কুমিল্লায় কোন্দল মিটিয়ে জয়ের চেষ্টায় দুই হেভিওয়েট প্রার্থী

দলীয় কোন্দল নিয়ে বেকায়দায় রয়েছেন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই হেভিওয়েট প্রার্থী। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের নির্দেশে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দিলেও মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের মাঝে গ্রুপিং এখনো রয়ে গেছে। জয়ের লক্ষ্যে দুই প্রার্থী কোন্দল নিরসনের চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরনো বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। এতে দুই দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন দেখা দিয়েছে। এদিকে এসব বিরোধ নিরসন করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীমের নেতৃত্বে বুধবার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কুমিল্লায় আসেন। বুধবার রাতে এমপি বাহার ও আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে নিয়ে কুমিল্লা ক্লাবে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে বৃহস্পতিবার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর মনোনয়নপত্র দাখিল উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম খানসহ অন্যান্য নেতারা কুমিল্লায় আসেন। তারা দলের প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহবান জানান। উভয়প্রার্থীর দলীয় বিরোধ নিরসন হলে এ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছে নগরীর সাধারণ ভোটাররা।
জানা যায়, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান এবং হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের ঐক্যের কারণে দীর্ঘদিন পর আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনে হাজী বাহার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই পুরনো বিরোধ ফের চাঙা হয়ে ওঠে। কুমিল্লা শহরে আওয়ামী লীগ আবারো বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশন গঠন হওয়ার পর ২০১২ সালের ৫ই জানুয়ারি প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে অধ্যক্ষ আফজল খান আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে ওই সময়ে নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেন স্থানীয় এমপি হাজী বাহার। দলে দুই বিদ্রোহী প্রার্থী থাকাসহ বিভিন্ন কারণে নির্বাচনে আফজল খানের ভরাডুবি ঘটে। এদিকে ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর যুবদলের সম্মেলন ও কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন-উর রশীদ ইয়াছিন ও বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কুর অনুসারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইয়াছিন-সাক্কু বিরোধ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এরপর থেকে দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলো নগরীর কান্দিরপাড়ে পৃথকভাবে পালন করে। পরবর্তীতে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। এতে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। কিন্তু দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে নাগরিক ফোরামের ব্যানারে প্রার্থী হন বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। দলীয়ভাবে সমর্থন না পেলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীকে হারিয়ে সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র হন মনিরুল হক সাক্কু। এসব বিরোধকে সামনে রেখেই আগামী ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের মেয়ে সাবেক সিটি কাউন্সিলর আঞ্জুম সুলতানা সীমা। গত নির্বাচনে আফজল খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন মনিরুল হক সাক্কুর সাথে। এবার সাক্কুর সাথেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তার মেয়ে সীমা। এদিকে দলীয় কোন্দল নিরসন করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার লক্ষ্যে গত সোমবার রাতে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা মিষ্টি নিয়ে নগরীর মুন্সেফবাড়ি এলাকায় সদর আসনের এমপি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাসায় যান। সেখানে এমপি না থাকায় নেতাকর্মীদের নিয়ে কুমিল্লা টাউনহলের সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে এসে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে রাত সোয়া ৯টার দিকে সীমা বের হন। এসময় ওই প্রার্থী সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি চাচার (এমপি বাহার) কাছে দোয়ার জন্য এসেছিলাম। চাচা দোয়া করেছেন কিন্তু নির্বাচনের বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।’ পরে স্থানীয় এমপি আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার সাংবাদিকদের জানান, এমপি’রা নির্বাচনে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করলে আচরণবিধি লংঘিত হতে পারে। তাই তাকে দোয়া ছাড়া আর কিছুই দেয়ার নেই। া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকার প্রার্থী ঘোষণা করেছেন, আমাদের সকলেরই তার প্রতি সমর্থন থাকবে। যদি নির্বাচন কমিশন অনুমতি দেয় তাহলে আমি প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে কাজ করব। উভয় পরিবারে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দ্বন্ধ থাকলেও এমপি বাহারের সাথে সীমার এ সাক্ষাৎ নিয়ে নগরজুড়ে বিভিন্ন মহলে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি করে। এদিকে আওয়ামী লীগের মধ্যে এসব বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীমের নেতৃত্বে বুধবার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কুমিল্লায় আসেন। পরে রাতে কুমিল্লা ক্লাবের ভিআইপি কক্ষে স্থানীয় এমপি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এবং আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বৈঠক করেন। পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এনামুল হক শামীম বলেন, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা আদর্শের পক্ষে, বঙ্গবন্ধুর ও শেখ হাসিনার নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীদের দুই একদিন মন খারাপ থাকতেই পারে। আমি আসার পর থেকে সবাই নৌকার ব্যাপারে এক হয়ে কাজ করবে। যারা নির্বাচনে ভালো কাজ করবে তাদের দলের মহানগর কমিটিতে পুরস্কৃত করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর