ঢাকা ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এসিআই কারখানার পানিতে তলিয়ে গেছে ৫০ বিঘা ফসলি জমি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:২৫:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৭
  • ৩৩৩ বার

নওগাঁর মহাদেবপুরে এসিআই ফুডস লিমিটেড (রাইস ইউনিট) কারখানার বর্জ ও বিষাক্ত পানিতে প্রায় ৫০/৬০ বিঘা সদ্য রোপণকৃত ইরি বোরো ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।

এছাড়াও আরও ৫ থেকে ৬ শত বিঘা বোরো ধানের ক্ষেত ও বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল চাষ হুমকির মুখে রয়েছে বলেও স্থানিয়রা জানিয়েছেন। গত আমন মৌসুমে দূষিত পচা পানির কারণে ফসল ফলনে ফলন বিপর্যয় ঘটায় ব্যাপক লোকসান গুণতে হয়েছে এমনটাই অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

স্থানীয় কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানালেও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিষাক্ত বর্জ ও পচা পানি থেকে আবাদী জমির ফসল রক্ষা করতে ইতি মধ্যেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়া আঞ্চলিক অফিস বরাবর গণস্বাক্ষারিত একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, নওগাঁ-মহাদেবপুর আঞ্চলিক সড়কের সরস্বতীপুর নামক স্থানে রাস্তা সংলগ্ন এসিআই ফুডস লিমিটেড (রাইস ইউনিট) নামে কারখানাটি গত বছরের প্রথম দিকে স্থাপন করে কার্যক্রম শুরু করা হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কারখানাটি সংলগ্ন ওই আঞ্চলিক সড়কের (সরকারি সড়ক ও জনপদ) নালায় কালো রংয়ের দূর্গন্ধ পানি। সেই পানি নালা দিয়ে পাশ্ববর্তী তালতলি ব্রিজ (খাড়িতে) পড়ার পর ছড়িয়ে পড়ছে মাঠের পর মাঠের আবাদি কৃষি জমিতে।

ইতোমধ্যে ৫০ বিঘা জামির ধানি জমি ও বীজ তলা তালিয়ে গেছে। উপজেলার খোর্দ্দনারায়নপুর গ্রামের মাঠে নিয়ে গিয়ে কষকরা পানির নিচে তলিয়ে থাকা সদ্য রোপনকৃত বোরো ধানের ক্ষেত ও বীজতলা দেখান। বিঘার পর বিঘা সদ্য রোপনকৃত বোরো ধান ও বীজতলা কালো, লাল রংয়ের ফেনাও দূর্ঘন্ধ যুক্ত পানিতে তলিয়ে আছে। এ সময় কয়েকজন কৃষক কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

খোর্দ্দনারায়ণপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ (৫৫) জানান, তিনি এখানে ৬বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন করেছি যা বর্তমানে ঐ কারখানাটির ছেড়ে দেয়া পচা পানিতে তলিয়ে আছে। শুধু আব্দুস সামাদের নয় ঐ গ্রামের কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিকেরর ৫ বিঘা, আসলাম আলীর ৪ বিঘা, হাসেন আলীর ৫ বিঘা, রিপন মন্ডলের ৩ বিঘা, মজ্জিম হোসেনের ৩ বিঘা, আমজাদ আলীর ৫ বিঘা, নাহিদ হোসেনের ৪বিঘা, আজিবরের ২ বিঘা ও আব্দুল মজিদের ৪ বিঘা জমি সহ পালপাড়া ও সোনাপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষকের ও সদ্য রোপনকৃত আমন ধানের ক্ষেত ইতিমধ্যেই তলিয়ে গেছে।

তারা আরও বলেন, তালতলি ব্রীজের নিচে খাড়িতে বাঁধ দিয়ে রাখার কারণে কারখানার থেকে আসা পানি সেখানে প্রচুর পরিমাণ পানি বদ্ধ হয়ে আছে। যে কোন সময় এ বাঁধ ভেঙ্গে পানি আসলেই আরো ৫/৬ বিঘা জমির ধান তলিয়ে যাবার আশঙ্কা করছে। ফসলী জমি তলীয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়।

এসিআই ফুডস লিমিটেড (রাইস ইউনিট) এর এডমিন রেজাউল করিম জানান, পরিবেশ অধীদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে সরকারী নিয়ম মোতাবেক কারখানাটি পরিচালনা করা হচ্ছে। যে পানি টুকু বাইরে যাচ্ছে সে পানি দূর্ষণ মুক্ত করার পরই বাইরে ছাড়া হয়। তিনি আরো বলেন, জমির ধান নষ্ট হচ্ছে এমন অভিযোগ তাদের জানা নেই। তবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।

ভীমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাম চন্দ্র ভদ্র জানান, শুধু ওই কারখানার নয়; আশেপাশের আরো রাইচ মিলের বজ্র ও দুষিত পানি রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নালায় ফেলা হয়। এতে পানির পচা দুর্গন্ধে পথচারিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে ওই মিলের পানিতে ৩০/৪০ জন কৃষকের ক্ষতি হয়েছে এবং আরো শতশত বিঘা জমি ক্ষতি মুখে রয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় একাধিকবার ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্থ্যদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনিক ভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মফিদুল ইসলাম জানান, ওই কারখানার ফেলা বজ্র ও দূষিত পানিতে থেকে কৃষকদের বাঁচাতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় বিগত মাসের মতো আবারও চলতি মাসে ১২ তারিখে মাসিক সমন্বয় সভায়। এর প্রক্ষিতে গত কয়েকদিনে তদন্ত করে ৫০/৬০ বিঘা ধানি তলিয়ে যাওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও আরো ৬/৭শ’ বিঘা ধানি জমি হুমকির মুখে। তিনি আরো বলেন, গত শুক্রবার প্রতিবেদন করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হয়েছে।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুনাহার জানান, এসিআই ফুডস লিমিটেড (রাইস ইউনিট) কারখানার বর্জ ও বিষাক্ত পানিতে জমি তলিয়ে যাওয়ার একটি প্রতিবেদন হাতে পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

এসিআই কারখানার পানিতে তলিয়ে গেছে ৫০ বিঘা ফসলি জমি

আপডেট টাইম : ১২:২৫:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৭

নওগাঁর মহাদেবপুরে এসিআই ফুডস লিমিটেড (রাইস ইউনিট) কারখানার বর্জ ও বিষাক্ত পানিতে প্রায় ৫০/৬০ বিঘা সদ্য রোপণকৃত ইরি বোরো ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।

এছাড়াও আরও ৫ থেকে ৬ শত বিঘা বোরো ধানের ক্ষেত ও বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল চাষ হুমকির মুখে রয়েছে বলেও স্থানিয়রা জানিয়েছেন। গত আমন মৌসুমে দূষিত পচা পানির কারণে ফসল ফলনে ফলন বিপর্যয় ঘটায় ব্যাপক লোকসান গুণতে হয়েছে এমনটাই অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

স্থানীয় কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়গুলো ক্ষতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানালেও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিষাক্ত বর্জ ও পচা পানি থেকে আবাদী জমির ফসল রক্ষা করতে ইতি মধ্যেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়া আঞ্চলিক অফিস বরাবর গণস্বাক্ষারিত একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, নওগাঁ-মহাদেবপুর আঞ্চলিক সড়কের সরস্বতীপুর নামক স্থানে রাস্তা সংলগ্ন এসিআই ফুডস লিমিটেড (রাইস ইউনিট) নামে কারখানাটি গত বছরের প্রথম দিকে স্থাপন করে কার্যক্রম শুরু করা হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত ও স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কারখানাটি সংলগ্ন ওই আঞ্চলিক সড়কের (সরকারি সড়ক ও জনপদ) নালায় কালো রংয়ের দূর্গন্ধ পানি। সেই পানি নালা দিয়ে পাশ্ববর্তী তালতলি ব্রিজ (খাড়িতে) পড়ার পর ছড়িয়ে পড়ছে মাঠের পর মাঠের আবাদি কৃষি জমিতে।

ইতোমধ্যে ৫০ বিঘা জামির ধানি জমি ও বীজ তলা তালিয়ে গেছে। উপজেলার খোর্দ্দনারায়নপুর গ্রামের মাঠে নিয়ে গিয়ে কষকরা পানির নিচে তলিয়ে থাকা সদ্য রোপনকৃত বোরো ধানের ক্ষেত ও বীজতলা দেখান। বিঘার পর বিঘা সদ্য রোপনকৃত বোরো ধান ও বীজতলা কালো, লাল রংয়ের ফেনাও দূর্ঘন্ধ যুক্ত পানিতে তলিয়ে আছে। এ সময় কয়েকজন কৃষক কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

খোর্দ্দনারায়ণপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ (৫৫) জানান, তিনি এখানে ৬বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন করেছি যা বর্তমানে ঐ কারখানাটির ছেড়ে দেয়া পচা পানিতে তলিয়ে আছে। শুধু আব্দুস সামাদের নয় ঐ গ্রামের কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিকেরর ৫ বিঘা, আসলাম আলীর ৪ বিঘা, হাসেন আলীর ৫ বিঘা, রিপন মন্ডলের ৩ বিঘা, মজ্জিম হোসেনের ৩ বিঘা, আমজাদ আলীর ৫ বিঘা, নাহিদ হোসেনের ৪বিঘা, আজিবরের ২ বিঘা ও আব্দুল মজিদের ৪ বিঘা জমি সহ পালপাড়া ও সোনাপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষকের ও সদ্য রোপনকৃত আমন ধানের ক্ষেত ইতিমধ্যেই তলিয়ে গেছে।

তারা আরও বলেন, তালতলি ব্রীজের নিচে খাড়িতে বাঁধ দিয়ে রাখার কারণে কারখানার থেকে আসা পানি সেখানে প্রচুর পরিমাণ পানি বদ্ধ হয়ে আছে। যে কোন সময় এ বাঁধ ভেঙ্গে পানি আসলেই আরো ৫/৬ বিঘা জমির ধান তলিয়ে যাবার আশঙ্কা করছে। ফসলী জমি তলীয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়।

এসিআই ফুডস লিমিটেড (রাইস ইউনিট) এর এডমিন রেজাউল করিম জানান, পরিবেশ অধীদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে সরকারী নিয়ম মোতাবেক কারখানাটি পরিচালনা করা হচ্ছে। যে পানি টুকু বাইরে যাচ্ছে সে পানি দূর্ষণ মুক্ত করার পরই বাইরে ছাড়া হয়। তিনি আরো বলেন, জমির ধান নষ্ট হচ্ছে এমন অভিযোগ তাদের জানা নেই। তবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।

ভীমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাম চন্দ্র ভদ্র জানান, শুধু ওই কারখানার নয়; আশেপাশের আরো রাইচ মিলের বজ্র ও দুষিত পানি রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নালায় ফেলা হয়। এতে পানির পচা দুর্গন্ধে পথচারিদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে ওই মিলের পানিতে ৩০/৪০ জন কৃষকের ক্ষতি হয়েছে এবং আরো শতশত বিঘা জমি ক্ষতি মুখে রয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় একাধিকবার ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্থ্যদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানালেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনিক ভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মফিদুল ইসলাম জানান, ওই কারখানার ফেলা বজ্র ও দূষিত পানিতে থেকে কৃষকদের বাঁচাতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় বিগত মাসের মতো আবারও চলতি মাসে ১২ তারিখে মাসিক সমন্বয় সভায়। এর প্রক্ষিতে গত কয়েকদিনে তদন্ত করে ৫০/৬০ বিঘা ধানি তলিয়ে যাওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও আরো ৬/৭শ’ বিঘা ধানি জমি হুমকির মুখে। তিনি আরো বলেন, গত শুক্রবার প্রতিবেদন করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হয়েছে।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেবুনাহার জানান, এসিআই ফুডস লিমিটেড (রাইস ইউনিট) কারখানার বর্জ ও বিষাক্ত পানিতে জমি তলিয়ে যাওয়ার একটি প্রতিবেদন হাতে পাওয়া গেছে। দ্রুত ওই কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।