ঢাকা ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিমানবাহিনীর বেকারিতে নিয়োগ পেলেন ইমাম শেখ : আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৯:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
  • ৭২০ বার

দেশব্যাপী অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে নিজের রিকশাভ্যানে টুঙ্গিপাড়া গ্রাম ঘুরিয়ে আলোচনায় আসা দরিদ্র কিশোর ইমাম শেখ।

বুধবার রাতে শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, সাত হাজার নয়শ টাকা মাসিক বেতনে অস্থায়ী ভিত্তিতে বিমান বাহিনীর যশোর ঘাঁটির অভ্যন্তরে ফ্যালকন বেকারিতে ‘সরবরাহকারী’ হিসেবে সকালে যোগ দিয়েছেন ইমাম শেখ ।

এর আগে স্থায়ী একটা কর্মসংস্থানের আশায় বাড়ি থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য দরকারি কাগজপত্র নিয়ে যায় ইমাম শেখ।

ইমাম বলেন, ‘পরম করুণাময় আল্লাহতাআলার কাছে লাখো কোটি শোকরিয়া। কোনোদিন ভাবিনি আল্লাহ আমাকে এভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিবেন’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও দেশের সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইমাম।

জানা গেছে যশোর বিমান ঘাঁটি থেকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ১১টায় রওনা দিয়ে সন্ধ্যার দিকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া পৌরসভা সর্দারপাড়ার গ্রামের নিজ বাড়িতে আসেন ইমাম। দরকারি কাগজপত্র নিয়ে মঙ্গলবার রাতে আবার যশোর বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে ফিরে যান তিনি।
শেখ মোহাম্মদ জানান, ইমাম বাড়িতে গেলে আশপাশের গ্রাম থেকেও লোকজন এসে ভীড় করে তাকে একনজর তাকে দেখার জন্য।

ইমাম জানান, যশোর থেকে সকাল এগারোটায় রওনা হয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে পৌঁছানোর পর তার বাড়িতে ঢল নামে মানুষের। তাকে কাছে পেয়ে খুশি হয়ে তার মা অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন বলে তিনি জানান। ইমাম জানিয়েছেন, বিমান বাহিনীর অফিসে তাকে অনেক আদর যত্ন করা হয়।

‘চাকরির খবর কি’ জানতে চাইলে ইমাম বলেন, ‘স্যাররা বললেন, বাড়ি গিয়ে ভোটার আইডি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র, ফাইভ পাশের কাগজপত্র কাছে রাখতে। তাই নিয়ে আসলাম’।

এর আগে ইমাম শেখকে চাকরি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিমানবাহিনী। শুক্রবার তার ভ্যানে প্রধানমন্ত্রীর চড়ার ছবি প্রকাশের পর ইমাম শেখের সরকারি চাকরি পাওয়ার বাসনার কথা জানা যায়। তবে সরকারপ্রধানকে পাশে পেয়েও তিনি এই বাসনার কথা বলতে পারেননি লজ্জায়।

রবিবার সকালে যশোর থেকে বিমানবাহিনীর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির স্কোয়াড্রন লিডার হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে তিন জন কর্মকর্তা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান। আগেই তারা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তিনিই সর্দারপাড়া গ্রাম থেকে ইমাম শেখকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন।

ইমাম শেখ একটি সাদা রঙের শার্ট ও কালো প্যান্ট পড়ে রওয়ানা দেন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এ সময় তার মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি।

ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি, তার স্ত্রী পেপি কিভিনিয়াম সিদ্দিক এবং তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে শেখ হাসিনা চড়েন ইমাম শেখের ভ্যানে। পথে যেতে যেতে ইমামের সঙ্গে বেশ খানিকক্ষণ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আব্দুল লতিফ শেখ এবং শাহানারা বেগমের পুত্র ইমামের স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করে মা বাবাকে সুখে রাখবেন। কিন্তু অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা আগায়নি তার।

সতের বছরের ইমাম হোসেন দারিদ্রের কারণে পঞ্চম শ্রেণি থেকে ভ্যান চালানো শুরু করে। ‘সংসারের টাহা পয়সার অভাবে আর ফাইভের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারি নাই’ বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিল ইমাম শেখ।

সেদিন ইমাম ঢাকাটাইমসকে বলেছিল, ‘আমার আব্বার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন আমাকে পরিবারটারে দেখতি হয়। আমরা অসহায় পরিবার। আমারে যদি কেউ যেকোন একটা সরকারি চাকরি দেতো সেইডা আমাগে পরিবারের জন্য খুব উপকার হইতো।’ প্রধানমন্ত্রীকে এই কথাটি কেন বলেননি?-জানতে চাইলে ইমাম বলেন, ‘লজ্জায় বলতে পারিনি।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বিমানবাহিনীর বেকারিতে নিয়োগ পেলেন ইমাম শেখ : আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ

আপডেট টাইম : ১১:৪৯:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

দেশব্যাপী অনেক জল্পনা-কল্পনা শেষে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে নিজের রিকশাভ্যানে টুঙ্গিপাড়া গ্রাম ঘুরিয়ে আলোচনায় আসা দরিদ্র কিশোর ইমাম শেখ।

বুধবার রাতে শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, সাত হাজার নয়শ টাকা মাসিক বেতনে অস্থায়ী ভিত্তিতে বিমান বাহিনীর যশোর ঘাঁটির অভ্যন্তরে ফ্যালকন বেকারিতে ‘সরবরাহকারী’ হিসেবে সকালে যোগ দিয়েছেন ইমাম শেখ ।

এর আগে স্থায়ী একটা কর্মসংস্থানের আশায় বাড়ি থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য দরকারি কাগজপত্র নিয়ে যায় ইমাম শেখ।

ইমাম বলেন, ‘পরম করুণাময় আল্লাহতাআলার কাছে লাখো কোটি শোকরিয়া। কোনোদিন ভাবিনি আল্লাহ আমাকে এভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিবেন’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও দেশের সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইমাম।

জানা গেছে যশোর বিমান ঘাঁটি থেকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ১১টায় রওনা দিয়ে সন্ধ্যার দিকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া পৌরসভা সর্দারপাড়ার গ্রামের নিজ বাড়িতে আসেন ইমাম। দরকারি কাগজপত্র নিয়ে মঙ্গলবার রাতে আবার যশোর বিমান বাহিনীর ঘাঁটিতে ফিরে যান তিনি।
শেখ মোহাম্মদ জানান, ইমাম বাড়িতে গেলে আশপাশের গ্রাম থেকেও লোকজন এসে ভীড় করে তাকে একনজর তাকে দেখার জন্য।

ইমাম জানান, যশোর থেকে সকাল এগারোটায় রওনা হয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে পৌঁছানোর পর তার বাড়িতে ঢল নামে মানুষের। তাকে কাছে পেয়ে খুশি হয়ে তার মা অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন বলে তিনি জানান। ইমাম জানিয়েছেন, বিমান বাহিনীর অফিসে তাকে অনেক আদর যত্ন করা হয়।

‘চাকরির খবর কি’ জানতে চাইলে ইমাম বলেন, ‘স্যাররা বললেন, বাড়ি গিয়ে ভোটার আইডি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র, ফাইভ পাশের কাগজপত্র কাছে রাখতে। তাই নিয়ে আসলাম’।

এর আগে ইমাম শেখকে চাকরি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিমানবাহিনী। শুক্রবার তার ভ্যানে প্রধানমন্ত্রীর চড়ার ছবি প্রকাশের পর ইমাম শেখের সরকারি চাকরি পাওয়ার বাসনার কথা জানা যায়। তবে সরকারপ্রধানকে পাশে পেয়েও তিনি এই বাসনার কথা বলতে পারেননি লজ্জায়।

রবিবার সকালে যশোর থেকে বিমানবাহিনীর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির স্কোয়াড্রন লিডার হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে তিন জন কর্মকর্তা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যান। আগেই তারা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তিনিই সর্দারপাড়া গ্রাম থেকে ইমাম শেখকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন।

ইমাম শেখ একটি সাদা রঙের শার্ট ও কালো প্যান্ট পড়ে রওয়ানা দেন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এ সময় তার মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি।

ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি, তার স্ত্রী পেপি কিভিনিয়াম সিদ্দিক এবং তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে শেখ হাসিনা চড়েন ইমাম শেখের ভ্যানে। পথে যেতে যেতে ইমামের সঙ্গে বেশ খানিকক্ষণ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আব্দুল লতিফ শেখ এবং শাহানারা বেগমের পুত্র ইমামের স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করে মা বাবাকে সুখে রাখবেন। কিন্তু অভাবের তাড়নায় পড়াশোনা আগায়নি তার।

সতের বছরের ইমাম হোসেন দারিদ্রের কারণে পঞ্চম শ্রেণি থেকে ভ্যান চালানো শুরু করে। ‘সংসারের টাহা পয়সার অভাবে আর ফাইভের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারি নাই’ বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিল ইমাম শেখ।

সেদিন ইমাম ঢাকাটাইমসকে বলেছিল, ‘আমার আব্বার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন আমাকে পরিবারটারে দেখতি হয়। আমরা অসহায় পরিবার। আমারে যদি কেউ যেকোন একটা সরকারি চাকরি দেতো সেইডা আমাগে পরিবারের জন্য খুব উপকার হইতো।’ প্রধানমন্ত্রীকে এই কথাটি কেন বলেননি?-জানতে চাইলে ইমাম বলেন, ‘লজ্জায় বলতে পারিনি।’