ঢাকা ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেড় লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান পানির নিচে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২৪:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ এপ্রিল ২০১৭
  • ২৬২ বার

চৈত্র এবার তার স্বভাবজাত চরিত্র হারিয়ে বৈশাখের আগেই সিলেট অঞ্চলে নিয়ে আসে ঝড়-ঝঞ্জা, বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল। গ্রাস করেছে সিলেট বিভাগের অন্তত ৪০ টি হাওরেরর কাঁচা ধান। সিলেটের চার জেলার ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩ হেক্টর চাষকৃত বোরো জমির মধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার ৯৬২ হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান এখন পানির নিচে। ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনের কাজ চলছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। কৃষকরা জানান, হাওরে পানি কমলেও এই ধান আর কাজে লাগবে না। কারণ বেশির ভাগ ধান ‘দুধ’ অবস্থায ডুবে গেছে। এই অবস্থায় বেড়েছে চালের দাম। ৮ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার রোদ উঠলেও আকাশে মেঘের আনাগোনা ক্ষতিগ্রস্তদের শংকা দূর হয়নি।

এদিকে, এবার হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। বিভিন্ন স্থানে কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা ফুঁসে উঠছেন। তারা এ ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মকে দায়ী করেছেন। সিলেট ও সুনামগঞ্জে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন থেকে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন গত বুধবার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের অধিকাংশ হাওর তলিয়ে যাওয়া, বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণে নানা অনিয়ম এবং কৃষকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। তিনি মন্ত্রীকে সুনামগঞ্জ জেলার অবস্থা বিবেচনা করে দুর্গত এলাকা ঘোষণা ও কৃষিঋণ মওকুফ, নতুন করে কৃষিঋণ প্রদান ও দ্রুত কৃষকদেরকে খেয়ে-পরে বাঁচার জন্য সাহায্য দেয়ার অনুরোধ জানান।

এদিকে সুনামগঞ্জ- ৪ আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলু সহ স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পৃথক সভায় সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি করেছেন। তরা ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় কর্মসুচী চালু রাখারও দাবি জানান।

সুনামগঞ্জে ৯১ হাজার কার্ডের স্থলে ২ লাখ কার্ড প্রদানের জন্য ও ন্যায্য মূল্যের চাল বিক্রয় কর্মসূচি আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম । ‘চোখের সামনে এতোগুলো ধান চলে গেল, এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কি-’ মন্তব্য করে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘এলাকাবাসীকে নিয়ে অবশিষ্ট হাওর রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারপরও যদি শেষ রক্ষা হয়।’ জেলার সকল মিলার ও চাল ব্যবসায়ীকে সতর্ক করা হয়েছে- যাতে কেউ চালের দাম বৃদ্ধি না করে। জেলা প্রশাসক জানান যারা ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কারচুপি অনিয়ম করেছে তাদেরকে বিচারের আওয়তায় আনা হবে।

জামালগঞ্জের হালির হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ফসল ডুবির ঘটনায় গত মঙ্গলবার কয়েক হাজার কৃষক পাউবো, পিআইসি ও সিন্ডিকেট ঠিকাদারদের শাস্তির দাবিতে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে । পরে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এতে বলা হয়-ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে পাউবো, পিআইসি ও ঠিকাদারদের অবহেলা, দুর্নীতির দরুণ জামালগঞ্জ উপজেলার দেড়শত কোটি টাকার ফসল ডুবে গেছে।

‘আগামী ফসল ঘরে না উঠা পর্যন্ত খাবো কি?

কিষাণ-কিষাণীরা যেখানে ফসলের ঘ্রাণে বিভোর থাকার কথা, সেখানে এখন কান্নার রোল, হাহাকার। সারা বছরের খোরাকি হারিয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের কৃষকরা মাথা চাপড়ে বিলাপ করছে। তাদের সামনে এখন বড় প্রশ্ন: ‘আগামী ফসল ঘরে না উঠা পর্যন্ত খাবো কি? সংসারের যাবতীয় খরচের জোগান আসবে কোথা থেকে। চোখের সামনে হাজার হাজার হেক্টর জমির কাঁচা ধান ডুবে যাওয়ার ঘটনায় শুধু প্রকৃতিকে দোষ দিলে চলবে না। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদেরও শাস্তি দিতে হবে।

আউশ ও আমন ধান চাষে জোর: সিলেটস্থ কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মামুনূর রশীদ ইত্তেফাককে জানান, বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতিতে তারা এখন আউশ ও আমনের প্রতি জোর দেয়ার কথা ভাবছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা জলে : চলতি বছর সুনামগঞ্জে বোরো ফসলের আবাদ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। ৪২টি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫৮ কোটি টাকা ৭০ লাখ টাকা। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের বৃহত্ ৩৭টি হাওরসহ মোট ৪২ টি হাওরে ১০ কোটি ৭৭ লাখ ব্যয়ে ২২৫ টি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) ও ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৬ টি প্যাকেজে ঠিকাদার দিয়ে বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়। পিআইসির কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ঠিকাদারের কাজ ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ হবার কথা থাকলেও অনেক পিআইসির কাজ শেষ হয়নি ও অনেক ঠিকাদার ঢলের আগ মূহূর্তে কাজ শুরু করেন। ‘ফলে ঢলের পানিতে ফসলও গেল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজও গেল’-বলেন ফসল হারা কৃষকরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধাক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম জানান, কিছু বাঁধ ভেঙ্গছে আর কিছু হাওরে বাঁধের ডিজাইন লেবেল ক্রস করায় ফসল ডুবেছে। তিনি বলেন, এবার চৈত্রে আগাম বন্যাটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ শুনা যাচ্ছে। আমরা তা তদন্ত করে দেখবো।

২৫ লাখ কৃষক দিশেহারা: সিলেট বিভাগের চার জেলার অন্তত: ২৫ লাখ কৃষক এখন দিশেজারা। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিন-রাত তারা বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন।

চাল ও আটার দাম বৃদ্ধি: সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় লাগামহীন ভাবে বাড়ছে চাল ও আটার দাম। বস্তা প্রতি চালের দাম ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা ও গমের দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে চালের আমদানি কম ও স্থানীয় বাজারে চাল না থাকায় মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মিলমালিকরা জানান । চালের দামের এমন ঊর্ধগতিতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।

হাকালুকি‘র ২৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান হুমকীর সম্মুখীন: পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরের প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান হুমকির সম্মুখীন। হাওরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সবকটি নদী-ছড়ায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা শংকিত। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা অঞ্চল এবং সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ছোট বড় ২ শতাধিক বিল নিয়ে হাকালুকি।

অনেকেই ভিটা ছাড়া: সিলেটের গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে ঝড় বৃষ্টি ও হাওর ডুবিতে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির খবর আসছে। অনেক স্থানে বাড়ি-ঘর উড়ে গেছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১০ নম্বর উত্তর বাদেপাশা ইউনিয়নের মিররচক গ্রামের বিলাল মিয়ার পরিবার কয়েকদিন থেকে নিজ ভিটায় তাবু বানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন । এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন সিলেটের বহু মানুষ।

১৩ এপ্রিল পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘেরাও কর্মসূচি: ‘হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’ আগামী ১৩ এপ্রিল বেলা ১১টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছে।

ওসমানীনগর (সিলেট) সংবাদদাতা শিপন আহমদ জানান,

ওসমানীনগর – বালাগঞ্জে হাওরের পারে চলছে কৃষকের কান্না। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা অবিরাম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে দুই উপজেলার প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর বোরো ধান। তবে উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী দুই উপজেলার ১১হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

দেড় লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান পানির নিচে

আপডেট টাইম : ১১:২৪:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ এপ্রিল ২০১৭

চৈত্র এবার তার স্বভাবজাত চরিত্র হারিয়ে বৈশাখের আগেই সিলেট অঞ্চলে নিয়ে আসে ঝড়-ঝঞ্জা, বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল। গ্রাস করেছে সিলেট বিভাগের অন্তত ৪০ টি হাওরেরর কাঁচা ধান। সিলেটের চার জেলার ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩ হেক্টর চাষকৃত বোরো জমির মধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার ৯৬২ হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান এখন পানির নিচে। ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনের কাজ চলছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ। কৃষকরা জানান, হাওরে পানি কমলেও এই ধান আর কাজে লাগবে না। কারণ বেশির ভাগ ধান ‘দুধ’ অবস্থায ডুবে গেছে। এই অবস্থায় বেড়েছে চালের দাম। ৮ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার রোদ উঠলেও আকাশে মেঘের আনাগোনা ক্ষতিগ্রস্তদের শংকা দূর হয়নি।

এদিকে, এবার হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। বিভিন্ন স্থানে কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা ফুঁসে উঠছেন। তারা এ ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মকে দায়ী করেছেন। সিলেট ও সুনামগঞ্জে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন থেকে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন গত বুধবার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের অধিকাংশ হাওর তলিয়ে যাওয়া, বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণে নানা অনিয়ম এবং কৃষকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। তিনি মন্ত্রীকে সুনামগঞ্জ জেলার অবস্থা বিবেচনা করে দুর্গত এলাকা ঘোষণা ও কৃষিঋণ মওকুফ, নতুন করে কৃষিঋণ প্রদান ও দ্রুত কৃষকদেরকে খেয়ে-পরে বাঁচার জন্য সাহায্য দেয়ার অনুরোধ জানান।

এদিকে সুনামগঞ্জ- ৪ আসনের এমপি পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, পৌর মেয়র আয়ূব বখত জগলু সহ স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা পৃথক সভায় সুনামগঞ্জ জেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি করেছেন। তরা ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় কর্মসুচী চালু রাখারও দাবি জানান।

সুনামগঞ্জে ৯১ হাজার কার্ডের স্থলে ২ লাখ কার্ড প্রদানের জন্য ও ন্যায্য মূল্যের চাল বিক্রয় কর্মসূচি আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম । ‘চোখের সামনে এতোগুলো ধান চলে গেল, এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কি-’ মন্তব্য করে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘এলাকাবাসীকে নিয়ে অবশিষ্ট হাওর রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারপরও যদি শেষ রক্ষা হয়।’ জেলার সকল মিলার ও চাল ব্যবসায়ীকে সতর্ক করা হয়েছে- যাতে কেউ চালের দাম বৃদ্ধি না করে। জেলা প্রশাসক জানান যারা ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কারচুপি অনিয়ম করেছে তাদেরকে বিচারের আওয়তায় আনা হবে।

জামালগঞ্জের হালির হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ফসল ডুবির ঘটনায় গত মঙ্গলবার কয়েক হাজার কৃষক পাউবো, পিআইসি ও সিন্ডিকেট ঠিকাদারদের শাস্তির দাবিতে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে । পরে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এতে বলা হয়-ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে পাউবো, পিআইসি ও ঠিকাদারদের অবহেলা, দুর্নীতির দরুণ জামালগঞ্জ উপজেলার দেড়শত কোটি টাকার ফসল ডুবে গেছে।

‘আগামী ফসল ঘরে না উঠা পর্যন্ত খাবো কি?

কিষাণ-কিষাণীরা যেখানে ফসলের ঘ্রাণে বিভোর থাকার কথা, সেখানে এখন কান্নার রোল, হাহাকার। সারা বছরের খোরাকি হারিয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের কৃষকরা মাথা চাপড়ে বিলাপ করছে। তাদের সামনে এখন বড় প্রশ্ন: ‘আগামী ফসল ঘরে না উঠা পর্যন্ত খাবো কি? সংসারের যাবতীয় খরচের জোগান আসবে কোথা থেকে। চোখের সামনে হাজার হাজার হেক্টর জমির কাঁচা ধান ডুবে যাওয়ার ঘটনায় শুধু প্রকৃতিকে দোষ দিলে চলবে না। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদেরও শাস্তি দিতে হবে।

আউশ ও আমন ধান চাষে জোর: সিলেটস্থ কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মামুনূর রশীদ ইত্তেফাককে জানান, বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতিতে তারা এখন আউশ ও আমনের প্রতি জোর দেয়ার কথা ভাবছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা জলে : চলতি বছর সুনামগঞ্জে বোরো ফসলের আবাদ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। ৪২টি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫৮ কোটি টাকা ৭০ লাখ টাকা। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের বৃহত্ ৩৭টি হাওরসহ মোট ৪২ টি হাওরে ১০ কোটি ৭৭ লাখ ব্যয়ে ২২৫ টি পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) ও ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৬ টি প্যাকেজে ঠিকাদার দিয়ে বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়। পিআইসির কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ঠিকাদারের কাজ ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ হবার কথা থাকলেও অনেক পিআইসির কাজ শেষ হয়নি ও অনেক ঠিকাদার ঢলের আগ মূহূর্তে কাজ শুরু করেন। ‘ফলে ঢলের পানিতে ফসলও গেল, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজও গেল’-বলেন ফসল হারা কৃষকরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধাক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম জানান, কিছু বাঁধ ভেঙ্গছে আর কিছু হাওরে বাঁধের ডিজাইন লেবেল ক্রস করায় ফসল ডুবেছে। তিনি বলেন, এবার চৈত্রে আগাম বন্যাটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ শুনা যাচ্ছে। আমরা তা তদন্ত করে দেখবো।

২৫ লাখ কৃষক দিশেহারা: সিলেট বিভাগের চার জেলার অন্তত: ২৫ লাখ কৃষক এখন দিশেজারা। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দিন-রাত তারা বাঁধ রক্ষায় কাজ করছেন।

চাল ও আটার দাম বৃদ্ধি: সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় লাগামহীন ভাবে বাড়ছে চাল ও আটার দাম। বস্তা প্রতি চালের দাম ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা ও গমের দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে চালের আমদানি কম ও স্থানীয় বাজারে চাল না থাকায় মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মিলমালিকরা জানান । চালের দামের এমন ঊর্ধগতিতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।

হাকালুকি‘র ২৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান হুমকীর সম্মুখীন: পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরের প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান হুমকির সম্মুখীন। হাওরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সবকটি নদী-ছড়ায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা শংকিত। মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা অঞ্চল এবং সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ছোট বড় ২ শতাধিক বিল নিয়ে হাকালুকি।

অনেকেই ভিটা ছাড়া: সিলেটের গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে ঝড় বৃষ্টি ও হাওর ডুবিতে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির খবর আসছে। অনেক স্থানে বাড়ি-ঘর উড়ে গেছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলার ১০ নম্বর উত্তর বাদেপাশা ইউনিয়নের মিররচক গ্রামের বিলাল মিয়ার পরিবার কয়েকদিন থেকে নিজ ভিটায় তাবু বানিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন । এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন সিলেটের বহু মানুষ।

১৩ এপ্রিল পানি উন্নয়ন বোর্ড ঘেরাও কর্মসূচি: ‘হাওর বাঁচাও, সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’ আগামী ১৩ এপ্রিল বেলা ১১টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছে।

ওসমানীনগর (সিলেট) সংবাদদাতা শিপন আহমদ জানান,

ওসমানীনগর – বালাগঞ্জে হাওরের পারে চলছে কৃষকের কান্না। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা অবিরাম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে দুই উপজেলার প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর বোরো ধান। তবে উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী দুই উপজেলার ১১হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে রয়েছে।