ঢাকা ০২:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঋণের টাকায় কেনা হচ্ছে ৬ জাহাজ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৬:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুলাই ২০১৫
  • ৬৪৪ বার

চীন থেকে ঋণ নিয়ে ছয়টি জাহাজ কিনছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি নতুন প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার এবং তিনটি নতুন বাল্ক ক্যারিয়ার।

এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

জাহাজগুলো কিনতে ব্যয় হবে এক হাজার ৮৪৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। মোট ব্যয়ের মধ্যে এক হাজার ৪৪৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা দেবে চীন এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৯৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান এ বিষয়ে জানান, পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণ ও বিএসসিকে অধিকতর লাভজনককরণ, দেশের জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়তা প্রদান, দেশের শিপিং সেক্টরে অবকাঠামো উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে। এ সব বিবেচনার জন্য প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

চীনের ঋণ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, চীনা ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট করর্পোরেশন (সিএমসি) এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মধ্যে কমারশিয়াল কন্ট্রাক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইআরডি কমারশিয়াল এগ্রিমেন্ট, ফেসিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট এবং অর্ডিট ডকুমেন্ট মূল্যায়নের জন্য চীনা এক্সিম ব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছে।

চীনা এক্সিম ব্যাংক থেকে রিপোর্ট প্রাপ্তির পর প্রথমে ফ্রেমওর্য়াক এগ্রিমেন্ট এবং পরবর্তীতে ফিন্যান্সিয়াল এগ্রিমেন্ট সম্পাদন করা হবে।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। আশির দশকের শুরুতে বিএসসির বহরে ২৬টি জাহাজ বিদ্যমান ছিল। বর্তমানে বিএসসি বহরে ৮টি জাহাজ রয়েছে। এদের ১টি কন্টেইনার জাহাজ, ২টি লাইটারেজ ট্যাংকার ও ৫টি বহুমুখী পণ্যবাহী জাহাজ। এদের গড় বয়স ৩০ বছরের বেশি। এসব জাহাজের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। ২৩ বছর যাবৎ বিএসসি কোনো জাহাজ সংগ্রহ করতে পারেনি। এছাড়া অত্যধিক পুরনো মডেলের এ সব জাহাজ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা যথা- পোর্ট স্ট্রেট কন্ট্রোল (পিএসসি) ইন্টারন্যাশনাল সেফটি ম্যানেজমেন্ট (আইএসএম), ইন্টান্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেটিও (আইএমও) ইত্যাদি জারিকৃত বিভিন্ন বিধি-নিষেধ প্রতিপালন ও পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিএসসির বাণিজ্যিক পরিধি ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক শিপিং ট্রেডে অস্তিত্ব রক্ষার্থে বিএসসি বহরকে আধুনিক ও ভারসাম্যমূলক করা প্রয়োজন।

বর্তমানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন রিফাইন্ড প্রোডাক্ট যথা-ডিজেল, কেরোসিন, জেট ফুয়েল, পেট্রোল ইত্যাদি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কুয়েত ও অন্যান্য তেল রফতানিকারক দেশ থেকে সি এ্যান্ড এফ ভিত্তিতে আমদানি করে। অদুর ভবিষ্যতে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য উপযোগী প্রোডাক্ট ক্যারিয়ার ক্রয় করা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক শিপিং ট্রেডে বাল্ক কার্গো পরিবহনের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪০০ থেকে ৫০০ লাখ মেট্রিক টন বাল্ক কার্গো প্রতি বছর আমদানি হয়। এর মধ্যে খাদ্যশস্য, সুগার, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার ইত্যাদি স্থায়ী আমদানি পণ্য হিসাবে বিবেচিত। এ সব পণ্যের অধিকাংশ বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজে পরিবহন হয়ে থাকে। সম্প্রতি সরকার বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ জন্য প্রচুর পরিমাণ কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করার প্রয়োজন হবে। বিএসসি জাতীয় পতাকাবাহী সরকারী সংস্থা হিসেবে বিদেশ থেকে কয়লা পরিবহনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য উপযোগী বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ ক্রয় করা প্রয়োজন।

বর্তমানে ভাড়া করা জাহাজের মাধ্যমে রিফাইন্ড প্রোডাক্ট ও বাল্ক কার্গো পরিবহন করতে গিয়ে ভাড়া বাবদ সরকারকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। বিএসসি প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রোডাক্ট ক্যারিয়ার ও বাল্ক ক্যারিয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে এ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ঋণের টাকায় কেনা হচ্ছে ৬ জাহাজ

আপডেট টাইম : ০৪:৪৬:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ জুলাই ২০১৫

চীন থেকে ঋণ নিয়ে ছয়টি জাহাজ কিনছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি নতুন প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার এবং তিনটি নতুন বাল্ক ক্যারিয়ার।

এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

জাহাজগুলো কিনতে ব্যয় হবে এক হাজার ৮৪৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। মোট ব্যয়ের মধ্যে এক হাজার ৪৪৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা দেবে চীন এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৯৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান এ বিষয়ে জানান, পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণ ও বিএসসিকে অধিকতর লাভজনককরণ, দেশের জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়তা প্রদান, দেশের শিপিং সেক্টরে অবকাঠামো উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে। এ সব বিবেচনার জন্য প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

চীনের ঋণ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, চীনা ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট করর্পোরেশন (সিএমসি) এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মধ্যে কমারশিয়াল কন্ট্রাক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইআরডি কমারশিয়াল এগ্রিমেন্ট, ফেসিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট এবং অর্ডিট ডকুমেন্ট মূল্যায়নের জন্য চীনা এক্সিম ব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছে।

চীনা এক্সিম ব্যাংক থেকে রিপোর্ট প্রাপ্তির পর প্রথমে ফ্রেমওর্য়াক এগ্রিমেন্ট এবং পরবর্তীতে ফিন্যান্সিয়াল এগ্রিমেন্ট সম্পাদন করা হবে।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৭২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। আশির দশকের শুরুতে বিএসসির বহরে ২৬টি জাহাজ বিদ্যমান ছিল। বর্তমানে বিএসসি বহরে ৮টি জাহাজ রয়েছে। এদের ১টি কন্টেইনার জাহাজ, ২টি লাইটারেজ ট্যাংকার ও ৫টি বহুমুখী পণ্যবাহী জাহাজ। এদের গড় বয়স ৩০ বছরের বেশি। এসব জাহাজের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। ২৩ বছর যাবৎ বিএসসি কোনো জাহাজ সংগ্রহ করতে পারেনি। এছাড়া অত্যধিক পুরনো মডেলের এ সব জাহাজ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা যথা- পোর্ট স্ট্রেট কন্ট্রোল (পিএসসি) ইন্টারন্যাশনাল সেফটি ম্যানেজমেন্ট (আইএসএম), ইন্টান্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেটিও (আইএমও) ইত্যাদি জারিকৃত বিভিন্ন বিধি-নিষেধ প্রতিপালন ও পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিএসসির বাণিজ্যিক পরিধি ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক শিপিং ট্রেডে অস্তিত্ব রক্ষার্থে বিএসসি বহরকে আধুনিক ও ভারসাম্যমূলক করা প্রয়োজন।

বর্তমানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন রিফাইন্ড প্রোডাক্ট যথা-ডিজেল, কেরোসিন, জেট ফুয়েল, পেট্রোল ইত্যাদি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কুয়েত ও অন্যান্য তেল রফতানিকারক দেশ থেকে সি এ্যান্ড এফ ভিত্তিতে আমদানি করে। অদুর ভবিষ্যতে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য উপযোগী প্রোডাক্ট ক্যারিয়ার ক্রয় করা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক শিপিং ট্রেডে বাল্ক কার্গো পরিবহনের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪০০ থেকে ৫০০ লাখ মেট্রিক টন বাল্ক কার্গো প্রতি বছর আমদানি হয়। এর মধ্যে খাদ্যশস্য, সুগার, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার ইত্যাদি স্থায়ী আমদানি পণ্য হিসাবে বিবেচিত। এ সব পণ্যের অধিকাংশ বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজে পরিবহন হয়ে থাকে। সম্প্রতি সরকার বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ জন্য প্রচুর পরিমাণ কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করার প্রয়োজন হবে। বিএসসি জাতীয় পতাকাবাহী সরকারী সংস্থা হিসেবে বিদেশ থেকে কয়লা পরিবহনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্য উপযোগী বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ ক্রয় করা প্রয়োজন।

বর্তমানে ভাড়া করা জাহাজের মাধ্যমে রিফাইন্ড প্রোডাক্ট ও বাল্ক কার্গো পরিবহন করতে গিয়ে ভাড়া বাবদ সরকারকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়। বিএসসি প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রোডাক্ট ক্যারিয়ার ও বাল্ক ক্যারিয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে এ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।