ব্যস্ত মান্না, বই লিখছেন মাহমুদুর, লন্ডনে শফিক

সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত তিন জনই। লেখা এবং বলা দুই ক্ষেত্রেই আলোচিত। দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। কয়েকমাস আগে মুক্তি মিলে তাদের। কেমন আছেন তারা? শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমান মান্না এবং মাহমুদুর রহমান। ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এরইমধ্যে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ততার পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন নানা কর্মসূচিতে। আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের শরীর ভালো নেই। ভুগছেন নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায়। এ অবস্থাতেও একটি বই লেখার কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি। প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান বর্তমানে অসুস্থ স্ত্রীর পাশে বৃটেনে অবস্থান করছেন।
মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, আমি এখন ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত আছি। জেল থেকে বের হওয়ার পর দেখছি সবার হাতে এন্ড্রয়েড। মানে হাতের মুঠোয় বিশ্ব। আমার ইয়াং এইজ থেকেই সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছি। আমার কাছে মনে হয় যে, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র আসলে সমার্থক শব্দ। পরিপূর্ণ গণতন্ত্র মানুষের সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। একটা সময় টেলিভিশনে টকশো করতাম, আমার লেখা ছাপা হতো বিভিন্ন পত্রিকায়। কিন্তু এখন কোথাও ছাপতে চায় না। মনে হচ্ছে একটা ভয়ের চাদর সারা দেশে বিরাজ করছে। তাই এই সময়ে এসে আমার কাছে মনে হচ্ছে ফেসবুক একটি ভালো সামাজিক মাধ্যম। যেখানে বর্তমানে ঢাকা শহরের প্রায় আড়াই কোটি মানুষ এই মাধ্যম ব্যবহার করছে। আমি চেষ্টা করছি এটার মধ্যে দিয়ে আমার কথাগুলো বলার জন্য। আমি কোনোভাবে মিসআন্ডারস্টুড হয়েছিলাম বা কেউ আমার সম্পর্কে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে আমি ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছিলাম। আমি কখনোই ক্ষমতা দখল করার স্বপ্নই দেখি নি। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলাম। কেউ বলতে পারবে না আমি এইগুলো ব্যবহার করে কোনো কিছু করেছি। ব্যক্তিগত জীবনে আমি স্বচ্ছ থাকতে চাই। আমি যেটা বিশ্বাস করি সে বিশ্বাসের কথা বলতে থাকবো। এবং এটা করার জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। এই পর্যন্ত বেশ কয়েকবার লাইভে এসেছি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের রিভিউ দিয়েছি যেন সবার কাছে পৌঁছাতে পারি।
সংগঠন গড়ার চেষ্টা করছি। যদিও একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশে সংগঠন গড়া যায় সহজে। সে রকম পরিবেশ নেই। একটা ভয়ের সংস্কৃতি বিরাজ করছে দেশজুড়ে। তবে প্রধানত এখন সংগঠনের কাজটাই করছি। নাগরিক ঐক্য সাধারণত একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। প্রথমদিকে এটাকে পলিটিক্যাল পার্টি হিসেবে দাঁড় করানোর ইচ্ছা ছিল না। তবে আমি দীর্ঘ সময় থেকে যেহেতু রাজনীতি করছি, আমার সঙ্গে যারা কাজ করছেন তারাও রাজনীতিই করছেন। এখন জেল থেকে বের হওয়ার পর সবারই এরকম একটা চাপ যে, এটাকে রাজনৈতিক দল হিসেবে আনার চেষ্টা করা হোক। সেই দিকটায় একটু কাজ করার চেষ্টা করছি।
আমি জেলে থাকতে যা লিখেছি সেটা দিয়ে তিনটা বা চারটা বই করা যাবে। প্রথমদিকে প্রকাশকরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করলেও এখন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি আমার পাণ্ডুলিপিগুলো রেডি করার চেষ্টা করছি। আমার জীবনের প্রথম উপন্যাস ‘বিপ্রতিক’ ১৯৮৮ সালে ছাপা হয়। একটু নতুন আঙ্গিকে ছাপাবো সেটা। আর একটা বড় গল্প আমার জেল জীবনের উপরে লেখা, ‘আমার কারাগার জীবন’। এছাড়া আরো কিছু লেখা আছে সেগুলো আমি ধীরে ধীরে গুছাচ্ছি। যেহেতু আমার জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে ছাত্র রাজনীতির উপর সেটা নিয়ে আমি একটি বই লিখেছি; সেটারই আরেকটি খণ্ড নিয়ে কাজ করছি। জেলে যাওয়ার পর প্রকাশকরা ভয় পেয়ে যাওয়ায় আমার বই বাজারে ছাড়েননি। তবে এখন আবার কিছু বই আসছে। রাজনীতির কথা বলতে আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। জেল থেকে বের হয়েছি চার মাস হলো। এই সময়ের মধ্যে আমার মনে হয়েছে আমি মানুষের কাছ থেকে অনেক বেশি ভালোবাসা, সমর্থন পেয়েছি। এই দিক চিন্তা করে আমি ভালো আছি। আমি মনে করি যতক্ষণ কাজ করতে পারবো কোনো অভিযোগ ছাড়া কাজ করে যাবো।
দীর্ঘ কারাভোগের পর মুক্তি মেলা মাহমুদুর রহমান আবারো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। অল্প কিছু কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তিনি। কয়েকটি কর্মসূচি পণ্ড হয়েছে পুলিশের বাধায়। তার সম্পাদিত পত্রিকা আমার দেশ এখনো বন্ধ রয়েছে। মাহমুদুর রহমানের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি নানা রকম শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য বৃটেনে যাওয়ার চেষ্টা করলেও দেশটি তাকে ভিসা দেয়নি। সম্প্রতি এক লেখায় মাহমুদুর রহমান লিখেছেন, কাশিমপুর জেলে প্রায় এক বছর ধরে বাংলাদেশে ইসলামের আগমন এবং বিস্তার নিয়ে ইংরেজিতে এক দীর্ঘ, ইতিহাসভিত্তিক বইয়ের খসড়া শেষ করেছিলাম। গত এক মাস নানা অসুস্থতার মধ্যে সেই খসড়াটা নিয়েই কাজ করে চলেছি। আগামী তিন মাসের মধ্যে বইটির কাজ শেষ করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মাহমুদুর রহমান।
প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার নিজের শরীরটাও ভালো নেই। মৌচাকে ঢিল-এর সহকারী সম্পাদক সজিব ওনাসিস জানান, স্ত্রী তালেয়া রেহমান অসুস্থ থাকায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে লন্ডনে গিয়েছেন শফিক রেহমান। এদিকে শফিক রেহমান নিজেও শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর অসুস্থ থাকায় নতুন কোনো কাজে হাত দিতে পারেননি শফিক রেহমান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর