ঢাকা ১১:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনমুখী বিএনপির সামনে কঠিন পথ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১০:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুন ২০১৭
  • ২৩৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  নির্বাচনমুখী বিএনপির সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন পথ। দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে তার আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বেশ কয়েকটি ইস্যুতে রাজনৈতিক মতৈক্য হতে হবে। নির্বাচনের মাঠ যেমন সমতল করতে হবে, তেমনি নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন কেমন হবে তারও ফয়সালা করতে হবে।
বিএনপির নেতারা ঈঙ্গিত দিয়েছেন, নির্বাচনপূর্ব এসব দাবি আদায়ে তারা সোচ্চার হবেন। এমনকি আগামী বছরের শুরুর দিকে কঠিন আন্দোলনেরও পথও বেছে নেয়া হতে পারে। তাদের অভিমত, নির্বাচনের এ পথ পিচ্ছিলÑ রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়েই তা মোকাবেলা করতে হবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনো দেড় বছর। কিন্তু সরকারি দল কৌশলে চলমান রাজনীতিকে নির্বাচনী আবরণ দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক মাস ধরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনসভা করছেন। উন্নয়ন আর বিএনপির অতীত ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে তিনি ভোট চাচ্ছেন নৌকার পক্ষে। শুধু তা-ই নয়, দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। নির্বাচনে পাস করার বিষয়ে দল কারো দায়িত্ব নেবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। জানা গেছে, সরকারি দল আরেকটি একতরফা নির্বাচন করতে তেমন আগ্রহী নয়। সে কারণে বিএনপিকে আন্দোলনের চিন্তা থেকে সরিয়ে এনে নির্বাচনমুখী করতেই আগেভাগে নির্বাচনের আবহ তৈরির একটা কৌশল নেয়া হয়েছে। যাতে করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির তৃণমূল থেকেই দলের হাইকমান্ডের ওপর একটি চাপ তৈরি হয় এবং নির্বাচন বর্জনের কোনো চিন্তা তারা চূড়ান্তভাবে করতে না পারে।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনে অংশ না নেয়া সঠিক ছিল না ভুল ছিল, তা নিয়ে দলের ভেতরে দ্বৈততা থাকলেও তা অতীত হিসেবে ধরে নিতে চায় দলটি। বিএনপির অভ্যন্তরে এখন আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা ভাবনা কাজ করছে। নেতারা বলছেন, বিএনপিতে প্রার্থীর কোনো প্রভাব নেই। নির্বাচনে অংশ নিলে ‘ডু অর ডাই’ ধরে নিয়ে সাংগঠনিক সব সমস্যাও সমাধান হয়ে যাবে। নেতাকর্মীরা সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে এসে দল মনোনীত প্রার্থীকেই বিজয়ী করার জন্য কাজ করবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির চিন্তা মূলত অন্য জায়গায়। সেটি হচ্ছে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’। অনেক নেতাই মনে করেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত আবেগাশ্রিত না হয়ে বাস্তবতার নিরিখেই নিতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচনের মাঠ নিরপেক্ষ না হলে, সে নির্বাচনে গিয়ে কার্যত কোনো লাভ হবে না। আর বিএনপিকেই নির্বাচনের সেই পরিবেশ আদায় করতে হবে।
বিএনপির নেতাদের আশঙ্কা, নির্বাচন যতই সামনে এগিয়ে আসবে, দলটিকে ঘিরে সরকারি দলের কূটকৌশলও তত বাড়বে। বিএনপিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিতে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে মাইনাস করার চেষ্টা চালানো হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। সে রকম পরিস্থিতি রাজনৈতিক দূরদর্শিতার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে না পারলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে নেতাদের ধারণা।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। কমপক্ষে ৫০ জন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে, চার্জশিটও দেয়া হয়েছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালেও অনেক মামলার বিচার চলছে। কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে স্থগিত মামলা ফের চালু হচ্ছে। বিএনপির ধারণা শীর্ষ পর্যায়ের বহু নেতাকে আগামী নির্বাচনে অযোগ্য করতেই সরকার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিচ্ছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো: নাসির উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্বাচনের পথে আগামী দিনগুলোই বিএনপির জন্য মূল চ্যালেঞ্জের। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় না করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। তিনি বলেন, গোলটেবিল আর সেমিনার করে দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। সব ভয় উপেক্ষা করে রাজপথে নামতে হবে। তাহলেই কেবল আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার যে নীলনকশা তৈরি করছে, তা নস্যাৎ করে দেয়া যেতে পারে।
জানা গেছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বেশ সতর্কভাবে এগোচ্ছে। নির্বাচনের প্রতি অতি উৎসাহ দেখানোর পক্ষপাতী নয় তারা। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করেই ধাপে ধাপে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নির্বাচন এখনো অনেক দূরে থাকায় দলটি দাবি-দাওয়ার মধ্যেই আরো কয়েকটি মাস পার করতে চায়। পরিকল্পনা অনুযায়ীÑ এ বছরের শেষ দিকে অথবা নির্বাচনী বছরের মার্চ-এপ্রিলে কর্মসূচির ধরন আমূল পাল্টে ফেলতে পারে বিএনপি। তবে আসছে রোজার ঈদের পর থেকে কিছু গুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শনিবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে ‘সহায়ক সরকারের’ অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঈদের পরে জনগণকে নিয়ে কর্মসূচি দেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে সবাইকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নির্বাচনমুখী বিএনপির সামনে কঠিন পথ

আপডেট টাইম : ১০:১০:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুন ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  নির্বাচনমুখী বিএনপির সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন পথ। দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে তার আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বেশ কয়েকটি ইস্যুতে রাজনৈতিক মতৈক্য হতে হবে। নির্বাচনের মাঠ যেমন সমতল করতে হবে, তেমনি নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন কেমন হবে তারও ফয়সালা করতে হবে।
বিএনপির নেতারা ঈঙ্গিত দিয়েছেন, নির্বাচনপূর্ব এসব দাবি আদায়ে তারা সোচ্চার হবেন। এমনকি আগামী বছরের শুরুর দিকে কঠিন আন্দোলনেরও পথও বেছে নেয়া হতে পারে। তাদের অভিমত, নির্বাচনের এ পথ পিচ্ছিলÑ রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়েই তা মোকাবেলা করতে হবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি এখনো দেড় বছর। কিন্তু সরকারি দল কৌশলে চলমান রাজনীতিকে নির্বাচনী আবরণ দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক মাস ধরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনসভা করছেন। উন্নয়ন আর বিএনপির অতীত ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে তিনি ভোট চাচ্ছেন নৌকার পক্ষে। শুধু তা-ই নয়, দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। নির্বাচনে পাস করার বিষয়ে দল কারো দায়িত্ব নেবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। জানা গেছে, সরকারি দল আরেকটি একতরফা নির্বাচন করতে তেমন আগ্রহী নয়। সে কারণে বিএনপিকে আন্দোলনের চিন্তা থেকে সরিয়ে এনে নির্বাচনমুখী করতেই আগেভাগে নির্বাচনের আবহ তৈরির একটা কৌশল নেয়া হয়েছে। যাতে করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির তৃণমূল থেকেই দলের হাইকমান্ডের ওপর একটি চাপ তৈরি হয় এবং নির্বাচন বর্জনের কোনো চিন্তা তারা চূড়ান্তভাবে করতে না পারে।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। ওই নির্বাচনে অংশ না নেয়া সঠিক ছিল না ভুল ছিল, তা নিয়ে দলের ভেতরে দ্বৈততা থাকলেও তা অতীত হিসেবে ধরে নিতে চায় দলটি। বিএনপির অভ্যন্তরে এখন আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা ভাবনা কাজ করছে। নেতারা বলছেন, বিএনপিতে প্রার্থীর কোনো প্রভাব নেই। নির্বাচনে অংশ নিলে ‘ডু অর ডাই’ ধরে নিয়ে সাংগঠনিক সব সমস্যাও সমাধান হয়ে যাবে। নেতাকর্মীরা সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে এসে দল মনোনীত প্রার্থীকেই বিজয়ী করার জন্য কাজ করবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির চিন্তা মূলত অন্য জায়গায়। সেটি হচ্ছে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’। অনেক নেতাই মনে করেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত আবেগাশ্রিত না হয়ে বাস্তবতার নিরিখেই নিতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচনের মাঠ নিরপেক্ষ না হলে, সে নির্বাচনে গিয়ে কার্যত কোনো লাভ হবে না। আর বিএনপিকেই নির্বাচনের সেই পরিবেশ আদায় করতে হবে।
বিএনপির নেতাদের আশঙ্কা, নির্বাচন যতই সামনে এগিয়ে আসবে, দলটিকে ঘিরে সরকারি দলের কূটকৌশলও তত বাড়বে। বিএনপিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিতে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে মাইনাস করার চেষ্টা চালানো হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। সে রকম পরিস্থিতি রাজনৈতিক দূরদর্শিতার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে না পারলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে নেতাদের ধারণা।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। কমপক্ষে ৫০ জন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে, চার্জশিটও দেয়া হয়েছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালেও অনেক মামলার বিচার চলছে। কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে স্থগিত মামলা ফের চালু হচ্ছে। বিএনপির ধারণা শীর্ষ পর্যায়ের বহু নেতাকে আগামী নির্বাচনে অযোগ্য করতেই সরকার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিচ্ছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো: নাসির উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্বাচনের পথে আগামী দিনগুলোই বিএনপির জন্য মূল চ্যালেঞ্জের। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় না করে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। তিনি বলেন, গোলটেবিল আর সেমিনার করে দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। সব ভয় উপেক্ষা করে রাজপথে নামতে হবে। তাহলেই কেবল আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার যে নীলনকশা তৈরি করছে, তা নস্যাৎ করে দেয়া যেতে পারে।
জানা গেছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি বেশ সতর্কভাবে এগোচ্ছে। নির্বাচনের প্রতি অতি উৎসাহ দেখানোর পক্ষপাতী নয় তারা। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করেই ধাপে ধাপে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নির্বাচন এখনো অনেক দূরে থাকায় দলটি দাবি-দাওয়ার মধ্যেই আরো কয়েকটি মাস পার করতে চায়। পরিকল্পনা অনুযায়ীÑ এ বছরের শেষ দিকে অথবা নির্বাচনী বছরের মার্চ-এপ্রিলে কর্মসূচির ধরন আমূল পাল্টে ফেলতে পারে বিএনপি। তবে আসছে রোজার ঈদের পর থেকে কিছু গুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শনিবার এক ইফতার অনুষ্ঠানে ‘সহায়ক সরকারের’ অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঈদের পরে জনগণকে নিয়ে কর্মসূচি দেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে সবাইকে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।