যেকোনো মুহুর্তে এরশাদের ১৮ দলীয় জোটের ঘোষণা

যেকোনো মুহুর্তে একক জোটের ঘোষণা দিবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টি (জাপা) ইতোমধ্যে ১৮টি দলের সঙ্গে জোট গঠনের কাজ চূড়ান্ত করে ফেলেছে বলে জানিয়েছে দলটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।

তবে নতুন ১৮ দলীয় এ জোটের মধ্যে নামসর্বস্ব ও অনিবন্ধিত দলই বেশি। চলতি সপ্তাহে জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে বলে জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য পূর্বপশ্চিমকে নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র আরো জানায়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হতে চান জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু দলের একাধিক শীর্ষ নেতার দাবি, ভোটারবিহীন দল নিয়ে করা নতুন জোট ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে না। বরং এতে আগামী নির্বাচনের ভোটের প্রস্তুতিরই বিঘ্ন ঘটবে।

জাতীয় পার্টির হাই কমান্ডের এক নেতা বলেন, জোট গঠনে বেশ অগ্রগতি হয়েছে ,তবে যাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, তারা জোটে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে। জোট হতে হবে দলের সঙ্গে দলের। দলের সঙ্গে ব্যক্তির জোট হতে পারে না। ২০-দলীয় জোট, ১৪-দলীয় জোট থেকে কারা বেরিয়ে আসছে? কোনো দল নাকি ব্যক্তি? খোঁজ নিলে দেখা যাবে, ব্যক্তিই বেরিয়ে আসছে। এসব ব্যক্তি বেরিয়ে এসে দলের নেতৃত্ব দিতে চায়। কিন্তু একটু চিন্তা করলে দেখা যাবে, যে লোকটি এক জোট থেকে বেরিয়ে নতুন জোটে ভিড়ছে, তার না আছে নিজের দল না আছে ভোট। এসব দলের সঙ্গে জোট গঠনে কতটা লাভবান হওয়া যাবে তা জানা নেই। তবে শেষ পর্যন্ত কী হয়, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে জোট গঠনে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পার্টি চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভরায়। সম্ভাব্য জোট দলের জন্য ইতিবাচক হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টি যে জোট গঠন করতে যাচ্ছে, সেটি অনেক শক্তিশালী হবে। এ নিয়ে একটি যৌথ ইশতেহার তৈরি হচ্ছে। জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন জোটে অনেক দলই আসার চেষ্টা করছে, যোগাযোগ করছে। আমরা কিছু বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে জোটভুক্ত করছি। অনেকে যেভাবে আসতে চায়, আমরা সেভাবে নেব কিনাÑ তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

জোটের ভেতরে থেকে জোট গঠন কতটা যুক্তিযুক্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, মহাজোটের ভেতরে কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট আছে। জাতীয় পার্টি জোট করলে সমস্যা কী? একটি মহাজোটের ভেতরে একাধিক জোট থাকতেই পারে। তবে যাই হোক, আমাদের লক্ষ্য জোট গঠনের মাধ্যমে আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়া। আশা করি আমরা সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি এবং তা পূরণ হবে।

জানা গেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের কয়েকটি দল গাঁটছাড়া হওয়ার চেষ্টা করছে। ৭-দলীয় ইসলামী ঐক্যজোট ইতিপূর্বে জোট ছেড়েছে। আরও যেসব দল ২০-দলীয় জোট ছাড়বে কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে ভিড়বে না; এমন দল নিয়েই জোট গঠনের দিকে এগোচ্ছেন এরশাদের জাতীয় পার্টি। এর বাইরে নতুন পুরনো নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত দলও তালিকায় আছে। এখন পর্যন্ত মোট ১৮টি দল জোট গঠনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে একমত হয়েছে।

জানা যায়, জোট গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত বুধবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জাপা চেয়ারম্যানের বারিধারার বাসভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল মান্নান ও মহাসচিব এমএ মতিনের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল।

এর আগে গত সোমবার ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এরশাদ। ইসলামী ঐক্যজোটে ২টি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল আছে। হেফাজতের কয়েকজন নেতাও সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া গত মঙ্গলবার জাপার বনানী কার্যালয়ে জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বৈঠকে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, আমজনতা পার্টি, গণতান্ত্রিক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ইসলামী ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, কৃষক শ্রমিক পার্টি, ইউনাইটেড মুসলিম লীগ, গণঅধিকার পার্টি, তফসিল ফেডারেশন, জাতীয় হিন্দু লীগ, সচেতন হিন্দু পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস্ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (বিপিডিপি) এবং ইসলামী গণআন্দোলনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিএনপির সাবেক শরিক মুসলিম লীগ, এনপিপি ও এনডিপিকে জোটে টানার চেষ্টা করছেন এরশাদ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর