ঢাকা ০১:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চোখ জুড়ানো গোলাপ রাজ্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:৫৪:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০১৭
  • ৪৬৭ বার

ঢাকার সাভারের একটি ইউনিয়নের নাম বিরুলিয়া। ইউনিয়নটির কয়েকটি গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটলে আপনার মন অসম্ভব ভালোলাগায় ছুঁয়ে যাবে। কারণ গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে অনেক গোলাপ বাগান। রাজধানীর মিরপুরের তুরাগ নদ পার হলেই ইউনিয়নটির অবস্থান। এ যেন গোলাপের রাজ্য। চোখের দৃষ্টি যতদূর যায় ঝিরিঝিরি বাতাসে দুলছে লাল টুকটুকে পাপড়ি মেলানো গোলাপ। এখানে কেউ বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ করেছেন, কেউবা নিতান্ত শখ করে চাষ করছেন গোলাপ। জানা যায়, ১৯৯০ সালে ঢাকার কয়েক যুবক অন্যের জমি লিজ নিয়ে এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ শুরু করেন। ওই যুবকদের সফলতা দেখে স্থানীয়রাও ধীরে ধীরে গোলাপ চাষ শুরু করেন। কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সাভার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৫০ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বিরুলিয়ার মোস্তাপাড়া, সামাইর, শ্যামপুর এলাকায়। দুই শতাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে এই ফুলের চাষ করে আসছেন। চাষি সবুর বলেন, গোলাপ চাষ একটি নিশ্চিত লাভের ব্যবসা। একবার চারা রোপণ করলে ২৫ বছর নিশ্চিন্তে ফলন পাওয়া যায়। একদিন বাজারে গোলাপের দাম কম পেলেও পরে তা পুষিয়ে নেওয়া যায়। বাড়ির কাছে সৃষ্ট ফুলের বাজারগুলোতে পাইকাররা এসে ফুল কিনে নিয়ে যায়। আলাউদ্দিন নামে এক ফুলচাষি বলেন, এই এলাকায় মেরিন্ডা, হাজারি, লিঙ্কন, পাপা মিলন, বধূয়া বা হলুদ ও সাদা গোলাপের চাষ হয়। তবে বাজারে চাহিদা বেশি লাল মেরিন্ডার। এই গ্রামগুলোর ৯০ শতাংশ মানুষেরই প্রধান জীবিকা গোলাপ ফুল চাষ। সাভার কলেজের শিক্ষার্থী আইয়ুব রানা জানান, বাবার সঙ্গে তিনি এই ব্যবসার হাল ধরেছেন। ১১০ শতাংশ জায়গায় গোলাপের চাষ করেছেন। তাদের চাষ করা গোলাপ ঢাকা, চট্টগ্রাম এমনকি দেশের বাইরেও যাচ্ছে। বিজয় দিবস, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, পয়লা বৈশাখ, খ্রিস্টীয় নববর্ষসহ বিশেষ দিনে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দামও পাওয়া যায় ভালো। সন্ধ্যার পর জমে ওঠে এখানকার মোস্তাপাড়া ও শ্যামপুর ফুলবাজার। যেখানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ফুলের পাইকাররা এসে ফুল কিনে নিয়ে যায়। মোস্তাপাড়া ফুলবাজারে কথা হয় টাঙ্গাইলের ফুল ব্যবসায়ী মজিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোক্তাদের কাছে এই এলাকার গোলাপের চাহিদা অনেক। বিরুলিয়া ফুলচাষি সমিতির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসির জানান, প্রতিদিন বিরুলিয়ার বাজারগুলোতে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। যদি সরকার ফুল রফতানিতে আরও ভূমিকা রাখত তবে এর চেয়ে বেশি গোলাপ বিক্রি হতো বাজারগুলোতে। গোলাপের এই গ্রামগুলোর সৌন্দর্যের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে প্রতিদিনই ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুল প্রেমীরা ভিড় জমাচ্ছেন গ্রামের বাগানগুলোতে। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থী সম্প্রতি এখানে ঘুরতে এসেছিলেন। মাহবুবুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ফেসবুকে বিষয়টি জানার পর বন্ধুরা মিলে এসেছি। এসে যা দেখছি তা সত্যিই অবর্ণনীয়। অনেক সুন্দর। চারদিকে শুধু লাল আর লাল। সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মফিদুল ইসলাম বলেন, মাঠ ফসলের পাশাপাশি ফুল চাষেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস। ইতোমধ্যে এই চাষে যেন উদ্যোক্তা আরও বেশি লাভবান হন তার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে কৃষকদের পরিচিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া উন্নত ফলনের জন্য যা যা করণীয় সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

চোখ জুড়ানো গোলাপ রাজ্য

আপডেট টাইম : ০১:৫৪:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০১৭

ঢাকার সাভারের একটি ইউনিয়নের নাম বিরুলিয়া। ইউনিয়নটির কয়েকটি গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটলে আপনার মন অসম্ভব ভালোলাগায় ছুঁয়ে যাবে। কারণ গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে অনেক গোলাপ বাগান। রাজধানীর মিরপুরের তুরাগ নদ পার হলেই ইউনিয়নটির অবস্থান। এ যেন গোলাপের রাজ্য। চোখের দৃষ্টি যতদূর যায় ঝিরিঝিরি বাতাসে দুলছে লাল টুকটুকে পাপড়ি মেলানো গোলাপ। এখানে কেউ বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ করেছেন, কেউবা নিতান্ত শখ করে চাষ করছেন গোলাপ। জানা যায়, ১৯৯০ সালে ঢাকার কয়েক যুবক অন্যের জমি লিজ নিয়ে এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ শুরু করেন। ওই যুবকদের সফলতা দেখে স্থানীয়রাও ধীরে ধীরে গোলাপ চাষ শুরু করেন। কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সাভার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৫০ হেক্টর জমিতে গোলাপের চাষ হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বিরুলিয়ার মোস্তাপাড়া, সামাইর, শ্যামপুর এলাকায়। দুই শতাধিক চাষি বাণিজ্যিকভাবে এই ফুলের চাষ করে আসছেন। চাষি সবুর বলেন, গোলাপ চাষ একটি নিশ্চিত লাভের ব্যবসা। একবার চারা রোপণ করলে ২৫ বছর নিশ্চিন্তে ফলন পাওয়া যায়। একদিন বাজারে গোলাপের দাম কম পেলেও পরে তা পুষিয়ে নেওয়া যায়। বাড়ির কাছে সৃষ্ট ফুলের বাজারগুলোতে পাইকাররা এসে ফুল কিনে নিয়ে যায়। আলাউদ্দিন নামে এক ফুলচাষি বলেন, এই এলাকায় মেরিন্ডা, হাজারি, লিঙ্কন, পাপা মিলন, বধূয়া বা হলুদ ও সাদা গোলাপের চাষ হয়। তবে বাজারে চাহিদা বেশি লাল মেরিন্ডার। এই গ্রামগুলোর ৯০ শতাংশ মানুষেরই প্রধান জীবিকা গোলাপ ফুল চাষ। সাভার কলেজের শিক্ষার্থী আইয়ুব রানা জানান, বাবার সঙ্গে তিনি এই ব্যবসার হাল ধরেছেন। ১১০ শতাংশ জায়গায় গোলাপের চাষ করেছেন। তাদের চাষ করা গোলাপ ঢাকা, চট্টগ্রাম এমনকি দেশের বাইরেও যাচ্ছে। বিজয় দিবস, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, পয়লা বৈশাখ, খ্রিস্টীয় নববর্ষসহ বিশেষ দিনে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দামও পাওয়া যায় ভালো। সন্ধ্যার পর জমে ওঠে এখানকার মোস্তাপাড়া ও শ্যামপুর ফুলবাজার। যেখানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ফুলের পাইকাররা এসে ফুল কিনে নিয়ে যায়। মোস্তাপাড়া ফুলবাজারে কথা হয় টাঙ্গাইলের ফুল ব্যবসায়ী মজিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোক্তাদের কাছে এই এলাকার গোলাপের চাহিদা অনেক। বিরুলিয়া ফুলচাষি সমিতির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসির জানান, প্রতিদিন বিরুলিয়ার বাজারগুলোতে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। যদি সরকার ফুল রফতানিতে আরও ভূমিকা রাখত তবে এর চেয়ে বেশি গোলাপ বিক্রি হতো বাজারগুলোতে। গোলাপের এই গ্রামগুলোর সৌন্দর্যের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে প্রতিদিনই ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুল প্রেমীরা ভিড় জমাচ্ছেন গ্রামের বাগানগুলোতে। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থী সম্প্রতি এখানে ঘুরতে এসেছিলেন। মাহবুবুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ফেসবুকে বিষয়টি জানার পর বন্ধুরা মিলে এসেছি। এসে যা দেখছি তা সত্যিই অবর্ণনীয়। অনেক সুন্দর। চারদিকে শুধু লাল আর লাল। সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মফিদুল ইসলাম বলেন, মাঠ ফসলের পাশাপাশি ফুল চাষেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস। ইতোমধ্যে এই চাষে যেন উদ্যোক্তা আরও বেশি লাভবান হন তার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে কৃষকদের পরিচিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া উন্নত ফলনের জন্য যা যা করণীয় সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হবে।