মার্কিন ডেমোক্র্যাট সিনেটর হ্যারি রেড দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের তথ্য হাতে থাকার পরেও দেশটি তা লুকিয়ে রেখেছিল। তিনি এফবিআই প্রধানকে পদত্যাগেরও আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর এক গোপন প্রতিবেদনে সম্প্রতি দাবি করা হয়, রাশিয়া ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইমেল হ্যাক করে বিকল্প গণমাধ্যম উইকিলিকসের হাতে তুলে দিয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়, ‘নির্বাচনে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে রাশিয়ার লক্ষ্য ছিল, এক প্রার্থীকে ঘায়েল করে অপরজনকে সমর্থন করা, ট্রাম্পের জয়ে সাহায্য করা।’ মার্কিন সংবাদমাধ্যম গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে।
এদিকে শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এমএসএনবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রেড বলেন, ‘এফবিআই-এর কাছে ওই তথ্য আগে থেকেই ছিল। কিন্তু রিপাবলিকানদের সহযোগী কোমি নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের তথ্য প্রকাশ করেনি।’ উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুলাইয়ে কোমি মার্কিন কংগ্রেসের সামনে বলেছিলেন, তিনি এখন আর নিবন্ধিত রিপাবলিকান নন। যদিও জীবনের একটা বড় অংশ তিনি ওই পার্টির সদস্য ছিলেন। হ্যারি রেড এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে সংস্থাটির বিতর্কিত প্রতিষ্ঠাতা জে এডগার হোভারের সঙ্গে তুলনা করে পদত্যাগ করতে বলেন। রেড আরও বলেন, ‘কোমির বিষয়ে আমি খুবই হতাশ। দলবাজির মাধ্যমে তিনি দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছেন।
আমি মনে করি তার বিষয়ে সিনেটের তদন্ত করা উচিত। গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা দরকার। কারণ এর সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত। কোমি কতটা দলবাজ, তা কেউ বুঝতে পেরেছিলেন, বলেও আমি মনে করি না।’
উল্লেখ্য, নির্বাচনের মাত্র ১১ দিন আগে হিলারির ইমেল পুনঃতদন্তে এফবিআই-এর নেওয়া সিদ্ধান্তের পর থেকেই নির্বাচনি গবেষণাগুলোতে এগিয়ে থাকা হিলারির সঙ্গে কমতে থাকে ট্রাম্পের ব্যবধান।
গত ২৮ অক্টোবর এফবিআই পরিচালক জেমস কোমি নতুন করে হিলারির ইমেল তদন্তের বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেসকে চিঠি লিখে অবগত করেন। পরে তিনি জনসমক্ষে তদন্তের কিছু বিষয় তুলে ধরেন। আর এরপরই ওই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ডেমোক্র্যাট শিবিরের রোষানলে পড়ে তদন্ত সংস্থাটি। ডেমোক্র্যাটরা দাবি করে আসছে, এফবিআই নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে।
তবে ৬ অক্টোবর হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে নতুন তদন্তের নাটকীয় সমাপ্তি টানে এফবিআই। নির্বাচনের ১১ দিন আগে পুনঃতদন্ত শুরুর ঘোষণার সময় স্পর্শকাতর তথ্য পাওয়ার কথা জানালেও এদিন এফবিআই প্রধান জেমস কোমি জানিয়েছেন, ‘হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে তার কাছে আসা এবং তার পাঠানো সব ই–মেল আমরা তদন্ত করেছি। গত জুলাইয়ে হিলারি ক্লিনটনের বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত আমরা পরিবর্তন করছি না।’
এদিকে, মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, রাশিয়া ওই তথ্য হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করে উইকিলিকসের কাছে হস্তান্তর করেছে। উইকিলিকস প্রতিনিয়ত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারিকে অপদস্ত করার জন্য তথ্য প্রকাশ করে আসছে বলে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইমেল ফাঁসের ক্ষেত্রে রুশ সরকার তাদের উৎস ছিল না। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, গত সপ্তাহে সিআইএ-র একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিশিষ্ট সিনেটরদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তখন এক গোয়েন্দা আধিকারিক সিনেটরদের এই সম্পর্কে অবহিত করেন। ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, ‘এটাই মার্কিন গোয়েন্দাদের যৌথ মতামত।’ তবে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা সিআইএ প্রতিবেদনকে সকল গোয়েন্দাদের যৌথ মতামত বলে দাবি করলেও তাতে ১৭টি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সবগুলোর সমর্থন নেই। অপর এক আধিকারিক দাবি করেন, সিআইএ-র অবস্থানের সঙ্গে কিছু কর্মকর্তার অল্প-বিস্তর ভিন্নমত রয়েছে। কারণ সেখানে কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্প বরাবরই রাশিয়ার হ্যাকিং সম্পর্কিত অভিযোগ খারিজ করে আসছেন। এর আগে ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া কোনও ধরনের হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছে বলে তিনি মনে করেন না। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা এসব অভিযোগকে তিনি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও উল্লেখ করেছেন। এমনকি, রাশিয়াও এই অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে।-কলকাতা২৪