপ্টেম্বর তাঁতী লীগ, ৪ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ১১ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ১৩ আগস্ট যুব মহিলা লীগ, ১৭ ও ৩০ আগস্ট (অথবা ৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ১৮ আগস্ট জাতীয় শ্রমিক লীগ, ২০ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, ২২ আগস্ট কৃষক লীগ, ২৪ আগস্ট ও ৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, ২৫ আগস্ট মহিলা শ্রমিক লীগ, ২৬ আগস্ট স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ৩১ আগস্ট ও ৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগ এবং ৭ সেপ্টেম্বর যুব মহিলা লীগ আলাদা আলোচনা সভা করবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডিতে নিজ বাসভবনে সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেসা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালসহ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিপথগামী সেনা সদস্যদের হাতে শহীদ হন। এদিন বঙ্গবন্ধুর আরো কয়েকজন নিকটাত্মীয়সহ ১৬ জন নিহত হন। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন বিদেশে অবস্থান করায় তাঁরা বেঁচে যান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর