পেয়াঁজ তোলা শুরুর পর ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি ম্লান হয়ে যাচ্ছে বাজারে এসে। লাভ দূরের কথা, পুঁজি তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। জমি চাষে কয়েক মাসের পরিশ্রমের হিসাব বাদ দিলেও খরচ উঠবে কি না-এ ভেবে দিশেহারা কৃষক।
ভাল ফলন, বাজারে চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি আর দাম পড়ে যাওয়া, কৃষকের লোকসান- গত কয়েক বছর ধরেই প্রায় সময়ই বেশ কিছু কৃষি পণ্যের এই চিত্র স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতি বছরই ধান আর আলুর পাশাপাশি পেঁয়াজ চাষিরাও একই ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে।
বাজারে দেশি পেঁয়াজ উঠার এই সময়ে ভারত থেকেও আমদানি হচ্ছে পণ্যটি। এর চাপও পড়েছে বাজারে। চাষিরা বলছেন, আপাতত আমদানি বন্ধ থাকলে তারা লাভবান হতেন।
দেশের এক তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনায়। জেলার সুজানগর, সাঁথিয়া ও সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়। এবার ফলন হয়েছে বেশ ভালো। কিন্তু এই ভালো ফলন আশীর্বাদ হয়নি চাষির জন্য। গত বছর এই সময়ে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে এক হাজার থেকে এক হাজার দুইশ টাকা মণ দরে। এবার একই পণ্য বিক্রি হচ্ছে চার থেকে পাঁচশ টাকা মণ দরে।
পেঁয়াজ চাষি নাসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘গত বছর ভাল দাম পাওয়ায় এ বছর ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। কিন্তু হঠাৎ দাম কমে যাওয়ায় আমাদের মাথায় হাত।’
আরেক চাষি আবদুস সামাদ বলেন, ‘কাটা পেঁয়াজ ঘরে রাখা যায় না। রাখলে পচে নষ্ট হয়ে যায়। সেই কারণে বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের। এই মুহূর্তে ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম পাওয়া যাচ্ছে না।’
ব্যবসায়ীরাও বলছেন, আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম কমছে পেঁয়াজের। ভারতীয় পেঁয়াজ বর্তমানে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। আর পাইকারিতে পাওয়া যাচ্ছে পাঁচশ থেকে সাড়ে ছয়শ টাকা মণ দরে। আর এ কারণেই দেশি পেঁয়াজের দাম পড়তির দিকে।
পাবনার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিভূতিভূষণ সরকার বলেন, ‘ফলন ভাল হয় বলে প্রতি বছর আবাদ বাড়ছে পেঁয়াজের। কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা বাজারে দাম না পেলে এই উৎসাহ ধরে রাখা কঠিন হবে।’
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবছর জেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৪৭ হাজার হেক্টরে।