ঢাকা ০৭:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধানের চারা সাড়ে চার ফুট লম্বা, ডুববে না পানিতে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:১১:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মে ২০১৭
  • ৩২০ বার

দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির উপযুক্ত নতুন ধানের চারা উদ্ভাবন করা হয়েছে। উদ্ভাবিত প্রায় সাড়ে চারফুট লম্বা এই ধান গাছ প্রাকৃতিক দুর্যোগ জোয়ার ও বন্যার পানিতে ডুববে না। কম সময়ে ধান পাকবে এবং উৎপাদনও হবে বেশি। প্রায় ১৩ বছর যাবত গবেষণা চালিয়ে এ ধরনের দুইটি ধানের জাত ব্রি-৭৬ ও ব্রি-৭৭ উদ্ভাবন করেছে বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। এ ধরনের ধানের জাত চাষ করলে বরিশালে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এ বছর থেকে এই দুটি ধানের জাতের চারা প্রথমবারের মতো কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করবে বরিশাল কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে নতুন উদ্ভাবিত ব্রি-৭৬,৭৭ সাদা মোটা ও দুধকুমার ধান দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির জন্য উপযুক্ত। আমন মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০দিন বয়সী দুই ফুট উচ্চতার এই চারা রোপণের ১২০ দিনের মধ্যেই কাটার উপযুক্ত হবে। ৮০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার ধান গাছ লম্বা হওয়ায় একটানা পাঁচদিন ক্ষেতে পানি থাকলেও ধান গাছের কোন ক্ষতি হবে না। কারন ধান গাছ লম্বা হওয়ায় পানিতে ডুবে যাবে না। প্রতি হেক্টর জমির চাষে লাগবে ২০ কেজি বীজ। যাতে ফলন হবে সাড়ে চার থেকে পাঁচ টন। এতে স্থানীয় অন্যান্য ধানের উৎপাদন থেকে প্রায় ১ টন বেশি।
এই নতুন উদ্ভাবিত ধান বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলায় পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে সফলতা এসেছে। সেখান থেকেই এ ধানের বীজ সংগ্রহ করা হয়। ওই ধানের আবাদ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এবছর এক হাজার কৃষকের মধ্যে পাঁচ কেজি করে বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। এরপর ওই সকল কৃষকের কাছ থেকে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বীজ সংরক্ষণ কার্যালয় বীজ সংগ্রহ করবে।

বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান, বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকরা জোয়ারের পানি ও বন্যার পানিতে ক্ষেত ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকেন। এতে করে এক থেকে দুইদিন পানির নিচে ধানের চারা থাকলে তা পঁচে যায়। তাই ধান ঘরে তুলতে না পেরে কৃষরা ঋণ গ্রস্ত হয়ে পড়েন। কৃষক ও দেশের স্বার্থেও এ কথা চিন্তা করে গত ১৩ বছর ধরে গবেষণা করে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির উপযুক্ত ধানের চারা উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই ধানের চারা এ বছর থেকে প্রথমবারের মতো কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করবে বরিশাল কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ প্রজনন) ড. আলমগীর হোসেন জানান, আমন মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০দিন বয়সী দুই ফুট উচ্চতার এ ধান চারা রোপণ করার ১৫০ দিনের মধ্যে কাটার উপযুক্ত হবে। যেসময় ধান কাটার উপযুক্ত হবে তখন এর উচ্চতা হবে সাড়ে চার ফুট। এমনকি জোয়ার-ভাটার পানি এবং বন্যায় সাড়ে চার ফুট উচ্চতার ধানগাছ কোনোভাবে ডুবে যাবে না। এসময় ক্ষেতে একটানা পাঁচদিন পানি থাকলেও এ ধানের কোনো ক্ষতি নেই।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরিশালের উপ-পরিচালক রমেন্দ্রনাথ বাড়ৈ জানান, এই অঞ্চলে সাধারণত স্থাণীয় আমন জাতের ধান চাষ করা হয়ে থাকে। যেগুলোর দৈর্ঘ্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট উচ্চতার। প্রাকৃতিক দূর্যোগ জোয়ার বা বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে ফলন নষ্ট করে দেয়। তবে নতুন উদ্ভাবিত ব্রি-৭৬ ও ৭৭ উচ্চতায় প্রায় সাড়ে ৪ ফুট। এমন উচ্চতায় এ অঞ্চলে জোয়ার কিংবা বন্যার পানি উঠে না। সেক্ষেত্রে উদ্ভাবিত নতুন এই ধানের জাত পানির নিচে তলিয়ে না গিয়ে রক্ষা পাবে। এছাড়াও স্থাণীয় ধানের জাতের চেয়ে প্রায় ১ মেট্রিকটন ধান বেশি উৎপাদিত হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ধানের চারা সাড়ে চার ফুট লম্বা, ডুববে না পানিতে

আপডেট টাইম : ০৮:১১:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মে ২০১৭

দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির উপযুক্ত নতুন ধানের চারা উদ্ভাবন করা হয়েছে। উদ্ভাবিত প্রায় সাড়ে চারফুট লম্বা এই ধান গাছ প্রাকৃতিক দুর্যোগ জোয়ার ও বন্যার পানিতে ডুববে না। কম সময়ে ধান পাকবে এবং উৎপাদনও হবে বেশি। প্রায় ১৩ বছর যাবত গবেষণা চালিয়ে এ ধরনের দুইটি ধানের জাত ব্রি-৭৬ ও ব্রি-৭৭ উদ্ভাবন করেছে বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। এ ধরনের ধানের জাত চাষ করলে বরিশালে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এ বছর থেকে এই দুটি ধানের জাতের চারা প্রথমবারের মতো কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করবে বরিশাল কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে নতুন উদ্ভাবিত ব্রি-৭৬,৭৭ সাদা মোটা ও দুধকুমার ধান দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির জন্য উপযুক্ত। আমন মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০দিন বয়সী দুই ফুট উচ্চতার এই চারা রোপণের ১২০ দিনের মধ্যেই কাটার উপযুক্ত হবে। ৮০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার ধান গাছ লম্বা হওয়ায় একটানা পাঁচদিন ক্ষেতে পানি থাকলেও ধান গাছের কোন ক্ষতি হবে না। কারন ধান গাছ লম্বা হওয়ায় পানিতে ডুবে যাবে না। প্রতি হেক্টর জমির চাষে লাগবে ২০ কেজি বীজ। যাতে ফলন হবে সাড়ে চার থেকে পাঁচ টন। এতে স্থানীয় অন্যান্য ধানের উৎপাদন থেকে প্রায় ১ টন বেশি।
এই নতুন উদ্ভাবিত ধান বরিশাল, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলায় পরীক্ষামূলক চাষাবাদ করে সফলতা এসেছে। সেখান থেকেই এ ধানের বীজ সংগ্রহ করা হয়। ওই ধানের আবাদ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এবছর এক হাজার কৃষকের মধ্যে পাঁচ কেজি করে বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। এরপর ওই সকল কৃষকের কাছ থেকে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বীজ সংরক্ষণ কার্যালয় বীজ সংগ্রহ করবে।

বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান, বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকরা জোয়ারের পানি ও বন্যার পানিতে ক্ষেত ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকেন। এতে করে এক থেকে দুইদিন পানির নিচে ধানের চারা থাকলে তা পঁচে যায়। তাই ধান ঘরে তুলতে না পেরে কৃষরা ঋণ গ্রস্ত হয়ে পড়েন। কৃষক ও দেশের স্বার্থেও এ কথা চিন্তা করে গত ১৩ বছর ধরে গবেষণা করে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটির উপযুক্ত ধানের চারা উদ্ভাবন করা হয়েছে। এই ধানের চারা এ বছর থেকে প্রথমবারের মতো কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করবে বরিশাল কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
বরিশাল ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ প্রজনন) ড. আলমগীর হোসেন জানান, আমন মৌসুমে ৩০ থেকে ৪০দিন বয়সী দুই ফুট উচ্চতার এ ধান চারা রোপণ করার ১৫০ দিনের মধ্যে কাটার উপযুক্ত হবে। যেসময় ধান কাটার উপযুক্ত হবে তখন এর উচ্চতা হবে সাড়ে চার ফুট। এমনকি জোয়ার-ভাটার পানি এবং বন্যায় সাড়ে চার ফুট উচ্চতার ধানগাছ কোনোভাবে ডুবে যাবে না। এসময় ক্ষেতে একটানা পাঁচদিন পানি থাকলেও এ ধানের কোনো ক্ষতি নেই।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরিশালের উপ-পরিচালক রমেন্দ্রনাথ বাড়ৈ জানান, এই অঞ্চলে সাধারণত স্থাণীয় আমন জাতের ধান চাষ করা হয়ে থাকে। যেগুলোর দৈর্ঘ্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট উচ্চতার। প্রাকৃতিক দূর্যোগ জোয়ার বা বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে ফলন নষ্ট করে দেয়। তবে নতুন উদ্ভাবিত ব্রি-৭৬ ও ৭৭ উচ্চতায় প্রায় সাড়ে ৪ ফুট। এমন উচ্চতায় এ অঞ্চলে জোয়ার কিংবা বন্যার পানি উঠে না। সেক্ষেত্রে উদ্ভাবিত নতুন এই ধানের জাত পানির নিচে তলিয়ে না গিয়ে রক্ষা পাবে। এছাড়াও স্থাণীয় ধানের জাতের চেয়ে প্রায় ১ মেট্রিকটন ধান বেশি উৎপাদিত হবে।