কুমিল্লার দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবি আ.লীগের বৈঠকে

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাট্টা হয়ে লড়েনি বলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে জানিয়েছেন নির্বাচনে প্রচার চালিয়ে আসা দলের নেতারা। তারা জানান, সেখানে দলের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা আফজল খানের সঙ্গে কেবল স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের দ্বন্দ্বই এই হারের পেছনে দায়ী নয়। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং রেলমন্ত্রী মজিবুল হকের ভূমিকাও ছিল নেতিবাচক। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

রবিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক হয় সম্পাদকমণ্ডলীর নেতাদের। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতিতে নেতারা তাদের পর্যবেক্ষণ এবং কুমিল্লা ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। নেতারা বলেন, যারা নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে ভবিষ্যতে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার দুঃসাহস দেখাবে অন্যরাও। তাই শৃঙ্খলা অমান্যকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার আলোচিত এই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর কাছে ১১ হাজার ৮৫ ভোটে হেরে যান নৌকার প্রার্থী সীমা। সীমার পক্ষে যেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে সে জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় কুমিল্লায় দিয়ে সময় দিয়েছেন। সেখানকার বিবদমান বিভিন্ন উপদল কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের দিন এটা প্রকাশ পায় যে, সবাই আসলে একাট্টা ছিলেন না, কেউ কেউ সীমার বিরোধিতাও করেছেন।

সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বলেন, বৈঠকে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কুমিল্লা নির্বাচনে যারা দলের বিরুদ্ধে কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় যেসব নেতারা প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছেণ, নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। হারের পেছনে কারা দায়ী তা প্রতিবেদন তুলে ধরবেন। আগামী ১২ এপ্রিলের দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আপনাদের প্রতিবেদন ও সুপারিশগুলো দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরা হবে এবং কুমিল্লা নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দাবি করা হবে।’

বৈঠকে কুমিল্লা নির্বাচনে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম প্রথমে কুমিল্লা নির্বাচনে স্থানীয় যেসব নেতা অসহযোগিতা করেছেন তাদের নাম উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও সীমার বাবা আফজল খানের দ্বন্দ্ব আছে। আর সেটা ধরে নিয়েই আমরা প্রচারণা চালিয়ে যাই। এর অংশ হিসাবে বাহার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আমরা প্রত্যাশিত ফল পেয়েছি। কিন্তু কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সভাপতি সরকারের মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল পাইনি। অথচ তিনি আমাদের জানিয়েছেন, তার নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে অন্তত ৫০ হাজার ভোট নৌকা পাবে।’

শামীম বলেন, ‘৫০ হাজার নয় ২০ হাজার্ ভোট তিনি নিশ্চিত করতে পারলেও আমাদের বিজয় নিশ্চিত ছিল।’ শামীম বলেন, নির্বাচনের পরেও তার ভূমিকা সন্দেহজনক। মোস্তফা কামাল ওই অঞ্চলের একজন দায়িত্বশীল নেতা হয়েও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন।’

সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় শামীমের প্রতিবেদন দেয়ার পর নেতারা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক ও রেল মন্ত্রী মুজিবুল হকের ভূমিকা নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। সভায় ওই সব নেতারা দুই মন্ত্রী লোটাস কামাল, মুজিবুল হক ও আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলেন। শামীমের বক্তব্যের পর সভায় সম্পাদকমণ্ডলীর সব নেতাই শাস্তির পক্ষে বক্তব্য রাখেন।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, ‘আমি একজন মন্ত্রী, নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী আমি প্রচারণায় অংশ নিতে পারিনি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারি না।’

বৈঠকে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর নেতারা বলেন, রংপুরসহ সামনে আরও পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন রয়েছে। এখনি শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে ওইসব নির্বাচনে প্রচারণায় কেন্দ্রীয় কোন নেতা যাবে না। তাছাড়া ওই সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে হারতে হবে।

জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘কুমিল্লা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের যারা কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। প্রায় সকল নেতাই কুমিল্লার স্থানীয় নেতাদের শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ করেছেন। আগামী ১২ এপ্রিলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ ইস্যূতে বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বৈঠকে কুমিল্লার নির্বাচনে পরাজয়ের কারণগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। সেখানে হারের বিষয়ে কারা জড়িত ছিল সেসব ব্যাপারেও আলোচনা উঠেছে।’

ঢাকাটাইমস

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর