ঢাকা ১০:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাঠে নামতে পারাই ঢাকা মহানগর বিএনপির চ্যালেঞ্জ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৭:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৭
  • ২৩৫ বার

সংগঠন গোছানো এবং নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে নামতে পারা হবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নতুন নেতৃত্বের প্রধান চ্যালেঞ্জ। দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এর আগে দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাস এ ক্ষেত্রে কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপট, অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব ও কমিটি নিয়ে কিছু সংখ্যক নেতা-কর্মীর হতাশার কারণে শেষ পর্যন্ত নতুন কমিটি কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান।
অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশা করেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি সামনের দিনে আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এই কমিটি করা হয়েছে। এদের আন্দোলন সংগ্রামের অভিজ্ঞতা আছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, সামনের দিনে আন্দোলন সফল করতে হলে ঢাকায় তা জোরদার করতে হবে। এ চিন্তা থেকে নতুন কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কিছুটা গুছিয়ে ওঠার পর বিএনপি ক্রমান্বয়ে কর্মসূচিতে যাবে।
গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি (আংশিক) ঘোষণা করে বিএনপি। উত্তরের সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে সাবেক কমিশনার আব্দুল কাইয়ুমকে। বিদেশি নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যা মামলার আসামি কাইয়ুম দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন। দলটির নেতারা মনে করেন, শিগগির তাঁর দেশে ফেরার সম্ভাবনা কম। উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানও আসা যাওয়ার মধ্যে বা আত্মগোপনে থাকেন। এ অবস্থায় উত্তরে নতুন কমিটি করা বা আন্দোলন চাঙা করা কঠিন হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বিদেশ থেকে মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে শারীরিকভাবে উপস্থিত না থেকেও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বা দিক নির্দেশনা দেওয়া কঠিন কিছু নয়। তাঁর সঙ্গে নেতা-কর্মীদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের মূল চ্যালেঞ্জ মানুষের ভোটের অধিকারের আন্দোলন সফল করা।
প্রায় দুই দশক ধরে ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং মির্জা আব্বাস। ১৯৯৬ সালে খোকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আসেন। সর্বশেষ ২০১১ সালে ১৪ মে তাঁকে আহ্বায়ক করে কমিটি হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনে এই কমিটির ভূমিকা নিয়ে দলে প্রশ্ন ওঠে। কারণ ঢাকায় নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। খালেদা জিয়াও ঢাকা কমিটিকে ব্যর্থ বলেছিলেন। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ১২ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে মহানগরের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন খোকা। ওই বছরের ১৮ জুলাই খোকার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব উন নবী খানকে সদস্যসচিব করে নতুন কমিটি করা হয়। ওই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে মহানগরের সব ওয়ার্ড ও থানায় কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা পারেনি। রাজপথে তেমন কোনো কর্মসূচিতেও ওই কমিটিকে দেখা যায়নি।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন কমিটিতেও খোকা এবং আব্বাসের সমর্থকদের প্রাধান্য আছে। এর বাইরে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য, একজন ভাইস চেয়ারম্যানের অনুসারীরা কমিটিতে প্রাধান্য পেয়েছেন। খোকা-আব্বাসের অনুসারীদের অবস্থান কেমন হয়, তা-ও নতুন দুই কমিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রায় দুই দশক ধরে এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে কোন্দল আছে। দীর্ঘদিন থেকে ওয়ার্ড বা থানায় নতুন কমিটি না হওয়ায় জট লেগে আছে।
জানতে চাইলে হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের মূল চ্যালেঞ্জ হলো তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠন শক্তিশালী করা। গণতন্ত্রহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন-এসবের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলে রাজপথে আন্দোলন তৈরি করা এবং ভোটারবিহীন কোনো নির্বাচন হলে তা প্রতিরোধ করা। সে ক্ষেত্রে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা সফল হবেন বলে আশা করেন।
ক্ষোভ হতাশা:
নতুন কমিটিতে জায়গা না পেয়ে বা প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনেকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন। মহানগর বিএনপির একটি সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কমিশনার কমিটিতে পদ পাননি। এটি নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ আছে। তবে যেহেতু এখনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি তাই তাঁরা এখনো আশাবাদী। আবার কেউ কেউ পদ পেয়েও খুশি নন। নবীউল্লাহ নবী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন। কমিটিতে তাঁকে সহসভাপতি করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি তাঁর অনুসারী অনেকেও হতাশ হয়েছেন। নবী বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার চিন্তা করছেন।
জানতে চাইলে নবীউল্লাহ নবী প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের জন্য নতুন কমিটি অত্যন্ত শক্তিশালী হয়েছে। তবে তিনি শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত কারণে দু-এক দিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন।
নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ-হতাশার বিষয়ে হাবিব উন নবী বলেন, নতুন কমিটি হলে কিছু সমস্যা থাকে। সবার সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধান করা হবে। আর উত্তরের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, তিনি সেভাবে কোন ক্ষোভ হতাশা দেখছেন না। নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মাঠে নামতে পারাই ঢাকা মহানগর বিএনপির চ্যালেঞ্জ

আপডেট টাইম : ০৯:৫৭:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০১৭

সংগঠন গোছানো এবং নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে নামতে পারা হবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নতুন নেতৃত্বের প্রধান চ্যালেঞ্জ। দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এর আগে দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাস এ ক্ষেত্রে কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপট, অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব ও কমিটি নিয়ে কিছু সংখ্যক নেতা-কর্মীর হতাশার কারণে শেষ পর্যন্ত নতুন কমিটি কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান।
অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশা করেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি সামনের দিনে আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এই কমিটি করা হয়েছে। এদের আন্দোলন সংগ্রামের অভিজ্ঞতা আছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, সামনের দিনে আন্দোলন সফল করতে হলে ঢাকায় তা জোরদার করতে হবে। এ চিন্তা থেকে নতুন কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কিছুটা গুছিয়ে ওঠার পর বিএনপি ক্রমান্বয়ে কর্মসূচিতে যাবে।
গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি (আংশিক) ঘোষণা করে বিএনপি। উত্তরের সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে সাবেক কমিশনার আব্দুল কাইয়ুমকে। বিদেশি নাগরিক সিজার তাবেলা হত্যা মামলার আসামি কাইয়ুম দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে অবস্থান করছেন। দলটির নেতারা মনে করেন, শিগগির তাঁর দেশে ফেরার সম্ভাবনা কম। উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানও আসা যাওয়ার মধ্যে বা আত্মগোপনে থাকেন। এ অবস্থায় উত্তরে নতুন কমিটি করা বা আন্দোলন চাঙা করা কঠিন হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বিদেশ থেকে মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে শারীরিকভাবে উপস্থিত না থেকেও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বা দিক নির্দেশনা দেওয়া কঠিন কিছু নয়। তাঁর সঙ্গে নেতা-কর্মীদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের মূল চ্যালেঞ্জ মানুষের ভোটের অধিকারের আন্দোলন সফল করা।
প্রায় দুই দশক ধরে ঢাকা মহানগর বিএনপির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং মির্জা আব্বাস। ১৯৯৬ সালে খোকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে আসেন। সর্বশেষ ২০১১ সালে ১৪ মে তাঁকে আহ্বায়ক করে কমিটি হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনে এই কমিটির ভূমিকা নিয়ে দলে প্রশ্ন ওঠে। কারণ ঢাকায় নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি। খালেদা জিয়াও ঢাকা কমিটিকে ব্যর্থ বলেছিলেন। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের ১২ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে মহানগরের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন খোকা। ওই বছরের ১৮ জুলাই খোকার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব উন নবী খানকে সদস্যসচিব করে নতুন কমিটি করা হয়। ওই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে মহানগরের সব ওয়ার্ড ও থানায় কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তা পারেনি। রাজপথে তেমন কোনো কর্মসূচিতেও ওই কমিটিকে দেখা যায়নি।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন কমিটিতেও খোকা এবং আব্বাসের সমর্থকদের প্রাধান্য আছে। এর বাইরে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য, একজন ভাইস চেয়ারম্যানের অনুসারীরা কমিটিতে প্রাধান্য পেয়েছেন। খোকা-আব্বাসের অনুসারীদের অবস্থান কেমন হয়, তা-ও নতুন দুই কমিটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রায় দুই দশক ধরে এই দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে কোন্দল আছে। দীর্ঘদিন থেকে ওয়ার্ড বা থানায় নতুন কমিটি না হওয়ায় জট লেগে আছে।
জানতে চাইলে হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের মূল চ্যালেঞ্জ হলো তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠন শক্তিশালী করা। গণতন্ত্রহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন-এসবের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলে রাজপথে আন্দোলন তৈরি করা এবং ভোটারবিহীন কোনো নির্বাচন হলে তা প্রতিরোধ করা। সে ক্ষেত্রে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা সফল হবেন বলে আশা করেন।
ক্ষোভ হতাশা:
নতুন কমিটিতে জায়গা না পেয়ে বা প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনেকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন। মহানগর বিএনপির একটি সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কমিশনার কমিটিতে পদ পাননি। এটি নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ আছে। তবে যেহেতু এখনো কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি তাই তাঁরা এখনো আশাবাদী। আবার কেউ কেউ পদ পেয়েও খুশি নন। নবীউল্লাহ নবী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন। কমিটিতে তাঁকে সহসভাপতি করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি তাঁর অনুসারী অনেকেও হতাশ হয়েছেন। নবী বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার চিন্তা করছেন।
জানতে চাইলে নবীউল্লাহ নবী প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলন সংগ্রামের জন্য নতুন কমিটি অত্যন্ত শক্তিশালী হয়েছে। তবে তিনি শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত কারণে দু-এক দিনের মধ্যে পদত্যাগ করবেন।
নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ-হতাশার বিষয়ে হাবিব উন নবী বলেন, নতুন কমিটি হলে কিছু সমস্যা থাকে। সবার সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধান করা হবে। আর উত্তরের সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, তিনি সেভাবে কোন ক্ষোভ হতাশা দেখছেন না। নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে।