চৈত্রের দাবদাহ নেই। তবে আছে অপ্রত্যাশিত কালবৈশাখির ঘনঘটা। সিলেট বিভাগের চার জেলার আকাশে প্রায় সব সময়ই আছে কালো মেঘের ঘনঘটা। দমকা ঝড়ের সঙ্গে থেমে থেমে নামছে বৃষ্টি। কখনো তা রূপ নিচ্ছে ভারী বর্ষণে। প্রকৃতির এই বৈরিতার খড়গ নেমেছে কৃষকের ওপর। সেই সঙ্গে আছে সীমান্তের ওপর থেকে নেমে আসা বানের পানির ঢল।
এমনিতেই এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ,পাহাড়ি ঢল আর পোকা মাকড়ের আক্রমণের শঙ্কায় ছিলেন সিলেট বিভাগের কৃষকরা। তাদের আগাম সেই আশঙ্কাই এবার সত্য হলো বোরো ঘরে তোলার মাত্র মাস খানেক আগেই। ফলে জলের তলে চলে গেলো কৃষকের স্বপ্নের ফসল বোরো ধান খেত।
বুধবার (২৯ মার্চ) থেকে সিলেটে মুষলধারে কখনো থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উজানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হওয়াতে পানি বেড়েছে সিলেটের নদী ও হাওরগুলোতেও। তারই প্রভাবে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) রাত থেকে উজানের ঢল নামতে শুরু করে সীমান্তের ওপার থেকে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, সিলেটের সুরমা কুশিয়ারা ও মৌলভীবাজারের জুড়ি ও মনু নদীতে উজানের ঢলে পানি বেড়েছে। সেই সঙ্গে হাকালুকি হাওরসহ অন্যান্য হাওরে অতিরিক্ত পানি বাড়ায় সিলেট বিভাগের নিম্নাঞ্চলের বোরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এরই মধ্যে সিলেটের হাকালুকি হাওর, গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন হাওর, গোলাপগঞ্জের হাওর এবং সুনামগঞ্জ জেলাসহ বিভাগের বিভিন্ন হাওর ও নিম্নাঞ্চল উজানের ঢলে প্লাবিত হয়েছে।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার হাকালুকি হাওর সংলগ্ন ঘিলাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ বাবুল বলেন, দু’দিনের বৃষ্টিপাতে হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিলে পানি ঢুকেছে। এতে হাজার হাজার কৃষকের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে কি পরিমাণ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তা এখনো নিরুপণ করা যায়নি।
এদিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান লেবু বলেন,গত দু’দিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। এরই মধ্যে তামাবিল-জাফলং-সিলেট সড়ক তলাতে শুরু করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের উপ পরিচালক ড. মামুনুর রশিদ বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রাথমিক তথ্য মতে,সিলেট জেলার ১ হাজার ১৯৩ হেক্টর, সুনামগঞ্জের ৬৯৫ ও মৌলভীবাজারের ২০ হেক্টর বোরো ধানের জমি পানির নীচে তলিয়ে গেছে।
জলের তলে কৃষকের স্বপ্ন- ছবি: বাংলানিউজ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে তিনি জানান, গত বছর মার্চে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। অথচ এ বছর এই সময়ের মধ্যেই ৫শ‘ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যদি বৃষ্টির পানি দ্রুত সরে যায়, তবে কৃষকরা কম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আর বৃষ্টিপাত ও ঢল অব্যাহত থাকলে কৃষকরা সবই হারাবেন।
এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার বলেন, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার ‘ফ্লাশ ফ্লাড’ বা পাহাড়ি ঢলের বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খোঁজ নিতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী পানি প্রবাহ এখনও বিপদ সীমার নীচে রয়েছে।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগে বোরো খেত করেছেন এমন কৃষকের সংখ্যা ১১ লাখ ৮১ হাজার ১১৩ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৩ লাখ ২৮ হাজার ৬৪ জন, মৌলভীবাজারে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৮৯ জন, হবিগঞ্জ ২লাখ ৮৫ হাজার ২২৫ জন এবং সুনামগঞ্জে ৩লাখ ২০ হাজার ৮৪৫ জন।
এবার সিলেটের চার জেলায় ৪লাখ ৫৬ হাজার ৭১৪ হেক্টর জমিতে বোরো লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ৭৬ হাজার ৮৩৩ হেক্টর, মৌলভীবাজারে ৫০ হাজার ৪৬৪ হেক্টর, হবিগঞ্জে এক লাখ ৩৬ হাজার ৬শ’ হেক্টর, সুনামগঞ্জ ২ লাখ ১৫ হাজার ৮১৭ হেক্টর জমিতে বোরো ক্ষেত করা হয়।