ঢাকা ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষা খাতের অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার শঙ্কা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী ২০১৭
  • ২৮৭ বার

গত কয়েক বছরে শিক্ষা খাতে সরকারের অর্জন সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বছরের প্রথম দিন দেশে একযোগে কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া শিক্ষাখাতে উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে একটি। কিন্তু গর্ব করার মতো এই বিষয়টিই সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে- এমনটিই আশঙ্কা করছেন শিক্ষাবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা।

২০১৬ সালে যখন থেকে পরবর্তী বছর বা ২০১৭ সালের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজ শুরু হয়, তখন থেকেই বিভিন্ন মহলে কথা ওঠে নতুন কারিক্যুলাম ও পাঠ্যসূচি নিয়ে। এর মধ্যে বিশেষভাবে আলোচনায় আসে হঠাৎ করে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে আবার চুপসে যাওয়া হেফাজতে ইসলামীর কয়েক দফা প্রস্তাবনা।

পাঠ্যক্রম নিয়ে দলটির দেওয়া প্রস্তাবনা অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি। কিন্তু পাঠ্যসূচি যখন চূড়ান্ত হয়, তখন দেখা যায় তাদের প্রস্তাবনার সিংহভাগ প্রভাব পড়েছে পাঠ্যক্রমে। আর বছরের প্রথম দিন বই বিতরণের পর দেখা যায়, বইতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভুল রয়েছে। বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী স্বয়ং স্বীকার করে দ্রুত ভুল শোধরানোর কথাও বলেছেন।

শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ভুল-ক্রটি ধরে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। বানান ভুলের খতিয়ান তুলে ধরে অনেকে প্রশ্ন রেখেছেন- শিশুদের পাঠ্যমবইয়ে এসব কী শেখানো হচ্ছে? নতুন পাঠ্যবইয়ের ভুল নিয়ে তীব্র সমালোচনার পর ওইসব ভুল-ক্রটি পর্যালোচনায় কমিটি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠ্য বইয়ে ভুলের জন্য এ পর্যন্ত এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক প্রীতিশ কুমার সরকার এবং ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ লানা হুমায়রা খানকে ওএসডি করা হয়েছে। এছাড়া সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এনসিটিবির আর্টিস্ট কাম ডিজাইনার সুজাউল আবেদিনকে।

এখন পর্যন্ত এনসিটিবি থেকে একটি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিনটি কমিটি করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই ভুলের পেছনে যাঁরা বেশি দায়ী তাদেরও রাখা হয়েছে কমিটিতে। অভিযোগে বলা হচ্ছে, এর মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকে ভুলের কেলেঙ্কারির মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাজী আবুল কালামকে প্রধান করে এনসিটিবি গঠিত কমিটি যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, তাতে প্রাথমিকের প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণির আমার বাংলা বই এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় (তৃতীয় শ্রেণি) বইয়ে মোটা দাগে চারটি ভুলের জন্য সরাসরি দায়ী করা হয় বোর্ডের সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. সরকার আবদুল মান্নানকে।

ওই প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে দু’জনকে দায়ী করা হয় পাঁচটি ভুলের জন্য। এর মধ্যে পঞ্চম ভুলের জন্য দায়ী করা হয়েছিল প্রীতিশ কুমার সরকারকে। তাকে ওএসডি করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদনে এক থেকে চার নম্বর পর্যন্ত ভুলের জন্য যাকে দায়ী করা হয় সেই সরকার আবদুল মান্নান এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কমিটির সুপারিশ হাতে পেয়েই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকেও কমিটি করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার পরের দিন ৯ জানুয়ারি বোর্ডের সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. সরকার আবদুল মান্নান মন্ত্রণালয়ে এসেছিলেন। ঊর্ধ্বতনদের সাথে তার ‘রুদ্ধদ্বার আলাপ’ হয়। পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণে ওই আলাপ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সরকার আবদুল মান্নান কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘তদন্ত চলছে, এখন কোনো রকম কথা বলা যাবে না।’

পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শিক্ষাবিদরা বলছেন, একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কখনোই এতটা নরম ভীতের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না যে, অসর্তকতায় এতো বড় ভুল হয়ে গেল। এর পেছনে কার উদ্দেশ্য বা স্বার্থ জড়িত আছে অবশ্যই সরকারের উচিত তদন্ত করে দেখা এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। না হলে শিক্ষাখাতের যাবতীয় অর্জন এই একটি ইস্যুর কারণেই ‘বদনামে’ পরিণত হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে ভুল স্পর্শকাতর বিষয়। একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে ‘ভুল পাঠ্যবই’-ই যথেষ্ট।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আশা করবো, দোষীরা চিহ্নিত হবেন এবং অবশ্যই ভুল সংশোধন করে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। নতুবা শিক্ষা ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়বে।’

গণ-স্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘স্বাক্ষরতার হার, ঝরে পড়ার হার রোধসহ বিভিন্ন খাতে শিক্ষার অর্জন প্রশংসিত। কিন্তু পাঠ্যবই শিক্ষার সবচেয়ে বড় নিয়ামক। এক্ষেত্রে ভুল মেনে নেওয়া যায় না। এমনকি এ বিষয়ে কিছু লোকের উদাসীনতা বা দায়িত্বহীনতা সরকারের উপরেই এখন বর্তাচ্ছে।’

পাঠ্যবইয়ে ভুলের কারণে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এ বছর শিশুদের বইয়ে অনেক ভুল হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে ভুল তথ্য বা বার্তা দেওয়া শিশুদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এ নিয়ে চারদিকে এত সমালোচনা হচ্ছে যে অন্য কোনো দেশের মন্ত্রী হলে পদত্যাগ করতেন।

এদিকে রোববার এনসিটিবিতে গিয়ে দেখা যায়, থমথমে অবস্থা। কোনো কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনোভাবেই কথা বলতে রাজি নন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘চেয়ারম্যান, কারিক্যুলাম সদস্য, মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটির সুপারিশ ছাড়া বইয়ে কোন কিছু ঘটেনি। তারা দায় এড়াতে পারেন না।’

এসব কর্মকর্তার সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রাথমিকের বইয়ের অধিকাংশ পরিবর্তনের বিষয় চূড়ান্ত হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় কারিক্যুলাম কো-অর্ডিনেটর কমিটির (এনসিসিসি) সভায়।

‘অনুমোদন দেওয়া কোন বইয়ে কোন কবিতা লেখা থাকবে, কোনটা বাদ যাবে’ ওই সভায় তা চূড়ান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে সে অনুসারেই বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তকগুলো ছাপা হয়। ওই সভার রেজ্যুলেশন এবং বিষয়বস্তুও খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শিক্ষা খাতের অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার শঙ্কা

আপডেট টাইম : ১২:০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী ২০১৭

গত কয়েক বছরে শিক্ষা খাতে সরকারের অর্জন সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বছরের প্রথম দিন দেশে একযোগে কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া শিক্ষাখাতে উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে একটি। কিন্তু গর্ব করার মতো এই বিষয়টিই সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে- এমনটিই আশঙ্কা করছেন শিক্ষাবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা।

২০১৬ সালে যখন থেকে পরবর্তী বছর বা ২০১৭ সালের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজ শুরু হয়, তখন থেকেই বিভিন্ন মহলে কথা ওঠে নতুন কারিক্যুলাম ও পাঠ্যসূচি নিয়ে। এর মধ্যে বিশেষভাবে আলোচনায় আসে হঠাৎ করে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে আবার চুপসে যাওয়া হেফাজতে ইসলামীর কয়েক দফা প্রস্তাবনা।

পাঠ্যক্রম নিয়ে দলটির দেওয়া প্রস্তাবনা অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি। কিন্তু পাঠ্যসূচি যখন চূড়ান্ত হয়, তখন দেখা যায় তাদের প্রস্তাবনার সিংহভাগ প্রভাব পড়েছে পাঠ্যক্রমে। আর বছরের প্রথম দিন বই বিতরণের পর দেখা যায়, বইতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভুল রয়েছে। বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী স্বয়ং স্বীকার করে দ্রুত ভুল শোধরানোর কথাও বলেছেন।

শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ভুল-ক্রটি ধরে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। বানান ভুলের খতিয়ান তুলে ধরে অনেকে প্রশ্ন রেখেছেন- শিশুদের পাঠ্যমবইয়ে এসব কী শেখানো হচ্ছে? নতুন পাঠ্যবইয়ের ভুল নিয়ে তীব্র সমালোচনার পর ওইসব ভুল-ক্রটি পর্যালোচনায় কমিটি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাঠ্য বইয়ে ভুলের জন্য এ পর্যন্ত এনসিটিবির প্রধান সম্পাদক প্রীতিশ কুমার সরকার এবং ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ লানা হুমায়রা খানকে ওএসডি করা হয়েছে। এছাড়া সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এনসিটিবির আর্টিস্ট কাম ডিজাইনার সুজাউল আবেদিনকে।

এখন পর্যন্ত এনসিটিবি থেকে একটি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিনটি কমিটি করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই ভুলের পেছনে যাঁরা বেশি দায়ী তাদেরও রাখা হয়েছে কমিটিতে। অভিযোগে বলা হচ্ছে, এর মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকে ভুলের কেলেঙ্কারির মূল হোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাজী আবুল কালামকে প্রধান করে এনসিটিবি গঠিত কমিটি যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, তাতে প্রাথমিকের প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণির আমার বাংলা বই এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় (তৃতীয় শ্রেণি) বইয়ে মোটা দাগে চারটি ভুলের জন্য সরাসরি দায়ী করা হয় বোর্ডের সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. সরকার আবদুল মান্নানকে।

ওই প্রতিবেদনে প্রাথমিকভাবে দু’জনকে দায়ী করা হয় পাঁচটি ভুলের জন্য। এর মধ্যে পঞ্চম ভুলের জন্য দায়ী করা হয়েছিল প্রীতিশ কুমার সরকারকে। তাকে ওএসডি করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদনে এক থেকে চার নম্বর পর্যন্ত ভুলের জন্য যাকে দায়ী করা হয় সেই সরকার আবদুল মান্নান এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কমিটির সুপারিশ হাতে পেয়েই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকেও কমিটি করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, প্রতিবেদনটি জমা দেওয়ার পরের দিন ৯ জানুয়ারি বোর্ডের সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. সরকার আবদুল মান্নান মন্ত্রণালয়ে এসেছিলেন। ঊর্ধ্বতনদের সাথে তার ‘রুদ্ধদ্বার আলাপ’ হয়। পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণে ওই আলাপ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সরকার আবদুল মান্নান কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি। তিনি শুধু বলেছেন, ‘তদন্ত চলছে, এখন কোনো রকম কথা বলা যাবে না।’

পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শিক্ষাবিদরা বলছেন, একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কখনোই এতটা নরম ভীতের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না যে, অসর্তকতায় এতো বড় ভুল হয়ে গেল। এর পেছনে কার উদ্দেশ্য বা স্বার্থ জড়িত আছে অবশ্যই সরকারের উচিত তদন্ত করে দেখা এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। না হলে শিক্ষাখাতের যাবতীয় অর্জন এই একটি ইস্যুর কারণেই ‘বদনামে’ পরিণত হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে ভুল স্পর্শকাতর বিষয়। একটি জাতিকে ধ্বংস করতে হলে ‘ভুল পাঠ্যবই’-ই যথেষ্ট।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আশা করবো, দোষীরা চিহ্নিত হবেন এবং অবশ্যই ভুল সংশোধন করে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। নতুবা শিক্ষা ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়বে।’

গণ-স্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘স্বাক্ষরতার হার, ঝরে পড়ার হার রোধসহ বিভিন্ন খাতে শিক্ষার অর্জন প্রশংসিত। কিন্তু পাঠ্যবই শিক্ষার সবচেয়ে বড় নিয়ামক। এক্ষেত্রে ভুল মেনে নেওয়া যায় না। এমনকি এ বিষয়ে কিছু লোকের উদাসীনতা বা দায়িত্বহীনতা সরকারের উপরেই এখন বর্তাচ্ছে।’

পাঠ্যবইয়ে ভুলের কারণে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেছেন, এ বছর শিশুদের বইয়ে অনেক ভুল হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে ভুল তথ্য বা বার্তা দেওয়া শিশুদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এ নিয়ে চারদিকে এত সমালোচনা হচ্ছে যে অন্য কোনো দেশের মন্ত্রী হলে পদত্যাগ করতেন।

এদিকে রোববার এনসিটিবিতে গিয়ে দেখা যায়, থমথমে অবস্থা। কোনো কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনোভাবেই কথা বলতে রাজি নন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘চেয়ারম্যান, কারিক্যুলাম সদস্য, মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটির সুপারিশ ছাড়া বইয়ে কোন কিছু ঘটেনি। তারা দায় এড়াতে পারেন না।’

এসব কর্মকর্তার সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রাথমিকের বইয়ের অধিকাংশ পরিবর্তনের বিষয় চূড়ান্ত হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় কারিক্যুলাম কো-অর্ডিনেটর কমিটির (এনসিসিসি) সভায়।

‘অনুমোদন দেওয়া কোন বইয়ে কোন কবিতা লেখা থাকবে, কোনটা বাদ যাবে’ ওই সভায় তা চূড়ান্ত হয়। পরবর্তী সময়ে সে অনুসারেই বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তকগুলো ছাপা হয়। ওই সভার রেজ্যুলেশন এবং বিষয়বস্তুও খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে।