যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচিত নাম এখন জ্যারেড কুশনার ও চেলসি ক্লিনটন। প্রথমজন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের জামাই। তার বড় মেয়ে ইভানকা ট্রাম্পের স্বামী। বর্তমানে তিনি প্রেসিডেন্টের অন্যতম শীর্ষ উপদেষ্টা। তাকে ঘিরে নানা রকম আলোচনা মার্কিন মুলুকে। সমালোচকরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, সব কাজের কাজী হয়ে উঠেছেন তিনি। অনলাইন সিএনএন তো তাকে নিয়ে সংবাদ শিরোনামই করেছে। তাদের শিরোনাম ‘ট্রাম্পস সেক্রেটারি অব এভরিথিং: জ্যারেড কুশনার’। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সব কাজের সেক্রেটারি হলেন জ্যারেড কুশনার। তার কাঁধে অনেক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। চীনের সঙ্গে আলোচনায় তিনি উপদেষ্টা। মেক্সিকোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারে সৃষ্টিশীলতা দেখানোর দায়িত্ব তার কাঁধে। ক্রিমিনাল জাস্টিস সংস্কারেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। কয়েকদিন আগে এরই অংশ হয়ে তিনি ইরাক সফরে এসেছেন। হোয়াইট হাউসের অনেক সূত্র ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইংয়ে নিজের প্রভাব বিস্তার করেছেন কুশনার। প্রভাব বিস্তার বললে যথার্থ হয় না। এক্ষেত্রে সিএনএন একটি শব্দ ব্যবহার করেছে। তা হলো ‘ইক্লিপস’। এর অর্থ হলো গ্রাস করা। মন্ত্রিপরিষদ উপদেষ্টাদের ওপরও তিনি নিজের প্রভাব বেশ ভালভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিশেষ করে পররাষ্ট্রবিষয়ক কূটনীতিক, ব্যবসায় নির্বাহী এমনকি কংগ্রেসের কিছু সদস্যের ওপর তার বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। সংক্ষেপে জ্যারেড কুশনারের বর্তমান অবস্থা এতটুকু। অন্যদিকে আলোচনায় আছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, সাবেক ফার্স্টলেডি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সিনেটর হিলারি ক্লিনটন দম্পতির একমাত্র কন্যা চেলসি ক্লিনটন। তাকে নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক আগ্রহ। না, তিনি প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার বা কোনো কেলেঙ্কারির জন্য আলোচিত নন। আলোচনা হচ্ছে তিনি রাজনীতিতে আসছেন, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। চেলসি অবশ্য এখনই রাজনীতিতে আসছেন না তা জানিয়ে দিয়েছেন। তার অর্থ এই নয়, তিনি রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। সর্বশেষ কানকথা ছড়িয়ে পড়েছে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। এমন আলোচনাকেও তিনি নাকচ করে দিয়েছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। তার মা ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে কারসাজির মাধ্যমে, রাশিয়ার হস্তক্ষেপে হারানো হয়েছে এটা গোয়েন্দাদের রিপোর্টে পরিষ্কার। তাই হিলারির যে ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তা রয়েছে তা এখন চেলসির দিকে আসছে। সম্ভবত মার্কিনিরা চেলসিকে চান। তাই এই আলোচনা। তাই মঙ্গলবার সকালে সিবিএস-এর নোরা ও’ডোনেলকে এক সাক্ষাৎকারে চেলসি বলেছে, আমাদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনোভাবেই আমি একমত নই। তাই বলে ২০২০ সালে তাকে পরাজিত করার মতো অবশ্যই আমি নিজে যথার্থ ব্যক্তি নই। এখানে উল্লেখ্য, চেলসি ক্লিনটনের বয়স এখন ৩৭ বছর। তিনি জন্মেছেন যুক্তরাষ্ট্রে তাই সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষেত্রে যোগ্যতা রাখেন। তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ মনে করেন রাজনীতিতে এলেও এক লাফে প্রেসিডেন্টকে টক্কর দেয়া তার উচিত হবে না। তিনি যদি নির্বাচনে আসেন তাহলে তার প্রথম পদক্ষেপ হবে নিউ ইয়র্কের ১৭তম কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট। বর্তমানে এখানে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেট নিতা লোই। তার এ নির্বাচনী আসনের মধ্যে রয়েছে চ্যাপাকুয়া। ২০০১ সালে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন ক্লিনটন দম্পতি। তারপর থেকে এই চ্যাপাকুয়াতেই বসত গেঁড়েছেন তারা। চেলসি ক্লিনটন বর্তমানে অবস্থান করছেন নিউ ইয়র্ক সিটিতে। তাই তার জন্য চ্যাপাকুয়াতে ফিরে আসা খুবই সহজ। কিন্তু এ আসনে এখন কংগ্রেস প্রতিনিধি থাকায় তিনি এখানে ফিরবেন বলে মনে হয় না। ওদিকে ১৯৮৮ সাল থেকে ডেমোক্রেটদের জন্য আসনটি শক্ত করে ধরে রেখেছেন নিটা লোই। এই গ্রীষ্মে তার বয়স হবে ৮০ বছর। এই বয়সের পরে তার রাজনীতি নিয়েও জল্পনা আছে। তিনি ক্লিনটন দম্পতির দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুও। এমনই এক প্রেক্ষাপটে গত নভেম্বরে নিউ ইয়র্ক পোস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, নিটা লোই’য়ের আসনে নির্বাচন করার জন্য সাজিয়ে তোলা হচ্ছে চেলসিকে। কিন্তু ওই নভেম্বরেই নিটা ডেইলি কলার-কে বলেছিলেন, আমি যে আসনে লড়ছি এখানেই লড়াই করবো। ফলে তার এ আসনটি চেলসির জন্য বড় টার্গেট হলেও তিনি চোখ রাখতে পারেন ১২তম ডিস্ট্রিক্ট আসনের দিকে। এখানে বর্তমান কংগ্রেস সদস্য ক্যারোলাইন ম্যালোনি। এই আসনের অন্তর্ভুক্ত ম্যাডিসন স্কোয়ার পার্ক এলাকা। বর্তমানে এই এলাকায়ই বসবাস চেলসি ক্লিনটন, তার স্বামী ও সন্তানদের। যদি চেলসি রাজনীতিতে আসেনই আর এ আসনের দিকে নজর দেন তাহলে কি মেনে নেবেন ক্যারোলাইন ম্যালোনি! ১৯৯৩ সাল থেকে এ আসনটি তিনি ধরে রেখেছেন। তাই তার জন্য নিরাপদ এই আসন তিনি কি ছেড়ে দেবেন চেলসিকে! যদি তিনি তা না করেন তাহলে রাজনীতিতে পা ফেলার জন্য আরো জায়গা আছে চেলসির সামনে। তিনি স্থানীয় পর্যায়ে সিটি কাউন্সিল অথবা মেয়র নির্বাচনে আসতে পারেন। এ সবই মার্কিন মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হচ্ছে। সিটি কাউন্সিলের দ্বিতীয় ডিস্ট্রিক্টে বসবাস চেলসির। এখানকার পদটির মালিক এখন রোজি মেন্ডেজ। মেয়র পদে লড়তে হলে তাকে বিল ডি ব্লাসিওর বিরুদ্ধে লড়তে হবে। তিনি ক্লিনটন পরিবারের বন্ধু হলেও একপর্যায়ে মুখ ঘুরিয়ে নেন। ২০১৬ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার ‘ফেভারের’ তালিকায় ছিলেন না হিলারি। ফলে এখানেও বাধা পেতে পারেন চেলসি। তাহলে শেষ পর্যন্ত কি হচ্ছে! নিটা লোই অথবা ক্যালোলিন ম্যালোনি যদি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে রাজনীতি থেকে অবসরে না যান তাহলে চেলসিকে আরো এক টার্ম অপেক্ষায় থাকতে হবে। কিন্তু তিনি চিরদিন, অনাদিকাল পর্যন্ত এভাবে সাইডলাইনে বসে থাকবেন না।
সংবাদ শিরোনাম
আসছেন চেলসি ক্লিনটন
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ০৬:০৭:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ এপ্রিল ২০১৭
- ২৬৫ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ