ঢাকা ১১:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফসলে ভরে উঠুক বোরো মৌসুম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৮:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৭
  • ৪০১ বার

এসেছে মাঘ মাস। বোরো আবাদের ভরা মৌসুম। কৃষিজীবীরা এখন জমিতে ধান লাগানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এই মৌসুমে ধান চাষের প্রস্তুতি নিতে হয় মূলত কার্তিক মাস থেকেই। এ সময় তৈরি করতে হয় বীজতলা, বপন করতে হয় বীজ ধান। বীজতলায় গজিয়ে ওঠা ধানের চারা ফসলি জমিতে রোপণ করা হয় পৌষ-মাঘ মাসে। তবে কৃষকরা মাঘ মাসকেই ধান রোপণের উপযুক্ত সময় হিসেবে গণ্য করেন এবং এ মাসেই খেতে ‘গুছি’ দেন অর্থাৎ চারা রোপণ করেন। মাঘ মাস বোরো মৌসুমের ব্যস্ত মাস। এই মাসের প্রথম ১৫ দিনেই ফসলের মাঠ ভরে যায় চারা ধানে।

বোরো মৌসুম বাংলাদেশের কৃষি খাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান খাদ্য ভাতের উৎস ধান আর এই ধানের বড় অংশের উৎপাদন হয় এই মৌসুমে। কৃষি ও কৃষকের সঙ্গে এই মৌসুমের যোগসূত্র নিবিড়। খনার বচনে আছে ‘পৌষের শেষ আর মাঘের শুরু, এর মধ্যে শাইল বোরো যত পারো।’

দেশে উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান প্রবর্তনের পর থেকে ধান চাষে বড় পরিবর্তন এসেছে, যা পুরো কৃষি ব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বোরো মৌসুমে বৃষ্টি সাধারণত কম হয়, তাই এই ধান সেচনির্ভর। এর বীজতলা থেকে শুরু করে রোপণ ও কাটা-মাড়াই পর্যন্ত কৃষককে বিশেষ পরিচর্যার ব্যবস্থা নিতে হয়। সঠিক পরিচর্যা না হলে ধানের উৎপাদন কমে যায় এবং কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বোরো মৌসুমে ধানের আবাদে কৃষককে অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। কৃষিশ্রমিকের মজুরি, সেচ ও সারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের জোগান থাকা প্রয়োজন। বোরো চাষে সময় অনুপাতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। তবে জৈব সারের ওপর নির্ভর করা হলে ফলন ভালো হয় এবং জমিও উর্বর থাকে।

বোরো জমি পরিচর্যার অন্যতম হলো সেচ ব্যবস্থাপনা। ধানের চারা রোপণের পর জমিতে পানি এমনভাবে রাখতে হয় যেন চারা কোনো অবস্থাতেই ডুবে না যায়। এক সেচের পর আরেক সেচের মাঝখানে দুই তিন দিন খেত শুকনো রাখা হলে মাটি বাতাসের সংস্পর্শে আসতে পারে, যা অত্যন্ত উপকারী। তবে খেয়াল রাখতে হয় যাতে মাটি একেবারে শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে না যায়। ধানের থোড় আসা শুরু হলে ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার গভীরতায় পানি রাখা উত্তম।

বোরো ধান ঘরে আসে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে। বোরো চাষে সতর্ক থাকা প্রয়োজন যাতে বিনিয়োগ প্রবাহে ভাটা না পড়ে, সেচ ও সার সুবিধার ঘাটতি না হয়। আরো প্রয়োজন কৃষকের জন্য পরামর্শ। কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজার ও কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে মনোযোগী হবেন এবং কৃষকের কাছে গিয়ে সঠিক পরামর্শ দেবেন- এটাই আশা করি। কৃষকের চেষ্টায় ও সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় দেশ ভরে উঠুক সোনার ফসলে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ফসলে ভরে উঠুক বোরো মৌসুম

আপডেট টাইম : ১১:৫৮:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৭

এসেছে মাঘ মাস। বোরো আবাদের ভরা মৌসুম। কৃষিজীবীরা এখন জমিতে ধান লাগানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এই মৌসুমে ধান চাষের প্রস্তুতি নিতে হয় মূলত কার্তিক মাস থেকেই। এ সময় তৈরি করতে হয় বীজতলা, বপন করতে হয় বীজ ধান। বীজতলায় গজিয়ে ওঠা ধানের চারা ফসলি জমিতে রোপণ করা হয় পৌষ-মাঘ মাসে। তবে কৃষকরা মাঘ মাসকেই ধান রোপণের উপযুক্ত সময় হিসেবে গণ্য করেন এবং এ মাসেই খেতে ‘গুছি’ দেন অর্থাৎ চারা রোপণ করেন। মাঘ মাস বোরো মৌসুমের ব্যস্ত মাস। এই মাসের প্রথম ১৫ দিনেই ফসলের মাঠ ভরে যায় চারা ধানে।

বোরো মৌসুম বাংলাদেশের কৃষি খাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান খাদ্য ভাতের উৎস ধান আর এই ধানের বড় অংশের উৎপাদন হয় এই মৌসুমে। কৃষি ও কৃষকের সঙ্গে এই মৌসুমের যোগসূত্র নিবিড়। খনার বচনে আছে ‘পৌষের শেষ আর মাঘের শুরু, এর মধ্যে শাইল বোরো যত পারো।’

দেশে উচ্চ ফলনশীল বোরো ধান প্রবর্তনের পর থেকে ধান চাষে বড় পরিবর্তন এসেছে, যা পুরো কৃষি ব্যবস্থার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বোরো মৌসুমে বৃষ্টি সাধারণত কম হয়, তাই এই ধান সেচনির্ভর। এর বীজতলা থেকে শুরু করে রোপণ ও কাটা-মাড়াই পর্যন্ত কৃষককে বিশেষ পরিচর্যার ব্যবস্থা নিতে হয়। সঠিক পরিচর্যা না হলে ধানের উৎপাদন কমে যায় এবং কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বোরো মৌসুমে ধানের আবাদে কৃষককে অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। কৃষিশ্রমিকের মজুরি, সেচ ও সারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থের জোগান থাকা প্রয়োজন। বোরো চাষে সময় অনুপাতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। তবে জৈব সারের ওপর নির্ভর করা হলে ফলন ভালো হয় এবং জমিও উর্বর থাকে।

বোরো জমি পরিচর্যার অন্যতম হলো সেচ ব্যবস্থাপনা। ধানের চারা রোপণের পর জমিতে পানি এমনভাবে রাখতে হয় যেন চারা কোনো অবস্থাতেই ডুবে না যায়। এক সেচের পর আরেক সেচের মাঝখানে দুই তিন দিন খেত শুকনো রাখা হলে মাটি বাতাসের সংস্পর্শে আসতে পারে, যা অত্যন্ত উপকারী। তবে খেয়াল রাখতে হয় যাতে মাটি একেবারে শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে না যায়। ধানের থোড় আসা শুরু হলে ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার গভীরতায় পানি রাখা উত্তম।

বোরো ধান ঘরে আসে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে। বোরো চাষে সতর্ক থাকা প্রয়োজন যাতে বিনিয়োগ প্রবাহে ভাটা না পড়ে, সেচ ও সার সুবিধার ঘাটতি না হয়। আরো প্রয়োজন কৃষকের জন্য পরামর্শ। কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজার ও কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে মনোযোগী হবেন এবং কৃষকের কাছে গিয়ে সঠিক পরামর্শ দেবেন- এটাই আশা করি। কৃষকের চেষ্টায় ও সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় দেশ ভরে উঠুক সোনার ফসলে।