কুসিক নির্বাচন: দুই শক্তিশালী প্রার্থী এত ‘গরীব’

সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচন করতে এসে যেন ‘গরীব’ হয়ে গেলেন দেশের অন্যতম প্রধান দুই দলের দুই হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও আনজুম সুলতানা সীমা। তারা দু’জনই নির্বাচন কমিশনে হিসেবে জমা দিয়ে বলেছেন পুরো নির্বাচনে মাত্র ১৫ লাখ টাকা খরচ করবেন। কিন্তু এই টাকা সম্পূর্ণ খরচ করার সামর্থ্য নেই তাদের! তাই ১৫ লাখ টাকার ব্যবস্থা করতে ভাই, স্বামী, আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ধার করতে হচ্ছে এই দুই ধনাঢ্য প্রার্থীকে!

যদিও নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই দলেরই একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই দুই প্রার্থীরই হলফনামায় দেওয়া টাকার অংকের দ্বিগুনেরও বেশি খরচ হয়ে গেছে।

বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করা মনিরুল হক সাক্কু ও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা আনজুম সুলতানা সীমা দু’জনেই নির্বাচনী ব্যয় হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন ১৫ লাখ টাকা খরচ করবেন।আর এই টাকার জন্য স্বজনদের কাছেও তাদের হাত পাততে হয়েছে।অপর প্রার্থী জাসদ (রব) এর শিরিন আক্তার হলফ নামায় জানিয়েছেন, তিনি দুই লাখ টাকা খরচ করবেন।

কুমিল্লা জেলা নির্বাচন অফিস ও কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডলের কাছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য যে হলফনামা জমা দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও ২০ দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু আসন্ন কুসিক নির্বাচনে মোট ১৫ লাখ টাকা খরচ করবেন। সীমার সঙ্গে সাক্কুর ব্যয়ের অর্থের পরিমাণ ঠিক থাকলেও খরচের তালিকায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। মনিরুল হক সাক্কু তার নির্বাচনী ১৫ লাখ টাকা খরচের জন্য নিজ আয় থেকে অর্থ নির্ধারণ করেছেন ১২ লাখ টাকা। অবশিষ্ট তিন লাখ টাকা অনুদান হিসেবে তার আইনজীবী ছোট ভাই কাইমুল হক রিংকুর কাছ থেকে নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

খরচের তালিকায় পোস্টার ১ লাখ ৮৭ হাজার, দুইটি নির্বাচনী ক্যাম্প, অফিস স্থাপন, কর্মীদের খরচ এবং কেন্দ্রীয় ক্যাম্প অফিসের খরচ ৩০ হাজার টাকা, সাক্কুর ও তার এজেন্ট-কর্মীদের যাতায়াত ৩০ হাজার টাকা, ঘরোয়া বৈঠক, সভার আয়োজন, শ্রমিক পারিশ্রমিক ও আসবাবপত্র খরচ রেখেছেন ৭৫ হাজার, ৭৫ হাজার লিফলেট ৭৫ হাজার টাকা, ৭৫ হাজার হ্যান্ডবিল ৭৫ হাজার, ১৫০ ব্যনার তৈরি ও টানানো ৬০ হাজার, ১২০টি ডিজিটাল ব্যানার তৈরি ও টানানো ৮৪ হাজার টাকা, ২৫টি পথসভা ৩১ হাজার, মাইকিং, ভাড়া ও পারিশ্রমিক ৩ লাখ ৫১ হাজার, ১০০টি ছবি ও প্রতীক খরচ ১০ হাজার, ২টি অফিসে প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজার করে ১৩ দিনে আপ্যায়ন ৪৫ হাজার টাকা, সাক্কুর ১৩৫ জন কর্মীর প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে আপ্যায়ন মোট খরচ ৪ লাখ ৫ হাজার এবং বিবিধ খরচ নির্ধারণ করেছেন ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা।

অপরদিকে, আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমার হলফনামা পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনিও নির্বাচনী ব্যয় ১৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছেন। এজন্য সীমা নির্বাচনী খরচের জন্য নিজ আয় থেকে অর্থ নির্ধারণ করছেন ৫ লাখ টাকা। অবশিষ্ট টাকা অনুদান হিসেবে মা নার্গিস সুলতানা এবং ব্যবসায়ী স্বামী নিসার উদ্দিনের নিকট থেকে ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন।

খরচের তালিকার প্রথম ভাগে ছবি বা প্রতীক তৈরিতে ৯ হাজার ৫০০, ১৪ দিন যাবৎ অফিস আপ্যায়নে ২১ হাজার, সীমার ১২০ জন কর্মীর প্রতিদিন ২০০ টাকা করে খরচ করবেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার, বিবিধ খরচ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। হলফনামায় খরচের তালিকার দ্বিতীয় অংশে ৯,০০০ পোস্টার ৩ লাখ ৫০ হাজার, দুইটি নির্বাচনী ক্যাম্প, অফিস তৈরি, শ্রমিক খরচ, কর্মীদের মোট খরচ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

কেন্দ্রীয় অফিস ও ক্যাম্প স্থাপনসহ কর্মীদের খরচ ১ লাখ ৪০ হাজার, সীমা ও তার এজেন্ট-কর্মীদের যাতায়াত খরচ ৪০ হাজার টাকা, সভা ও ঘরোয়া বৈঠকের জন্য আসবাবপত্রসহ অন্যান্য খরচ ২০ হাজার, ১ লাখ কপি লিফলেট ছাপায় ৫০ হাজার, হ্যান্ডবিল ১ লাখ ২০ হাজার, ১০০টি ডিজিটাল ব্যানার তৈরি ও টানানো খরচ ৫৭ হাজার, ২৭টি পথসভা ১৩ হাজার ৫০০ এবং মাইকিং ভাড়া ও পারিশ্রমিক বাবদ খরচ ৫০ হাজার টাকা। অন্যদিকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব) জেএসডির শিরিন আক্তার তার নির্বাচনী খরচের ব্যয় দেখিয়েছেন মাত্র দুই লাখ টাকা। তাও আবার নিজের কোনো অর্থ নেই এখানে। নির্বাচনের খরচ মেটাতে চাচা গোলাম মোস্তফার নিকট থেকে ৫০ হাজার ধার-কর্জ এবং ব্যবসায়ী বোনের জামাই শফিকুর রহমানের কাছ থেকে এক লাখ এবং তার দল জেএসডি থেকে চাঁদা হিসেবে পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা।তার খরচের হিসেবেটাও অপর দুই মেয়র প্রার্থীর তালিকার চেয়ে ছোট।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর