শহরে ফেরি করে ফুল বিক্রির দৃশ্য হর হামেশাই দেখা যায়। কিন্তু ফেরি করে গাছসহ ফুল বিক্রির দৃশ্য হয়তো কেউ দেখেননি।
আর মফস্বল শহরে বা প্রত্যন্ত গ্রামে ফেরি করে ফুল বিক্রির কথা খুব একটা দেখা যায় না। শহর হউক আর গ্রাম হউক, ফুলের প্রতি যে মানুষের ভালোবাসা রয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় মুজাহীদ এর কাছ থেকে।
এই মুজাহীদ ভ্যান গাড়িতে ফেরি করে ফুলের গাছ বিক্রি করেন গ্রামে গ্রামে। এখান থেকে যে টাকা আয় হয় তাতে তার ৬ সদস্যের পরিবারের খরচ চলেও অতিরিক্ত আয় হয়। ওই ফুলগাছের চারা বিক্রি করে ৪৫ শতক জমিতে ফুলের নার্সারী সাজিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি তাকে ভ্যান গাড়িতে ফেরি করে ফুলের গাছ বিক্রি করতে দেখা গেল রাজীবপুর শহরে। তার সাথে কথা বলার পর জানা গেছে তার সাফল্যের কাহিনী।
জামালপুর জেলার দেওয়াগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত হারুয়াবাড়ি আকন্দপাড়া গ্রামে মুজাহীদ হোসেন (২১) এর বাড়ি। বাবা ছটকু শেখ একজন দিনমজুর। বাড়ি ভিটা ছাড়া কোনো জমাজমি ছিল না তাদের। দিনমজুরি করে তাদের ৬ সদস্যের পরিবারের সংসার চলত। মুজাহীদ যখন ৫ম শ্রেনীতে লেখাপড়া করে তখন তার পিতা আরেকটা বিয়ে করে আলাদা বাড়িতে থাকে। এ অবস্থায় অভাবি সংসারের হাল ধরেন মুজাহীদ। তার দুইবোনকে বিয়ে দিয়েছেন। পরিবারের ছোট ছেলে সাজেদুল ইসলাম ৩য় শ্রেনীতে পড়ে। প্রতিদিন রাজীবপুর ও রৌমারী উপজেলা শহরে ফুল বিক্রি করেন তিনি।
৫ম শ্রেনী পাশ করার পর তিনি অন্য একটি বাগান পরিচর্চার কাজে মাসে ৩ হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। সেখানে ৫ বছর কাজ করে কিছু টাকা জমিয়ে ওই বাগানের চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। স্বপ্ন দেখেন নিজেই নার্সারী সাজাবেন তিনি। কিন্তু নিজেদের কোনো জমি না থাকায় ৪৫শতক জমি ৫ বছরের জন্য বন্ধক নেন। ৫ বছরে ওই জমির মালিককে দুই লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তি করে নার্সারী গড়ে তোলেন তিনি।
বগুড়া থেকে বিভিন্ন ফুলের বীজ সংগ্রহ করে বাগানে বপন করেন। তার বাগানের ফুলের চারা ভ্যান গাড়িতে করে বিক্রিতে শুরু করেন গ্রাম, শহর ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এরপর তাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। প্রতিবছর ফুল বিক্রি করে লাখ খানিক টাকা আয় করেন তিনি।
বর্তমানে তার বাগানে বিভিন্ন প্রকার ফুলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; গোলাপ, রঙ্গন, হাসনাহেনা, সূর্যমুখী, গন্ধরাজ, বেলী, ডালিয়া, কচমচ, পাতাবাহার, গাঁদা ও জবা। ফুলের সাথে পেয়ারা ও বিভিন্ন প্রকার ফল গাছের চারাও রয়েছে।
মুজাহীদ জানান, প্রতিদিন ফেরি করে প্রতিদিন ১৭০০/১৮০০ টাকা ফুলের গাছ বিক্রি যায়। এছাড়াও বাগান থেকে বহু মানুষ ফুল কিনে নেয়। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তিনি ৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন।
আসছে ২১ ফেব্রুয়ারিতে ফুলবিক্রি ভালো হওয়ার আশা করছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার স্বপ্ন নিজস্ব জমি হবে। ওই জমিতে বড় একটা নার্সারী করবো। আর ছোট ভাইটাকে লেখাপড়া করাবো। সে একদিন অনেক বড় মানুষ হবে।’
গ্রামের শিক্ষক আব্দুল হাকিম আকন্দ জানান, ছেলেটির সৎ এবং নিষ্ঠাবান। কঠোর পরিশ্রম করে। আর এর ফলে সে সাফল্য পেয়েছে। এখন তার অবস্থা ভালো। সে গ্রামের মানুষের চোখ খুলে দিয়েছে। পরিশ্রম করলে যে জীবনে সাফল্য আসে তার একটা উদাহরণ মুজাহীদ।