বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সমাজপ্রগতি আন্দোলনের অগ্রপথিক কবি সুফিয়া কামালের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘কবি সুফিয়া কামাল সম্মাননা -২০১৫’ পেলেন চার ভাষা সৈনিকসহ আট বিশিষ্ট নারী|
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- ভাষা সৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দি, রওশন আরা বাচ্চু, হালিমা খাতুন ও সুফিয়া আহমেদ এবং পুলিশের ডিআইজি মিলি বিশ্বাস, কাউখালীর নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধি মমতা শিকদার, বেলাবোর নারী কৃষক ফরিদা বেগম ও সাভারের নারী শ্রমিক আরতী রানী।
শনিবার সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম। এ সময় সুফিয়া কামাল স্মারক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়শা খানম।
‘সুফিয়া কামালের সাহিত্য : মানবতাবাদ ও নারীর অধিকার’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সঙ্গীত পরিবেশন করেন ইফ্ফাত আরা দেওয়ান ও বুলবুল ইসলাম।
প্রতিবছর বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২০ জুন কবি সুফিয়া কামাল স্মারক বক্তৃতা ও সুফিয়া কামাল সম্মাননা পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি আয়শা খানম কবি সুফিয়া কামালকে বাংলাদেশের বিবেক অভিহিত করে বলেন, আত্মজাগরণ ও আত্মানুসন্ধানের মাধ্যমে তিনি তার সাহিত্যে যা বলেছেন, নিজের জীবন চর্চায় তা বাস্তবায়ন করার পথ দেখিয়ে গেছেন। নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে তিনি সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও মানবের সম্মিলিত জীবনে পরিণত করেছেন। নারীদের জন্য চ্যালেঞ্জিং যে সব পেশা, যেমন শান্তি মিশনে, সাংবাদিকতায়, ক্রীড়াঙ্গনে এখন নারীরা পুরুষের সঙ্গে তালে এগিয়ে এসেছে- এই অগ্রগতির আলোকিত পরিসরে সুফিয়া কামাল বাতিঘরের মতো।
যুগে যুগে নারীর অবদানকে যথাযথ মূল্যায়নের জন্যে প্রয়োজনীয় গবেষণা করতে দেশের বুদ্ধিজীবী মহলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে মালেকা বানু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ একটি মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছিল সুফিয়া কামালের জীবনব্যাপী সংগ্রামের প্রধান লক্ষ্য। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, অব্যাহত নারী নির্যাতন, নারীর শ্রমশোষণ ও পাচারের মাধ্যমে নারীকে যেভাবে পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে, এ সময়ে সুফিয়া কামালের রচনাবলী, জীবনবীক্ষা ও আদর্শ আমাদের আলোর দিশা দেখাতে পারে।
স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল বলেন, সাহিত্যের কৃতি ও চর্চার মধ্য দিয়ে সুফিয়া কামাল বৈচিত্র্যসন্ধানী হয়েছেন যেমন, তেমনি নারী ও মানবাধিকার নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে সাহসীবাণী উচ্চারণ করেছেন। নারীই মুক্ত করবে বন্দি মানবতাকে-রবীন্দ্রনাথের ‘নারী’ প্রবন্ধের অনুরূপে সুফিয়া কামালের এ আশাবাদ। নবযুগের চেতনায় নারীর অধিকার আর মানবাধিকার একই মুদ্রার দুই পিঠ। এটি সুফিয়া কামাল বুঝেছিলেন, তাই সংগ্রাম তার কাছে বিলাস ছিল না।