হাওর বার্তাঃ দুর্ঘটনায় ডান পা হারানোর পর বেঁচে থাকার জন্য জীবিকা হিসেবে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তিকে। প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে বের হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিক্ষা শেষে ফিরে যান কমলাপুরে প্ল্যাস্টিকের ছাউনি দিয়ে ঢাকা ছোট খুপড়ি ঘরে। বেঁচে থাকার লড়াইয়ের মধ্যেও নিয়ম করে পড়েন পত্রিকা। তবে কিনে নয়; দেওয়ালে টানানো পত্রিকাই ভরসা।
বয়স কতো তা ঠিক মনে না থাকলেও অনেকক্ষণ চিন্তাভাবনা করে ভিক্ষুক সামছুল মিয়া জানালেন ষাটের ওপরে হবে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষা করেন তিনি। আর যেসব স্থানে দেওয়ালে পত্রিকা টানানো থাকে; ভিক্ষার ফাঁকে সেইসব পত্রিকাগুলো পড়ে নেন।
শনিবার সকালে মৎস্য ভবন এলাকায় পত্রিকা পড়ার সময় এই ভিক্ষুকের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। তখন পত্রিকা পড়া বিষয়ে তিনি জানান, ‘খালি ভিক্ষা করলেই তো আর হবে না, দেশের খোঁজ-খবরও নেয়া লাগে।’
সামছুল মিয়া কোনো স্থানে বসে লম্বা সময় ধরে ভিক্ষা করেন না। বরং ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করেন তিনি। ভ্রাম্যমাণ ভিক্ষুক হিসেবে কখনো বাসে, কখনো পার্কের সামনে আবার কখনো ফুট ওভার ব্রিজে বসে ভিক্ষা করেন। গরমের হাত থেকে বাঁচতে সঙ্গে সব সময় একটা গামছা রাখেন তিনি। খুব বেশি গরম পড়লে শরীরটা একটু ঢেকে ফুটপাতে শুয়ে পড়েন। এতে গরম কম লাগে; সঙ্গে দু’চার টাকাও পাওয়া যায় বলে জানান সামছুল।
প্রতিদিন রুটিন করে ভিক্ষা করলেও অসুস্থ হলে আর বের হন না খুপড়ি থেকে। সারাদিন শুয়ে থাকেন বিছানায়। সুস্থ বা অসুস্থ যাই হোক; পত্রিকা নিয়ম করেই পড়েন তিনি। খুপড়ি ঘরে থাকলে পড়েন পুরাতন পত্রিকা। এছাড়া যখন চা খাওয়ার জন্য কোনো দোকানে যান তখন টিভিতে খবর দেখেন। সামছুল বলেন, ‘এইডা অভ্যাস হয়ে গেছে। সুযোগ পাইলেই পত্রিকা পড়ি আর টিভি দেহি।’
ছোট বেলায় অল্প কিছুদিন স্কুলে গিয়েছিলেন সামছুল। ওই সময় যা শিখেছিলেন সেটা দিয়েই পত্রিকা পড়ার কাজটা চালিয়ে নেয়া যায় বলে জানান তিনি।