দেশে একদিকে চায়ের উৎপাদন যেমন বাড়ছে,তেমনি বাড়ছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বিদেশে থেকে চায়ের আমদানি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চায়ের উৎপাদন না বাড়ায় দেশের একসময়কার প্রধান অর্থকরী এ ফসলের রফতানি কমে আসছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের এক পরিসংখ্যানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। নব্বইয়ের দশকে বিশ্বে চায়ের রফতানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান যেখানে ছিল পঞ্চম স্থানে। সেখানে বর্তমানে দেশটির কোন অবস্থানই নেই।
সে লক্ষেই দেশে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ববাজারে এর রফতানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আর এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য চা বোর্ডে থেকে ‘চা শিল্পের উন্নয়নে পথ নকশা’ নামে একটি কর্মকৌশল তৈরি করা হয়েছে। এই নকশাটি এখন মন্ত্রিসভায় উঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ পর্যালোচনা শেষে ৩ নভেম্বর নকশাটি চা বোর্ড থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পথ নকশাটি সংসদে পাশ হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড়ের পর পরই এর কাজ শুরু হয়ে যাবে। এর পর থেকে এই পথ নকশার পথ ধরেই এগিয়ে যাবে চা শিল্প। এর ফলে চা শিল্পে আবার সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করছেন চা সংশ্লিষ্টরা।
চা বোর্ডের তথ্য মতে ১৯৯০ সালে চায়ের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৮৩ লাখ ৬০ হাজার কেজি এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল ১ কোটি ৪২ লাখ ১০ হাজার কেজি। আর ২০১৫ সালে দেশে চায়ের উৎপাদন ছিল ৬ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার কেজি এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল ৬ কোটি ৫০ লাখ কেজি।
চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশিয় চা সংসদের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৯-২০১৩ সাল পর্যন্ত পাঁচবছরে দেশে ২ কোটি ৮৭ লাখ ৯৩ হাজার চা আমদানি হয়েছে। আবার চা বোর্ডের হিসেবে ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এমন কোনো বছর নেই যে, আগের বছরের তুলনায় দেশের চা রফতানি কমেনি। চা রফতানিতে ১৯৯০ সালে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছিল ১৫৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে আয় হয় ১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানের মাধ্যমে চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে দেশে ১৬৬টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯২টি চা বাগান রয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়।
চা বোর্ডের হিসেব মতে বিশ্বে চা উৎপাদনের পরিমাণ ৪৬২ কোটি ৫০ লাখ কেজি। এর মধ্যে ১৯৭ কোটি কেজি চা চীন একাই উৎপাদন করে। এর পরেই ভারত উৎপাদন করে ১১২ কোটি ৬০ লাখ কেজি। কেনিয়া ৩৭ কোটি কেজি এবং শ্রীলংকা ৩২ কোটি ৮০ লাখ কেজি চা উৎপাদন করছে। তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামজাপান ও আর্জেন্টিনার পর বাংলাদেশের অবস্থান ১০ তম। চায়ের রফতানিকারক দেশ হিসেবে শীর্ষে অবস্থান করছে কেনিয়া, শ্রীলংকা, চীন, ভারত ও ভিয়েতনাম। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৩৫টি দেশ চা উৎপাদন করছে।
চা বোর্ডের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মুনির আহমদ জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পথ নকশাটি তৈরি করা হয়েছে। ৯৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ বছর মেয়াদী এই পথ নকশায় চায়ের উৎপাদন ১৩২ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত করার লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনানুযায়ী পুরো কর্মকৌশল বাস্তবায়ন করা হলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বছরে ২৫ মিলিয়ন কেজি চা বিদেশে রফতানি করা যাবে।
২০১৫ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভা থেকে চা শিল্পকে বাঁচানো উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পথ নকশা তৈরি করা হয়। কর্ম কৌশলের মধ্যে রয়েছে- চায়ের আবাদ সম্প্রসারণ, রি-প্লেন্টিং, ক্ষুদ্রায়তন চা চাষ, পরিবেশ ভারসাম্য প্রকল্প, চা গবেষণা কেন্দ্র ও পিডিইউকে শক্তিশালী করা, শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রকে গতিশীল করা, চা বাগানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, চা কারখানা সময়োপযোগী আধুনিকায়ন করা ও সেচ প্রকল্প। আর এগুলো বাস্তবায়ন করতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
চা সংসদের সিলেট বিভাগের চেয়ারম্যান জিএম শিবলী বলেন, চা শিল্পকে রক্ষা করতে হলে চা আমদানির উপর শুল্ক বাড়াতে হবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত চা আমদানির উপর ১১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: সাফিনুল ইসলাম বলেন, চা শিল্পের উন্নয়নের পথ নকশাটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কর্মকৌশল বাস্তবায়িত হলে একসময় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের চায়ের যে একক আধিপত্য ছিল তা আবার ফিরে সুদিন আসবে।
বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বছর চায়ের উৎপাদন ৮ লাখ কেজি ছাড়িয়ে যাবে। আর ২০২১ সালে চায়ের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ কোটি কেজিতে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
সংবাদ শিরোনাম
আবার আসবে চায়ের সুদিন
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ১২:৪৫:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জানুয়ারী ২০১৭
- ৩১৫ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ