সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে তুরস্কে আজ রবিবার নেয়া গণভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ভোট গণনা। সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী, সংবিধান সংশোধনীর পক্ষেই বেশি ভোট পড়েছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলো এজেন্সি জানায়, রবিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ৭৮.৩৬ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হয়েছে। এতে সংশোধনীর পক্ষে অর্থাৎ হ্যাঁ-ভোট দিয়েছেন প্রায় ৫৪ শতাংশ ভোটার। আর সংবিধান সংশোধনীর বিপক্ষে অর্থাৎ না- ভোট দিয়েছেন ৪৬ শতাংশ ভোটার। আজকের গণভোটের মধ্যদিয়ে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশটির জনগণের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট হবে।
দেশজুড়ে এক লাখ ৬৭ হাজার ১৪০টি ভোট কেন্দ্রে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ নিবন্ধিত ভোটার রয়েছেন। দেশটির পূর্বাঞ্চলে স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় এবং অন্যান্য অংশে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। উভয় জায়গায় বিকাল ৫টায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে।
আজকের গণভোটে হ্যাঁ -এর পক্ষে বেশি ভোট সংবিধানের সংশোধনী অনুমোদন পেয়ে যাবে। এমনটি হলে সংবিধানে প্রস্তাবিত সংশোধনী কার্যকর করা হবে। এর ফলে তুরস্কের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। দেশটিতে পরিপূর্ণভাবে চালু হবে প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার ব্যবস্থা। এতে দেশের সকল নির্বাহী ক্ষমতার মালিক হবেন প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রীর কোনো পদ থাকবে না।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান পরবর্তী দুই মেয়াদে নির্বাচিত হলে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। দেশটির আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ সালে।
কী আছে সংবিধান সংশোধনীতে?
সংশোধনীর পর থেকে একজন প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদে ১০ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।
এই সাংবিধানিক পরিবর্তনে তুরস্কের পার্লামেন্টারি পদ্ধতি বদলে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার প্রবর্তনের কথা আছে।
প্রেসিডেন্ট হবেন নির্বাহী প্রধান, রাষ্ট্রপ্রধান, এবং রাজনৈতিক দলের সাথেও তার সম্পর্ক বজায় থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর ভুমিকা বিলুপ্ত করে দুই বা তিন জন ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ তৈরি করা হবে।
প্রেসিডেন্ট হাতে পাবেন নতুন ক্ষমতা। তিনি মন্ত্রীদের নিয়োগ দেবেন, বাজেট তৈরি করবেন, সিনিয়র বিচারপতিদের অধিকাংশকে নিয়োগও দেবেন তিনিই, এবং ডিক্রি জারি করে কিছু বিষয়ে আইনও করতে পারবেন।
প্রেসিডেন্ট একাই জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে পারবেন।
পার্লামেন্ট আর মন্ত্রীদের ব্যাপারে তদন্ত করতে পারবে না। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভোটেএমপিরা প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন। প্রেসিডেন্টর বিচারের জন্য দু তৃতীয়াংশ এমপির সমর্থন লাগবে।
এমপিদের সংখ্যা ৫৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ করা হবে।
প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন একই দিনে হবে। প্রেসিডেন্ট দু মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।
এরদোয়ানের বক্তব্য, এসব পরিবর্তন সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া দ্রুততর করবে। কিন্তু তার সমালোচকরা বলছেন, এতে এরদোয়ানের স্বৈরশাসন কায়েম হবে, গণতন্ত্রের মৃত্যুঘন্টা বাজবে।