ঢাকা ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলনবিলে ভুট্টার বাম্পার ফলন দামে দারুণ খুশি কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০১৭
  • ৫৪৪ বার

শষ্যভাণ্ডার খ্যাত নাটোরের চলনবিলের সিংড়ায় এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভুট্টার দাম বেশ ভালো পাওয়ায় দারুণ খুশি চলনবিলের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে উপজেলার ডাহিয়া, ইটালি, তাজপুর ও শেরকোল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে এসকে ৪০, প্যাসিফিক, মুকুট, এলিট, সুপার ফাইন জাতের ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছে। এছাড়াও চৌগ্রাম, হাতিয়ানদহ, চামারি ও লালোর ইউনিয়নে তুলনামূলকভাবে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। চলনবিলে উত্পাদিত ভুট্টা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছে। এ বছর মোট ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ হেক্টর ভুট্টার জমিতে আগাম বন্যার পানি প্রবেশ করায় কৃষকরা আংশিক ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়েছে। গত বছর উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। জানা গেছে, সিংড়া উপজেলার কৃষকরা বোরো ধানের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে ভুট্টার আবাদ করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভুট্টা আবাদের ওপর তেমন প্রভাব পড়ে না এবং সার-তেলসহ অন্যান্য খরচ কম হওয়ার কারণে ভুট্টা চাষে কৃষকরা দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। গত বছর ভুট্টার আবাদ করে বাম্পার ফলন ও কাঙ্ক্ষিত বাজার মূল্য না পেয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে করে গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে যাবে, বলেছে কৃষকরা। এবার কাঁচা ভুট্টা প্রতিমণ ৪২০-৫শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুকনো ভুট্টা প্রতিমণ ৬৫০-৭শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে গতবারের চেয়ে বেশি দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি। উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের ভুট্টা চাষি মিন্টু জানান, এ বছর ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। ফলন খুব ভালো হয়েছে। বাজারে কাঁচা ভেজা প্রতিমণ ভুট্টা ৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিবিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদে তেল, কীটনাশকসহ প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়। উপজেলার ইতালি ইউনিয়নের খায়রুল জানান, এবার ভালো ফলন হচ্ছে, বাজার দরও ভালো। তিনি আরও জানান, ৭ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। প্রতিবিঘায় ৫ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ৩৫-৪০ মণ। প্রতিবিঘা জমি থেকে ১৬-১৮ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করা যায়। শেরকোল ইউনিয়নের গুলবার জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করায় আবাদ করতে তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। প্রতিবছর এই মৌসুমে উপজেলার ডাহিয়া বাজারে ভুট্টার আড়ত বসে। ডাহিয়া, ইটালিসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা এখানে ভুট্টা বেচাকেনা করেন। আড়তদার আসাদ জানান, এখানে ভুট্টার জমজমাট হাট বসে। প্রতিদিন এলাকার চাষিরা ভুট্টা বিক্রি করতে এই বাজারে আসে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এখান থেকে ভুট্টা কিনে নিয়ে যায়। উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিগত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে ভুট্টার ফলন ও দাম ভালো। আগামীতে কৃষকরা ভুট্টার আবাদে আরও উত্সাহী হবে। এ বছর আগাম বন্যার কারণে কিছুসংখ্যক কৃষক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত সম্মুখীন হয়েছে। তবে ভালো ফলন ও দামের কারণে কৃষকদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

চলনবিলে ভুট্টার বাম্পার ফলন দামে দারুণ খুশি কৃষক

আপডেট টাইম : ১২:৪৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০১৭

শষ্যভাণ্ডার খ্যাত নাটোরের চলনবিলের সিংড়ায় এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। ভুট্টার দাম বেশ ভালো পাওয়ায় দারুণ খুশি চলনবিলের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে উপজেলার ডাহিয়া, ইটালি, তাজপুর ও শেরকোল ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ভুট্টার আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে এসকে ৪০, প্যাসিফিক, মুকুট, এলিট, সুপার ফাইন জাতের ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছে। এছাড়াও চৌগ্রাম, হাতিয়ানদহ, চামারি ও লালোর ইউনিয়নে তুলনামূলকভাবে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। চলনবিলে উত্পাদিত ভুট্টা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। উপজেলা কৃষি অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ বেশি হয়েছে। এ বছর মোট ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ হেক্টর ভুট্টার জমিতে আগাম বন্যার পানি প্রবেশ করায় কৃষকরা আংশিক ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হয়েছে। গত বছর উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। জানা গেছে, সিংড়া উপজেলার কৃষকরা বোরো ধানের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে ভুট্টার আবাদ করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভুট্টা আবাদের ওপর তেমন প্রভাব পড়ে না এবং সার-তেলসহ অন্যান্য খরচ কম হওয়ার কারণে ভুট্টা চাষে কৃষকরা দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। গত বছর ভুট্টার আবাদ করে বাম্পার ফলন ও কাঙ্ক্ষিত বাজার মূল্য না পেয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে করে গতবারের ক্ষতি পুষিয়ে যাবে, বলেছে কৃষকরা। এবার কাঁচা ভুট্টা প্রতিমণ ৪২০-৫শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুকনো ভুট্টা প্রতিমণ ৬৫০-৭শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে গতবারের চেয়ে বেশি দাম পেয়ে কৃষকরা খুশি। উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের ভুট্টা চাষি মিন্টু জানান, এ বছর ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছি। ফলন খুব ভালো হয়েছে। বাজারে কাঁচা ভেজা প্রতিমণ ভুট্টা ৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিবিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদে তেল, কীটনাশকসহ প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হয়। উপজেলার ইতালি ইউনিয়নের খায়রুল জানান, এবার ভালো ফলন হচ্ছে, বাজার দরও ভালো। তিনি আরও জানান, ৭ বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। প্রতিবিঘায় ৫ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ৩৫-৪০ মণ। প্রতিবিঘা জমি থেকে ১৬-১৮ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করা যায়। শেরকোল ইউনিয়নের গুলবার জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করায় আবাদ করতে তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। প্রতিবছর এই মৌসুমে উপজেলার ডাহিয়া বাজারে ভুট্টার আড়ত বসে। ডাহিয়া, ইটালিসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা এখানে ভুট্টা বেচাকেনা করেন। আড়তদার আসাদ জানান, এখানে ভুট্টার জমজমাট হাট বসে। প্রতিদিন এলাকার চাষিরা ভুট্টা বিক্রি করতে এই বাজারে আসে। রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এখান থেকে ভুট্টা কিনে নিয়ে যায়। উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন জানান, বিগত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে ভুট্টার ফলন ও দাম ভালো। আগামীতে কৃষকরা ভুট্টার আবাদে আরও উত্সাহী হবে। এ বছর আগাম বন্যার কারণে কিছুসংখ্যক কৃষক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত সম্মুখীন হয়েছে। তবে ভালো ফলন ও দামের কারণে কৃষকদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে যাবে বলে জানান তিনি।