ধানকে ঘিরে দেশের শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁ জেলা। এর পাশাপাশি নওগাঁ যেন আমের রাজ্য হিসেবে পরিণত হতে চলেছে। যে দিকে তাকায় গাছে গাছে এখন শুধু দৃশ্যমান সোনালী মুকুলের আভা।
মুকুলের ভারে নুয়ে পড়ার উপক্রম প্রতিটি গাছ। মৌমাছিরাও আসতে শুরু করেছে মধু আহরণে। ছয় ঋতুর এই বাংলাদেশে পাতাঝড়া ষড়ঋতুর রাজা বসন্ত। আবহমান বাংলার সৌন্দর্যের রাজা বলে পরিচিত গ্রীষ্মকাল। ফাগুনের ছোঁয়ায় পলাশ-শিমুলের বনে লেগেছে আগুন রাঙা ফুলের মেলা।
শীতের জড়তা কাটিয়ে কোকিলের সেই সুমধুর কুহুতানে মাতাল করতে আবারও ফিরে এলো বাংলার বুক মাতাল করতে ঋতুরাজ বসন্ত। রঙিন-বন ফুলের সমারোহে প্রকৃতি যেমন সেজেছে বর্ণিল সাজে, তেমনি নতুন সাজে যেন সেজেছে জেলার ১১টি উপজেলার ৯৯টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভার আম বাগানগুলো।
আমের মুকুলে ভরপুর আর ঘ্রাণে নওগাঁর সর্বত্র জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনী বার্তা। শোভা ছড়াচ্ছে নিজস্ব মহিমায়। মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে বাগানগুলো প্রায় ৬০ শতাংশ গাছেই এসেছে মুকুল। বাগান মালিক, কৃষিবিদ, আমচাষিরা আশা করছেন বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এ জেলায় আমের বাম্পার ফলন হবে। আমচাষি ও বাগান মালিকরা বাগানে পরিচর্চা নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অবশ্য গাছে মুকুল আশার আগে থেকেই গাছের পরিচর্চা করে আসছেন তারা। যাতে করে গাছে মুকুল বা গুটি বাঁধার সময় কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয়। সারিবদ্ধ গাছে ভরপুর আমের মুকুল যেন শোভা ছড়াচ্ছে তার নিজস্ব মহিমায়। এ জেলা ফজলি, খিড়সা, মোহনা, রাজভোগ, রূপালী, গোপালভোগসহ অন্যান্য জাতের আম চাষের উপযোক্ত হওয়ায় চাষীরা নিজ উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চারা সংগ্রহ করে আমের বাগান সৃজন করলেও বর্তমানে তারা নিজেরাই চারা উৎপাদন করে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সুফলও পেয়েছেন অনেকেই।
জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমের চাষ হয় পোরশা । এ উপজেলায় এখন দেশের বাহিরে রপ্তানী হয়। আম চাষে সফল কৃষক শাহাগোলা গ্রামের মজিবর রহমান জানান, পুরাপুরিভাবে এখনো সব গাছে মুকুল আসেনি। কয়েকদিনের মধ্যেই সকল গাছেই মুকুল আসবে। আমি এ আম থেকে অনেক টাকা আয় করেছি। মজিবরের মতো ভবানীপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, আনছার আলী, রফিকুল ইসলামসহ অনেকেই আমের বাগান তৈরি করেছেন।
তারা জানান, ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ কম থাকায় এবার কাঙ্খিত ফলনের আশা করছেন আম চাষিরা। সুবিধাভোগীদের সুফল দেখে চাষিরা আম চাষে উৎসাহিত হয়ে নিজ নিজ উদ্যোগে নতুন নতুন বাগান সুজন করছেন। ধীরে ধীরে এ উপজেলা জুড়ে সম্পসারিত হচ্ছে আমের বাগান। উৎপাদিত আম মানসম্মত হওয়ায় চাহিদাও বাড়বে অনেক।
এ ব্যাপারে নাগরিক উদ্যোগের শাহাগোলা ইউনিয়নের দলিত মানবাধিকার কর্মী শ্রী দিনেশ কুমার পাল বলেন, ঝড় ও শিলা বৃষ্টি না হলে আশা করা যাচ্ছে এবারও আমের ফলন ভালোই হবে, আমের মুকুল ভালো এসেছে গাছে গাছে। আ¤্রমঞ্জরির শুভ বার্তা বয়ে আনবে সবারই মনে। খানার বচনে আছে “ আমে ধান, তেতুলে বান“। প্রকৃতির এই আ¤্রমঞ্জরিই বলে দেবে কেমন যাবে এ বছর।
এবিষয়ে জেলা কৃষি অফিসার সত্যব্রত সাহা জানান, এবার এ জেলায় নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক মাস আগেই আবহাওয়াগত ও জাতের কারণেই মূলত আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। তবে চলতি মাসের শেষের দিকে প্রতিটি গাছেই পুরোপুরিভাবে মুকুল ফুটতে শুরু করবে বলে আশা করছি। এ জেলার বিরাজমান আবহাওয়া ও মাটি আম চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এ বছর আবহাওয়া অনুকুল থাকায় আমের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।