ঢাকা ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪৬ বছর পর মিলেছে বধ্যভূমির সন্ধান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:২০:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ মার্চ ২০১৭
  • ২২৮ বার

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বাগেরহাটের চিতলমারীতে বধ্যভূমির সন্ধান মিলেছে। ৭১ সালে পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের অনেক কাহিনী উঠে এসেছে এখান থেকে। অসংখ্য নিরীহ লোককে সেদিন হত্যা করা হয়েছিল সে ইতিহাস এতদিন অনেকের কাছে অজানা ছিল। এখানে সেদিন যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের অনেকের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে গেছে, ১৯৭১ সালের বাংলা ৫ই আষাঢ় রোববার সকাল ১১টার দিকে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরা মিলে এলাকায় হামলা চালায়। বলেশ্বর নদী দিয়ে গানবোটযোগে তারা প্রবেশ করার পথে নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় গুলির আওয়াজে লোকজন প্রাণভয়ে এদিক-ওদিক পালাতে থাকে। আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আশ্রয় নিতে আসা লোকজন এবং অনেক গ্রামবাসী উপজেলার চরবানিয়ারী ইউনিয়নের খলিশাখালী ও পূর্বখড়মখালী গ্রামের একটি মাঠের মধ্যে হোগলা ও নলবনে লুকিয়ে থাকার জন্য আশ্রয় নেয়। এ সময় পাকবাহিনী তাদের দেখতে পেয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য নিরীহ লোকজনকে তারা হত্যা করে। যাদের মধ্যে নিহত অনেকের বাড়ি পিরোজপুর, নাজিরপুর, উজিরপুর, ও কচুয়াসহ আশপাশের এলাকায় বলে জানা গেছে।
উপজেলার পূর্ব খড়মখালী গ্রামের প্রবীণ গৌর চন্দ্র মজুমদার সেদিনের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথা তুলে ধরে জানান, ৭১ সালের ৫ই আষাঢ় রোববার ছিল দিনটি। সেদিন বলেশ্বর নদী দিয়ে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরা আক্রমণ চালায়। গুলির শব্দে চারদিক কেঁপে ওঠে। অনেকে খলিশাখালী ও পূর্বখড়মখালী গ্রামের একটি মাঠের মধ্যে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। এ সময় পাকবাহিনী তাদের দেখে ফেলায় গুলি চালিয়ে খড়মখালী গ্রামের বিমল কান্তি হীরা, ভদ্র কান্তি হীরা, রাজদেব হীরা, যোগেন্দ্র নাথ মজুমদার, মহেন্দ্র নাথ মণ্ডল, আদিত্য মজুমদার, নীল কমল মণ্ডল, জিতেন মজুমদার, খগেন মণ্ডল (খোকা), অমীয় চৌকিদারের ভাইসহ আশপাশের এলাকা থেকে আশ্রয় নেওয়া বহু লোককে সেখানে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও এ স্থানটি এতদিনেও সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া এলাকার অনেকে জানায়, এ মাঠের জমিতে মাটি খুঁড়ে অনেক মানুষের হাড় পাওয়া গেছে।
চরবানিয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল জানান, সেদিন যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের অধিকাংশ লোকজন আশপাশের জেলা থেকে এখানে আশ্রয় নিতে এসেছিল। তাদের অনেকের নাম পরিচয় জানা যায়নি। তবে বহুলোক এখানে প্রাণ হারিয়েছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার মো. আবু তালেব শেখ জানান, ওইদিন বাগেরহাট থেকে কুখ্যাত রাজাকার রজ্জব আলী ফকিরের নেতৃত্বে একটি পাকবাহিনী এলাকায় প্রবেশ করে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ গণহত্যা চালায়। এছাড়া বলেশ্বর নদী থেকে গানবোটে শেল নিক্ষেপ করার পাশাপাশি রাইফেলের গুলি চালাতে চালাতে পাকবাহিনী এলাকায় ঢুকে গণহত্যা চালায়। খলিশাখালি গ্রামের বৃদ্ধা প্রমিলা মন্ডল জানান, তিনি হত্যাযজ্ঞের সেই ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছেন। যুদ্ধ চলাকালীন অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি রান্নাবান্না করে দেওয়াসহ নানাভাবে সহায়তা করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু সাঈদ জানান, স্থানটি যথাযথভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া যাঁরা নিহত হয়েছেন তাদের খোঁজ নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

৪৬ বছর পর মিলেছে বধ্যভূমির সন্ধান

আপডেট টাইম : ১১:২০:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ মার্চ ২০১৭

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বাগেরহাটের চিতলমারীতে বধ্যভূমির সন্ধান মিলেছে। ৭১ সালে পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের অনেক কাহিনী উঠে এসেছে এখান থেকে। অসংখ্য নিরীহ লোককে সেদিন হত্যা করা হয়েছিল সে ইতিহাস এতদিন অনেকের কাছে অজানা ছিল। এখানে সেদিন যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের অনেকের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে গেছে, ১৯৭১ সালের বাংলা ৫ই আষাঢ় রোববার সকাল ১১টার দিকে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরা মিলে এলাকায় হামলা চালায়। বলেশ্বর নদী দিয়ে গানবোটযোগে তারা প্রবেশ করার পথে নির্বিচারে গুলি চালায়। এ সময় গুলির আওয়াজে লোকজন প্রাণভয়ে এদিক-ওদিক পালাতে থাকে। আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আশ্রয় নিতে আসা লোকজন এবং অনেক গ্রামবাসী উপজেলার চরবানিয়ারী ইউনিয়নের খলিশাখালী ও পূর্বখড়মখালী গ্রামের একটি মাঠের মধ্যে হোগলা ও নলবনে লুকিয়ে থাকার জন্য আশ্রয় নেয়। এ সময় পাকবাহিনী তাদের দেখতে পেয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য নিরীহ লোকজনকে তারা হত্যা করে। যাদের মধ্যে নিহত অনেকের বাড়ি পিরোজপুর, নাজিরপুর, উজিরপুর, ও কচুয়াসহ আশপাশের এলাকায় বলে জানা গেছে।
উপজেলার পূর্ব খড়মখালী গ্রামের প্রবীণ গৌর চন্দ্র মজুমদার সেদিনের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথা তুলে ধরে জানান, ৭১ সালের ৫ই আষাঢ় রোববার ছিল দিনটি। সেদিন বলেশ্বর নদী দিয়ে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরা আক্রমণ চালায়। গুলির শব্দে চারদিক কেঁপে ওঠে। অনেকে খলিশাখালী ও পূর্বখড়মখালী গ্রামের একটি মাঠের মধ্যে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। এ সময় পাকবাহিনী তাদের দেখে ফেলায় গুলি চালিয়ে খড়মখালী গ্রামের বিমল কান্তি হীরা, ভদ্র কান্তি হীরা, রাজদেব হীরা, যোগেন্দ্র নাথ মজুমদার, মহেন্দ্র নাথ মণ্ডল, আদিত্য মজুমদার, নীল কমল মণ্ডল, জিতেন মজুমদার, খগেন মণ্ডল (খোকা), অমীয় চৌকিদারের ভাইসহ আশপাশের এলাকা থেকে আশ্রয় নেওয়া বহু লোককে সেখানে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও এ স্থানটি এতদিনেও সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া এলাকার অনেকে জানায়, এ মাঠের জমিতে মাটি খুঁড়ে অনেক মানুষের হাড় পাওয়া গেছে।
চরবানিয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল জানান, সেদিন যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের অধিকাংশ লোকজন আশপাশের জেলা থেকে এখানে আশ্রয় নিতে এসেছিল। তাদের অনেকের নাম পরিচয় জানা যায়নি। তবে বহুলোক এখানে প্রাণ হারিয়েছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার মো. আবু তালেব শেখ জানান, ওইদিন বাগেরহাট থেকে কুখ্যাত রাজাকার রজ্জব আলী ফকিরের নেতৃত্বে একটি পাকবাহিনী এলাকায় প্রবেশ করে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ গণহত্যা চালায়। এছাড়া বলেশ্বর নদী থেকে গানবোটে শেল নিক্ষেপ করার পাশাপাশি রাইফেলের গুলি চালাতে চালাতে পাকবাহিনী এলাকায় ঢুকে গণহত্যা চালায়। খলিশাখালি গ্রামের বৃদ্ধা প্রমিলা মন্ডল জানান, তিনি হত্যাযজ্ঞের সেই ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছেন। যুদ্ধ চলাকালীন অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি রান্নাবান্না করে দেওয়াসহ নানাভাবে সহায়তা করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু সাঈদ জানান, স্থানটি যথাযথভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া যাঁরা নিহত হয়েছেন তাদের খোঁজ নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।