ঢাকা ০৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালেদা যতদিন নেতা থাকবেন বিএনপি ভাঙবে না! আরিফ মঈনুদ্দিন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩৯:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুন ২০১৫
  • ৬১৯ বার

চট্টগ্রাম বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও সাবেক উপমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মহাসচিব আরিফ মঈনুদ্দিন বলেছেন, বেগম জিয়া যতদিন নেতা থাকবেন, ততদিন বিএনপি ভাঙার আশঙ্কা নেই। তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচন কিংবা অন্তর্বর্তী নতুন কোনো সরকারের আশা কিংবা আশঙ্কাও করছেন না।

আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন ও জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বর্তমান সরকার খুব সতর্ক পদক্ষেপে চলছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক এই এমপি বর্তমান বিএনপির রাজনীতি এবং আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে বেশ খোলামেলা কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আরিফ মঈনুদ্দিন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ খান বাহাদুর ব্যারিস্টার আনোয়ারুল আজীম ও বেগম তওফাতুন্নেসার ছেলে। তার বাবা ছিলেন ১৯৩৭ এবং ’৪৫ সালের যথাক্রমে বেঙ্গল অ্যাসেম্বলির এম এল এ এবং দিল্লি আসেম্বলির সদস্য। তার মা ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লা আসনে এমএলএ এবং ১৯৬২ সালের নির্বাচনে এমপিএ নির্বাচিত হন। চট্টগ্রাম সিটি আওয়ামী লীগেরও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেগম তওফাতুন্নেসা।বিএনপি পুনর্গঠনে করণীয় প্রসঙ্গে আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, ঘরে বসে থেকে আন্দোলনের ডাক দিলে কেউ আসবে না। ঘরে গিয়ে গিয়ে লোকজনকে ঐক্যবদ্ধ করে বের করে নিয়ে আসতে হবে। না ডাকলে কার্যালয়ে গিয়ে পুরনো পরীক্ষিতরা বসে থাকবেন না। যারা বিএনপির শাসনামলে পয়সা বানিয়েছেন তারাই না ডাকলেও কার্যালয়ে গিয়ে বসে থাকবেন। অতীতে বিএনপির কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষমাণ থেকেও একাধিক ব্যক্তি বিএনপিতে যোগ দিতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে তারা মন্ত্রী হয়েছেন।জামায়াত-বিএনপির সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্পর্ক রাখলে ভোটের দিক থেকে বিএনপির ক্ষতি নেই। তবে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত হয়ে বিতর্কে জড়ানো দলটির সঙ্গে বিএনপিকে অত্যন্ত কৌশলে সম্পর্ক রাখতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে আরিফ মঈনুদ্দিন তার নিজের বিএনপিতে যোগদানকালীন উদাহরণ টেনে বলেন, সে সময়েও লোকজন আসেনি, সামরিক শাসকের দলে আসতে চায়নি। আমরা বুঝিয়ে বুঝিয়ে লোকজনকে দলে ভিড়িয়েছিলাম। বিএনপির প্রাথমিক রূপ জাগদল গঠনেরও আগে ১৯৭৬-এর ১ অক্টোবর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কর্নেল অলি আহমদের মাধ্যমে নিজের পরিচয়ের কথা উল্লেখ করে আরিফ মঈনুদ্দিন জানান, তার নিজের এবং অলি আহমদের প্রতি সুবিচার করেনি বিএনপি।বিএনপি ক্রমশ ব্যবসায়ীদের দলে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, যেমন ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি আসনে সকালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ব্যর্থ শিল্পপতি শামসুল আলমকে রাতে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়া যায় কিন্তু চাইলেই মন্ত্রিত্ব বা নেতৃত্ব ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া ঠিক নয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনেও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এই বিএনএফ নেতা নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের দক্ষতা বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নাছিরকে অন্তত ২৫ বছর ধরে সাংগঠনিকভাবে চিনি। নাছির ভালো অর্গানাইজার ডাইনামিক লিডার এবং ঢাকার নেতৃত্ব ও সচিবালয়ের সঙ্গে পরিচিতি থাকার সুবাদে মেয়র নাছির নিঃসন্দেহে উন্নয়ন ও সেবায় ভালোই ভূমিকা রাখবেন। ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ করে প্রকল্প আদায় তার পক্ষেই সম্ভব, যা অতীত মেয়ররা কেউই করেননি। আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের মতোই চসিক নির্বাচনে হঠাৎ করে বয়কটের মধ্য দিয়ে বিএনপি ঐতিহাসিক ভুল করেছে। জাতীয় নির্বাচনে যদি বিএনপি আসত তাহলে ভালোই ফলাফল করত। প্রধানমন্ত্রী তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব দেওয়ার কথা বলেও নির্বাচনে ডেকেছিলেন। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে না আসায় সরকারি দলের ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন। আমলারা যে শক্তির সরকার গঠন অনিবার্য হয়ে ওঠে তার পক্ষেই অবস্থান নেন। তারা নিরপেক্ষ থাকবেন কেন! তাদের ঘাড়ে কি মাথা দুটো?  অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির যে শক্তি আছে তা দিয়ে সরকার পতন বা মধ্যবর্তী নির্বাচন সম্ভব নয়। টানা ছয় মাস হরতাল-অবরোধ করেও সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি। মানুষ এখন আর অবরোধ চায় না। অবরোধের ডাক দিয়ে নেতারা শেরাটন রেডিসনে পার্টি দেন। যা কাক্সিক্ষত নয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শের আদলেই বিএনএফ তাদের গঠনতন্ত্র তৈরি করেছে জানিয়ে তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ম্যাডামের (বেগম জিয়া) পাশে এখন যারা আছেন তাদের আমি ভালো করে চিনি। তারা কেউ পার্টির জন্য কিছু করবেন না। এখনো বিএনপির প্রতি মানুষের বিপুল সমর্থন থাকার কথা উল্লেখ করে আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, চসিক নির্বাচনে বয়কট সত্ত্বেও মনজুর আলমের তিন লাখ চার হাজার ভোট পাওয়ার মধ্য দিয়ে দলটির জনপ্রিয়তাই প্রমাণ পায়। কিন্তু এসব সমর্থককে যদি আন্দোলনের জন্য রাস্তায় নামতে বলা হয় তাহলে পাঁচজনও নামবেন না। কেননা সাধারণ মানুষ মনে করেন, এখন ভালোই তো আছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

খালেদা যতদিন নেতা থাকবেন বিএনপি ভাঙবে না! আরিফ মঈনুদ্দিন

আপডেট টাইম : ০৪:৩৯:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুন ২০১৫

চট্টগ্রাম বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও সাবেক উপমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মহাসচিব আরিফ মঈনুদ্দিন বলেছেন, বেগম জিয়া যতদিন নেতা থাকবেন, ততদিন বিএনপি ভাঙার আশঙ্কা নেই। তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচন কিংবা অন্তর্বর্তী নতুন কোনো সরকারের আশা কিংবা আশঙ্কাও করছেন না।

আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন ও জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বর্তমান সরকার খুব সতর্ক পদক্ষেপে চলছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক এই এমপি বর্তমান বিএনপির রাজনীতি এবং আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে বেশ খোলামেলা কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক আরিফ মঈনুদ্দিন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ খান বাহাদুর ব্যারিস্টার আনোয়ারুল আজীম ও বেগম তওফাতুন্নেসার ছেলে। তার বাবা ছিলেন ১৯৩৭ এবং ’৪৫ সালের যথাক্রমে বেঙ্গল অ্যাসেম্বলির এম এল এ এবং দিল্লি আসেম্বলির সদস্য। তার মা ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুমিল্লা আসনে এমএলএ এবং ১৯৬২ সালের নির্বাচনে এমপিএ নির্বাচিত হন। চট্টগ্রাম সিটি আওয়ামী লীগেরও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেগম তওফাতুন্নেসা।বিএনপি পুনর্গঠনে করণীয় প্রসঙ্গে আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, ঘরে বসে থেকে আন্দোলনের ডাক দিলে কেউ আসবে না। ঘরে গিয়ে গিয়ে লোকজনকে ঐক্যবদ্ধ করে বের করে নিয়ে আসতে হবে। না ডাকলে কার্যালয়ে গিয়ে পুরনো পরীক্ষিতরা বসে থাকবেন না। যারা বিএনপির শাসনামলে পয়সা বানিয়েছেন তারাই না ডাকলেও কার্যালয়ে গিয়ে বসে থাকবেন। অতীতে বিএনপির কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষমাণ থেকেও একাধিক ব্যক্তি বিএনপিতে যোগ দিতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে গিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে তারা মন্ত্রী হয়েছেন।জামায়াত-বিএনপির সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সম্পর্ক রাখলে ভোটের দিক থেকে বিএনপির ক্ষতি নেই। তবে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত হয়ে বিতর্কে জড়ানো দলটির সঙ্গে বিএনপিকে অত্যন্ত কৌশলে সম্পর্ক রাখতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে আরিফ মঈনুদ্দিন তার নিজের বিএনপিতে যোগদানকালীন উদাহরণ টেনে বলেন, সে সময়েও লোকজন আসেনি, সামরিক শাসকের দলে আসতে চায়নি। আমরা বুঝিয়ে বুঝিয়ে লোকজনকে দলে ভিড়িয়েছিলাম। বিএনপির প্রাথমিক রূপ জাগদল গঠনেরও আগে ১৯৭৬-এর ১ অক্টোবর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কর্নেল অলি আহমদের মাধ্যমে নিজের পরিচয়ের কথা উল্লেখ করে আরিফ মঈনুদ্দিন জানান, তার নিজের এবং অলি আহমদের প্রতি সুবিচার করেনি বিএনপি।বিএনপি ক্রমশ ব্যবসায়ীদের দলে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, যেমন ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি আসনে সকালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ব্যর্থ শিল্পপতি শামসুল আলমকে রাতে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়া যায় কিন্তু চাইলেই মন্ত্রিত্ব বা নেতৃত্ব ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া ঠিক নয়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনেও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এই বিএনএফ নেতা নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের দক্ষতা বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নাছিরকে অন্তত ২৫ বছর ধরে সাংগঠনিকভাবে চিনি। নাছির ভালো অর্গানাইজার ডাইনামিক লিডার এবং ঢাকার নেতৃত্ব ও সচিবালয়ের সঙ্গে পরিচিতি থাকার সুবাদে মেয়র নাছির নিঃসন্দেহে উন্নয়ন ও সেবায় ভালোই ভূমিকা রাখবেন। ঢাকায় দৌড়ঝাঁপ করে প্রকল্প আদায় তার পক্ষেই সম্ভব, যা অতীত মেয়ররা কেউই করেননি। আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের মতোই চসিক নির্বাচনে হঠাৎ করে বয়কটের মধ্য দিয়ে বিএনপি ঐতিহাসিক ভুল করেছে। জাতীয় নির্বাচনে যদি বিএনপি আসত তাহলে ভালোই ফলাফল করত। প্রধানমন্ত্রী তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিত্ব দেওয়ার কথা বলেও নির্বাচনে ডেকেছিলেন। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে না আসায় সরকারি দলের ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন। আমলারা যে শক্তির সরকার গঠন অনিবার্য হয়ে ওঠে তার পক্ষেই অবস্থান নেন। তারা নিরপেক্ষ থাকবেন কেন! তাদের ঘাড়ে কি মাথা দুটো?  অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির যে শক্তি আছে তা দিয়ে সরকার পতন বা মধ্যবর্তী নির্বাচন সম্ভব নয়। টানা ছয় মাস হরতাল-অবরোধ করেও সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি। মানুষ এখন আর অবরোধ চায় না। অবরোধের ডাক দিয়ে নেতারা শেরাটন রেডিসনে পার্টি দেন। যা কাক্সিক্ষত নয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শের আদলেই বিএনএফ তাদের গঠনতন্ত্র তৈরি করেছে জানিয়ে তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ম্যাডামের (বেগম জিয়া) পাশে এখন যারা আছেন তাদের আমি ভালো করে চিনি। তারা কেউ পার্টির জন্য কিছু করবেন না। এখনো বিএনপির প্রতি মানুষের বিপুল সমর্থন থাকার কথা উল্লেখ করে আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, চসিক নির্বাচনে বয়কট সত্ত্বেও মনজুর আলমের তিন লাখ চার হাজার ভোট পাওয়ার মধ্য দিয়ে দলটির জনপ্রিয়তাই প্রমাণ পায়। কিন্তু এসব সমর্থককে যদি আন্দোলনের জন্য রাস্তায় নামতে বলা হয় তাহলে পাঁচজনও নামবেন না। কেননা সাধারণ মানুষ মনে করেন, এখন ভালোই তো আছি।