সিলেটে এক প্রাণবন্ত আড্ডায় প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিস্ট ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব পীর হাবিবুর রহমান বলেছেন, লাখো শহীদের বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের স্থান নেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের উত্তরাধিকারীত্ব বহন করলে দুর্নীতি, আদর্শহীন রাজনীতি থেকে দেশকে মূল্যবোধের ঐতিহ্যের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন একটি অসাম্প্রদায়িক গনতান্ত্রিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।‘লাখো শহীদের দেশে জঙ্গিবাদের স্থান নেই’শনিবার (২৫ মার্চ) সিলেট নগরীর মুসলিম সাহিত্য সংসদে সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন রচিত স্মৃতিগদ্য ‘স্মৃতির পালে লাগলো হাওয়া’ বই নিয়ে আড্ডায় তিনি এসব কথা বলেন। চৈতন্য প্রকাশনী সাখাওয়াত হোসেনের এই বইটি প্রকাশ করেছে।‘লাখো শহীদের দেশে জঙ্গিবাদের স্থান নেই’
পীর হাবিবুর রহমান বলেন সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। এ কারণে দেশ পিছিয়ে পড়ছে। বঙ্গবন্ধু জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান যে সুখী ও সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন তা বাঙালি জাতি এখনো পায়নি। দেশের মানুষ আজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, দেশে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে না। গণতন্ত্র রক্ষায় দেশের রাজনীতিকদের আরো জনবান্ধব হতে হবে। উদার মানসিকতা নিয়ে তাদেরকে রাজনীতি করতে হবে। ‘রাজনীতি অর্থলাভের পথ’- এই ধারণা থেকে বের হযে আসতে হবে।
এই আড্ডায় যোগ দেওয়ার জন্যই তিনি সুদূর ঢাকা থেকে সিলেটে পৌঁছেন। বই নিয়ে এমন অনুষ্ঠান সিলেটে সচরাচর চোখে পড়ে না। কেমুসাস বইমেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই আড্ডায় তাই সাহিত্যামোদীদের ভীড় জমে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সিলেটে তখন ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করলেও আড্ডায় ঠিকই সাহিত্যমোদীরা যোগ দেন।পীর হাবিব (5)
শনিবার রাত ৮ টায় শুরু হওয়া এ প্রাণবন্ত আড্ডায় সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যাপক (অব:) আব্দুর রশিদ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দেওয়ান এ এইচ মাহমুদ রাজা চৌধুরী, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ সিলেটে উপ-পরিচালক ডা. লুৎফুন্নাহার জেসমিন, এফপিসিএসটি-কিউএটি সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক সুপারভাইজার, ডা. মোসা. উমর গুল আজাদ, সিলেট এমসি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রজত কান্তি সোম, কর্নেল (অব.) আলি আহমদ, সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেড বিয়ানীবাজার শাখার ব্যবস্থাপক মনজুর মোর্শেদ।
সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের স্মৃতিগদ্য নিয়ে প্রাণবন্ত আড্ডা
বই মেলার সুনামগঞ্জের কৃতি সন্তান পীর হাবিবুর রহমানের বক্তব্য সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। তার বক্তব্যে উঠে আসে ২৫শে মার্চ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল হামিদখান ভাসানী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু, নেলসন মেন্ডেলা, মাহাথীর মোহাম্মদ, ফিদেল ক্যাস্ত্রোসহ বিখ্যাত মনীষীদের জীবনযুদ্ধে সফলতার কাহিনী। বাদ যায়নি হযরত শাহজালাল ও শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর কথাও।সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের স্মৃতিগদ্য নিয়ে প্রাণবন্ত আড্ডা
তাছাড়া তিনি সুনামগঞ্জের সকল সূর্য সন্তানদের সফলতার কথা উল্লেখ করেছেন। যারা বৃহত্তর সিলেটকে সফলতার স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি যেন সাহিত্য ও তথ্যের ভান্ডার। উনার ভাষাগত ব্যবহার, রসবোধ, তেজী ও ঝাঁঝালো বক্তব্য উপস্থিত সবাইকে নস্টালজিক করে দেয়। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের এ যুগে সবার মনে একটু প্রশান্তি এনে দেয়।
টাকা দিয়ে মানু্ষ যে সুখ কিনতে চায় তা যেন উনার বক্তব্যের মধ্যে নিহিত ছিল। বিনা পয়সায় সবাই এ সুখ এই আড্ডা থেকে পেয়েছে। তিনি তরুণদেরও অনুপ্রাণিত করেছেন। যাতে তারা অসামাজিক কর্মকাণ্ড ও নেশাগ্রস্ত জীবন থেকে ফিরে এসে বইয়ের জগতের সাথে সম্পৃক্ত হয়। সৃষ্টিশীল কাজে জড়িত হয়। সুষ্ঠ ধারার ছাত্র রাজনীতি তথা ডাকসু নির্বাচনের কথা বলেছেন।‘লাখো শহীদের দেশে জঙ্গিবাদের স্থান নেই’
বর্তমান রাজনীতির ভাল দিক ও খারাপ দিক নিয়ে কথা বলেছেন ও তাদের সমালোচনা করেছেন। সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলার দুঃসাহসিক প্রয়াস সত্যিই প্রসংসনীয়।
অন্যদিকে সাবলীল, ভরা কণ্ঠ ও স্পষ্ট ভাষার অধিকারী উজ্জ্বল চৌধুরীও কম ছিলেন না। তার বক্তব্য ও সবাই প্রাণভরে শুনেছেন।