দল ও মত নির্বিশেষে পেশাজীবী চিকিৎসকদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) আসন্ন নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুসারী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) অংশগ্রহণ করলেও বিএনপিপন্থী সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) অংশগ্রহণ করছে না।
ড্যাব নেতারা সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে করে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছেন। স্বাচিপের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কমিউনিস্ট পার্টি থাকলেও তারা পুরো প্যানেলে প্রার্থী দিতে পারেনি। ফলে আসন্ন এ নির্বাচন এখন নিছক আনুষ্ঠানিকতার নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।
আগামী ২২ ডিসেম্বর বিএমএ কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চার বছর পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দল শক্তিশালী না হওয়ায় স্বাচিপের জয় এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র বলে মনে করছেন চিকিৎসক মহল।
বিএমএ নির্বাচনে এবার স্বাচিপ প্যানেলে সভাপতি হিসেবে এক সময়ের বিএমএ মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. এহতেশামুল হক দুলালসহ কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সব পদ ও কাউন্সিলরদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতের একাধিক প্রবীণ ও নবীন চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ৯০ এর দশকের আগে পর্যন্ত বিএমএ পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে চিকিৎসকদের ন্যায্য দাবি দাওয়া আদায়সহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে সর্বগ্রহণযোগ্যতা অর্জন করলেও পরবর্তীতে বিএনপিপন্থী ড্যাব ও আওয়ামীপন্থী স্বাচিপের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক বিভাজনে বিএমএ তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে। তবে এবার জা (জালাল) দু (দুলাল) এর স্পর্শে বিএমএ তার হৃতগৌরব ফিরে পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন অনেকেই।
বিএমএর একাধিক বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার আগে সভাপতি ও মহাসচিবসহ অন্যান্য পদে বহু প্রার্থীর নাম শোনা গিয়েছিল। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেই সরকারের নীতনির্ধারণী মহল থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মাধ্যমে স্বাচিপ নেতাদের ডেকে সভাপতি হিসেবে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের নাম বলে দেয়া হয়। মহাসচিব পদেও অনেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও ডা. জালালের মতো একই কায়দায় সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে ডা. এহতেশামুল হকের নাম ঘোষণা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এবার বিএমএকে সত্যিকার অর্থে চিকিৎসকবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে স্বাচিপ থেকে শক্তিশালী প্যানেল দেয়া হয়েছে। বিএমএ ও স্বাচিপের বর্তমান কমিটির একাধিক প্রভাবশালী নেতাকে কার্যকরী সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে। যারা মনোনয়ন পাননি তাদের মধ্যে মনোকষ্ট থাকলেও তারা শীর্ষ মহলের নির্দেশ মেনে নিয়েছেন।
জালাল ও দুলাল প্যানেল অর্থাৎ স্বাচিপ প্যানেল থেকে নির্বাচনে যারা লড়াই করবেন তারা হলেন- সহ-সভাপতি (ঢাকা মহানগর) ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, সহ-সভাপতি (ঢাকা বিভাগ) ডা. জামাল উদ্দিন খলিফা, সহ-সভাপতি (বরিশাল বিভাগ) ডা. মো. কামরুল হাসান সেলিম, সহ-সভাপতি (চট্টগ্রাম বিভাগ) ডা. মো. শফিউল আজম, সহ-সভাপতি (খুলনা বিভাগ) ডা. শেখ বাহরুল আলম, সহ-সভাপতি (ময়মনসিংহ বিভাগ) ডা. আ ন ম ফজলুল হক পাঠান, সহ-সভাপতি (রাজশাহী বিভাগ) ডা. মো. মোস্তফা আলম নান্নু, সহ-সভাপতি (রংপুর বিভাগ) ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি (সিলেট বিভাগ) ডা. মুরশেদ আহমেদ চৌধুরী।
এছাড়া কোষাধ্যক্ষ পদে ডা. মো. জাহিদ হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব ডা. মো. কামরুল হাসান মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. তারিক মেহেদি পারভেজ, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ডা. শাহরিয়ার নবী শাকিল, দফতর সম্পাদক ডা. মো. শেখ শহিদুল্লাহ, প্রচার ও জনসংযোগ সম্পাদক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বাবু, সাংস্কৃতি ও আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক ডা. পূরবী রাণী দেবনাথ, গ্রন্থাগার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডা. কাজী শফিকুল হালিম, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. আবুল হাশেম খান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক ডা. সোহেল মাহমুদ।
কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য হিসেবে যারা আছেন তারা হলেন- ডা. মো. সেলিম, ডা. মো. মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, ডা. মো. শফিকুর রহমান, ডা. মুশতাক হোসেন, ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, ডা. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন চৌধুরী, ডা. এ এস এম জাকারিয়া স্বপন, ডা. এম নজরুল ইসলাম, ডা. এহসানুল কবির জগলুল, ডা. মো. আব্দুল আজিজ, ডা. মো. আবু রায়হান, ডা. মো. জুলফিকার আলী লেনিন, ডা. মো. আবু ইউসুফ ফকির, ডা. জহুরুল হক সাচ্চু, ডা. চিত্তরঞ্জন দাস, ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, ডা. মো. বাবরুল আলম, ডা. মো. জাবেদ, ডা. হোসেন মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, ডা. হাসানুর রহমান ও ডা. মুহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।