হাকালুকি হাওরে ‘কাপড়ি জাল’ দিয়ে পোনা মাছ নিধন চলছে। ফলে হুমকির মুখে হাকালুকির মত্স্যভাণ্ডার। আকস্মিক বন্যায় সম্প্রতি দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে বোরো ধান পচে পানিতে অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের সৃষ্টি হওয়ায় পানিদূষণে বিভিন্ন জাতের প্রচুর পরিমাণে মাছ মারা যায়। অতিবৃষ্টিতে হাওরের পানি দূষণমুক্ত হলে মা মাছের ডিম থেকে নতুন পোনা মাছ প্রজননের মৌসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলেও জীবিকার তাগিদে কাপড়ি জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরছে জেলেরা। মাছের প্রজননের মৌসুম বছরের এপ্রিল, মে ও জুন। এই তিন মাসে ৯ ইঞ্চির চেয়ে কম মাপের শোল, রুই, কাতলা, মৃগেল, কালীবাউশ, আইড় এবং বোয়ালসহ সবধরনের পোনা মাছ ধরা ও বিক্রি এবং বেড়জালসহ ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটারের কম ফাঁকবিশিষ্ট জাল ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ। তবে তা মানছে না জেলেরা। প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগে স্থানীয় কিছু অসাধু মত্স্য ব্যবসায়ীর সহায়তায় জেলেরা পোনা মাছ ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছে। স্থানীয় কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে হাকালুকির সবক’টি জলমহাল। আর এরই সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা বেড়জাল, কারেন্ট জাল ও কাপড়ি জাল দিয়ে পোনা মাছ শিকার করছে। হাকালুকি হাওর থেকে পোনা মাছ শিকার করে কুলাউড়া উপজেলার ভূকশীমইলের তেঘরিঘাট ও জুড়ী উপজেলার কন্টিনালা ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় শিকারিরা তা বিক্রি করে। রাত সাড়ে ১০টা থেকে শেষরাত পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা এই দুটি স্থানে পোনা মাছ ক্রয়ের জন্য অপেক্ষা করেন। পরে ক্ষুদ্র অসাধু ব্যবসায়ীরা শহরের পাইকারদের কাছে নিলামে বিক্রি করে। কিন্তু জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় ও দারিদ্র্যের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পোনা মাছ শিকার করে বলে জানায় হাওর তীরবর্তী কুলাউড়া উপজেলার সাদিপুর জেলেপল্লীর কয়েকজন জেলে। হাওর তীরবর্তী বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের আঁতাতে বর্ষাকালে প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত কুলাউড়ার তেঘরিঘাট ও জুড়ীর কন্টিনালা নদীর ব্রিজসংলগ্ন পারে ‘রাতের হাট’ বসে। হাকালুকি থেকে শিকারিরা পোনা মাছ নিয়ে আসে এই হাটে। প্রতিটি হাটে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন বাজারের পাইকারদের (পাচারকারী) কাছে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার পোনা নিলামে বিক্রি করে। পাচারকারী ও ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের লোক হওয়ায় কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। তারা আরও জানান, পোনা মাছ শিকারে ব্যবহূত কারেন্ট জাল ছাড়াও দু’শতাধিক বেড়া জাল রয়েছে কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায়। এসব জাল ৪শ’ থেকে তিন হাজার হাত পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলায় ১০ জনের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে তেঘরিঘাট এলাকার ‘রাতের হাট’। কুলাউড়া উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ জানান, মাছের প্রজনন মৌসুমে পোনা মাছ ও মা মাছ নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হাকালুকি হাওর এলাকায় যারা ওইসব মাছ শিকার করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মৌলভীবাজার জেলা মত্স্য কর্মকর্তা আবদুল কুদ্দুস আখন্দ জানান, আমি নতুন এসেছি। খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল আহমদ জানান, প্রজনন মৌসুমে পোনা মাছ নিধন বন্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংবাদ শিরোনাম
প্রজনন মৌসুমে হাকালুকিতে পোনা মাছ নিধন
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ১২:৫৭:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ মে ২০১৭
- ৪৭০ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ