আগামী ২রা এপ্রিল রোববার থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। তত্ত্বীয় পরীক্ষা চলবে ১৫ই মে পর্যন্ত। ১৬ থেকে ২৫শে মে’র মধ্যে হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা। প্রতি বছর পরীক্ষার্থী বাড়লেও এবার গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থী কমছে ৩৪ হাজার ৯৪২জন। আর ২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিবন্ধন করেও এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭জন। আর পরীক্ষাকে প্রশ্নফাঁস মুক্ত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রশাসন। কেন্দ্র আকস্মিক পরিদর্শন ছাড়াও ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াকে রাখা হবে কঠোর নজরদারিতে। প্রশ্নফাঁস করে এরকম কয়েকটি গ্রুপ ছাড়াও দুটি সক্রিয় গ্রুপকে রাখা হবে কঠোর নজরদারিতে। এ ছাড়াও এসব গ্রুপের ফলোয়ার প্রায় ২৪ হাজার ব্যক্তি থাকবে এই স্পেশাল নজরধারির আওতায়। গতকাল আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁসের ব্যাপারে আমরা প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। কোনো অবস্থায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বিশেষ করে শিক্ষকদের মধ্যে কেউ যদি এ ধরনের গর্বিত কাজে লিপ্ত হন, তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর প্রশাসন এবার সর্বোচ্চ সর্তক থাকবে। শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, সচিবালয়ে বিভাগীয় সম্মেলনে এই বিষয় আমি ব্যক্তিগতভাবে তুলে ধরেছি। তারাও প্রশাসনকে প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিবেন।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের হলে প্রশ্ন সমাধান করাসহ নানা ধরনের গর্হিত কাজ থেকে দূরে থাকার অনুরোধ করেছি। এজন্য আমাদের পক্ষ থেকে হলের শিক্ষকদের মোবাইল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর হল সচিব ছবি উঠানো যায় না এ ধরনের একটি মোবাইল সঙ্গে রাখতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষা তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এবার এইচএসসির পরীক্ষায় ২ হাজার ৪৯৭টি কেন্দ্রে ৮ হাজার ৮৬৪টি প্রতিষ্ঠানের আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে ৯ লাখ ৮২ হাজার ৭৮৩ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিমে ৯৯ হাজার ৩২০ জন, কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি বিএম-এ ৯৬ হাজার ৯১৪ জন এবং ডিআইবিএসে ৪ হাজার ৬৬৯ জন পরীক্ষা দেবেন। পরীক্ষার্থী কমলেও গতবারের চেয়ে এবার ৩৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৪৫টি পরীক্ষাকেন্দ্র বেড়েছে। এবার মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬ লাখ ৩৫ হাজার ৬৯৭ জন ছাত্র এবং ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৯৮৯ জন ছাত্রী। মন্ত্রী জানান, ঢাকার বাইরে এবার বিদেশের সাতটি কেন্দ্রে ২৭১ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবে, এর মধ্যে ১২৯ জন ছাত্র এবং ১৪২ জন ছাত্রী। এবার ২৬টি বিষয়ের ৫০টি পত্রের পরীক্ষা সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে। গত বছর ১৯টি বিষয়ের ৩৬টি পত্রের পরীক্ষা সৃজনশীল পদ্ধতিতে হয়। এইচএসসিতে ২০১২ সালে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নে হয়। ২০১৩ সালে ১৩টি বিষয়ের ২৫টি পত্রের পরীক্ষা সৃজনশীল পদ্ধতিতে হয়েছিল। নাহিদ বলেন, পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করতে হবে। প্রথমে বহুনির্বাচনী ও পরে সৃজনশীল/রচনামূলক (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা হবে। উভয় পরীক্ষার মধ্যে কোনো ব্যবধান থাকবে না। এবারো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবেন। আর অটিস্টিকসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা পাবেন অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময়। এ ধরনের শিক্ষার্থীরা অভিভাবক, শিক্ষক বা সাহায্যকারী নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
যে কারণে পরীক্ষার্থী কমেছে: ২০১৫ সালে এসএসসিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়া এবং ২০১৫ সালে যশোর বোর্ডে ইংরেজিতে ফল বিপর্যয়ের পর অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমে যাওয়ায় এইচএসসিতে এবার মোট পরীক্ষার্থী কমেছে বলে বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০১৪ সালের এসএসসিতে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৩৩১ জন পাস করে। আর ২০১৫ সালে পাস করেছিল ১২ লাখ ৮২ হাজার ৬১৮ জন। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫ সালে এসএসসিতে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী কমে ২০ হাজার ৭১৩ জন। ফলে ওইবার ২০ হাজার ৭১৩ জন কম শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হয়। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে যশোর বোর্ডে ইংরেজিতে ফল বিপর্যয় হলে এই বোর্ডে সার্বিক পাসের হার ৪৬ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৬ সালে পাসের হার দাঁড়ায় ৮৬ শতাংশ। ফলে যশোর বোর্ডে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৭৮২ জন কমে যায়। এসএসসিতে পাসজনিত কারণে এবারের এইচএসসিতে ২০ হাজার ৬১৩ জন এবং অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কমায় আরো ২৫ হাজার ৭৮৩ জন পরীক্ষার্থী কমেছে বলে জানান তিনি। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩২ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করলেও এদের মধ্য থেকে নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ১৪৫ জন এইচএসসিতে অংশ নেবে। এবার অনিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৫৪ জন। এর বাইরে এবার ৩ হাজার ২৬২ জন প্রাইভেট এবং ৬ হাজার ২৫ জন মানউন্নয়ন পরীক্ষার্থী রয়েছে।
দুই বছরে ঝরে পড়লো আড়াই লাখ শিক্ষার্থী: ২০১৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্র্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেও দুই লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ জন শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ না নেয়াকে ঝরে পড়া হিসেবেই দেখছেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য দুই বছর আগে একাদশ শ্রেণীতে নিবন্ধন করে ১১লাখ ৭৯ হাজার ৭৩২ জন। তাদের মধ্যে ২০১৭ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ১৪৫ জন। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানের ঝরে পড়লো ২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ফরম পূরণ করলেও অসংখ্য পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয় না। পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার সংখ্যা প্রতি বছরই বেড়ে চলছে। নিবন্ধন করেও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সবাই পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পারে না। নিবন্ধন করে টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে আসতে হয়, টেস্টেও অনেকে বাদ পড়ে। কিছু শিক্ষার্থী চাকরি বা পড়াশোনার জন্য বিদেশে যায়। নানা কারণে ড্রপ আউট হয়, কেউ যাতে ঝরে না পড়ে সে বিষয়ে আমরা জোর দেব।
সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ছাড়াও অন্যান্য বোর্ডের চেয়ারম্যান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ শিরোনাম
দুই বছরে ঝরে পড়লো আড়াই লাখ শিক্ষার্থী
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ০৪:৩১:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০১৭
- ২৬০ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ