কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এবং সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের চলতি দায়িত্বে থাকা ৯ম গ্রেডের সাড়ে ৪শ’ কর্মকর্তার পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বছরের পর বছর ধরে নন-ক্যাডারভুক্ত এসব কর্মকর্তাকে চলতি দায়িত্ব দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের লিখিত নির্দেশনা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সুপারিশও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি না পেয়ে এসব কর্মকর্তাদের মাঝে বিরাজ করছে চরম হতাশা ও ক্ষোভ।
ভুক্তভোগীরা জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত রাষ্ট্রপতির সুস্পষ্ট নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পাঁচটি কারণ ছাড়া কোনো কর্মকর্তাকে দুই বছরের বেশি চলতি দায়িত্বে রাখা যাবে না। কিন্তু তাদের ৪৪৮ জন কর্মকর্তার ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানা হয়নি। এ সময়ে তাদের যে শুধু চলতি দায়িত্বে রাখা হয়েছে তা-ই নয়, পদোন্নতির জন্য প্রযোজ্য সব ধরনের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এসব কর্মকর্তা একেকজন সর্বোচ্চ আট এবং সর্বনিম্ন পাঁচ বছর ধরে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ দিন পদোন্নতি না পাওয়া এ সকল কর্মকর্তার মাঝে এখন চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী চলতি দায়িত্বে থাকাকালীন ৪৪৮ জন বিভাগীয় কর্মকর্তাকে দ্রুত পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সিএজিকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে জাইলে বাংলাদেশ অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি মো. শফিউল আজম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ৪৪৮ জন চলতি দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রাপ্তির দিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে বহু দেন-দরবার করেও গুরুতর মানবিক এই সমস্যার সমাধান হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘সিএজি ৮৩-এর ৬ নিয়োগ ধারা অনুযায়ী যে কোনো যোগ্য কর্মকর্তাকে শূন্যপদের বিপরীতে পদোন্নতি বা নিয়োগ দিতে পারেন। কিন্তু এখানে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই তা মানা হচ্ছে না। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।’
জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিলে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে দায়িত্বে থাকা এসব কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু সিএজি অফিসের এক শ্রেণির অডিট অফিসারদের অসৎ স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এই সকল কর্মকর্তাদের পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ সম্পর্কে পদোন্নতি বঞ্চিত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সিএজি কার্যালয়ের প্রস্তাব মতে, ৯ম গ্রেডভুক্ত নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণির ৪৪৮ জন কর্মকর্তার শূন্য পদে চলতি দায়িত্ব প্রাপ্তির তারিখ থেকে পদোন্নতি প্রদানের বিষয়ে পিএসসির (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) সুস্পষ্ট সুপারিশ রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা আমলে না নিয়ে বর্তমান সময় থেকে পদোন্নতির আদেশ জারি করেছে। এতে করে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।’
জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতা নির্ণয়ে জটিলতা, নিয়োগ বিধি প্রণয়নে বিলম্ব, পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা/কর্মচারীর অভাব, নিয়োগবিধি অনুযায়ী নিয়োগ বিলম্ব এই চারটি সুনির্দিষ্ট কারণে সর্বোচ্চ দুই মাসের জন্য চলতি দায়িত্ব প্রদানের অনুমতি রয়েছে। তবে এ সংক্রান্ত কমিটি/বোর্ডের পূর্বানুমোদন এবং কর্মকর্তাদের ছুটি, সাময়িক বরখাস্ত, প্রেষণ ও প্রশিক্ষণের জন্য সংরক্ষিত পদ থাকলে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না। কিন্তু পদোন্নতি বঞ্চিত ৪৪৮ জন কর্মকর্তার ক্ষেত্রে এর কোনোটিই প্রযোজ্য ছিল না। তা ছাড়া কোনো ধরনের মামলা চলাকালেও উপযুক্ত ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে পিএসসির সুপারিশ পেতে কোনো আইনানুগ বাধা ছিল না।
সূত্র জানায়, পদোন্নতি বঞ্চিত ৪৪৮ জন বিভাগীয় কর্মকর্তাকে চলতি দায়িত্ব প্রাপ্তির তারিখ থেকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-এর কাছে সম্প্রতি একটি নোট পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সিএজির দফতরের অনেক কর্মকর্তা তাদের নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য পিএসসির সুপারিশ বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে। যথাযথ কমিশনের সুপারিশের পর এখানে গড়িমসি বা কোনো ধরনের পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই এবং পিএসসির সুপারিশমত ৪৪৮ জন কর্মকর্তাকে চলতি দায়িত্ব প্রদানের তারিখ থেকেই পদোন্নতি কার্যকর করা হোক।
রাষ্ট্রপতির সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং অর্থমন্ত্রীর দেওয়া নোটের পরও সিএজি অফিসের স্বার্থন্বেষী একটি মহল নানাভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি নিয়ে টালবাহানা করছেন।