ঢাকা ০৬:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
চিঠি লিখে ‘নিরুদ্দেশ’ পুলিশের উপপরিদর্শক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানে না যাওয়ার ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ পাকিস্তানে ‘যুদ্ধবিরতি’তে শিয়া-সুন্নি গোষ্ঠী আন্দোলনে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার কোহলির প্রেমিকা আনুশকাকে অস্ট্রেলিয়া নিতে প্রথা ভেঙেছিল ভারতের বোর্ড মোল্লা কলেজে হামলা-সংঘর্ষ: ৩ শিক্ষার্থী নিহতের দাবি কর্তৃপক্ষের সংঘর্ষে না জড়িয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের মসজিদ ঘিরে উত্তেজনা উত্তর প্রদেশে ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, ইন্টারনেট ও স্কুল বন্ধ নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে: তারেক রহমান ভালো নির্বাচন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই: ইসি সানাউল্লাহ

হাওরাঞ্চলে মাছের পর হাঁসের মড়ক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:১০:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৭
  • ২৬৫ বার

এক সপ্তাহ আগে আমার ৩০০ হাঁস মারা গেছে, শুক্রবার মারা গেছে ১০০ হাঁস, আজকে ওষুধ আনতাম গেছি বাড়িত আইয়া দেখি আরও ১৫ টা হাঁস মারা গেছে। পানি থাকি উইট্টা ঝিমাইতে ঝিমাইতে (ঝিমুনো) মরি যায় হাঁস।’ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাংলার হাওর পাড়ের বনগাঁও গ্রামের হাঁসের খামারি দুলু মিয়া দুঃখের কথা এভাবেই জানাচ্ছিলেন।
হাওরের মানুষের চরম দুর্দিন চলছে প্রথমে কাঁচা ধান পানিতে ডুবেছে। মানুষের পাশাপাশি গরুও বিপন্ন হয়েছে। এরপর মাছে মড়ক লেগেছে।এখন হাঁস মরছে।
বনগাঁওয়ের হাঁসের খামারি দুলু মিয়ারই কেবল দুর্দিন নয়। শনিবার সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘরের মেসার্স আরিফ ফার্মেসিতে হাঁসের ওষুধ নিতে এসেছিলেন-দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বেতকোনার নূর উদ্দিন। বুড়িস্থলের আব্দুল মোমেন, ছাতকের চেচানের চমক আলী। এরা সকলের হাঁসের খামারেই হাঁস মরেছে, মড়ক লেগেছে।
নূর উদ্দিনের ৫৭০ টি হাঁসের মধ্যে ৩টি শনিবার মরেছে। নূর উদ্দিন বলেন,‘পয়লা সকালে কাইত অইয়া পড়ি গেছে, এরপরে বিকালে মরি গেছে।’ একই ভাবে আব্দুল মোমেনের ৯৭০ টি হাঁসের মধ্যে গত দুই দিনে ১৭০ টি মারা গেছে। চমক আলী’র ৪০০ টি হাঁসের মধ্যে ৩০ টি মারা গেছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সলফ’এর আজাদ মিয়ার ৫০ টি হাঁস ছিল। ৩৩ টি মারা গেছে।
আজাদ মিয়া বললেন,‘ধান পঁচা যখন শুরু হয়েছে, তখন থেকে ২-৩ দিনের মধ্যেই তার হাঁসগুলো মারা গেছে।’
জামালগঞ্জের উজান দৌলতপুরের হাঁসের খামারি বিপ্লব তালুকদার বলেন,‘হাঁসের মড়ক ১২ মাস থাকে। এটি কোন মহামারি নয়। গত পৌষ মাসেও প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার কাকার কিছু হাঁস মরেছে।’
ষোলঘরের ওষুধ ব্যবসায়ী আরিফ ফার্মেসীর মালিক মো. আরিফুল নিয়াজি জানান, শনিবার যেসব হাঁসের খামারি তার ফার্মেসীতে এসেছেন, ভ্যাটেনারী সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি প্রতিষেধক হিসাবে টক্সিন বাইন্ডার ও স্যালাইন দিয়েছেন। খামারিদের বলে দেওয়া হয়েছে হাওরে হাঁস না ছাড়ার জন্য এবং টিউবওয়েলের পানি খাওয়ানোর জন্য।RRRRRR
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বেলাল হোসেন বলেন,‘সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় ২৫ লাখ হাঁস আছে। হাঁসের স্বাভাবিক মৃত্যুর খবর এর আগেও আমরা পেয়েছি। হাঁসে মড়ক লেগেছে এমন খবর পেয়ে জগন্নাথপুরের দুটি মৃত হাঁস আমরা কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে। এছাড়া জেলার কিছু এলাকায় মাইকিং করে বলা হয়েছে দূষিত পানিতে হাঁস না ছাড়ার জন্য। বিভিন্ন উপজেলায় আমাদের ভ্যাটেনারী সার্জনরা যে ওষুধ দিচ্ছেন তাতেই হাঁসের রোগ সারছে।’
বাংলাদেশ ভ্যাটেনারী কাউন্সিলের ডেপুটি রেজিস্টার ডা. গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন,‘হাওরের প্রাকৃতিক খাবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে প্রকৃত কারণ বলা কঠিন। হাওরের কচি ধানগুলো যখন পঁচে যায়, তখন ব্যাকটেরিয়া বেড়ে যায়। অ্যামোনিয়া গ্যাসও তৈরি হয়েছে। সেগুলো জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। এ কারণে হাওরের ছোট ছোট প্রাণিগুলোও মরেছে। দূষিত পানি ও খাবার খেয়ে বিষাক্ত গ্যাস শরীরে ঢুকছে। বিষাক্ত গ্যাসে শরীরের উপর চাপও পড়ছে। আমি জেনেছি সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের কোথাও কোথাও হাঁস পানি থেকে ওঠে গলা টান টান করে পড়ে থাকে। এই অবস্থা হয়েছে খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য।’
কেন্দ্রীয় প্রাণীরোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, ‘সুনামগঞ্জ থেকে মরে যাওয়া দুটি হাঁসের নমুনা শুক্রবার আমরা পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে ময়না তদন্ত করে মনে হয়েছে হাঁসগুলো কলেরায় আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগ সাধারণত পঁচনশীল কিছু খেলে হয়। হাঁসের নমুনা আজ আমাদের গবেষণাগারের কালচারাল ইউনিটে দেওয়া হয়েছে। ২ দিন পর চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে।’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন,‘হাঁসের গণহারে মরার খবর পাইনি, তবে মাটিয়ান হাওরের পাশে একটি খামারে কিছু হাঁস মারা গেছে। ১৬ শ’ হাঁস ছিল সেখানে কিছু হাঁস মারা গেছে। সেই হাঁসের নমুনা ঢাকাতে পাঠিয়েছে প্রাণীসম্পদ। বিভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলা যাবে কী কারণে হাঁস মরেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

চিঠি লিখে ‘নিরুদ্দেশ’ পুলিশের উপপরিদর্শক

হাওরাঞ্চলে মাছের পর হাঁসের মড়ক

আপডেট টাইম : ০৮:১০:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

এক সপ্তাহ আগে আমার ৩০০ হাঁস মারা গেছে, শুক্রবার মারা গেছে ১০০ হাঁস, আজকে ওষুধ আনতাম গেছি বাড়িত আইয়া দেখি আরও ১৫ টা হাঁস মারা গেছে। পানি থাকি উইট্টা ঝিমাইতে ঝিমাইতে (ঝিমুনো) মরি যায় হাঁস।’ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাংলার হাওর পাড়ের বনগাঁও গ্রামের হাঁসের খামারি দুলু মিয়া দুঃখের কথা এভাবেই জানাচ্ছিলেন।
হাওরের মানুষের চরম দুর্দিন চলছে প্রথমে কাঁচা ধান পানিতে ডুবেছে। মানুষের পাশাপাশি গরুও বিপন্ন হয়েছে। এরপর মাছে মড়ক লেগেছে।এখন হাঁস মরছে।
বনগাঁওয়ের হাঁসের খামারি দুলু মিয়ারই কেবল দুর্দিন নয়। শনিবার সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘরের মেসার্স আরিফ ফার্মেসিতে হাঁসের ওষুধ নিতে এসেছিলেন-দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বেতকোনার নূর উদ্দিন। বুড়িস্থলের আব্দুল মোমেন, ছাতকের চেচানের চমক আলী। এরা সকলের হাঁসের খামারেই হাঁস মরেছে, মড়ক লেগেছে।
নূর উদ্দিনের ৫৭০ টি হাঁসের মধ্যে ৩টি শনিবার মরেছে। নূর উদ্দিন বলেন,‘পয়লা সকালে কাইত অইয়া পড়ি গেছে, এরপরে বিকালে মরি গেছে।’ একই ভাবে আব্দুল মোমেনের ৯৭০ টি হাঁসের মধ্যে গত দুই দিনে ১৭০ টি মারা গেছে। চমক আলী’র ৪০০ টি হাঁসের মধ্যে ৩০ টি মারা গেছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সলফ’এর আজাদ মিয়ার ৫০ টি হাঁস ছিল। ৩৩ টি মারা গেছে।
আজাদ মিয়া বললেন,‘ধান পঁচা যখন শুরু হয়েছে, তখন থেকে ২-৩ দিনের মধ্যেই তার হাঁসগুলো মারা গেছে।’
জামালগঞ্জের উজান দৌলতপুরের হাঁসের খামারি বিপ্লব তালুকদার বলেন,‘হাঁসের মড়ক ১২ মাস থাকে। এটি কোন মহামারি নয়। গত পৌষ মাসেও প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার কাকার কিছু হাঁস মরেছে।’
ষোলঘরের ওষুধ ব্যবসায়ী আরিফ ফার্মেসীর মালিক মো. আরিফুল নিয়াজি জানান, শনিবার যেসব হাঁসের খামারি তার ফার্মেসীতে এসেছেন, ভ্যাটেনারী সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি প্রতিষেধক হিসাবে টক্সিন বাইন্ডার ও স্যালাইন দিয়েছেন। খামারিদের বলে দেওয়া হয়েছে হাওরে হাঁস না ছাড়ার জন্য এবং টিউবওয়েলের পানি খাওয়ানোর জন্য।RRRRRR
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বেলাল হোসেন বলেন,‘সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় ২৫ লাখ হাঁস আছে। হাঁসের স্বাভাবিক মৃত্যুর খবর এর আগেও আমরা পেয়েছি। হাঁসে মড়ক লেগেছে এমন খবর পেয়ে জগন্নাথপুরের দুটি মৃত হাঁস আমরা কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে। এছাড়া জেলার কিছু এলাকায় মাইকিং করে বলা হয়েছে দূষিত পানিতে হাঁস না ছাড়ার জন্য। বিভিন্ন উপজেলায় আমাদের ভ্যাটেনারী সার্জনরা যে ওষুধ দিচ্ছেন তাতেই হাঁসের রোগ সারছে।’
বাংলাদেশ ভ্যাটেনারী কাউন্সিলের ডেপুটি রেজিস্টার ডা. গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন,‘হাওরের প্রাকৃতিক খাবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে প্রকৃত কারণ বলা কঠিন। হাওরের কচি ধানগুলো যখন পঁচে যায়, তখন ব্যাকটেরিয়া বেড়ে যায়। অ্যামোনিয়া গ্যাসও তৈরি হয়েছে। সেগুলো জলজ প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। এ কারণে হাওরের ছোট ছোট প্রাণিগুলোও মরেছে। দূষিত পানি ও খাবার খেয়ে বিষাক্ত গ্যাস শরীরে ঢুকছে। বিষাক্ত গ্যাসে শরীরের উপর চাপও পড়ছে। আমি জেনেছি সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের কোথাও কোথাও হাঁস পানি থেকে ওঠে গলা টান টান করে পড়ে থাকে। এই অবস্থা হয়েছে খাদ্যে বিষক্রিয়ার জন্য।’
কেন্দ্রীয় প্রাণীরোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, ‘সুনামগঞ্জ থেকে মরে যাওয়া দুটি হাঁসের নমুনা শুক্রবার আমরা পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে ময়না তদন্ত করে মনে হয়েছে হাঁসগুলো কলেরায় আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগ সাধারণত পঁচনশীল কিছু খেলে হয়। হাঁসের নমুনা আজ আমাদের গবেষণাগারের কালচারাল ইউনিটে দেওয়া হয়েছে। ২ দিন পর চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে।’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন,‘হাঁসের গণহারে মরার খবর পাইনি, তবে মাটিয়ান হাওরের পাশে একটি খামারে কিছু হাঁস মারা গেছে। ১৬ শ’ হাঁস ছিল সেখানে কিছু হাঁস মারা গেছে। সেই হাঁসের নমুনা ঢাকাতে পাঠিয়েছে প্রাণীসম্পদ। বিভাগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলা যাবে কী কারণে হাঁস মরেছে।